আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রে যখন আর জনগণের কর্তৃত্ব থাকে না



রাষ্ট্রে যখন আর জনগণের কর্তৃত্ব থাকে না ফকির ইলিয়াস ======================================== শঙ্কিত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নিজেই। বললেন, কে বা কারা নাকি আজানের সময়ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিচ্ছে। পানির কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের মানুষের জন্য সমস্যা ডেকে আনছে। এরা কারা? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এর সুরাহা করার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দারা নজরদারি বাড়িয়েছেন।

রাষ্ট্রের উন্নয়নে দলবাজির হীনমন্যতা সব সময়ই বড় অন্তরায়। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন তাদের উচিত মতাদর্শের ঊধর্ে্ব ওঠে দেশের স্বার্থরক্ষা করা। বাংলাদেশে একদল ক্ষমতায় এলে অন্যদলের কর্মচারীদের শায়েস্তা করেন। এটা নতুন ঘটনা নয়। আমলা কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নির্লজ্জ দলীয় সমর্থন বাংলাদেশে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে কালে কালে।

বাংলাদেশে যেন একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার গৌতম রায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঢাকায় নিহত হয়েছেন। হুজি নেতা বিলাত প্রবাসী গোলাম মোস্তফাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হিযবুত তাহরীর প্রধান অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদকেও শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে এই যে অপচেষ্টা চলছে তা দেশের মানুষের জন্য কোন মঙ্গলবার্তা বহন করছে না। বরং দেশের প্রজন্মের মনে ভয়ের আঁধার ছড়াচ্ছে। দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী খুলনায় বিশাল জনসভা করে ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন খুব দূরে নয়। ভোলার শূন্য আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমদ পাস না করলেই আন্দোলনের ডাক দেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বেগম জিয়া। তিনি আরও বলেছেন, এমন মামলা দেয়া হবে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের নেতারা দৌড়ে কূল পাবে না।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্পষ্ট বলা প্রয়োজন মনে করি। ওয়ান ইলেভেনের পর বাংলাদেশে দু'বছর কেটেছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ সময় অনেক মামলা হয়েছে অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও। নবম জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর এসব মামলার অবস্থা কি হয়েছে তা দেখেছে দেশবাসী। রাজনৈতিক মামলা দিয়ে বাংলাদেশে কাউকেই আটকে রাখা যায়নি।

যাবেও না। বিএনপির যেসব নেতা বর্তমানে কারাগারে আছেন তাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জঘন্যতম অভিযোগ রয়েছে। আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, নাসিরউদ্দিন পিন্টুসহ নেতারা কিসব ঘটনার জনক- তা এখনও বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যাননি। বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতির জন্য দায়ী ছিল বিএনপির গোয়ার্তুমি আর হাওয়া ভবনের পাষ-তা। তারা কিছুই পরোয়া না করে রাষ্ট্রপতিকেই 'সংবিধান সমুন্নত' রাখার দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানিয়েছিলেন।

অথচ সেই সংবিধান রহিত করেই ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, তখন কোথায় গিয়েছিল বেগম জিয়ার 'সংবিধান সমুন্নত' রাখার তত্ত্বটি? এবং সেই ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বেগম জিয়াও। চারদলীয় জোটের পরাজয় যেভাবে অনিবার্য ছিল, সেভাবেই তা সম্পন্ন হয়েছে। আরও সত্য হচ্ছে, শত চেষ্টা করেও গেল দেড় বছরে বিএনপি তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সূচনা পর্বটিও শুরু করতে পারেনি। দুই. আমার বারবার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন আর গণমানুষের কর্তৃত্ব নেই।

আর নেই বলেই সরকারি আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ মতবাদী দলের হয়ে জনগণের ওপর চড়াও হচ্ছেন। তারা জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছেন। বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সরকারি আমলা কর্মকর্তারা বিশেষ কোন দলের চাটুকার হয়ে যান না। তারা সরকারের পক্ষে কাজ করেন জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য। জনগণকে তারা কখনোই প্রতিপক্ষ ভাবেন না।

ভাবতে পারেন না। বাংলাদেশে সরকারি ক্যাডার সার্ভিসকে দলীয়করণ করে যে ফায়দা লোটার প্রয়াস দলগুলো চালিয়েছিল, রাষ্ট্র এখন এর কুফল ভোগ করছে। এখানে আরও যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা দরকার, তা হচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতিকরা বাংলাদেশের ক্যাডার সার্ভিসে তাদের লোক বসিয়েছে আরও একধাপ এগিয়ে। ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মিল কারখানায় তাদের অনুসারীদের তারা সেটআপ করেছে গেল ৩০ বছরে। এই যে মৌলবাদী শেকড়ের বিস্তৃতি, তা তারা ধর্মীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে করেছে দলীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য।

এটা খুবই পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্ত চিন্তার যে স্বদেশ গড়ে তোলার কথা ছিল, প্রগতিবাদী রাজনীতিকরা তা করতে পারেননি। ফলে অপশক্তি বিভিন্নভাবে বেড়ে উঠেছে আগাছার মতো। দলীয় বিবেচনায় কোন অপশক্তিকেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। এ উদাহরণটি সৃষ্টি করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। দু'জন বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে সর্বপ্রকার বির্তকই এড়িয়ে যেতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকে। মনে রাখা উচিত, বিচার বিভাগ হচ্ছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। এ বিশ্বাসটি যেন প্রজন্ম ধরে রেখে এগিয়ে যেতে পারে। মানুষ প্রতিদিন যে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখে তা হচ্ছে সৃজনশীল পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন পরিশুদ্ধ মনন।

বেড়ে উঠছে অপশক্তি। সমাজ সংস্কার তো দূরের কথা বরং শুদ্ধ সমাজকে ধ্বংসের জন্য তৎপর হচ্ছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল। যারা জনগণের ইচ্ছেকে ভুলুণ্ঠিত করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করে, এরা কখনোই মানুষের কল্যাণকামী হতে পারে না। এ উপলব্ধিটি এখন খুবই জরুরি। দলীয় মতের ভিত্তিতে নয়, জাতীয় চেতনার আলোকেই দেশপ্রেমিক প্রজন্মের বেড়ে ওঠা বেশি প্রয়োজন।

বাঙালি অনেক কিছুই পারেনি; কিছু পারবে না- এমন হতাশা গণমানুষের স্থায়ী দীর্ঘশ্বাস হওয়া উচিত নয়। নিউইয়র্ক ২১ এপ্রিল ২০১০ ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৩ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- ব্রেন্ডা মারি


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.