আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দায়মুক্তি (গল্প)



-হ্যালো......হ্যালো-হ্যালো......কথা বলছেন না কেন? -স্যরি, এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য। শুয়ে পড়েছিলেন নাকি? -না না, আমি এতো তাড়াতাড়ি বিছানায় যাই না.... -তাহলে কী লিখছিলেন? -এই আরকী। কিন্তু আপনাকে কী আমি চিনি, মানে আপনি কে বলছিলেন? -আমি...., মানে আমি আপনার একজন ভক্ত। সত্যি আমি খুবই দু:খিত এতো রাতে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আপনি লিখছিলেন.....আসলে আপনার গল্পগুলো আমার খুবই ভালো লাগে।

অনেক কষ্টে আপনার ফোন নম্বর জোগার করেছি। আজকে ঝোঁকের মাথায় ফোন করে ফেললাম। আমি আসলেই বুঝতে পারিনি এতোটা রাত হয়েছে। এখন তাহলে রাখি... -আরে না না, বিরক্ত হইনি। রাতের বেলা ভক্তের ফোন, তাও আবার তরুনী, এতে বিরক্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

এমনিতেই একা একা বোরড্ হচ্ছিলাম। লেখাও এগুচ্ছিলো না। এই মুহুর্তে একটা ব্রেক দরকার ছিল। একদম ঠিক সময় আপনি ফোন করেছেন। আমার কোন গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে? -উমমম, দাঁড়ান, একটু সময় নিয়ে ভেবে বলি।

আচ্ছা আপনি যদি একটা গোলাপ বাগানে যান যেখানে থরে থরে ফুল ফুটে আছে, নানা রঙের, নানা আকারের গোলাপ, সেখানে আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোন ফুলটি বেশি সুন্দর, আপনি কী জবাব দেবেন? -উরেব্বাবা! আপনি তো আমাকে রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দিচ্ছেন। না ভাই, আমি অতো বড় লেখক নই। এতোটা প্রশংসা পাওয়া যোগ্যতাও আমার নেই। সবেমাত্র দুটি বই বেড়িয়েছে, কিছু পত্রপত্রিকায় টুকাটাক লেখা ছাপা হচ্ছে; এই যা। কিন্তু তাই বলে............ -লেখকদের কিন্তু বিনয় মানায় না।

কবি-লেখকদের চরিত্রের সঙ্গে অহঙ্কারী ভাবটি কিন্তু বেশ মানিয়ে যায়। তারা তাদের সৃষ্টি নিয়ে অহঙ্কার করবে। -আবারও লজ্জা দিচ্ছেন। -আচ্ছা, আপনার গল্পগুলো পড়ে আমার মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই উঁকি দেয়। যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে প্রশ্নটি করতে পারি।

-না না, মনে করার কী আছে! বলুন কী জানতে চান। -আপনার অধিকাংশ গল্পের বিষয়বস্তুই অলৌকিক আর অতিপ্রাকৃত ঘটনা। এগুলো কী আপনার নিজের বা পরিচিতদের জীবনের বাস্তব ঘটনা, নাকি নিছকই আপনার কল্পনা। -হা হা হা........গল্পতো গল্পই। এর সঙ্গে বাস্তবের মিল কোথায়? বিশেষ করে ভুতের গল্পে বাস্তবতা খোঁজা...........সত্যিই আপনার কথায় বেশ মজা পেলাম।

-ন্ না, মানে আপনি এতোই বিশ্বাসযোগ্যভাবে গল্প লিখেন, মনে হয় কেউ তার বস্তব জীবনের ঘটনা বর্ননা করছে। তার উপর আপনার বেশিরভাগ গল্পই নিজের জবানিতে লেখা। -ও, সেটা তো মাঝে মাঝে করতে হয় গল্পকে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপনের জন্য। এটা নিছকই গল্প লেখার একটা কৌশল। এর বাইরে কিছু না।

মানে আমি বলতে চাইছি, নাম পুরুষে গল্প লিখলেই কিন্তু সেটাকে লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা বলে ধরে নেবেন না। -আচ্ছা এবার আরেকটি প্রশ্ন.. -দাঁড়ান দাঁড়ান, আপনি আবার কোনো পত্রিকার সাংবাদিক ননতো? যেভাবে প্রশ্ন করছেন, মনে হচ্ছে আমার সাক্ষাতকার নিচ্ছেন.....হা হা হা...না না কিছু মনে করবেন না, একটু মজা করলাম। আপনার প্রশ্নটা বলুন। -ও হ্যা, যা বলছিলাম, আপনি নিজে কী কখনো কোনো ভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। মানে বাস্তব জীবনে আপনি কী ভুত দেখেছেন? -তার আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন, আপনি কী কখনো ইউএফও দেখেছেন? ভিন গ্রহের মানুষ দেখেছেন? কিংবা নিদেনপক্ষে উড়ন্ত কার্পেট, আলদীনের যাদুর চেরাগ? এসব প্রশ্ন করার মানে হচ্ছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক গল্প লেখা হয়েছে, কিন্তু আমরা সবাই জানি বাস্তবে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।

সেরকমই ভুত-প্রেত কিংবা অলৌকিক বিষয় নিয়ে অনেক গল্প লেখা হয়েছে। তা বলে সত্যি সত্যি ভুত বলে কিছু আছে, এটা বিশ্বাস করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। -তার মানে আপনি ভুতে বিশ্বাস করেন না? -একেবারেই না। কখনো যদি একটা ভুত সরাসরি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে বিশ্বাস করলেও করতে পারি। তবে সে ক্ষেত্রেও সন্দেহ থাকবে, ঘটনাটি আমার হেলুসিনেশন কীনা! -যে বিষয়টি আপনি একেবারেই বিশ্বাস করেন না, সেটি নিয়ে একের পর এক গল্প লিখে পাঠকদের বিভ্রান্ত করছেন- এই কাজটি কী ঠিক হচ্ছে বলে মনে করেন? লেখক হিসেবে কী আপনার এতোটুকু দায়িত্ব নেই? -আহা চটছেন কেন? আগেইতো বলেছি, বিশ্বসাহিত্যে এমন অনেক বিষয় নিয়ে গল্প আছে যার সঙ্গে বাস্তবের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

তার মনেই কিন্তু পাঠকদের বিভ্রান্ত করা বা ধোঁকা দেওয়া নয়। -আপনি বিষয়টিকে যেভাবেই ব্যখ্যা করেন, আমি কিন্তু বলবো আপনি আপনার পাঠকদের ঠকাচ্ছেন। তবে এ ব্যপারে আমি আপনাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারি। পাঠকদের বিভ্রান্ত করার দায় থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারি। -বাহ্ বেশ ইন্টারেস্টিং তো! প্রথম কথা হচ্ছে আমি মনে করিনা, আমি পাঠকদের কোনোভাবে ধোঁকা দিচ্ছি বা বিভ্রান্ত করছি।

সুতরাং এ বিষয়ে আমার কোনো দায় থাকার প্রশ্নই উঠে না। তবে আপনার কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছি। আচ্ছা, তর্কের খাতিরে ধরেই নিচ্ছি আমি পাঠকদের বিভ্রন্ত করছি। এবং এ ব্যপারে আমার দায় রয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কিভাবে সেই দায় থেকে আমাকে মুক্তি দেবেন? -এটাতো খুবই সহজ। আপনাকে ভুতের অস্তিত্বের প্রমাণ দেবো।

তাহলেই আপনি বিবেকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবেন। এতোদিন যেসব ভুতের গল্প ফেদেছেন, তা আষাঢ়ে গল্প নয়, বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব। -ওয়াও!! দিন না একটা ভুতের সঙ্গে মোলাকাত করিয়ে। অনেক দিনের শখ, একটা ভুতের ইন্টারভিউ নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে গল্প লিখবো.....এতো বড় সুযোগ হেলায় হারাতে চাই না। প্লিজ, দিন না একটা ব্যবস্থা করে.. -ও; আমার কথায় বেশ মজা পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে! আচ্ছা, আপনার হাতের মোবাইল ফোনটার দিকে একটু ভালো করে তাকান তো।

এটা দিয়ে কী সত্যি কথা বলা সম্ভব? অথচ প্রায় আধ ঘন্টা ধরে আপনি আমার সঙ্গে দিব্যি গল্প চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরেও কী বলবেন, অলৌকিক কিছুর অস্তিত্ব নেই। -মানে! আপনি কী বলতে চাচ্ছেন.... কথা শেষ না করেই ঝট করে হাতে মোবাইল ফোন সেটটা কান থেকে সরিয়ে চোখের সামনে আনেন শখের গল্পকার আজমল হুদা, যিনি আজমল অরণ্য নামেই পাঠকদের কাছে পরিচিত । একি! এটা তো বহুদিন আগেই বাতিল করে দেওয়া নকিয়া মোবাইল ফোন সেট। তিন বছরের ছেলে সৌরভের খেলনা হিসেবে বাতিল এই সেটটি ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ছয় মাস ধরে।

পরিষ্কার জানেন কিছু নেই, তার পরেও সেটটি উল্টে এর ভেতরে সিম কার্ডের সন্ধান চালান আজমল। কিন্তু সেটটিরতো ব্যটারিই নেই, নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন......তার পরেও কীভাবে এটি দিয়ে এতোক্ষণ দিব্যি আলাপ চালালেন?? কুল কুল করে ঘামতে থাকেন আজমল হুদা। বুকের বাঁ পাশটায় একটা কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করেন। হাতটা অবশ হয়ে আসে। এর মধ্যেই মনে মনে ভাবেন, আজকের এই অভিজ্ঞতাটিকে যদি সত্যি ঘটনা বলে পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়, তাহলে পাঠকরা কী সেটা বিশ্বাস করবে? পাঠক যদি আজমল হুদার মতো হয় তাহলে কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।

এই অবস্থাতেও ঠোটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠে আজমল হুদার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.