আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উন্মাদ

হঠাৎ করেই শহরে কোত্থেকে যেন এক পাগল এসে ঢুকল। আমি আমাদের বাড়ির ছাদের উপর থেকে তাকিয়ে দেখি মেইন রোডের মাঝখানের সড়ক দ্বীপে এক পাগল। লম্ব-চওড়া। নিগ্রোদের মত গায়ের রং। মাথায় বাউলদের মত লম্বা কুচকুচে কালো ঝাকড়া চুল।

মুখে লম্বা গোফ-দাড়ি। গায়ে একটা সুতা পর্যন্ত নেই। এমন বিশাল দেহী কোনো সুস্থ মানুষও আমি সামনাসামনি কখনও দেখিনি। পাগলটি সড়ক দ্বীপের মধ্যে জমা বালি দুই হাতে তুলে নিয়ে রাস্তার দুইপাশে চলাচল করা বাস, ট্যাক্সি, রিক্্রার ভিতরে ছুড়ে মারছে। এই ধরনের পাগলদের সরানো যাদের দায়িত্ব তাদের খবর নেই।

কেউ যে গিয়ে কিছু বলবে, এমন পালোয়ানের মত পাগলের সমানে যাওয়ার মত সাহসীও কেউ নেই। পাগলটি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো এলাকা গরম করে ফেলল। পরিস্থিতি দেখার জন্য সন্ধ্যার দিকে ছাদে এসে দেখি কারা যেন আমাদের বাড়ির সামনেই ডাস্টবিনের পাশে একটা ট্রান্সফর্মার পিলারের সাথে পাগলটিকে দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে। পরদিন ভোরে নামাজ পড়ে বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি বেধে রাখা পাগলটির সামনে দুই মার্কেটের দুই দারোয়ান দাড়িয়ে কথা বলছে। একজন বলছে, ‘পাগলটার লাইগ্যা খুবই মায়া লাগতাছে।

কালকার থেইকা না খাওয়া অবস্থায় এমনে বাইন্ধা রাখছে। ’ আরেক দারোয়ান বলছে,‘ এই কাম ভুলেও করিস না তরে খাইয়া লাইব একদম। ‘ তাদের কথা শুনতেই শুনতেই আমি ছাদে গিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখি, যে দারোয়ান বাঁধন না খোলার উপদেশ দিয়েছে সে রাস্তা পার হয়ে তার মার্কেটের দিকে চলে যাচ্ছে। আর বাকি জন কী মনে করে পাগলের বাধনটা খুলে দিতেই পাগলটি ঝাড়া দিয়ে উঠে তার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে নীচ থেকে দারোয়ানের থুতনি বরাবর দরাম করে একটা ঘুষি মারল। সাথে সাথে দারোয়ান চোখ উল্টে চিৎ হয়ে পড়ে গেল।

এর মধ্যে আশে পাশের মানুষ এসে দারোয়ানকে যখন ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে তখন আমি দেখলাম পাগলটি প্রেসিডেন্ট রোডের ভিতর দিয়ে চলে গেল। এর পর পাগলটিকে আর কখনো দেখিনি। আমার ফুফু পাগলদের খুব ভয় পায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, দেখেছি পাগলদের রাগ তার উপরই প্রথমে পড়ে। একবার ঘরের ভিতর সবাই বসে রয়েছি।

তখন একতলার ঘরে থাকি। দরজা খোলা। হঠাৎ এক পাগল, হাতে লাঠি নিয়ে, কিছু বোঝার আগেই ঘরের ভিতরে ঢুকে বড় বড় চোখ করে এদিক সেদিক তাকিয়ে সবাইকে বাদ দিয়ে ফুফুকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিল। আমি তাকিয়ে দেখি আমার পাশে বসে থাকা আমার দুই বোন মুহূর্তের মধ্যে উধাও। তখন আমি ছোট, আমিও বাথরুমের দিকে লুকানোর জন্য দৌড় দিলাম।

এর মধ্যে কে যেন পাগলটাকে বাইরে নিয়ে বের করে দিয়ে আসল। আরেকদিন আমার ছোট আপা আর ফুফু গিয়েছে কেনাকাটা করতে। দুজনে সায়াম প্লাজার সামনের ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ এত মানুষ থাকতে একটা পাগল এসে ফুফুর মাথার উপর ঘুষি মেরে চলে গেল। অবাক কান্ড! আগে যখন ঘোরাঘুরি করার স্বভাব ছিল তখন বিভিন্ন রকম পাগল চোখে পড়ত।

পৌর পাঠাগারে এক শিক্ষিত পাগল দেখেছি। সে মোটা একটা বই নিয়ে হাত দিয়ে দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে আর ‘শিরিন,শিরিন’ বলছে। নিশ্চয়ই শিরিন নামের কোনো মেয়ের জন্য সে পাগল হয়েছে। আমি ভাবলাম মেয়েটার না জানি কী বিব্রতকর অবস্থা। এক জন ছিল ছাপড়া দোকান গুলোতে কলসি দিয়ে পানি দিত।

স্বাস্থবান, খেটে খাওয়া মানুষ। শুধু যদি কেউ গিয়ে একবার তাকে বলতে পারত ‘শাবানার জামাই’ তাহলেই শেষ। সাথে সাথে মাথার কলসি পানি সহ আছড়ে ফেলে তাকে ধাওয়া করত। আরেকজন ছিল উত্তর চাষাঢ়ার মোড়ে, এক মহিলা। এমনিতে স্বাভাবিক কিন্তু তাকে কেউ ‘খিচুড়ি রানছস’ বললেই দিগি¦বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে গালিগালাজ শুরু করত।

আশে পাশে তো ফাজিল লোকজনের অভাব নেই। তারাও আসতে যেতে এদের যন্ত্রণা দিত। কেউ রিক্্রা দিয়ে যাচ্ছে, বলল,‘কি খিচুড়ি রানছস?’ কিংবা কোন ফাজিল ছেলে ‘এ্যাই, শাবানার জামাই’ বলে দৌড় দিল। এই কথাগুলোতে তাদের অতীতের নিশ্চয়ই এমন কোন ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় যে তখন তারা আর তাদের মাথা ঠিক রাখতে পারে না। তারা ভয়ংকর মানসিক রোগে আক্রান্ত।

আমাদের উচিত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যে কোন কারণেই হোক মানুষের মন-মানসিকতা এখন এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে পড়েছে যে সেই সহানুভূতিটুকু কারও নেই। সবাই নিষ্ঠুর খেলায় মত্ত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।