আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূল্যবোধের অবক্ষয়

শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব হবে মডেল। তাঁর আচার-আচরণ, ব্যক্তিত্ব হবে আলোকিত, অনুসরণীয়। তিনি হবেন শিক্ষার্থীদের কাছে আলোকবর্তিকা। শিক্ষক ঘুণে ধরা সমাজকে, ভুল পথে চলা শিক্ষার্থীকে আলোর পথে, সঠিক পথে নিয়ে আসবেন। প্রতিটা শিক্ষার্থীকে জ্ঞানে-গুণে, চরিত্রে আলোকিত করার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করে। কিন্তু এসব প্রত্যাশার বদলে শিক্ষকদের কেউ কেউ এখন কী করছেন? যা অপকর্ম তারা করছেন তা ভীষণ লজ্জার, অবমাননাকর, হতাশাজনক। শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে লজ্জা পাই, হয়তো ব্যর্থ এজন্য যে, পাসের হার বাড়ছে, ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর; কিন্তু ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি ভালো গুণাবলি, চমত্কার ব্যক্তিত্বের মানুষ তৈরি করতে পারছি না। সবার মতো অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে শুধু ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো গুণাবলির মানুষ হওয়া যায় না; পরিমল তার উদাহরণ। সন্তানকে পরিবারে পড়াশোনার পাশাপশি আদর্শ গুণাবলির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের সমাজে পাপী মেধাবীর প্রয়োজন নেই। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি রাজনীতিবিদদের সামনে থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। অনেক অভিভাবক মনে করেন, দেশে নীতিহীন ছাত্ররাজনীতি, অবক্ষয়ের রাজনীতি, মজবুত আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, দীর্ঘদিন চলতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম দ্বন্দ্বে আমাদের সর্বক্ষেত্রে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে; নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ সুযোগ করে নিচ্ছে, ফায়দা লুটছে। কোনো কিছুই আমরা সুন্দরভাবে করতে পারছি না, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে রূপ পাচ্ছে না, দীর্ঘদিন হতাশার মধ্যে আছি।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আজকে অনেক ছাত্র ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররাজনীতি করা দোষের কিছু নয়, কিন্তু কথা অন্যখানে। ছাত্ররাজনীতির নামে আজকে অনেক ছাত্র মনে করে, এ খাতায় নাম লেখালে জীবনে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। তদবিরে চাকরি মিলবে, খুন-খারাবি করলেও রেহাই মিলবে, টেন্ডার হাতিয়ে অনেক অর্থ মিলবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, সন্ত্রাস করেও মিলবে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ, নারী নির্যাতন করলেও কেউ ধরার থাকবে না। সুস্থ ছাত্ররাজনীতির অভাবে অসুস্থ ছাত্ররাজনীতির প্রলোভনে অনেক মেধাবী ভালো ছেলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে চরিত্রগত, নৈতিক দিক থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ—ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সুস্থ করে গড়ে তুলুন; কোমলমতি ছাত্রদের কেউ যাতে অন্যায়, প্রলোভনের জন্য (যে ধারা বর্তমানে বহমান) রাজনীতি করার সুযোগ না পায়। পচন ধরা ছাত্ররাজনীতির সুযোগে যাতে নৈতিকতাবিরোধী কাজে জড়িয়ে না পড়ে। বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ভাবতে হবে। ছাত্রদের কেউ ব্যবহার করুক তাও চাই না, হতে পারে না।

ভবিষ্যত্ প্রজন্ম যাতে ভালো মানুষ হতে পারে, এজন্য বেশকিছু উদ্যোগ নেবার প্রয়োজন সরকারের, আমাদের সবার। প্রয়োজন প্রতিটি স্কুলে উন্নতমানের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, পর্যাপ্ত বই, পত্রিকা পড়ার সুযোগ করে দেয়া। দেশের বেশিরভাগ স্কুলে সে সুযোগ নেই। প্রাইভেট নিষিদ্ধ করতে চাইলে সরকার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে চমত্কার পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি লাইব্রেরি ব্যবহারের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করলে তারা সেখান থেকে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণ করবে। প্রাইভেট শিক্ষকের বদলে লাইব্রেরি তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে তারা সৃজনশীল, মানবিক, আলোকিত বিবেক-বুদ্ধিসম্মন্ন মানুষ হয়ে উঠবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.