আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ আসসালামু আলাইকুম। ধারাবাহিক আলোচনার পর্ব-৩ চেষ্টা করব সংক্ষিপ্ত ভাবে প্রকাশ করতে যেন পাঠক গণ বিরক্ত বোধ না করেন পড়তে।
৪১) জন্মদাতা পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধু-বান্ধবকে কাছে আনয়নঃ
এটাও কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন যে, বন্ধ বান্ধবের সাথে সারাদিন বসে গল্প করবে, তাদেরকে কাছে ডাকবে।
কিন্তু পিতার সাথে যে দু একটি কথা বলবে, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করবে, তার মনে প্রশান্তি দিবে, তার কাছ থেকে দোয়া নেবে- এ যেন মহা বিরক্তিকর বিষয়। বিশেষত পিতা যদি বয়োবৃদ্ধ হয়, তবে তো কোন কথা-ই নেই।
প্রতিটি সন্তানকে তার পিতার অধিকার সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন- "আর তোমরা পিতা-মাতার সহিত নম্র, ভদ্র ও সম্মানজনক আচরণ কর। "
৪৩-৪৪-৪৫) গোত্রীয় নেতৃত্বে পাপিষ্ঠদের আগমনঃ
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্য হচ্ছে জ্ঞানী, নিষ্ঠাবান ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি।
কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হল- পাপিষ্ঠ-রা নেতৃত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। বংশীয় মর্যাদা, ধন সম্পদ বা এলাকায় সীমাহীন প্রতেপের দরুন তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাবে না।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "নিম্নোক্ত নিদর্শনগুলো প্রকাশ হতে দেখলে- লাল বাতাস, ভূ-কম্পন, ভূমিধ্বস, রূপ-বিকৃতি, পাথর-বর্ষণ এবং ছিঁড়ে যাওয়া তছবিহ-র দানার মত দ্রুত একের পর এক কেয়ামতের নিদর্শন বাস্তবায়নের অপেক্ষা করঃ
ক) যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ জ্ঞান
খ) আমানতকে খরচের বস্তু জ্ঞান
গ) যাকাতকে জরিমানা জ্ঞান
ঘ) আল্লাহর জ্ঞান ছেড়ে পার্থিব জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ
ঙ) মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্টকরণ
চ) পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধু বান্ধবকে কাছে আনায়ন
ছ) মসজিদের ভেতর উচ্চস্বরে হৈ হুল্লোড়
জ) গোত্রীয় নেতৃত্বে পাপিষ্ঠদের আগমন
ঝ) সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিদের হাতে জাতির নেতৃত্ব
ঞ) আক্রমনের ভয়ে সম্মান
ট) হরেক রকম বাদ্য-যন্ত্র ও অশ্লীল নর্তকীদের আত্মপ্রকাশ
ঠ) ব্যাপক হারে মদ্য-পান
ড) পরবর্তী উম্মত কর্তৃক পূর্ববর্তী উম্মতকে গালমন্দ ও অভিশাপ দান। "
(তিরমিযী)
৪৬-৪৭-৪৮-৪৯) মেয়েদের সাথে মেলামেশা, রেশমি কাপড় পরিধান, মদ্য এবং গান-বাজনা বৈধ জ্ঞানঃ
ইসলামের স্বতঃসিদ্ধ নিষিদ্ধ বিয়য়াবলীর মধ্যে- ব্যাভিচার, মদ্য পান, অশ্লীল নৃত্য, পুরুষদের পন্য রেশমী কাপড় পরিধান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শেষ জামানায় একদাল মুসলমান এই হারাম বিষয়াবলীকে হালাল মনে করে অবাধ ব্যবহার শুরু করবে।
নবী করীম (সাঃ) একে কেয়ামত ঘনিয়ে আসার নিকটতম নিদর্শন বলে চিহ্নিত করেছেন।
হালাল জ্ঞান- দু-ভাবে হতে পারেঃ
১) মনে প্রাণে এগুলোকে হালাল মনে করা
২) অথবা অধিকাংশ মানুষই এতে লিপ্ত হয়ে যাবে। গুনাহ করার সময় সংকোচ লাগবে না।
আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশা, রেশমী কাপড় পরিধান, মদ্যপান এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে। আরেক দল উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে মেষপাল নিয়ে অবতরণ করবে, তাদের কাছে ফকির এসে সাহায্যের আবেদন করলে তারা বলবে-আগামীকাল এসো!, এসকল ব্যক্তিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিবেন, সুউচ্চ পাহাড় (ধ্বসে) তাদের উপর আপতিত হবে।
অপর দলকে আল্লাহ (কেয়ামত পর্যন্তের জন্য) শুকর-বানরের আকৃতিতে পরিবর্তন করে দেবেন। " (বুখারী)
অনেক মুসলিম দেশে আজ ব্যাভিচার ও মদ্য-পান রাষ্ট্রিয়ভাবে বৈধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারী অনুমোদন নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় বেশ্যা-পাড়া গড়ে উঠেছে। হোটেলগুলোতে সুন্দরী নারীদের দিয়ে ব্যভিচারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
আজকাল দিনে-দুপুরে অলিতে গলিতে অবাধ মদ্যপান চলছে।
অনেক মুসলিম দেশ মদের ব্যবসা এবং বাজারে বিদেশী মদের আমদানিকে বৈধ ঘোষণা করেছে।
আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "অবশ্যই আমার উম্মতের একদল- মদ্যপানে লিপ্ত হবে। (ব্যবসায়ের সুবিধার্থে) মদের নামকে তারা পরিবর্তন করে দেবে। তাদের মাথার উপর গান-বাজনা এবং নর্তকীদের নৃত্যানুষ্ঠান শোভা পাবে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মাটির নিচে ধ্বসে দেবেন।
কতিপয় শুকর-বানরে পরিবর্তন করে দেবেন। " (ইবনে মাজা)
বর্তমান সময়ে গান-বাদ্য এবং অশ্লীল মিউজিক- মানুষের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হওয়ার ফলে অন্তরে কপটতার ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। এই কপটতা-ই মানুষকে নামায, আল্লাহর স্মরণ, কুরআন পাঠ এবং কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ করে দিয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন- "এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করতে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জ্্য অবমাননাকর শাস্তি।
" (সূরা লুকমান-৬)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. বলেন- "পানি সিঞ্চনে যেমন ফসল বেড়ে উঠে তেমনি গান-বাদ্য শুনার ফলে অন্তর কপটতা (নেফাকী) গড়ে উঠে। "
৫০) (তীব্র সঙ্কটের ফলে) মানুষের মৃত্যু কামনঃ
বিপদাপদ, ফেতনা, ব্যাপক সংঘাত এবং জুলুম-অত্যাচারের জামানা আসবে বলে নবী করীম (সাঃ) আগেই সতর্ক করে গেছেন। এমটি সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তি মৃত বন্ধুর কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতে থাকবে- "হায়! আমি যদি বন্ধুর স্থানে (কবরের ভেতর) থাকতাম....। "
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আফসোস করে বলতে থাকবে- "হায়! আমি যদি তার স্থানে হতাম!" (বুখারী মুসলিম)
চলবে............. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।