আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাস)

সুন্দর সমর

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে।

আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর।

আজ তার ১৫ তম পর্ব পরিবেশিত হল। ) (১৫ তম পর্ব) বিছানা যেন ধু ধু মরভুমি। আনন্দের সবুজ খেলায় ফিরে যাবার রাস্তা হারিয়ে ঝিনু এখানে এসেছে । এখন শুধু হামাগুড়ি হাবুডুবু আর অস্বস্তি। চোখ মুখ বদ্ধ করে শুয়ে শুয়ে ঘুমের পৃথিবী ঘুরে এস।

অথচ সেখানেও ভয়ের স্বপ্ন বাসা বেধেছে। তার চেয়ে মনে মনে সেই হল্লোড় দিনগুাের আজব মজার গল্পগুলো আউড়ে যাওয়া তাই ভাল । আব্বু যাওয়া তাই ভাল আব্বু সবসময় গম্ভীর গম্ভীর হয়ে থাকলে কি হবে এমনসব বোমা ফাটানো হাসির গল্প করেন যে হাসতে হাসতে পেটের চামড়া কুঁচকে উঠে। চোখে পানি এসে যায় তবুও কি হাসি আর থামে। আম্মুর দাদা সাহেবকে নিয়ে আব্বুর গল্পগুলো কি নেহাত গল্প না সত্যি ঝিনু ভেবেই পায় না।

আম্মুর দাদা সাহেবের এক কাজের ছেলে ছিল। তার নাম ছিলো নপা। ওকে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছেন একবার। এবং ধরলেন ইয়াবড় এক বোয়াল কাছ। ] -‘ইয়া বড় বুঝলাম কিন্তু কতবড় বোয়াল।

’ ঝিনু এ প্রশ্ন করতেই আব্বু বলেন, - ‘আরে বাপু বাকীটুকু শোনই না তাহলে নিজেই বুঝবে। তা যাক সেই মাছ আটকে রেখে ভাবলেন উনি ভাবলেন একটু তামাকু খাওয়া যাক। অমনি হাঁক ছাড়লেন এই নপা নপারে । আরে নপার যে কোন পাত্তাই নেই। গেল কোথায় বদমাশটা ।

না ওইত মিন মিন করে নপার আওয়াজ আসছে। জি হুজুর এইত আমি। আওয়াজ আসে কোথা থেকে। কোথায় সে বদমাস ? হুজুর আমি বোয়াল মাছের পেটে। মাছের পেটে নপা গেল কি করে? হ্যাঁ পানির কাছে নপা যেই না গিয়েছে আর অমনি তাকে আটকে রাখা বোয়াল মাছ তাকে গিলছে।

তারপর আম্মুর দাদা করলেন কি গ্রামের লোকদের ডেকে জড়ো করলেন। তারা সব দাও-বটি- কুড়াল নিয়ে এসে জড়ো হলো। মাছের পেট কেটে তবেই না নপাকে বের করল। আরেকবার আম্মুর দাদা হাট থেকে খাটি দুধ কিনে আনলেন। বাড়ি ফিরে তিনি বিবিকে বললেন একটু দুধের সর ধরত।

সেকি পুরুষ্ট সর। মেহমানদের পাতে দিলেন তারা টেনে ছিঁড়তে পারলেন না। অন্দরে পাঠিয়ে দিলেন। বিবি বাচ্চারাও ছিঁড়তে পারল না। চাকর বাকরদের দিলেন তারা কি ছাই ছিড়তে পারে।

শেষে রেগে-মেগে দুধের সে সব কে বারান্দায় ছুড়ে ফেলা হল। দুটো কুকুর হুমড়ি খেয়ে পড়ে টেনে টুনে ছিড়তে না পেরে হয়রান হয়ে ফিরে গেল। পরে কুড়াল দিয়ে সে সর কেটে কেটে কুকুর বিড়ালকে খেতে দেয়া হলো। এই হল আম্মুর দাদার গালগপ্প। আসলে ঝিনুর আম্মুর দাদা সাহেব মস্ত পন্ডিত ছিলেন।

লোকদেরকে খুশি রাখার জ্ন্যে নাকি এমন ধারা গল্প বানিয়ে বলতেন। ভাইমনি একথাটা বলেছেন। কিন্ত কিন্তু লোকের মুখে মুখে ছড়াতে ছড়াতে এখন দাড়িয়ে গেছে উনিই এসব কানড-কারখানা সত্যি সত্যিই করছেন। আববরু গম্ভীর চেহারার ভেতর এমন অনেক ছাদ কাটানো হাসির গল্প জমে আছে। কিন্তু এখন আর তা বেরোবে না।

কারণ আঙ্গুর চাচী বলেছেন দেশের অবস্থা খারাপ হলে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ হলে কেউ কি আর গল্প বলতে পারে। আজকের দিনটাও গত কয়েকদিনের মতো জং ধরা। ঝিনুরা আজ ভোরে যখন নাস্তা করছে সে সময় মীর্জা চাচা এসে হাজির হন। হায় চাচাকে চেনাই যায় না।

ফেসে যাওয়া বেলুনের মত চুপসে ঝুলে পড়ছে যেনো। বিড় বিড় করে কথা বলছেন। সবচেয়ে অবাককরা ব্যাপার হল যে পানের সেই বিশার ডিব্বাটা নেই। তিনি আর মিনিটে মিনিটে পান খাচ্ছেন না। ঝিনু আজ স্কুলে যায় নি।

স্কুলে যেতে ইচ্ছে করছে না বলার পর আম্মু আর ওকে কিছু বলেন নি। বরং মনে হল ও স্কুলে যেতে না চাওয়ায় আম্মু খুশিই হয়েছেন। তেপান্তরের মস্ত মাঠের মতো ছড়িয়ে থাকা সময় যেন আর ফুরায় না। কোনও এক অদেখা ডাইনির মায়ায় মাঠ শুধু বেড়েই চলে। আপা, মেজ আপা, ভাইয়া, ভাইমনি আব্বু কেউ নেই।

বাসা খালি। ছমছমে। রান্না ঘরে আম্মু কাজ করছে। তার টুংটাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঝিনুর মনে হচ্ছে সে যেন পংখিরাজের ক্লান্ত হয়ে যাওয়া পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

ঘরের কোনায় মাকড়শা জাল বুনছে। ও দৃশ্য দেখে ওর কান্না পেল। তাড়াতাড়ি পুতুলের বাক্স টেনে নিয়ে ও নাড়াচাড়া করতে বসে। কতদিন পুতুল নিয়ে বসে না। নয় মাস তো হবেই।

তারপর হিসেব করে দেখে মাত্তর তিন দিন। তিন দিনকে নয় মাস ভাবছে। ঝিনুর মনে হলো ও অংকে শুন্য পাবে। না পতুল খেলা আর ভাল লাগেন। একসময় সবকিছু দুরে ঠেলে দিয়ে ও উঠে পড়ে।

ঝিনু রুকার বাসার দিকে রওনা হয়ে যায়। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.