আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান সমাজে ‌‌‌'জুম্মা' ও দুই 'ঈদের সালাহ' পড়া কতখানি জায়েজ...? দৈনিক জনতা ৩০ শে আগস্ট ২০১২

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বোলেছেন-‘‘যারা আল্লাহর নাযেলকৃত বিধান মোতাবেক শাসনকার্য-বিচার ফয়সালা করে না, তারা কাফের, জালেম, ফাসেক’’। (সুরা মায়েদাঃ ৪৪,৪৫,৪৭) যেখানে দ্বীন এসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকে অর্থাৎ পৃথিবীতে যদি আল্লাহর দেয়া- বিধান, আইন-কানুন ও দন্ডবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হয় তবে তাকে বলা হয় ‘‘দারুল এসলাম”। এখানে অর্থাৎ ‘‘দারুল এসলামে”- জুম্মা এবং দুই ঈদের সালাহ জায়েজ। পক্ষান্তরে- মুসলিমসহ সমস্ত মানবজাতি যদি জাতীয় জীবনে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে- ক) রাজতন্ত্র (রাজা, বাদশাহ, সম্রাটের শাসন), খ) একনায়কতন্ত্র (একনায়ক বা ডিক্টেটরের শাসন), গ) সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ (জগতের একটি বিশেষ শ্রেণীর শাসন) এবং ঘ) ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতার শাসন) মানবরচিত কোন একটি জীবন ব্যবস্থা মেনে নিয়ে জীবন পরিচালিত কোরে তবে তাকে বলা হয় ‘‘দারুল হারব”। যেখানে অর্থাৎ ‘‘দারুল হারবে”- জুম্মা এবং দুই ঈদের সালাহ জায়েজ নয়।

[বেহেশতি জেওর] কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যায়, মুসলিম নামধারী জনসংখ্যাাটি জাতীয় জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তওহীদ অর্থাৎ আখেরী নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপরে যে দ্বীনুল হক, সত্য জীবনব্যবস্থা নাযিল হয়েছে তা বাদ দিয়ে অর্থাৎ আল্লাহর আইন বা হুকুমকে জাতীয় জীবনে না মেনে, ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর দেয়া বিধানের (হুকুম- ’ল এন্ড অর্ডার) কিছু মেনেনিয়ে- যেমন সালাহ (নামাজ), সওম (রোজা), হজ্জ, যাকাত সহ আরো অন্যান্য উপাসনা করছে এবং তাও করছে অনেক পূন্যের কাজ মনে করে। কিন্তু তাদের বিকৃত আকিদার কারণে বুঝতেই পারছে না যে, আসল এবাদত কি? আল্লাহ আরও বোলেছেন- ‘‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো আর কিছু অংশ না করো, তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের প্রতিফল হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা, অপমান এবং আখিরাতে যন্ত্রণাদয়ক শাস্তি’’। (সুরা বাকারাঃ ৮৫) যার ফলে মুসলিম জাতিটির কোন এবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়ার কারণে- সমস্ত মানবজাতিই আজ সীমাহীন অশান্তির মধ্যে ডুবে আছে। এক কথায়, আদম সৃষ্টির সময়ে ইবলিস আমাদের দেহ, মন-মগজে প্রবেশ করে কু-প্ররোচনা দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়ে বনি আদমকে (মানবজাতিকে)-আল্লাহর প্রকৃত তওহীদ (প্রকৃত তওহীদ সম্মন্ধে জানতে”আপনি কি চান যে, আল্লাহ আপনার দোয়া এখুনি কবুল করুক,তাহোলে... ”লেখাটি পড়ুন) থেকে বিচ্যুত কোরে অন্যায়, অশান্তি ও রক্তপাতের মধ্যে পতিত করার যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহকে করেছিল সই চ্যালেঞ্জে আজও ইবলিসই জিতে আছে। কিভাবে? আউরোপের খ্রিস্টানরা মুসলিম জনসংখ্যাকে তাদের পদানত দাসে পরিণত করার পরও এ জাতীর অনেকের মধ্যে তখনও- এসলামের চেতনা, আল্লাহর হুকুমের প্রতি আনুগত্য এবং মুসলিম হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি কিছু হলেও অবশিষ্ট ছিল বিধায় বিভিন্ন স্থানে, এমনকি পাক ভারত উপমহাদেশে স্বাধীনচেতা মুসলিমদের বিদ্রোহ লেগে ছিল।

যেমন ঃ হাজী শরিয়তুল্লাহ ও তার পুত্র দুদু মিয়ার- ’ফারায়েজী আন্দোলন’, ফকির মজনু শাহের- ’ফকির আন্দেলন’, শেষ মোঘল স¤্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের আমলে- ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতবর্ষকে ‘‘দারুল হারব” ঘোষণা করে স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ঘোষণায় হাজার হাজার মুসলিম এসব আন্দেলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন এবং বহুসংখ্যক তাদের জীবন উৎসর্গও করে গেছেন। এর পর খ্রিস্টানরা এ অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে যে পথ বের করলো- তা হলো এই পদানত মুসলিম জাতিকে নিজেদের মতো করে একটি বিকৃত এসলাম শিক্ষা দিতে হবে, যেখানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব (অর্থাৎ তওহীদ ‘‘আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না”) ও জিহাদ (দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ‘‘সর্বাত্মক চেষ্টা”) থাকবে না। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম উপনিবেশগুলোতেও ইউরোপের খ্রিস্টান শাসকগণ এ ব্যবস্থা গ্রহণ কোরলেন। তাদের পরিকল্পনামাফিক এই বিকৃত এসলামে তওহীদ-আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং জিহাদ এই দুটি বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন কোরলো।

‘এলাহ’ শব্দের অর্থ হুকুমদাতার পরিবর্তে ‘মাবুদ বা উপাস্য’ করা হলো, এবাদতের প্রকৃত অর্থ (যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ করাই হলো তার এবাদত) বদলিয়ে- ‘উপাসনা’ আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকে গুরুত্বহীন কোরে বাদ দিয়ে ‘আত্মার বিরুদ্ধে জিহাদ’ হিসেবে পেশ করা হলো। তারা এ কাজে মুসলিমদের মধ্য থেকেও কিছু দুনিয়ালোভী আলেমকে সহযোগী হিসেবে পেলেন যারা ইংরেজ খ্রিস্টানদের তাবেদারী করে এ জাতিকে বোঝালেন যে, ভারতবর্ষ ‘‘দারুল হারব” নয়, ‘‘দারুল আমান” (নিজেদের মনগড়া-বানানো মিথ্যা ফতোয়া)। যেহেতু খ্রিস্টানরা আযান দিতে, নামাজ পড়তে, হজ্ব কোরতে বাধা দিচ্ছে না। তাই জুম্মার সালাহ ও দুই ঈদের সালাহ এখানে কেবল জায়েজ নয় বাধ্যতামূলকভাবেও বটে। তাদের তুমুল প্রচারণায় অধিকাংশ মানুষ এ মিথ্যাকে গ্রহণ কোরে নিল।

এই আলেমরা জানতেন তারা মিথ্যা কথা বলছেন, কিন্তু এই মিথ্যা ছাড়া এ জাতিকে প্রাণে রক্ষা করার আর কোন পথ ছিল না, কারণ ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করে জেতা সম্ভব নয়। এ মিথ্যা কথা বলে তারা জাতিকে জীবিত রাখলেন, কিন্তু আত্মাকে মেরে ফেললেন। তারা বুঝলেন না এইভাবে দাস হোয়ে বেঁচে থাকা উম্মতে মোহাম্মদীর জীবন নয়, কাফেরের জীবন। ব্রিটিশদের দালাল আলেমদের মিথ্যা ফতোয়ায় অনুপ্রানিত হোয়ে তখন থেকেই এই জাতি জুম্মা ও দুই ঈদের নামাজ পড়ে আসছে। আমরা জানি, এসলামের সকল ক্ষেত্রে বিকৃতি অনুপ্রবেশ করেছে।

বর্তমানে বিকৃত আকিদার দৃষ্টিতে জুম্মার সালাহ সহীহ হওয়ার শর্ত সমূহের মধ্যে- একটি হচ্ছে বড় শহর বা শহরতুল্য গ্রাম হওয়া। অতএব, ছোট পল্লীতে বা মাঠে, নদী বা সমুদ্রের মধ্যে জুম্মার নামাজ জায়েজ নয়। যে গ্রাম ছোট শহরতুল্য যেমন হজার লোকের বসতি আছে, তথায় জুম্মার নামাজ জায়েজ। (পৃষ্ঠা-১৯৬, বেহেশতি জেওর) নামাজের আগে জুম্মার খুৎবা পাঠ করতে হয় পরে করলে তা জায়েজ হবে না। প্রতিটি মুসলিমের জামাতে সালাহর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মুসলিম পাঁচবার তাদের স্থানীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্র মসজিদে একত্র হবে, তাদের স্থানীয় সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা পরামর্শ কোরবে, তারপর স্থানীয় এমামের নেতৃত্বে তা সমাধান কোরবে।

ঠিক সপ্তাহের একদিন শুক্রবার বৃহত্তর এলাকার মসজিদে সালাহয় একত্রে হোয়ে ঐ একই কাজ কোরবে। আমরা জানি, দ্বীন এসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকলে তা একজন এমাম/খলিফাকে কেন্দ্র কোরে পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে আমীরগণ শাসন করেন। জুম্মার দিন কেন্দ্রে এমাম নিজেই এবং ঐসব অঞ্চলগুলোর আমীরগণ এমামের দায়িত্ব নিয়ে জুম্মার সালাহ কায়েম করান। খলিফা/এমামের পক্ষ থেকে যে রাষ্ট্রীয় ফরমান ঘোষনা করা হয় সেই ফরমান খুৎবায় পাঠ করেন আমীরগণ এবং কার কার স্থানীয়, জাতীয় ও সমষ্টিগত সমস্যা রয়েছে সেগুলো আলোচনা করে আমীরগণ জুম্মার সালাহর সময়ে এভাবে সমাধান কোরে দিতেন। কিন্তু ১৩০০ বছর আগে খোলাফায়ে রাশেদিন শেষ হোয়ে যাওয়ার পর যখন উমাইয়া শাসকেরা খেলাতকে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রে পরিণত করার পর, জুম্মার সময়ে যে খুৎবা পাঠ করা হতো তা বিগত ১৩০০ বছর ধরে পাঠ করা হচ্ছে।

বর্তমানের তওহীদবিহীন বিকৃত এসলাম আল্লাহর রাসুলের প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত যে বিকৃত এসলাম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ন ব্যর্থ। জুম্মা যে কারণে পালন করা হয় ঈদ একই কারণে উদযাপন করা হয়। ঈদ শব্দের অর্থ হচ্ছে আনন্দ ও খুশি। ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে মুসলিমরা আনন্দ ও খুশির মধ্যে ডুবে থাকে। কিন্তু আজ যেখানে সমস্ত পৃথিবী অন্যায়, অবিচার, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দলে-দলে, মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ, সংঘাত, সংঘর্ষ ও নিরাপত্তাহীনতা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, দুর্নীতি, হত্যা, গুম-অপহরণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতের মধ্যে ডুবে আছে, পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে হত্যা, খুন, সংঘাত, সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ হোচ্ছে না; দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে, দারিদ্রের ওপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের ওপর শাসকের অত্যাচারে, ন্যায়ের ওপর অন্যায়ের বিজয়ে এবং সবলের ওপর ধূর্তের বঞ্চনায় পৃথিবী আজ বসবাসের অযোগ্য হোয়ে পড়েছে।

নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা যেখানে প্রকৃতপক্ষে ঈদ বা আনন্দ, খুশি হয় না। সারা দুনিয়ায় মুসলিম জাতি এখন পরাজিত, অপমানিত এবং এই পরাজিত দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ জাতির কোন ঈদ হয় না। ঈদের প্রধান শর্ত হচ্ছে স্বাধীনতা। তারপরেও গতানুগতিকভাবে ঈদ পালিত হয়। সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গত কয়েক শতাব্দী ধরে রাজতন্ত্র (রাজা, বাদশাহ, স¤্রাটের শাসন), একনায়কতন্ত্র (একনায়ক বা ডিক্টেটরের শাসন), সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ (জনগনের একটি বিশেষ শ্রেনীর শাসন) এবং গণতন্ত্র (জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতার শাসন) ইত্যাদি একটার পর একটি তন্ত্র-মন্ত্র, ব্যবস্থা প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে; শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন নামে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে এবং সর্বশেষ সব ধর্মের মানুষ প্রার্থনা করে যাচ্ছে।

কিন্তু তারপরেও নতুন শতাব্দীর একদিনও যায়নি যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত ও রক্তপাত হয়নি কিংবা হোচ্ছে না। সম্প্রতি সিরিয়ার অবস্থা, সেখানে হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষ ও শিশুর রক্তে পৃতিবীর মাটি প্রতিদিনই লাল হচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার সকল পন্থাই আজ ব্যর্থ। কারণ মুসলিমসহ সমস্ত মানবজাতি আজ এসলামের ভিত্তি তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব থেকে বহিষ্কার হয়ে জাতীয় জীবনে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে বিকৃত এসলাম এবং রাজতন্ত্র (রাজা, বাদশাহ, স¤্রাটের শাসন), একনায়কতন্ত্র (একনায়ক বা ডিক্টেটরের শাসন), সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ (জগতের একটি বিশেষ শ্রেণীর শাসন) এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতার শাসন), ভৌগলিক জাতীয়তা, রাষ্ট্রীয় সীমানা, আইন-দন্ডবিধি, শিক্ষানীতি, সুদভিত্তিক ব্যংকিং ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য অর্থনীতি-ঋণ, জাতিসংঘ, জীবনযাত্রার মান, ব্যবসা-বাণীজ্য, সংস্কৃতি-মূল্যবোধ, মারণাস্ত্র, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, খনিজ সম্পদ, অবরোধ, মিডিয়া এবং বিকৃত এসলামি দলসহ মানবরচিত জীনবব্যবস্থা মেনে নিয়ে তাগুত হয়ে আছে। মানবজাতির জন্য শান্তির উপায়, মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে- তাদের জাতীয় জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তওহীদ অর্থাৎ আখেরী নবী মোহাম্মদ (সাঃ) উপরে যে দ্বীনুল হক, সত্য জীবনব্যবস্থা নাযিল হয়েছে তা মেনে নেয়া।

যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ১৪০০ বছর আগে এসলামের স্বর্ণযুগে এই দ্বীন মানবজাতিকে এমন অতুলনীয় শান্তি দিয়েছিল যে, অর্ধেক পৃথিবীর কোথাও পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও সমাজে বলতে গেলে কোনই অপরাধই ছিল না। সুন্দরী যুবতী নারী অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ একা পাড়ি দিত, তার মনে কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হতো না, রাস্তায় ধনসম্পদ ফেলে রাখলেও তা খোঁজ করে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা রাহাজানি প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে বছরের পর বছর কোন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রতিটি মানুষ সচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই সচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, যাকাত ও সদকা দেয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেত না এবং তা সম্ভব হয়েছে এসলামের যাকাতভিত্তিক অর্থনীতির কারণে। এটা ইতিহাস।

আর মানবরচিত সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ জীবন-বিধান বিগত কয়েক শতাব্দী, এমনকি নতুন শতাব্দীতেও এর একটি ভগ্নাংশও দিতে পারেনি। সেই অনাবিল শান্তির সমাজক যদি আমরা ফিরে পেতে চাই তাহলে এসলামের মূল ভিত্তি বিশ্বব্যাপী তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। আল্লাহর সত্যদ্বীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে মানবজাতি এনশা’আল্লাহ এই শ্বাসরুদ্ধকর অশান্তিময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। বিশ্বে থাকবে না কোন জাতি ও বর্ণের ভেদাভেদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনীতির নামে দলাদলি, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস। সমস্ত আদম সন্তান একটি মাত্র জাতিতে পরিণত হবে, সকল ধর্মের লোক সমান সুবিচার ও সমান অধিকার পাবে।

পৃথিবী থেকে নির্মূল হোয়ে যাবে অন্যায়, অবিচার, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বোকারত্ব, হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতা। পৃথিবীতে তখন আর বিকৃত এসলাম থাকবে না। প্রতিষ্ঠিত হবে ১৩০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই বিশ্বনবী (সাঃ)- এর প্রকৃত এসলাম। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বোলেছেন, পৃথিবীতে এমন কোন ঘর বা তাঁবু থাকবে না যেখানে এসলাম প্রবেশ না কোরবে। [হাদিস- মেকদাদ (রাঃ) থেকে আহমেদ ও মেশকাত] একমাত্র এসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকলেই তখন ঈদ স্বার্থক হবে, দুই ঈদ ও জুম্মার সালাহ জায়েজ হবে।

যেখানে সমস্ত পৃথিবী তাগুতের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে, সেই কুফর ও মোশরেকী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ‘‘দারুল হারব”; তাই এখানে জুম্মা ও ঈদ জায়েজ নয়। জুম্মার নামাজের মাসআলা সমূহের বয়ানের মধ্যে অন্যতম মাসআলায় বলা হয়েছে, কোন কোন ব্যক্তি জুম্মার নামাজের পর এতহিয়াতুয যোহর নামে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ পড়ে থাকে, যেহেতু সর্বসাধারণের আকিদা এর কারণে অনেক নষ্ট হোয়ে যাচ্ছে, তাই তাদেরকে একেবারে নিষেধ করা দরকার। অবশ্য কোন আলেম যদি পড়তে চায়, তবে এভাবে পড়বে, যেন কেউ জানতে না পারে। (বেহেশতি জেওর, পৃষ্ঠা-২০২) অর্থাৎ জুম্মার পর আলেমদের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত যোহরের এই নামাজ চুপি চুপি পড়তে হবে যাতে মুসল্লিগণ জানতে না পারে এই মর্মে মাসআলা দেয়া এটাই প্রমাণ করে যে, ‘‘দারুল হারবে” জুম্মা হয় না। ঈদও তাই।

‘‘দারুল এসলামে”ই জুম্মা ও দুই ঈদের সালাহ জায়েজ। আসুন মহান আল্লাহর এই মহাসত্য মেনে নিয়ে রাসুলাল্লাহর সেই অনাবিল শান্তিময় এসলামে প্রবেশ করে নতুন প্রজন্মকে উপহার দেই ‘‘অনাবিল শান্তিময় এক নতুন পৃথিবী”। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.