আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার ঈদ-3

খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।

ঈদের কথা বলতে গেলেই মনে পড়ে যাকাতের কথা । মোটামুটি রোযা হপ্তাখানেক হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যেত এই যাকাত দেওয়া। আমার সেই ছেলেবেলায় যাকাত হিসেবে আমাদের বাড়ি থেকে কাপড় বিলি হত।

বিশাল বড় বড় কাপড়ের গাট আসতো যাকাত দেওয়ার জন্যে। দু গাট শাড়ি হলে সম পরিমান লুঙ্গি-পাঞ্জাবি। দাদুর ঘরে রাখা থাকত সেই কাপড়ের গাটগুলো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো সেই যাকাতের কাপড় নিতে। দাদু হয় তার বিছানায় নয় জানালার পাশে চেয়ারে বসে থাকতেন।

চেনা-অচেনা নারী পুরুষেরা এসে জানালার পাশে দাঁড়ালেই দাদু উঠে এসে কাপড়ের গাট থেকে কাপড় বার করে জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দিতেন। যে কাপড় নিতে এসেছে সে মহিলা হলে জিজ্ঞেস করতেন, ছাপা না চেক, নাকি সাদা নেবে? মানুষটি বুড়ো হলে সে চাইতো সাদা, অল্প বয়েসীরা চেয়ে নিত তার পছন্দের চেক কিংবা ছাপা শাড়িটি যতদিন ঐ গাটগুলোতে কাপড় থাকতো তদ্দিন কোন সমস্যা হত না, সমস্যাটা হত কাপড় শেষ হয়ে গেলে। কাপড় শেষ হয়ে গেছে, এবছরের মত যাকাত দেওয়া শেষ বললেও কিছুতেই তারা মানতে চাইত না যে সত্যিই শেষ। দাঁড়িয়েই থাকতো। দাদি তখন নিজের আলমারি থেকে কাপড় বার করে দিয়ে দিতেন, বাড়ির মেয়েদের কাছ থেকে চেয়ে নিতেন পুরনো শাড়ি, দিয়ে দিতেন যাকাতের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে।

প্রতি বছরই দাদুর উপরে চেঁচাতেন, এই কাপড় বিলি না করে কেন টাকা দিয়ে দেওয়া হয় না তা নিয়ে। দাদুর যুক্তি ছিল, টাকা দিয়ে দিলে ঝামেলা কম হয় বটে তবে তা দিয়ে এই মানুষগুলো তো কাপড় কিনবে না, খরচ করবে অন্য কাজে, ঈদে এদের কারোরই নতুন কাপড় হবে না তাহলে। দাদু চলে যাওয়ার পর এই কাজটা দাদি করেছেন। জানালার পাশে চেয়ারে বসে থেকে কাপড় বিলি করার কাজটা। এখন আব্বু করে।

আমার সেই ছেলেবেলায় কোন বছর হয়ত আমরা দেশে যেতাম না। রোযার প্রথম সপ্তায় আব্বু বাড়ি গিয়ে যাকাতের কাপড়ের ব্যবস্থা করে আসত কিন্তু পরে, দাদু চলে যাওয়ার পর প্রতিটি ঈদেই আব্বু দেশে যায় সবাইকে নিয়ে। দাদু, দাদির শূণ্যস্থান এতে পুরণ হয় না কিন্তু যে কাজটা ওরা করতেন সেটা থেমে যায়নি। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।