আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাস)

সুন্দর সমর

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে।

আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর।

আজ তার ১৮তম পর্ব পরিবেশিত হল। ) ১৮তম পর্ব -‘আর ছেলে অফিসে গেছে। কখন যে ফিরবে তার কি ঠিক আছে। ’ ঝিনু আব্বুর কথা বলে বাকী সবগুলো হলো এ্যাই মেয়েটার ছেলে-মেয়ে। ’ ভাইমনি মাথা নেড়ে হাসতে হাসতে বলেন - ‘ইশ কি মারাত্বক ভুল হয়ে গেলো।

কতদিন পরে এলাম কিনা। তাছাড়া বুড়িয়ে যাচ্ছি সব কি আর মনে থাকে। ’ আম্মুর থুথনি ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়ে বলেন, -‘ তা মা বেচে থাক। সেই কবে ছেটটি দেখেছি। এখন কত বড় হয়ে গেছ।

’ আম্মু মিটিমিটি হাসেন। কি মজা! ভারী মজা! এমন ধারা খেলাটাই খালি খালি হাসি-খুশিতে ভরপুর। খেলার শেষে প্রতিবার ঝিনু ভাবে আম্মুর মধ্যে ঠিক ঠিক এক ঝিনু আছে আর ঝিনুর মধ্যে এক আম্মু না থাকলে কি আর এমন মজার খেলা খেলা যায়। এমন গোমড়া দিনে আম্মু খেলতে রাজি হলে আনন্দের রঙ্গিন প্রজাপতিতে মন ভরে উঠত। আম্মু যদি আঙ্গুরে চাচীর মত বলে বসেন দেশের অবস্থা ভাল না মন খারাপ, খেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

না তেমন কিছুই হলোনা। আম্মু দিব্যি খেলতে রাজি হয়ে গেলেন । ঝিনু যেমন ভেবেছিলো ও মন জুড়ে রঙ্গিন প্রজাপতির ডানার ছোয়া লাগবে। তেমন ছোয়া লাগল না। দেখা গেল খেলা শুরু হওয়া সত্বেও আম্মু গোমড়া গোমড়া হয়ে আছেন।

আম্মু আম্মু খেলার আম্মু রুপী ঝিনু বলে, - ‘এই ঝিনু এত গোমড়া হয়ে রয়েছিস কেনরে?’ -‘ আমার যে কিছু ভাল লাগছে না । ’ আম্মু ঝিনুর মত কাঁদ কাঁদ হয়ে যান। ঝিনুর আঙ্গুর চাচীর কথা মনে পড়ে। ও বলে, - দেশ হল আকাশ। আর মন হল নদী।

আকাশের মেঘ থাকলে কি আর নদীর পানিতে চাঁদ- তারার ঝিকিমিকি দেখা যায়?’ ঝিনুরুপী আম্মু একেবারে অবাক হযে যান। তার এই পাকা পাকা কথ বলা বাচ্চা মেয়েটা যেন এই কদিনে বেশ বড় সড় হয়ে গেছে। আম্মু তার মনের এ কদিনের দুচিন্তাকে যেন আর চেপে রাখতে পারেন না। খেলার ছলে ঝিনুকে জিজ্ঞাস করেন - ‘তা আম্মু দেশের অবস্থা কবে ভাল হবে। ’ ঝিনুও জানে না কবে ভাল হবে।

এ কদিন শোনা টুকরো টুকরো কথার জোড়া দেয় তারপর ও বলে -‘হবে হবে ভাল হবে। ওদের মুখোস সুরোপরিই খুলে গেছে। দেশের লোক চুপচাপ দেখছে কে কোন পর্যন্ত নামে। যিনি যতদুর নামবেন ততটুকুই তাকে ভিজতে হবে। শুধু এইবার সৈন্য জনতার একত্রে এগিয়ে আসার পালা তাহলেই বাদর নাচ শেষ ।

সকাল হওয়ার সময় এসে গেছে। ’ ওর কথা শুনে আম্মুরুপী ঝিনু একটু হাসেন । মনে মনে বলেন, বাচ্ছাদের মুখ দিয়ে নাকি মিথ্যা বের হয় না। উঃ ঝিনুর কথাও যেন সত্যি হয়। আর ঝিনুও অবাক হয়ে যায়।

অনেকের মুখের শোনা টুকরো কথা গুলো জোড়া দিলে যে এমন এক আনন্দে খবর হয়ে যায় ওর জানা ছিলনা । আম্মুর মুখে হাসি ফুটে উঠেছিলো আবার যেন তা হারিয়ে যায়। আম্মু অন্য কিছু চিন্তুা করছেন হয়ত । না আজকের খেলা আর জমে ওঠে না। ঝিনুরুপী আম্মু শেষ বলেই বসলেন -‘ আম্মু আমার ভাল লাগছে না।

আর খেলব না। ’ রাতে বিছানায় যাওয়া অবধি কেবল এই একই কথা ওর ঘুরে ফিরে মনে হতে থাকে। ‘এবার সৈন্যজনতার একত্রে এগিয়ে আসার পালা। তাহলেই বাদর নাচ শেষ। ’ তারপর ও ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে থাকে।

কোথায় যেন একের পর এক পটকা ফাটছে। ঘুম ঘুম চোখে প্রথমে ঝিনুর তাই মনে হলো। ঘুম ভাংগতেই ও চমকে উঠল। আরে এতো গুলি হচ্ছে। ধুপ।

ধুপ। ঠিশ্যু। ঠিশ্যু। টা। টা।

নানা ধরণের গোলাগুলির আওয়াজে ওর বুক ধুকপুক করতে থাকে। বার বার ও শিউরে উঠতে থাকে। জিরো পাওয়ারের ভুত ভুত নীল আলোয় দেখে আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, ভাইমনি সবাই জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আম্মু ওকে পাশে ডেকে বসায়। জিজ্ঞাস করে, -‘কিরে ভয় লাগছে?’ ঝিনু ঘাড় নাড়ে।

-‘জ্বি। ’ আম্মু এবার ওকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকেন। আম্মুর নরম কোলের কোনো তুলনাই হয় না। সুযোগ পেলেই ও আম্মুর কোল জুড়ে বসে গালে গাল ঘষবে। আম্মু ঝিকমিক হেসে পিঠ চাপড়ে বলেন -বেড়াল ।

জবাবে ঝিনু বলে, -‘ তাহলে তুমি মা বেড়াল। ঝিনুর কথা শুনে আম্মুর হাসি আরো ছড়িযে পড়ে। এখন সবাই বিড়বিড় করে দোয়া দরুদ পড়ছেন। আম্মুর কোলেও ঝিনুর হাফ, ধরে যায়। একটা অদেখা অক্টোপাশের মত চারদিক ঘিরে রেখেছে।

গুলির আওয়াজে কান ফেটে যায়। ঝিনু আব্বুর পাশে স্বস্তি খুজে । অথচ এখানেও ভয় । ভয় বাতাসে বিলাই সং-সুং বা বান্দর ওলার মতো তেড়ে বেড়াচ্ছে । যেখানেই যাও নিস্তার নেই।

চিট মিটিয়ে তাড়া করবে। (আগামি সংখ্যায় সমাপ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.