আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাসের ৪র্থ অংশ)

সুন্দর সমর

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে।

আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর।

আজ তার তৃতীয় পর্ব পরিবেশিত হল। ) রাতে বিছানায় যাবার আগে ঝিনু দেখলে আম্মু তখনও জায়নামাজে বসে আছেন। বাইরের দরজায় খিল লাগিয়ে কালো একটা কাঠো ডান্ডাও এটে দেয়া হয়েছে। ঝিনু অবাক হয়ে ভাবে কাঠটা এতদিন ছিল কোথায়? যখন শুধু গুম হাইজ্যাক, খুন, নিখোঁজ, ডাকাতি, রক্ষী বাহিনী আর খেতে চাই আওয়াজ সবার মুখে মুখে শোনা যেত সে সময় আববু রোজ রাতে একটি কাঠ দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতেন। অতগুলো খিল শেকল থাকলে কি হবে আব্বু সব সময় বড় সাবধানী।

আম্মু বসে আছেন জায়নামাজে। যুদ্ধের সময় আম্মুকে একইভাবে বসে থাকতে দেখা যেত্ তসবী হাতে। একনাগাড়ে মুখ নাড়চেন। গল্পটা এতোবার শুনেছে যে জায়নামালে আম্মুকে দেখে ঝিনুর মনে সেই পুরনো ভয়ের দিনগুলোর জেগে ওঠে। আম্মু ওকে হাত নেড়ে কাছে ডেকে নিলেন।

বুকে ফুঁ দিয়ে দিলেন । ঝিনু ঠিক জানে অ-নে-ক রাতে যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখবে নীল আলোর নীচে তখন ও আম্মু জায়নামাজে বসে। হাতে তসবী ঘুরছে। ঠোট নড়ছে । ভয় ভয় লাগলে ঝিনু ডাকবে আম্মু ।

আম্মু জায় নামাজ ছেড়ে উঠে আসবেন ঝিনুর পাশে। আধ শোয়া হয়ে পিট চাপড়ে ঝিনুর ঘুম পাড়িয়ে দিতে থাকবেন। আম্মুকে আকড়ে ধরে ঝিনু আরামে চোখ বুজবে। হঠাৎ টের পাবে আম্মুও ওর মত ভয় পেয়েছেন। আম্মু যে আম্মু সেজন্য কাউকে তা বলতে পারছেন না।

আম্মুকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে ঝিনু হয়ত এক সময় ঘুমিয়ে যাবে। ঝিনু কোনদিন ও বুঝতে পারে না আম্মু কেন ভয় পান। চোখ খুলে ঝিনু চমকে ওঠে, কিয়ামত ! সুর্যির আলো পশ্চিমের জানালা দিয়ে এস চোখে ঝলসে দিচ্ছে । মানুষ যখন অনেক গুনাহ করে ফেলে, আল্লাহ সে সময় সমস্ত পৃথিবী তুলো তুলো করে দেবেন। কিয়ামতের দিন সুর্য পশ্চিম দিক হতে উঠবে ।

কিয়ামত কি শুরু হয়ে গেছে? ঝিনু ভাবে তাকিয়ে দেখে ধ্যাং! ভয় পাবার কিছু নেই। আলো পূর্বের জানালা দিয়ে ঢুকে পশ্চিমের সার্শিতে লেগে ঠিকরে পড়ছে, তাতেই ঝিনু চমকে গেছে। ইশ! বাঁচোয়া এই যে ঘরে কেউ নেই । তা না হলে কি লজ্জাই না দিত। ভাইয়া এ কান্ড শুনলে গরু গরু বলে চেঁচিয়ে নির্ঘাৎ বিদিকিচ্ছিরি করে তুলতেন।

আজকেও ঝিনুর বোড়ানো হল না। ভাইমনি আব্বু কেউ তাকে ডেকে তোলেননি। আসলে ওরা এখন রামগরুড়ের ছানা হয়ে গেছেন। খালি ভারি ভারি কথাবার্তা বলেন। ভোর বেলা বেরোন না।

ঝিনুর ে কি ভালই না লাগে ভোর বেলা বেড়াতে। শীত শীত ঘাসের ডগা খালি পায় আলগোছে সুড়সুড়ি দেয়। কত আজব আজব জিনিস দেখা দেয়। মোটা সোটা ফুলানো বেলুনে মত এক লোক হাচর পাচর করে হাটছে। শনশনিয়ে আসছে চিকুন চাক্কন আরেক লোক ।

বুড়ো জজ সাহেব গোড়া বাধানো লাঠি হাতে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে হাঁটছেন। একটা ঠকের পর আরকটা ঠক হতে হতে ওরা জজ সাহেবকে পাশ কাটয়ে অনেক দুর চলে যায়। তিন নম্বরের ঠক শোনা যায় অনেকখানি পেছন হতে। চর নম্বরের ঠক আর শোনাই যায় না। দু’ একদিন ফুল নিয়ে আসে ওই দিকের বাগান হতে।

মালিটা খুব ভাল । অনেক ফুল দেয় ঝিনুকে । ঝিনু ফুল এন আম্মুকে দেয়। আম্মু সুন্দর তোড়া বানিয়ে ফুল দানিতে পানি দিয়ে খাবার টেবিলে রেখে দেন। আহা! এমন মাজার বেড়ানো বন্ধ হয়ে গেল! ঝিনু একবার ভোরে ভূত দেখেছিলো।

বট গাছের নিচে আধো আধো আলোছায়ায় বসে ছিল। ভূতটা। দেখতে কংকালের মত। বিরাট গর্তের ভেতর জলজলে চোখ। মুখভর্তি ময়লা দাড়ি গোফ ।

কেমন যেন নাকি গোঁ গোঁ আওয়াজ করছিলো । তাই না দেখে ও ভাইমনিকে আঁকড়ে ধরে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে। -‘ভুত ! ভূত!!’ ভাইমনি ঝিনুকে সোজা বুকে তুলে নিয়ে দৌড়ে চলে আসেন। বলেন, -‘দুর বোকা মেয়ে ওটা ভূত নয়, মানুষ। না খেতে পেয়ে অমন হয়ে গেছে।

’ আসলে ভাইমনি ওর ভয় ভাংগাবার জন রেখেঢেকে কথা বলেছেন। বড়রা অনেক সময় ছোটদের ভয় ভাংগাবার জন্য এমন করে। ঝিনু সেটা জানে। ঝিনু তো আর একেবারে ‘নিনি’ বাচ্চা না। অবশ্য সে সময় রোজ রোজ ঝিনু রাস্তায় অনেক মরা দেখতে পেত।

শুকিয়ে চিমসে হয়ে আছে। পেট আর পিঠ লেগে একাকার । খেতে না পেয়ে ওরা মরেছে। কি ভয়ানক শুকিয়ে যেত। অত শুকিয়ে গেলে মরেই যাবে, বট গাছের তলায় ও ভাবে বসে থাকবে কেন? ভাইমনি ঝিনুর এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি।

তবে এরপর ঝিনুকে অনেকদিন বাইরে নিয়ে যাননি আব্বু কিংবা ভাইমনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.