আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার কথা

বাংলাদেশকে একটি সৃজনশীল জাতি হিসাবে দেখতে চাই।

ক’জন তরুণ লেখক স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একটা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার জন্য দিনভর ব্যস্ত। তাদের মধ্যে একজন হলো তাসনুভা অরিণ। ফোন করে বলে, ‘ভাইয়া আমাদেরকে একটা আপনার স্মৃতিকথা নিয়ে লেখা দিতে হবে। ’ বললাম,‘ঠিক আছে—দেব।

’ এটা বলার পর ভাবি কী নিয়ে স্মৃতিকথা লেখব। বলেই ভুল করলাম না তো! রাতে বিছানায় শূয়ে শুয়ে ভাবতে থাকি। কী নিয়ে লিখবো। ভাবতে ভাবতে চোখের পর্দায় ভেসে উঠে ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি। কখানো স্কুল জীবনে, কখনো কলেজের জীবন, কখনো আবার জীবনের চলার পথের কথা।

এত ভাবনায় সিন্ধান্ত নিতে পারছি না। কী লিখবো? যাক্। এত সব চিন্তা না করে খাতাকলম নিয়ে টেবিলে বসে পড়ি। লেখতে শুরু করি—কিছু একটা। লেখার শুরুতে চলে আসে স্বপ্নের কথা।

স্বপ্ন পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবন্ত মানুষের একটা র্উবর বীজ। সেটা বুনোর জন্য কাজ করতে হয় নানা সংগ্রামে। এই সংগ্রামের পথে হাজার স্মৃতি গেঁথে থাকে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি যে আমার জীবনে কত স্বপ্ন দেখেছি। তার কোন অন্ত নেই।

কখনো একজন যজ্ঞখ্যাত লেখক, কখনো একজন সম্পাদক, কখনো একজন চিকিৎসক, কখনো আবার একজন সংগঠকের। ২. চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। মিশন স্কুল। স্কুলে নাম ক্ষুদ্র পুষ্প প্রাথমিক বিদ্যালয় (বর্তমান শহীদ ফাদার লুকাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়)। পড়াশোনা ক্ষেত্রে বেশ খ্যাতি।

সেই স্কুলের ভালো ভালো ছাত্ররা ভালো ভালো জায়গায় চান্স পায়। আর ঐ স্কুলের ছাত্র আমি। পড়ালেখায় বেশ ভালো। পরীক্ষার ফলাফল দেখে বাড়ির সবাই খুশি। তখন তারা আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

কেউ কেউ তো রীতিমত স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছিল। আমার দাদী বলেন, ‘তুই ডাক্তার হবি’ আবার আমার দাদা সবচেয়ে পছন্দের পেশা হলো শিক্ষক। একদিন দুপুরবেলা শীতলপাটি বিছিয়ে আঙিনায় লেখতে বসছি। ঐ সময়ে দাদা আমার কাছে বসে বলেন,‘ তোর হাতের লেখাগুলো অনেক সুন্দর। তোকে একজন মাস্টার হতে হবে।

’ হেসে হেসে বলি,দাদা দোয়া করবেন। ’আর মনে মনে দাদার উপর গুমটা গুমটা রাগ হচ্ছি—ফিসফিস করে বলি, কী বলেরে ভাই। যেখানে ডাক্তার হতে চাই। সেখানে আবার মাস্টার! আমার দাদা ছিলেন ব্যবসায় কিন্ত তার চিন্তা-চেতনা ছিল খুব দূরর্দশন। অনেক কষ্টে ছোট দাদাকে শিক্ষক হবার জন্য পরিশ্রম করেছেন।

অবশেষে ছোট দাদা হেড মাস্টার হতে পেরেছিলেন। দাদা পরলোকেন করেন ২০০০ সালে ২ ডিসেম্বরে। আর মার খুব ইচ্ছে যেন আমি একজন আর্দশ মানুষ হই। একদিন লুকিয়ে লূকিয়ে কবিতা লেখছি। মা বুঝতে পেরে বলেন, কবিতা লেখলেই হবে।

কবিতা লেখলে পেটে ভাত জুটবে না। ’ অবশ্য আব্বা আমাকে সব সময়ে মৌনতা দেখায় বলতেন, তুই কথা বলিস না কেন?। তোকে দেখে মনে হয় তুই কবি। কবিরা মূলত কম কথা বলেন। আর তোর মতো উদাসিন থাকে।

’ আমাকে অনেকে বলেন আমি নাকি ছোটবেলায় খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম না। তবে ভাবুক ছিলাম। প্রথমদিকে (ক্লাস কেজি) স্কুল যাওটা আমরা খুব বিরক্ত ছিল। মা প্রত্যেকদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যেতেন। স্কুলে এসমপিলি হওয়ার সময়ে মা বাড়ি ফিরে আসতেন।

আর এসমপিলি শেষে ক্লাসে না গিয়ে বাহিরে দাঁড়াই থাকতাম। এজন্য একদিন আব্বা আমাকে অনেক মাররেন। এই জীবনে আব্বার হাতে একবারেই মার খেয়েছি। শুনেছি আব্বা মার দেবার পর আমার নাকি অনেক সমস্যা হয়েছিল। আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম।

৩. এইবার একদিনের একটা গল্প বলি। আজকাল সবাই টেলিভিশন দেখি ঘন্টার পর ঘন্টা। তখন সেটা ছিল না। গ্রামে সবার বাড়িতে টেলিভিশনও ছিল না। দাদাবাড়িতে ছিল একটি টেলিভিশন।

কয়েক গ্রাম ভেঙ্গে টিভি দেখার জন্য বাড়ীতে চলে আসতো। ঘরে সামনে টিভি বের করে দিলে সবাই টিভি দেখতো আজকালকার ছোট কর্নসাটের মতো। যাক্ টেলিভিশনের কথা। আমার মা চাই আমি একজন আদর্শ মানুষ হই। তা আগেইও বলেছি।

এজন্য মা সবসময় পড়ালেখার জন্য খেঁচখেঁচ করতেন। বলতেন, ‘পড়...পড়..পড়’ টিভি দেখতে গেলেও পড়াশোনার কথা। তখন ভালো লাগতো না। অসহ্য মনে হতো। এখন সেই কথাগুলো মনে হলে হাসিতে খুন হয়ে যাই।

গল্পটা হলো—চতুর্থশ্রেনীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা সামনে। রোববার। বাড়িতে সবাই ডিডি বাংলাতে বাংলা সিনেমা হাতি দেখছে। আমারও খুব লোভ হলো। সিনেমা দেখতে।

বইটা ভাঁজ করে মাকে ফাঁকি দিয়ে একদৌড়ে টিভির আঙিনায়। লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমাটা দেখছি। একসময় মা টের পায় যে আমি সিনেমা দেখতে এসেছি। এসে বলে, ‘যাও পড়তে যাও। ’ ‘একটু মা।

এক্ষণে যাচ্ছি। ’ কিন্তু সিনেমাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছে করছে না। কী করি। কিছুক্ষণ পরে মা একটা ইয়াবড় লাঠি নিয়ে হাজির। বলেন, ‘দাঁড়াও তোমার সিনেমা দেখাচ্ছি।

’ লাঠি দেখি একদম দৌড়। পিছে তাকাবার সময় নেই। কেউ আটকানো কোন উপায় নেই। তারপর আর সাহাস হতো না ঘরে ফিরার। লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরের আশপাশে থাকতাম।

গভীর রাত হলে মায়ের ভয়ে চুপচাপ করে বিছানায় শুয়ে যেতাম। যেন মা টের না পায়। মায়ের মনতো টের পেতেই। ঢেং করে থাকলেও কোন লাভ হতো না। পরে বুঝিয়ে ভাত খেতে দিতো।

বলতেন,‘ আর এমন করবি? পড়া ফেলে টিভি দেখতে যাবি?’ ‘না, মা। আর কোনদিন টিভি দেখতে যাবো না। ’ ভিতরে ভিতরে বলতাম দেখতে যাবো না মানে একশবার যাবো। লেখাটা লিটল ম্যাগ দেয়ালে টাঙানো রোদে প্রকাশিত (Click This Link)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।