পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
আমাদের বাগানের গোলাপ
আমার ছোট বেলার এক অপার আনন্দ নিয়ে এসেছিল তিন মাস চন্দ্রঘোনা অবস্হান। আব্বার বদলীর কিছুদিন পরে আমাদেরকেও নিয়ে গেলো সেই অপূর্ব জায়গাটি তে যা আমি আজও ভুলতে পারিনি। আজ তাই আপনাদের কেও জানাই আমার সেই অনুভূতির কথা।
কর্নফুলী পেপার মিলের একটু আগেই ছোট্ট টিলার উপর আমাদের বাংলো। পাথরের ধাপ দিয়ে সিড়ি বানানো।
উঠে দেখি বাশেঁর বেড়ার তৈরী কি সুন্দর বাংলো। চার পাচটা বাশেঁর বেড়াকে একসাথে করে কাঠের ফ্রেমে আটকানো,প্রায় ইটের দেয়ালের মতই মোটা আবার ঘরটা ঠান্ডাও থাকতো, মেঝেটা পাকা। ইলেকট্রিসিটি,ট্যাপের পানি। মোটকথা বড় যে কোনো শহরের চেয়েও এত দুর একটি জায়গায় আরাম আয়েশের কোনো অভাব ছিলনা।
সামনে ফুলের বাগান, অনেক ফুল গাছ তার মধ্যে কি বিশাল লাল লাল গোলাপ ফুটে আছে।
আমি ছোটো বেলা থেকেই একটু প্রকৃতি প্রেমিক।
আমাদের বাসার পেছনে আর পাশে ছিল জন বসতি হীন ছোটো ছোটো পাহাড়ের সারি। বিভিন্ন গাছ আর দূর্ভেদ্য বন জংগলে ভরা ঐদিক দিয়ে চলাফেরা করা ছিল অসম্ভব।
নির্জন নিরিবিলি নিরাপত্তা তিনটি মনে হয় সবারই কাম্য।
আমরা তিন ভাইবোন আর আব্বা আম্মা ঘরে ঢুকলাম।
আব্বা আগেই আমাদের লোক দিয়ে বাসাটা ঘুছিয়ে রেখেছে। বিরাট এক একটা রুম ফার্নিচার সহ। এটা ছিল পেপার মিল তৈরীর জন্য আসা বিদেশী ইন্জিনিয়রদের থাকার বাংলো। এটাচড্ বাথ বেসিন সাওয়ার সব লাগানো। সামনে বারান্দা পেছনে বারান্দা খুব খোলামেলা।
আলো হাওয়া কোনো টারই অভাব নেই।
পাশেই একটা শিউলী ফুলের গাছ প্রতিদিন কাজ ছিল তার ক্লান্তিবিহীন অজস্র ফুল ফোটানো যা ভোর বেলায় ঝড়ে পড়তো। আর আমার কাজ ছিল তা কুড়িয়ে এনে মালা গাথা।
একটু দুরে আব্বার অফিসের দুজন কর্মচারীর বাসা। পেছনে কয়েক হাত দুরে রান্নাঘর যা আমার মা কোনোদিনও ব্যাবহার করেনি।
বাসাতেই কত খালি ঘর তার একটাই রান্নাঘর বানানো হোলো।
পাথরের ধাপ বেয়ে উঠতে আম্মার কস্ট হতো। তাই আব্বা একদিন ক্যাটার পিলার এনে গোল করে ঘুরিয়ে রাস্তা কাটালো। সেদিন যে কি মজা হয়েছিল। আমরা খালি পায়ে ভেজা ভেজা কাদা নয় সেই মাটির রাস্তায় দৌড়ে উঠছি নামছি।
একদিকে বন তুলশীর ঝোপ তার একটা উগ্র বন্য গন্ধ, নাম না জানা কত ছোটো ছোটো ফুল ফুটে আছে ঝোপ ঝোপ গাছ গুলোতে। কি যে সুন্দর আমি যতই লিখি তা ফুটিয়ে তোলার মতন ক্ষমতা আমার নেই।
আমাদের টিলার নীচে সামনেই বেশ বড় মাঠ। ছেলেরা ব্যাডমিন্টন ফুটবল এসব খেলতো। মাঝে মাঝে নীচে এবাড়ি ও বাড়ি যেতাম।
কিন্ত আমার ভালো লাগতো সেই পাশের টিলাটা যাতে ফুটে থাকতো অজস্র বন্য ড্যানডেলিয়ন যার পাপড়ি গুলোকে আমি ফু দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিতাম। প্রায় বিকেলে একা একা পাশের টিলাটায় উঠে বসে থাকতাম আর চেয়ে চেয়ে দেখতাম আর অনূভব করতাম সেই অপূর্ব সৌন্দর্যকে।
আর ভালোলাগতো আমাদের বাগানের সেই বড় বড় লাল গোলাপগুলোর দিকে চেয়ে থাকতে।
চলবে
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।