আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অত্যাচারী রাজা ও একটি শিশু

বউটুবান এক ছিল অত্যাচারী রাজা। কারণে-অকারণে মানুষ ও পশু-পাখিদের ধরে অত্যাচার করে আনন্দ পেতেন তিনি। কেউ ভালবাসত না রাজাকে। মনে মনে সবাই ঘৃণা করত তাঁকে। এটা রাজা জানত।

তবুও কমতি ছিল না তাঁর অত্যাচারের। রাজা তাঁর মন্ত্রী, পাইক-পেয়াদা নিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হতেন। রাজাকে অত্যাচার করতে সাহায্য করত তারা। কারণ রাজা এতে অনেক খুশি হতেন। একদিন রাজা শিকার করতে পথে বের হলেন।

তার সাথে মন্ত্রী, সিপাই, পাইক-পেয়াদা রয়েছে। সবাই হাতির পিঠে চড়ে বেরিয়েছেন। পথে বসে খেলা করছিল একটা শিশু। রাজাকে দেখে সবাই পথ ছেড়ে পালিয়ে গেল। পথের শিশুটি আপনমনে খেলা করতে লাগল।

সবার সামনে রাজার হাতি। পথের মাঝে শিশুটিকে দেখে রাজার হাতি দাঁড়িয়ে গেল। আর সাথে সাথে পেছনের সব হাতিও গেল দাঁড়িয়ে। রাজা কঠিন গলায় বললেন, দাঁড়ালে কেন? হাতিচালক বলল, একটি শিশু পথের ঠিক মাঝখানে বসে খেলা করছে রাজামশাই। রাজা শিশুটিকে ধমক দিয়ে বললেন, আমার পথে খেলা করে শিশু? সাহস তো কম নয়! এই ছোকরা, সর।

তোমরা সরে যাও। দেখছ না আমি যে রাজা রাজা খেলছি। আমার পুতুলসেনা এখন যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। পথ ছেড়ে দিলে যুদ্ধে যাবে কিভাবে? বলল শিশুটি। সে তার পুতুলসেনাকে যুদ্ধে পাঠাবার জন্য তৈরি করে দিচ্ছে।

রাজা শিশুর কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে গেলেন। এবং বললেন, এই ছোকরা, জানিস কার পথ আগলে বসে আছিস আর কার সাথে কথা বলছিস তুই? শিশুটি কারো দিকে না তাকিয়ে বলল, আমার পুতুল যুদ্ধে যাবে। আমি তাকে রেডি করে দিচ্ছি। তলোয়ার কই খুঁজে পাচ্ছি না। সে মাথা ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক খুঁজে কিছুই না পেয়ে শেষে একটা দুর্বঘাসের ডগা ছিঁড়ে পুতুলের কাঁধে বসিয়ে দিয়ে বলল, এই হলো তোমার তলোয়ার।

যুদ্ধ করে অত্যাচারী রাজাকে পরাজিত করবে। কি পারবে না তুমি? ভয় পাও? কোন ভয় নেই। আমি আছি তোমার সাথে। যুদ্ধ করতে করতে রাজাকে শেষ করে ফেলবে তুমি। তারপর তুমি হবে সেনাপতি আর আমি হব রাজা।

অধৈর্য হয়ে উঠলেন রাজা। তিনি কঠিন গলায় বললেন, এই ছোকরা কত বড় দুঃসাহস তোর। সরবি তো সর নইলে এই তলোয়ারের আঘাতে টুকরো টুকরো করে ফেলব তোকে। শিশুটি বলল, আমি যুদ্ধ করে রাজা মারব। তারপর আমি হব রাজা।

আমি সরব কেন? তুমি চলে যাও ওপাশ দিয়ে। রাজা উত্তেজিত হয়ে আদেশ করল, পিষ্ট করে ফেলো বেয়াদব ছোকরাটাকে। হাতিকে আদেশ করা হলো। হাতি সামনে এগিয়ে গেল। রাজা পেছনে তাকিয়ে দেখে শিশুটি আগের মতোই বসে খেলা করছে।

ব্যাপার কি? আবারও নির্দেশ করল রাজা শিশুটিকে পিষ্ট করার জন্য। হাতি ঘুরানো হলো পিছন দিকে। কিন্তু হাতি শিশুটিকে পিষ্ট না করে হেঁটে গেল। আবারও হুংকার দিয়ে রাজা বলল, শিশুটিকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বুঝিয়ে দাও, রাজার পথ সবার পথ নয়। রাজার পথে থাকলে মরতে হয় পিষ্ট হয়ে।

পথের দুপাশে প্রজাদের বাড়িঘর। প্রজারা ভয়ে যার যার ঘরে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে এসব। তারা এই অত্যাচারী রাজার হাত থেকে শিশুটিকে রক্ষা করার জন্য স্রষ্টার কাছে করুন মিনতি করছে। শিশুটি পথ ছাড়ল না। আপন মনে খেলছে।

হাতি এবারও শিশুটিকে পাশ কেটে চলে গেল। অত্যাচারি রাজা থামলেন। খাপ থেকে সটান বের করলেন তলোয়ার। এবং হাতিকে গালমন্দ করে রাগে কাঁপতে কাঁপতে ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেলেন। রাজা তলোয়ার উচু করে যেই শিশুটিকে আঘাত করতে গেলেন এমন সময় রাজহাতিটি প্যাঁচিয়ে ধরল রাজাকে।

তারপর হাতিটি একটা হ্যাঁচকা টানে অত্যাচারী রাজাকে পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেলল। এবং শিশুটিকে পিঠে তুলে সোজা চলে গেল রাজপ্রাসাদে। শিশুটিকে বসিয়ে দেওয়া হলো রাজসিংহাসনে। অত্যাচারী রাজার বদলে পুতুলরাজার শাসনে রাজ্যে ফিরে এল শান্তি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.