আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাস)

সুন্দর সমর

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে।

আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর।

আজ তার ১০ম পর্ব পরিবেশিত হল। ) ‘ঝিনু বাসায় যাবি না রফিক চাচার বাসায় যাবি। ’ ভাইয়া আজ জানতে চায়। রফিক চাচার বাসা মানে আঙ্গুর চাচি। আঙ্গুর চাচি মানে হৈ রৈ রৈ।

ও বাসায় যত ইচ্ছা খেল চোখ গরম টরম করবে না কেউ । রফিক চাচা হলেন আববুর বন্ধু আব্বুর ব্নধু দর চাচা বলতে হয়। আঙ্গুর চাচি প্রথম যেদিন ওদের বাসায় এলেন ঝিনুর নাম জিজ্ঞাস করলেন নামের বানান ধরলেন ঝিনু ঘার উচু করে বানান করল। ঝইকারের ঝি নয়ে ..। আংগুর চাচি থামিয়ে দিলেন।

তারপর ঝিনুর পুতুল সংসারের খোঁজ খবর নিলেন। পুতুল নেড়ে চেড়ে দেখে মাথা নাড়লেন। সব পুরান পুরান পোশাক দেখে বললেন, -‘ টুকরো কাপড় আছে। ’ ঝিনু কিছু কাপড় বের কর দিল। তা দেখে চাচি বলেলেন, -‘হ্যাঁ ওতে হয়ে যাবে।

’ একটু সুতো একটা কাচি নিয়ে বসলেন এবং খানিক পরে সব পুতুলের এতগুলো নতুন কাপড় বানিয়ে দিল। শুধু চাচি কি ঝিনুদের নতুন ডিজাইনের কাপড় বানিয়ে দেননি ? মাসুদ ভাইর বিয়ের আগে দেখা গেল ঝিনুদের কাপড় চোপড় সব পুরান। আপা ফোস ফোস করতে থাকলেন, -‘এমন সব কাপড় পরে বিয়েতে যাব না। ’ অথচ হাতেও সময় নেই। কোনও দর্জি সে সময় কাপড় বানিয়ে দিচ্ছে না।

সব দেখে শুনে আঙ্গুর চাচি মাথা নেড়ে আম্মুকে বললেন, -‘ঠিক আছে আপা আমি বানিয়ে দিব। অত চিন্তার কি আছে। আম্মু শুনেতো অবাক। -‘ তুমি পারবে আঙ্গুর তোমার শরীর না খারাপ ?’ সত্যি তখন চাচি সারা দিন মাঝে মাঝে বমি করতেন। শান্তু তখনও হয়নি।

কিছু খেতে পারতেন না। সে এক কঠিন অবস্থা। তারপরও আম্মুকে বললেন, -‘ওতে কিছু হবে না। আপনি কেবল সেলাই কলটা আর কাপড়গুলো পাঠিয়ে দিবেন। বাকিটা আমি দেখব।

’ তবেই না বিয়ের আগের দিন ওদের হাল ফ্যাশনের কাপড় পরা হয়েছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যাই করনা কেন আঙ্গুর চাচি একটুও বকতে জানেন না । পতুলের বিয়ে দেয়ার কথাই ধর না। সে সময় কনে পুতুলের সাথে কাজের মেয়ে হয়ে কেউ যেতে চায় না । কাজের মেয়ের যা খাটুনি।

কাজের মেয়ে না পাওয়া গেলে কনে পতুলের বিয়ে হওয়াই যে কঠিন। তা ছাড়া বর-পক্ষের কাছে নিজেদের ইজ্জত থাকে না। পতুল খেলার এমন সমস্যাও মিটিয়ে দিলেন আংগুর চাচি। সব শুনে তিনি করলেন কি চমৎকার একটা কাজের মেয়ে পতুল ঝটপট বানিয়ে দিলেন। পতুল বিয়ে দেয়া নিয়ে ঝগড়া হয়েছে।

দু’ দিন আড়ি পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু কাজের মেয়ে পতুল বানানোর কথা কারও মাথায়ই আসেনি। হাড় ঝগড়াটে বরপক্ষ পর্যন্ত ওমন কাজের মেয়ে পতুল পেয়ে বলে, -‘যা বল ভাই ওটা কিন্তু চমৎকার একটা পতুল হয়েছে। ’ এর আগে চাচির এতবড় লিপিষ্টিক দিয়ে ঝিনু কাজের মেয়ে ঝুমকিকে ভুত বানাচ্ছিল। সারা মুখে লিপিষ্টিক ঘসতে ঘসতে লিপিষ্টিক এতটুকু হয়ে যায়।

আঙ্গুর চাচি তা দেখে ডাকতে থাকে - ‘আপা আপা দেখে যান ঝিনুর কান্ড। ’ তারপর জল প্রপাতের মতো হাসিতে ফেটে পড়েন। হো হো হো ঝিনুর মনে হয় চাচি বুঝি হাসতে হাসতে ফিট হয়ে যাবেন। আম্মু সব দেখে শুনে বেজায় ক্ষেপে উঠলেন। ঝিনুকে এই মারেন তো সেই মারেন।

চাচির সামনে এমন বকা ঝকা খেয়ে ঝিনুর আর মুখ রাখার জায়গাই ছিল না। তাড়াতাড়ি চাচি হাসি টাসি থামিয়ে আম্মুকে বলেন, -‘ না আপা ঝিনুকে ধমকাচ্ছেন কেন ওই ধমক দেয়ার জন্য বুঝি আপনাকে ডেকেছি। আরে দেখুন না ঝুমকির অবস্থা কালো চেহারা জুড়ে লাল রংগের দাগাদাগি। একদম ভুতের বাচ্চার মতই মনে হচ্ছে। ’ ঝুমকি ভড়কে যেয়ে কেঁদে ফেলে।

-‘আমার কোন দোষ নাইকা। ঝিনু আপামনি জোর করে এ্যা এ্যা...’ -‘না না তোর দোষের কথা কে বলছে। যত দোষ ওই লিপস্টিকের ঘষলেই ওটা মুখে লাগবে! হ্যা এটা লিপস্টিকের মত কাজ হল। জিনিসটার নাম লিপস্টিক মানে ঠোঁটের লাঠি। ঠোঁট ছাড়া ওটা গালে মাথায় কপালে ভ্রুতে কেনও লাগাবে? এমন নচ্ছার লিপস্টিক আর ব্যবহারই করব না।

’ চাচির ভাব-ভংগি দেখে আম্মু ঝিনুকে ধমক দিতে গিয়ে হেসে ফেলেন। তারপর গম্ভীর স্বরে বলেন, -‘দেখো আংগুর তুমি লাই দিয়ে দিয়ে দিয়ে ওদের মথায় তুলেছ। পরে পস্তাতে হবে। তোমাকে কেউ ভয়ই পাবে না। তোমাকে নিয়ে হাসবে।

’ -‘জ্বি আপা মনের কথাটাই বলেছেন। আমিও চাই না কেউ আমাকে ডর-ভয় পা’ক। আমি কি শিং অলা গরু, নাকি বুনো বাঘ বা হাতি যে আমাকে ভয় পেতে হবে। আমাকে দেখে সবাই হাসুক তাই তো চাই। ’ এই হাসি হাসি স্বভাবটার জন্যই না ওরা সবাই আংগুর চাচিকে ভালবাসে।

আম্মুও সেটা জানেন। আম্মুতো সেই প্রথম প্রথম চাচিকে আপনি আপনি বলতেন দুদিন পর তুমি বলা রপ্ত করেছেন। ঝিনু শুনেছে আম্মু আববুকে বলেছিলেন - ‘এ্যাই শুনছো না,আঙ্গুর কোন কালে নিশ্চয় আমার বোন ছিল। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.