আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার দিনগুলি - স্কুলে স্যারদের নিকনেম এবং কৈশোরের দুষ্টুমী

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



[গাঢ়](ব্যাক্তিগত পোস্ট)[/গাঢ়] স্কুল বদলাতে বদলাতে আমার দ্রুত বন্ধুত্ব করার একটা সহজাত দক্ষতা গড়ে উঠেছিল। কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি পরীক্ষার পর একটা নতুন সেকশন করা হয়। E সেকশন নামের সে সেকশনটায় সবাই নতুন। ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই পরিচয় হল, নাঈম, আবির, ফয়সাল এর সাথে। শুরুর দিন থেকেই জিগরী দোস্ত হয়ে গেলাম সবাই।

ফয়সাল ছিল বেশ চুপচাপ টাইপের। অনেক পয়সা ওয়ালার পোলা ছিল, সেটা বোঝা যেত তার সিল্কি স্কুল ড্রেসের মসৃনতায়। আবিরের বাবা ছিল ব্যাঙ্ক কলোনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। কিন্তু খেলাধুলায় ভীষন ভাল ছিল যদিও।

আবির আর ফয়সালের বাসা ছিল একই দিকে। আমার আর নাঈমের বাসা ছিল একই দিকে। আমি আর নাঈম একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম। সেজন্য আমাদের মধ্যে সখ্যতাও গড়ে ওঠে অনেক বেশী। স্কুলে ঢুকে আবিষ্কার করলাম এই স্কুলের পোলাপাইন পাজির পা ঝাড়া।

অল্পদিনেই আয়ত্বে চলে আসল স্কুলের স্যারদের নিক নেম গুলো। আমাদের যিনি ক্লাশ টিচার ছিলেন, তিনি ছিলেন ভীষন শুকনা। সামনের কয়েকটি দাঁতও ছিল না। তাকে আমরা সবাই ডাকতাম বোতল বলে। নামের শানে নুযুল জানি না।

তবে বোতল ডাকলে তার রিয়্যাকশন ছিল দেখার মত। একবার কে যেন দুপুরের টিফিন পিরিয়ডের পর বোতল বলে ডাক দিল। আর দেখে কে, বোতল ছুটে আসল ক্লাশে। এসেই তো চেঁচামেচি। 'এ্যাঁ আমাকে বোতলের মত লাগে? ডু আই লুক লাইক অ্যা বোতল? ...' ব্যাস পোলাপাইনতো আরো মজা পাইল।

এরপর থেকে প্রতিদিন ডাকা শুরু করল তারে। আরেক স্যার ছিল। বাংলায় মাস্টর্াস। ভাল কবিতা লেখতেন। আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন।

পড়াতেনও ভাল। কিন্তু দেখতে ছিলেন ছোটখাট। গাল দুটো আপেলের মতো লাল। ব্যস তার নাম হয়ে গেল আপেল। তাকে এই নামে ডাকলেও ভীষন ক্ষেপতেন।

আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন এক শিক্ষক। তার এক মেয়ে ছিল আমাদের বয়সী। আমার এক বন্ধু অয়ন সেই মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেত। সেই স্যার ক্লাসে আসলেই শুরু হতো ফিচকামী। আমাদের গোঁড়ার শিক্ষা দেন যে শিক্ষকরা তাদের কিভাবেই না আমরা হেয় করতাম।

স্বল্প বেতনে, টিউশনীর টাকার উপর ভর করে টেনে টুনে সংসার চালাতেন সেই সব মানুষ গড়ার কারীগরেরা। আজ তাই তাদের সাথে দেখা হলে সম্মানে মাথা নুয়ে আসে আমার। সেই সময়টায় ভীষন পাজি হয়েছিলাম আমরা। নিয়মিত স্কুল পালানো। এখানে সেখানে যাওয়া, লুকিয়ে বিড়ি সিগারেট টানা, বিভিন্ন বারে ঢু মারা, পতেঙ্গায় নিয়মিত সমুদ্র ভ্রমন এসব করে বেড়াতাম।

কিভাবে যে ফুড়ুৎ করে শেষ হয়ে গেল স্কুলের দিনগুলি টেরই পাইনি। বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটল মেট্রিকের পর পর। কিন্তু এক বন্ধুর ঘটনা না লিখলেই নয়। যখন বুয়েটে পড়ি তখন আবিরের সাইনাসের অপারেশন হবার কথা। সেটা করতে গিয়ে কোন নার্ভ যেন কেটে ফেলে তারা আর চিরতরে হারিয়ে যায় বাবা মা একমাত্র সন্তান হাস্যোজ্জল আবির।

আমরা ঘটনাটা শুনে এতোটাই শকড হয়েছিলাম যে কি করব বুঝে উঠতে পারেনি। দুরে দুরে চলে যায় বন্ধুরা। যোজন যোজন দুরে... (চলতে পারে)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।