আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরূপা মল্লিকুমারী

আমি বেড়াতে ভালবাসি। আমার পায়ের তলায় সর্ষে। তবে লেখালিখিটা একদম আসেনা।

আমি ভারতীয় হিন্দু হলেও সব ভারতীয় ধর্মই আমাকে খুব আকর্ষণ করে ৷ প্রাচীন পুঁথিপত্র, ইতিহাস, কিংবদন্তী ও প্রত্নতত্ত্ব আমার নেশা ৷ এখানে ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ জৈন ধর্মের এক ধর্মগুরু ও অপরূপ সুন্দরী মল্লি কুমারীর একটা জনপ্রিয় গল্প দিলাম ৷ জৈন ধর্মের ধর্মগুরুরা তীর্থঙ্কর বলে পরিচিত ৷ মোট ২৪ জন তীর্থঙ্করদের মধ্যে ১৯ তম হলেন মল্লিনাথ বা মল্লিকুমারী বা মল্লি৷ জৈন ধর্মের শ্বেতাম্বর শাখার প্রাচীন পুঁথিপত্র অনুযায়ী মল্লিকুমারী ছিলেন একমাত্র মহিলা তীর্থঙ্কর ৷ আবার জৈন ধর্মের অপর শাখা দিগম্বর মতে মল্লিনাথসহ সব তীর্থঙ্কর পুরুষ ছিলেন ৷ মল্লি প্রথম জীবনে মিথিলা রাজ্যের রাজকুমারী ছিলেন ৷ তাঁর অপরূপ সৌন্দর্য্যের কথা সমগ্র আর্যদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ মল্লি বিবাহযোগ্যা হলে তাঁর জন্য ছয়টি দেশের রাজপুত্র বিবাহের প্রস্তাব পাঠান ৷ কিন্তু মল্লি সবকটি বিবাহের সম্বন্ধই বাতিল করে দেন ৷ এতে অপমানিত হয়ে ছয়টি রাজপুত্র একসাথে মল্লির পিতার রাজ্য আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ পিতার রাজ্যের বিপদ দেখে মল্লি ঠিক করেন যে তিনি ছয়জন রাজপুত্রের সাথে দেখা করবেন ৷ তিনি পিতাকে জানান ছয়জন রাজপুত্রকে আমন্ত্রন জানাতে ৷ এরপর মল্লি একটি প্রাসাদ তৈরী করান যাতে প্রাসাদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মল্লির একটি মূর্ত্তিকে প্রাসাদের মধ্যের ছয়টি ঘর থেকে দেখা যায় কিন্তু ছয়টি ঘরে কে কে আছেন তা একে অন্যরা দেখতে পাবেন না ৷ প্রাসাদের মধ্যের মল্লির মূর্ত্তিটির ভেতরটি ফাঁপা ৷ মূর্ত্তিটির মাথাটা খুললেই ভেতরের খাপটা বেরিয়ে পড়ে ৷ মল্লি প্রতিদিন সেই মূর্ত্তিটির মধ্যে খাবারের ঊচ্ছিস্ট ফেলতেন ৷ কিছুদিন পরেই সেই খাবার পচে গিয়ে দুর্গন্ধ বেরোতে লাগল ৷ মল্লি তখন মূর্ত্তিটিকে পদ্মফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলেন ৷ পিতাকে বললেন যে তিনি রাজপুত্রদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত ৷ তবে প্রত্যেক রাজপুত্রকে আলাদা আলাদা ভাবে নিমন্ত্রন পাঠাতে হবে এবং সাক্ষাতের সময়ও মল্লি নির্ধারণ করবেন ৷ আলাদা ভাবে নিমন্ত্রন পেয়ে প্রত্যেক রাজপুত্রই ভাবলেন শুধু তাকেই বোধহয় নিমন্ত্রন করা হয়েছে ৷ রাজপুত্রেরা মল্লির সাথে দেখা করতে এলে তিনি প্রহরীকে বললেন একে একে ছয়জন রাজপুত্রকে প্রাসাদের ছয়টি কক্ষে রাখতে ও তাদের অলক্ষ্যে কক্ষের দ্বার বন্ধ করতে ৷ ছয় রাজপুত্র নিজ নিজ কক্ষে প্রবেশ করলেন ৷ প্রত্যেকেই নিজের কক্ষ থেকে প্রাসাদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মল্লির মূর্ত্তিটিকে দেখে সত্যি মল্লি ভেবে বসলেন ও তার প্রেমে পড়ে গেলেন ৷ সবাই মুগ্ধ নয়নে মল্লির মূর্ত্তিটির দিকে তাকিয়ে বিভোর হয়ে গেলেন ৷ এমন সময় হঠাৎ মল্লি প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করে মূর্ত্তিটির মাথা খুলে ফেললেন ৷ সারা প্রাসাদ দুর্গন্ধে ভবে ঊঠল ৷ রাজপুত্ররা পালাবার পথ খুঁজলেন ৷ কিন্তু দ্বার বন্ধ ৷ রাজপুত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে জানতে চাইলেন "এ কী ধরনের কৌতুক ? আপনার প্রহরীদের দ্বার খুলতে বলুন ৷ দু্র্গন্ধে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ৷" মল্লি উত্তর দিলেন "হে রাজপুত্রগণ, কিছু মহুর্ত পূর্ব্ব অবধি আপনারা যে পার্থ্বিব শরীরকে পাবার লালসায় বিভোর ছিলেন, এখন তাহলে সেই শরীরের প্রতি আপনাদের মুখমন্ডল ঘৃনায় বিকৃত হচ্ছে কেন?" মল্লি তাঁর প্রহরীদের আদেশ দিলেন দ্বার খুলে দিতে ৷ রাজপুত্রদের দিকে ফিরে মল্লি বললেন "এই দুর্গন্ধ এসেছে সামান্য কিছু পচা খাবার থেকে ৷ এই মূর্ত্তিটির বাইরের সৌন্দর্য্য আপনাদের মুগ্ধ করলেও এর ভেতরের বস্তু কিন্তু পচা আবর্জনা ৷ কে বলতে পারে আমার এই রক্ত মাংসে গড়া পার্থ্বিব শরীরও হয়ত তাই ৷ বাইবের সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হবেন না ৷ মানুষের ভেতবের সৌন্দর্য্যই আসল ৷" রাজপুত্রেরা তাদের ভুল বুঝতে পারলেন ৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.