বিচার বিভাগটি প্রতিনিধিত্বশীল দলের প্রভাবমুক্ত না-থাকার কারণে আমি চিহ্নিত অপরাধকর্মী হ’য়েও সাময়িক মুক্তি পাই। দলের প্রভাবের কল্যাণে সহজেই বার বার জামিনে মুক্তি পাই, কিন্তু বেকসুর খালাস পাই না। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনধারী হিসেবে যতদিন আমার জামিনদারের দলটি থাকে, আমি চেহারায়-পোশাকে মানুষের মতো সেজে জীবনটাকে মানুষের মতো উপভোগ করি; তবে, আমার জামিনদারের দলটি সংসদ
ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে বাদীরা আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, -আমাকে নরকের যন্ত্রণা ভুগতে হয়; আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের সহযোগী বাহিনীর নজরকে নজরানা দিয়ে দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য যা-কিছু করি, -তা হচ্ছে, -একটা অপরাধকে ঢাকতে গিয়ে আর একটা অপরাধ করতে বাধ্য হই।
আমি জানি যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে অর্থাৎ প্রভাব-নিরপেক্ষ থাকলে আমি আমার প্রথম অপরাধের শাস্তি পেয়েই মুক্তি পেতাম; অন্তত আমাকে আতঙ্কভরা পলাতক জীবন যাপন করতে হতো না কিংবা আমাকে আমার জামিনদারের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হতো না।
আমি জানি যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে, আমি জামিনে থাকাকালীন অবস্থায় আমার অপরাধের দায়ভার আমার জামিনদারকে বহন করতে হতো।
নরকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তিকামী আমি চাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
জামিনে মুক্ত অবস্থায় জামিনদারের পক্ষে কাজ না-ক’রে আমার উপায় থাকে না। সম্ভবত আমার জামিনদার ভাবে যে, আমি সংশোধিত হ’লে তার মুখোশ খুলে দেবো, তাই আমি সংশোধিত হ’তে চাইলেই আমার অপরাধ-কর্মের সাক্ষ্য-প্রমাণসহ আমারই জামিনদার আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। আমি তাকে বোঝাতেই পারি না যে, আমি কখনোই তার নোংরা রূপটা প্রকাশ করবার উদ্দেশ্যে সংশোধিত হ’তে চাই না, তাছাড়া আমি আমার নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হবার জন্য জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরটার মতো যেভাবে ছোটাছুটি করি, -সেখানে অন্যকে বিপদে ফেলার জন্য কৌশল খাটানোর চেষ্টা করবো! -এমন ভাবনা ভাবতে পারে কেবল উন্মত্ত নরাধমেরা।
আমি যাদের ক্ষতি করেছি, তারা হয়তো বা আমাকে ক্ষমা ক’রে ছেড়েও দিতে পারেন; আমি আর কখনো অপরাধ করবো না, -এব্যাপারে আমার ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিপক্ষের আস্থা অর্জন ক’রে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইলে তাঁরা আমাকে ক্ষমা ক’রে দিতেও পারেন; আমি যাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতাম, এখন থেকে আমি পাহারাদার হিসেবে থাকবো, যাতে তাদের আর কোনো ক্ষতি না-হয়, -এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে যদি চলতে পারি তো আশা করা যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আমাকে দয়া ক’রে কোনোদিন ক্ষমা ক’রে দিতে পারেন, -এ বিশ্বাস কেবল আমার নয়, আমার মতো অনেকের।
নরকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তিকামী অনেকের মতো আমিও চাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
আমি জানি, জনসাধারণ আমাদেরকে ক্ষমা করবেন, কিন্তু আমাদের আতঙ্কিত জামিনদারেরা আমাদেরকে জিম্মি হিসেবে বেঁধে রাখতে চাইবে।
আর এমন পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য উদার জনগণকেই একমত হ’তে হবে, যারা আমাদের জামিনদারদেরকেও সাধারণ ক্ষমা এভাবেই ছুড়ে দেবেন যে, -বিগতকালীন কোনো দলীয় অপরাধকর্ম স্বাধীন বিচার বিভাগের আওতায় পড়বে না, -ক্ষমা, জনসাধারণ ক্ষমা করবে; -তবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পর যখন কোনো দলীয় অপরাধ ঘটবে, আর কোনো ক্ষমা নয়, -ঐ দলের নেতাকে বিচার বিভাগের মুখোমুখি হ’তেই হবে।
( দলীয় প্রভাবের কল্যাণে যারা দেশের বা সমন্বিত দশের সম্পদের অবৈধ মালিক বা ইজারাদার হয়েছে তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা দেবে। আমি আশা করবো ওদের অবৈধ সম্পদগুলো যেন কেড়ে নিতে গিয়ে নষ্ট ক’রে ফেলা না-হয়।
আপনারা ওদের যোগ্যতা আর দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানেন। আরও জানেন যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হ’লে ঐ সম্পত্তিগুলোই ওদের যন্ত্রণার কারণ হবে, --যেমন সকলেই জানি, একটা বানর মুক্তোর মালা পেলে কোথায় কীভাবে কাজে লাগাবে, এই জ্ঞানটুকু না-থাকার কারণে কোনো এক সময়ে বিরক্ত হ’য়ে মালাটা ছুড়ে ফেলে দেবে, ততক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকতেই হবে। ওটা যদি কেড়ে নিতে চান তো কাড়াকাড়িতে ছিঁড়ে যাবে, -মালাটা নষ্ট হ’য়ে যাবে।
তবে, -আমার জামিনদারেরা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জবরদখল ক’রে থাকলে সেই ব্যক্তিমালিক ঐ সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফেরত নিতেও পারেন, -করুণা ক’রে দাবি ছেড়েও দিতে পারেন, -এটা তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার এবং এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি-অধিকার স্বাধীন বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই সংরক্ষণ ক’রে যেতে বাধ্য। )
আমি চাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, -যেখানে কোনো প্রভাবক কোনোভাবেই প্রভাব খাটাতে পারবে না।
সংশোধনকামী এই আমি এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন না-হ’লে এর সম্পূর্ণ দায়ভার জনগণের উপরেই বর্তাবে। আমার মতো অনেকেই যারা নরকের জ্বালায় জ্বলছি, আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঐ যন্ত্রণার আগুনে সভ্য-সাধারণেরা জ্বললে, -আমার মতো অপরাধকর্মীরা দায়ী নয়। বরং আমি দাবি করতে পারি যে, দায়ী ঐ ক্ষণস্থায়ী-প্রতিনিধি নির্বাচনকারী সকল স্বাধীন সাধারণ জনগণ, যারা ক্ষমাশীল হ’য়ে চাইলে, তবেই আমাদের জামিনদারদের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীনতা পেতে পারে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।