আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'মূল্যবোধের অভাবে বাড়ছে আপনজন খুনের প্রবণতাও'



নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে পরিবারিক-বন্ধন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে 'যান্ত্রিক' জীবনে বাড়ছে অস্থিরতা ও হতাশা। এমন প্রেক্ষাপটেই সমাজে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চরম হয় এবং খুন-খারাপির মতো ঘটনা বেড়ে যায় বলে অভিমত সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের। এজন্য বিদ্যমান সমাজের বৈষম্য ও পারিবারিক অবহেলা অনেকখানি দায়ী বলে মনে করেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বাবা-মা'র হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে মা-বাবা এবং স্বজনদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের অভিযোগের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এমন মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামসুদ্দিন ইলিয়াস বলেন, "আমাদের দেশে যৌথ পারিবারিক ঐতিহ্য আর নেই। মানুষ দিন দিন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। ভোগবাদ এর পেছনের একটা বড় কারণ। সমষ্টিগত স্বার্থ থেকে যখন মানুষের কাছে ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয় তখন আত্মিক সম্পর্কও তুচ্ছ হয়ে যায়। "পরিবার, সমাজ-রাষ্ট্রের একক; সমাজ-রাষ্ট্রে যা ঘটবে, তারই প্রতিফলন ঘটবে পরিবারে।

" আপনজনকে খুন করার মতো ঘটনাগুলো চলমান সমাজের 'বিকৃত রুচি'র বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন এই মনোবিজ্ঞানী। এই কারণগুলোর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন যোগ করে বলেন, "যান্ত্রিক মানুষের আবেগ ও মূল্যবোধের ধারণায় পরিবর্তন ঘটছে। মানবিক-সম্পর্কগুলোর মধ্যে সম্মান এবং দায়িত্ববোধের অভাব রয়েছে। " তবে দারিদ্র্য এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন কামাল উদ্দিন। দারিদ্র্য বাড়ায় মানুষের মধ্যে খুনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি আজিজুর রহমানও।

পাশাপাশি অপরাধের সাজা না হওয়াকেও দায়ী করেন তিনি। আজিজুর বলেন, "অপরাধীরা দেখছে, অপরাধ করেও পার পাওয়া যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়িত এসব ঘটনা বাড়ছে। " মানবাধিকার ও আইন সহায়তা সংগঠন 'আইন ও সালিশ কেন্দ্র'র তথ্য অনুযায়ী, শুধু পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০১০ সালে সারাদেশে খুন হয় ২৮৮ জন। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিলো ২৩২।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বজনদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজান উদ্দিন মনে করেন, পারিবারিক বন্ধন জোরালো না থাকার পেছনের একটা বড় কারণ যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিকাশ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। যার ফলে তৈরি হচ্ছে 'জেনারেশন গ্যাপ'। যরি ভুক্তভোগী শিশুরা। "শিশুদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও আদর্শের অভাব রয়েছে।

পরিবার থেকেই এসব শিক্ষা দিতে হবে", বলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে- চলতি বছরের ৮ ফেব্র"য়ারি সাতক্ষীরায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মা সরবানু বেগমকে খুন করে সালাউদ্দিন। ২ ফেব্র"য়ারি পিরোজপুরে গৌতম রায় তার স্ত্রী সীমা রায় ও কাকী শেফালী রায়কে দা দিয়ে জবাই করেন। গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় নাজিম উদ্দিন জবাই করে সাংবাদিক মামা ফরহাদ খাঁ ও মামী রহিমা খানমকে। একই দিন যশোরের শার্শায় স্ত্রী আমেনা বেগমকে কুপিয়ে খুন করে আব্দুল হামিদ।

গত বছর ৩০ নভেম্বর রাজধানীতে মা নূরজাহান বেগমকে কুপিয়ে খুন করে তানভির শোভন। ৪ মার্চ ছেলে মাসুমকে কুপিয়ে হত্যা করে আতাহার আলী। মায়ের পরকিয়ার জের ধরে ২২ জুন খুন হয় শিশু সামিউল। বাচ্চাদের শিক্ষাদীক্ষার বিষয়গুলো এখন পাল্টে যাচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, "সমাজে 'ভালোলাগা' 'ভালোবাসার' মতো সূক্ষ্ম-কোমল আবেগ-অনুভুতির অভাব ঘটছে। শিশুদের ওপর অনেক কিছু আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি।

" "শিশুকে তার নিজের মতো করে বাড়তে দিতে হবে, তার ভালোলাগাগুলোকে মূল্য ও মর্যাদা দিতে হবে। আবার একইসঙ্গে পরিবার থেকেই তাকে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাও দিতে হবে", বলেন তিনি। তবে গণমাধ্যমে এসব নেতিবাচক সংবাদ কম প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "ঘটনাগুলো যত বেশি প্রকাশ পাচ্ছে ততই এই প্রবণতা বাড়ছে। সাধারণের মনোবিকাশে গণমাধ্যমকে আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বিষয়টি ভাবতে হবে। "


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.