আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অত্যাচারী সূর্যের নীচে মুখোশের মিছিল

ইদানিং খুব ঘাস খাই আর নির্বোধ গরু হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখি,বঙদেশে গরুদের জন্য সব লক্ষীই হাত পেতে আছে । রাষ্ট্র ও সমাজযন্ত্র যখন সংকরিত গরুর গোয়াল ।

কাক ডাকা ভোরে বেড়িয়ে নিজেকে নানা ভাবে প্রবোধ দিলাম এই পৃথিবী অসমতল ভাবলেই অসমতল। নাহলে ইউক্লিডীয়ান সমতল ভেবে নিলে কেউ তো জবাবদিহী করতে আসছে না। গস ,বোলাই ,রীম্যান ,আইনস্টাইনরা একটু কষ্ট পেতে পারে, কিন্তু তাদের থোড়াই কেয়ার করি আমি।

জানি এই ভোরের হিম লাগা বাতসের আনুপূর্বিক লোমকুপ অভিযান, আর থেকে থেকে শিউড়ে ওঠার পর্যায়ক্রমিকতা যদি আমি থার্মোডিনামিক্স দিয়ে ভাবতে চাই তাহলে তা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার অসামান্য উদাহরনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। ঝেটিয়ে বিদায় করছে রাত্রিকে, সূর্য ব্যাটার ঘৃনার ছাপ ভোরের ভাজে ভাজে। গাছের নীচ, দেয়ালের কোন, আর ঘিঞ্জি সৌর বিরোধী জায়গাতে বেচারা রাত তার অন্তিম নিঃশ্বাস নিচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন ভোটকা কট্টর পুজিবাদী মানুষরা আয়েশী ভঙ্গিতে নিজের শরীরের ফ্যাটি এসিডের গ্লিসারল এস্টার কমানোর চেষ্টায় এখানে ওখানে তেলাপোকার মত ছটফট করছে। হাস্যকর লাগে মানুষের এস্টার জারিত করনের এত আতিশয্য দেখে।

আমি সাম্যবাদের তেমন ভরসা রাখি না। রাসেলের মত আমারো বলশেভিকদের স্বেচ্ছাচারী আচরন অনেকটা নিষ্ঠুর ধর্মবেত্তার মত লাগে। আমি জানি ছড়িয়ে পড়তে না দিলে, ঝুকি নিয়ে স্বাধীন প্রবাহের সুযোগ না দিলে জলপ্রবাহ এদো ডোবা হতে বাধ্য। আকাশ কিংবা সাগর সীমানাহীন হতে পারে, আগ্রাসী স্বাধীন বলেই। তারপরও এস্টার জারনে মানুষের অধ্যাবস্যায়ের পাশে হ্যাংগারে ঝোলানো কাপড়ের মত কংকালে ঝোলানো চামড়ার কাগজ কুড়ানো টোকাই তি কিছুক্ষনের মত আমাকে সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক করে ফেলল।

ইচ্ছা হল পুজিপতিদের কাছে তাদের অতিরিক্ত এস্টার ছিড়ে নিয়ে আসি এই টোকাইদের জন্যে। জানি কিছুই করা হবে না আমার। এস্টারের জায়গায় এস্টার থাকবে। টোকাইরা হবে মাঝে মাঝে ভোগবাদী মার্কিন মধ্যবিত্তের অবসরে নিজেকে মানবতাবাদী প্রমানের লক্ষ্যে ফেলা একফোটা ফসফরাসের নির্যাস এর উপলক্ষ্য, নিউইয়র্ক টাইমসের প্রচ্ছদ। দোর্দন্ড প্রতাপে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন গুলো প্রকাশ করবে দুঃখ, আর সমাধান দিবে মুক্তবাজারের নামে আরেকটি মেরুদন্ড কর্তনের রিচুয়াল।

পায়ে হেটে অতিক্রম করে যাই একের পর এক সূর্যের কামড়ে আক্রান্ত প্রতিবেশ কে। রাতের আলো যখন ঘনিয়ে আসে, আধারের চাদর যখন টান টান স্থিতিস্থাপক হয়ে উঠে ,তখন মনের গভীর থেকে সকল মানুষের মাঝে উঠে আসে আত্ন পরিচয়। সমাজের সিসিটিভির আশংকা যখন অর্থহীন হয়ে পরে তখন জেগে উঠে মানুষ। মুখোশ খুলে ফেলে। কেউ ফিরে যায় আত্নপর্যালোচনায়, কেউ অনুভব করে লুকানো ভালোবাসার সুগন্ধ, কেউ সেদিন বাসে কন্ডাকটরের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে মেরে দেয়া দুই টাকা নিয়ে কষ্ট পায়, কেউ শান্তি খোজে নতুন শস্যের মাঠে স্পর্শ করতে করতে এগিয়ে যাওয়ার মত লুকিয়ে যায় নারী শরীরের মেঘের ভাজে ভাজে, কেউ বা স্নায়ু উদ্দীপ্ত রেখে চিতকার করে বেচে থাকার নিদারুন অর্থহীনতাকে গালি দিতে দিতে।

কেউ মানে না সমাজ, সভ্যতা, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন, রাষ্ট্রযন্ত্র, আর সমাজবিজ্ঞানের মোটা মোটা কাগজের স্তুপ। মানুষ হয়ে উঠে আইসোলেটেড ব্যক্তিগত সততার প্রকাশ। রাত্রি অন্ধকারের সাথে নিয়ে আসে আরেকটিবার তীব্র ভাবে প্রত্যেকের একমাত্র “আমি” হওয়ার। এই কাকডাকা ভোরে স্বৈরাচারী সূর্য আবার বিস্ফোরনের মত ছড়িয়ে যায় প্রতিটি মানুষের নিঃশ্বাসে। প্রতিটি স্বত্তা আবার কম্পিত হাতে মুখোশ পরে নেয়।

সুর্যের নীচে মাথা নোয়ায়। সমর্পন করে চিরায়ত আমিত্ব কে। বাসের ভয়াবহ জনসংখ্যা বিস্ফোরনের মাঝে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ভাবতে থাকি এত শব্দ আর তথাকথিত জীবনের স্পন্দন কতটুকু যৌক্তিক। আলো জীবন দেয় না মুখোশ? আলো মৃত্যু ঘটায় ব্যক্তি মানুষের। প্রতিদিন জন্মায় মুখোশ আটা সামাজিক কাঠামো।

এই ভীড়ে হাস্ফাস করতে থাকে বিশাল সমাজের একটি পারিসাংখ্যিক স্যাম্পল। শক্ত এবং নিশ্চিত কোন মুখাবয়ব চোখে পরে না। সবাই কনফিঊজড। কিভাবে সাম্লাবে সব সামাজিক সম্পর্কের ঢাউস বিশ্বকোষ। থেকে থেকে মোবাইল বাজে, ঝড়ের গতিতে কথা, না না অযুহাত।

বিজয় সরণী তেই ঐ পাশের অথোরিটি ফিগার কে বলা বাংলা মোটর। ভীড়ে খুব জড়োসর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। একেবারেই বৈশিষ্ট্যহীন একটি নারী। এতগুলো প্রভু পুরুষ কে একসাথে দেখে দৃষ্টি অবনত। শিখেছে সারাজীবন কতটুকু মূল্যহীন একজন নারী।

কিভাবে বাবা থেকে স্বামীতে মালিকানা বদলের ডাইনামিক্সে যাবে সেই চিন্তা পাম্প করে ঢোকানো হয়েছে মস্তিস্কে। ভীড়ের মাঝে যেন হঠাত ই তৈরী হয় সাময়িক রাত্রির উদাহরন। তাই মুখোশ খুলে ফেলে একজন ব্যক্তিমানুষ ,আবশ্যকিভাবেই পুরুষ, হাত বোলায় মেয়েটির অপরিপক্ক স্তনে। মেয়েটির মুখে মুহুর্তে খেলে যায় নীরব চিতকার। কিন্তু এই সাময়িক রাত্রি কেবল প্রভু পুরুষের জন্যেই।

তাই সামাজিক মুখোশ এটে ঘন কষ্টের সাগরে সাতড়ায় মনুষ্যবিবেক। পুনশ্চ: ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পূর্ব প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.