জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত। নির্জনতাই বেশী পছন্দ, নিজের ভেতরে ডুবে থাকতেই ভাল লাগে। কিছুটা নার্সিসিস্টও। দু-দিনের নোটিশেই ঢাকা ছেড়ে নেত্রকোণার বিরিশিরি যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। গাড়ি আগে থেকেই রেডী ছিলো।
ড্রাইভারসহ আমরা ১০ জন। হৈ-হৈ করে সবাই নিজের পছন্দমত সিট দখলে নিয়ে বসে পড়ি। ড্রাইভারের পাশের সিটটাই আমার সবসময়ের প্রথম পছন্দ। সেটাতেই বসে পড়লাম। রাত ৮টায় টঙ্গীব্রিজ ক্রস করলাম।
এখান থেকে সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টার জার্নি। উইকেন্ডে জয়দেবপুরের জ্যাম ঠেলে ময়মনসিংহ পৌঁছাতেই রাত ১১:৩০। বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল সেন্টারের রেষ্টহাউজে আমাদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করে রাখা আছে। সেখানকার কেয়ারটেকার আমাদের ময়মনসিংহে থাকাবস্থায়ই ফোনে জানতে চাইলো আমাদের অবস্থান। অবস্থান জেনেই অপেক্ষার কথা জানালো।
ময়মনসিংহ শহরথেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা রাস্তা বামে শেরপুর ও জামালপুরের দিকে, অন্যটা নেত্রকোণার দিকে গেছে। সেটা দিয়ে এগিয়ে শম্ভুগঞ্জ সেতু পার হলেই আবার দুটি রাস্তার মুখোমুখি। বামদিকেরটা বিরিশিরির দিকে গেছে ,আর সোজাটা নেত্রকোণা শহরের দিকে চলে গেছে। আমরা বাঁয়েরটাই ধরলাম। এখান থেকে বিরিশিরি ৩৯ কি.মি.।
কিছুদুর এগিয়েই রাস্তার তথৈবচ অবস্থা দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। সামনে বসাতে গাড়ীর হেডলাইটের আলোতে রাস্তার অবস্থা দেখে কান্না পাচ্ছিলো। গাড়ীকে কন্ট্রোলে রাখতে ড্রাইভার রিংকু মিয়াকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছিলো। রাস্তার কনষ্ট্রাকশন কাজ চলছে। আমাদের গাড়ীর বর্তমান গতি সর্বোচ্চ ১০ কি.মি.।
সবাই বলাবলি করছিলাম এভাবে চললে আগামীকাল সকালের আগে এই ৩৯ কি.মি. পেরোতে পারব না। আমাদের গাড়ি থামিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা একটি গাড়ীর ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম পুরো রাস্তাই কি এরকম কিনা ? উনি পুরোপুরি হতাশ করলেন না। বললেন আরও কয়েক কিলো পার হলে তুলনামূলকভাবে ভাল রাস্তা পাব। আশার আলো নিয়ে আবার সামনে পথচলা।
রাত ১.৩০ টা বাজে।
কিছুটা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎই গাড়ী থেমে যাওয়াতে চোখ খুলে দেখি গাড়ী জ্যামে আটকে আছে। এই অজপাড়ায় এই গভীর রাতে জ্যাম ? গাড়ী থেকে সবাই নেমে পড়লাম। সামনেই একটা বাস পাশের খাদে পড়ে গেছে। গভীর রাতে শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে সেটাকেই কপিকল দিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।
তাদের উদ্ধার সরন্জাম রাস্তার পুরোটা দখল করায় দুদিকেই গাড়ী চলাচল বন্ধ। ক্ষিধে ও ঘুমে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিলো। পাক্কা দুঘন্টা সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হলো। উপায়ন্তর না পেয়ে কিছু সময়ের জন্য আমরাও উদ্ধারকারী দলের সদস্য হয়ে গেলাম। ভাবুনতো, রাত ২ টার সময় উদ্ধারকারী হয়ে গাড়ী উদ্ধার করে যাচ্ছি।
সফল উদ্ধার কার্যক্রমের পরই আমরা আবার চলতে শুরু করলাম।
এবার ভাগ্য সহায় হলো। বাকী রাস্তাটা আগের রাস্তার চাইতে অনেক অনেক ভাল। রাত ৩টায় আমরা রেস্টহাউজে পৌঁছালাম। গিয়েই যার যার রুমে গিয়ে গোসল সেরে সোজা ডাইনিংএ।
সেখানে পুর্বথেকেই অপেক্ষায় থাকা গেষ্টহাউজের কেয়ারটেকার আমাদের খাবার রেডী করে বসেছিলেন। ঝুপঝাপ করে খেয়ে যার যার রুমে গিয়েই ঘুম। খাবার সময়ই ডাইনিংয়ে ঘোষনা হয়ে গেছে আগামীকাল ভোর ৯টায় সবাইকে ডাইনিংয়ে উপস্থিত হতে হবে। খেয়েই ঘোরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া হবে।
তাহলে বাকীটা ছবিতেই বলি -
১) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল সেন্টার
২) সোমেশ্বরী নদীর উপর দিয়ে সেতু থেকে
৩) বিজয়পুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ী
৪)বিজয়পুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ী
৫) বিজয়পুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ী
৬) বিজয়পুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ী
৭) বিজয়পুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ী
৮) সোমেশ্বরী নদী
৯) সোমেশ্বরী নদী
১০) সোমেশ্বরী নদী
১১) সোমেশ্বরী নদীতে নৌকায় আমরা
১২) আমরা কয়েকজনা
১৩) বিজয়পুর চায়না ক্লে খনি
১৪) বিজয়পুর চায়না ক্লে খনি
১৫) বিজয়পুর চায়না ক্লে খনি
১৬) প্রকৃতির মাঝে আমরা, পিছনে খনি থেকে আহরিত চায়না ক্লে
১৭) প্রকৃতির মাঝে গাছের ছায়ায় রাখাল
১৮) সবুজ ধানের ক্ষেতের মাঝে মেঠোপথ
১৯) সাধু জোসেফের রানিখং চার্চ
২০) ১৯৪৬ এর ঐতিহাসিক টং বিদ্রোহের জননী হাজংমাতা রাশিমনি স্মৃতিসৌধ
২১) স্বাধীনতা.......... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।