আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ আসসালামু আলাইকুম। অনেক কষ্ট করে একটা পোষ্ট ধারাবাহিক আকারে লেখার চেষ্টা করছি। এটা এমন একটা পোষ্ট যা পড়লে দারুন কিছু জানতে পারবেন, না পড়লে পস্তাবেন।
একথা কেন বলছি? কারন কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অনেক গুলো নিদর্শনের মধ্যে এটিও একটি নিদর্শন যে, শেষ জামানায় মানুষ আধুনিক জ্ঞানে এতই জ্ঞানী হবেন যে আখেরাতের ব্যাপারে তারা থাকবেন গন্ডমূর্খ। তাই আসুন চেষ্টা করি জানার ইসলাম সম্পর্কে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর রেখে যাওয়া ভবিষ্যৎ বাণী সম্পর্কে।
আমরা সকলেই জানি এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে, কিন্তু কখন তা আল্লাহ পাক ছাড়া কেউ-ই জানেন না। কাল কেয়ামত সংঘটিত হবার অনেক নিদর্শন রয়েছে যা আদূর ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে। এগুলো অধিকাংশই বড় বড় নিদর্শন, কিন্তু এসকল নিদর্শন চাড়াও আরো কিছু ছোট ছোট নিদর্শন রয়েছে যা নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
নিদর্শন
এমন কিছু বস্তুকে বুঝায়, যা নির্ধারিত বিষয়ের আগমন-সংকেত দেয়। কোয়ামতের নিদর্শন বলতে ঐ সকল সংকেত উদ্দেশ্য, যা কেয়ামত ঘনিয়ে আসার ইঙ্গিত বহন করে।
কেয়ামত'
ঐ মহাপ্রলয়, যার প্রেক্ষিতে পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটবে এবং সমস্ত সৃষ্ট-জীব মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে।
কেয়ামতের নিদর্শন-সমূহ দু ভাগে বিভক্তঃ
প্রথমভাগঃ ক্ষুদ্রতম নিদর্শন। এটা আবার দুই প্রকারঃ
ক) দূরবর্তী নিদর্শনঃ অর্থাৎ যে সকল নিদর্শন প্রকাশ হয়ে অতিবাহিত হয়ে গেছে।
কেয়ামত থেকে বহু দূরে হওয়ার দরুন এগুলোকে ছোট নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত।
খ) মধ্যবর্তী নিদর্শনঃ অর্থাৎ যেগুলো প্রকাশ হয়েছে এবং শেষ না হয়ে দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সংখ্যা অনেক। এগুলো-ও ক্ষুদ্রতম নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত।
দ্বিতীয় ভাগঃ বৃহত্তম নিদর্শনঃ অর্থাৎ যেগুলো ধারবাহিক প্রকাশ হলে পরক্ষণে-ই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।
এর সংখ্যা প্রায় দশটি।
আল্লাহ পাক তৌফিক দিলে সংক্ষেপে সবগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহঃ
প্রথম ভাগঃ ক্ষুদ্র নিদর্শন যেগুলো অতিবাহিত হয়ে গেছেঃ
নবী করীম (সাঃ) এর ভাষ্য মতে- শেষনবী হিসেবে দুনিয়াতে তাঁর আগমনই কেয়ামতের প্রথম ক্ষুদ্রতম নিদর্শন।
হযরত ছাহল বিন সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি নবী করীম (সাঃ) কে দেখেছি- তিনি তর্জনী এবং মধ্যমাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে বলেছেন "আমার এবং কেয়ামতের মাঝে দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার ন্যায় ব্যবধান। " (বুখারী-মুসলিম)
অন্যত্র নবীজী এরশাদ করেন- "কেয়ামতের প্রথম বাতাসে-ই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে। (মুস্তাদরাকে হাকিম)
নবী করীম (সাঃ) এর ইন্তেকাল- কেয়ামতের প্রাথমিক ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলীর অন্যতম।
প্রখ্যাত সাহাবী আওফ বিন মালেক রা. এর বর্ণনায়- "তাবুক যুদ্ধ চলাকালে একদা আমি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে আসলাম, তিনি তখন পশমের তৈরী একটি তাবুতে ছিলেন। আমাকে দেখে বলতে লাগলেন- "ছয়টি বিষয় আঙ্গুল দিয়ে গুণে রাখ! (কেয়ামতের নিদর্শন স্বরূপ)
১) আমার ইন্তেকাল, ২) বায়তুল মাকদিস বিজয়, ৩) ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক প্রকার মহামারীতে তোমাদের ব্যাপক প্রাণহানি, ৪) ধন সম্পদ বৃদ্ধি, এমনকি একশত দিনার দিতে চাইলে-ও প্রস্তাবিত ব্যক্তি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবে, ৫) এমন ফেতনা, যা আরবের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, ৬) তোমাদের এবং রোমকদের মাঝে একটি শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হবে। অতঃপর রোমকরা চুক্তি ভঙ্গ করে আশি-টি ঝন্ডাতলে সমবেত হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। প্রতিটি ঝন্ডার অধীনে তাদের বার হাজার করে সৈন্য থাকবে। " (বুখারী)
৩) চন্দ্র বিদারণঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন- "কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।
তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু। " (সূরা ক্বামার ১-২)
হাফেয ইবনে কাছীর রাহ. লিখেন- "সবল সূত্রে বর্নিত একাধিক হাদিসে ঘটনাটি প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম এবং সকল ইমাম-উলামা এ ব্যাপারে একমত। ঘটনানি নবী করীম (সাঃ) এর অলৌকিক মু-জেযা সমূহের অন্যতম। "
আনাছ বিন মালিক রাঃ বলেন- "মক্কাবাসী নবীজীর দাওয়াতের সত্যতা প্রমাণে কোন নিদর্শন দাবী করলে নবীজী তৎক্ষনাৎ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করে দেখান।
" (বুখারী-মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন- "একদা আমরা নবী করীম (সাঃ) এর সাথে মিনা প্রান্তরে ছিলাম। হঠাৎ চন্দ্র দু-ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ পাহাড়ের পেছনে চলে গেল, অপর ভাগ ও-পাশের পাহাড়ের পেছলে চলে গেল। নবী করীম (সাঃ) আমাদের লক্ষ করে বললেন- ভাল করে দেখে নাও!" (বুখারী-মুসলিম)
৪) সাহাবা যুগের অবসানঃ
নবীর পর সৃষ্টির সেরা মানব জাতি হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম। আবূ মূছা রা. বর্ণিত হাদিসে নবী করীম (সাঃ) বলেন- "তারকারাজি- আসমানের নিরাপত্তা প্রহরী।
তারকারাজি বিলুপ্ত হলে আকাশের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। তদ্রূপ সাহাবীদের জন্য আমি হলাম নিরাপত্তা প্রহরী। আমি চলে গেলে সাহাবীদের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। সাহাবীগণ আমার উম্মদের নিরাপত্তা প্রহরী। সাহাবা যুগের অবসান হলে উম্মদের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে।
" (মুসলিম)
৫) মুসলমানদের- বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেম) বিজয়ঃ
নবী করীম (সাঃ) এর আগমনকালে বায়তুল মাকদিস সম্পূর্ণ রোমক খ্রিষ্টানদের অধিকারে ছিল। রূম ছিল তখনকার প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি। জীবদ্দশারয় নবীজী মুসলমানদেরকে বায়তুল মাকদিস বিজয়ের সুসংবাদ দেন এবং একে কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন বলেও আখ্যায়িত করেন। উপরে বর্ণিত আওফ বিন মালেক রা. এর হাদিসে নবীজী ছয়টি নিদর্শনের মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় কথাটিও উল্লেখ করেন।
৬) ছাগ-ব্যধি সদৃশ এক মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানিঃ
প্লেগ বা মহামারী জাতীয় বড় ধরনের সংক্রমন-শীল ব্যাধি ছড়ানোর ফলে ব্যাপক প্রাণনাশ ঘটবে।
দলে দলে মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হবে।
বর্ণিত আছে, 'আমওয়াছ'- মহামারীতে এ-রকম ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছিল। শরীরের কোন স্থানে ফুলে গিয়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হত, দেখতে দেখতেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।
উমর বিন খাত্তার রা. এর শাসনামলে বায়তুল মাকদিস বিজয়ের দুই বৎসর পর ১৮ হিজরীতে আমওয়াছ মহামারীর ঘটনা ঘটে। পঞ্চাশ হাজারের মত মুসমান সেখানে মারা যায়।
মুয়ায বিন জাবাল, আবু উবাইদা, শরাহবিল বিন হাছানা, ফযল বিন আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রা. এর মত উচ্চপদস্থ সাহাবী সেখানে ইন্তেকাল করেন।
৭) নানান ফেৎনার আবির্ভাবঃ
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) এরশাদ করেন- "অন্ধকার রাত্রির ন্যায়-ফেতনা আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল করে ফেলো। তখন মানুষ সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।
" (মুসলিম)
৮) স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আবিষ্কারঃ
লাখো ফেতনার ধারক-বাহক হয়ে পনের হাজারের-ও বেশী নিভি চ্যানেল বর্তমান পৃথিবীর আকাশে ঢেউ খেলছে। আমাবস্যার চেয়েও আঁধার-কালো আকৃতিতে পৃথিবীতে আজ ফেতনাসমূহ বর্ষিত হচ্ছে। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্তমান স্যাটেলাইটের এই ফেতনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হুয়ায়ফা রা. বলেন- "অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরে ও পৌঁছাবে। "
হাদিসে ব্যবহৃত আকাশ বলতে মাথার উপর থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত পুরো মহাশূন্যকেই বুঝায়।
আরবী ডিকশনারিগুলোতে তাই উল্লেখ আছে। আকাশে স্থাপিত প্রায় অর্ধশত স্যাটেলাইট ষ্টেশন থেকে প্রতি সেকেন্ডে লাখো ফেতনা টিভির পর্দা বেয়ে পৃথিবীতে নামছে। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জনক ডিশ এন্টেনাকে যদি সুদূর মরু প্রান্তরে-ও বসিয়ে দেয়া হয়, সহজে-ই সেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। লোকালয় তো বটেই, আজকাল জন-মানবহীন মরুভূমিও ফেতনার শঙ্কামুক্ত নয়।
৯) "জঙ্গে সিফফীন"- মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধঃ
কোয়ামতের নিদর্শনবাহী অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহের ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ) ভবিষ্যদ্বাণ করেছেন।
তন্মধ্যে এক-ই কালেমার পতাকাবাহী দু-টি মুসলিম সেনাদলের মধ্যকার সিফফীন যুদ্ধের কথা একটু আলাদা করেই বলেছেন। উসমান বিন আফফান রা. এর হত্যা- ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রিয় দ্বন্দের ফলে প্রখ্যাত সাহাবী-দ্বয় আলী এবং মুয়াবিয়া রা. এর মধ্যে ৩৬ হিজরী সনে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, যা কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন-"কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না একই দাবীর প্রেক্ষিতে মুসলমানদের দুটি বিশাল বাহিনী তুমুল দুদ্ধে লিপ্ত হয়। " (বুখারী-মুসলিম)
***সাহাবাদের পারস্পরিক সংঘাত এবং আহলে-সুন্নত মুসলমানদের অবস্থানঃ
সাহাবায়েকেরাম রা. সকলেই সাধারণ মানুষ ছিলেন, নবী ছিলেন না। সুতরাং অন্যান্য মানুষের মত সাহাবীদের মধ্যেও ছোটখাটো ইজতেহাদী ভুল এমনকি সংঘাত থাকতেই পারে।
ক) নবীদের পর সাহাবায়েকেরাম হচ্ছেন সর্বোৎকৃষ্ট, সর্ব পরিশুদ্ধ এবং শেষনবীর আদর্শের সবচেয়ে কাছাকাছি মানব সম্প্রদায়।
খ) সাহাবায়ে কেরামের পারস্পরিক মতবিরোধ এবং সংঘাত নিয়ে আমাদের নাক গলানোর কোন অধিকার নাই। নীরাবতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের ছিদ্রান্বেষণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে হবে।
গ) সাহাবাদের প্রতি কু-ধারণা পোষণ ফেতনার আশঙ্কায় জনসম্মুখে এ ব্যাপারে কথা বলা বা এ ধরনের কোন দুর্ঘটনা প্রচার করা থেকেও বিরত থাকবে হবে।
মুসলমানদের মধ্যে নববী আদর্শের পরিপন্থী কতিপয় ভ্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি হওয়া-ও কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন। তন্মধ্যে খারেজী সম্প্রদায় অন্যতম। প্রথমে তারা ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. এর সাথে ছিল। অনেক যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হযরত মুয়াবিয়া এবং আলী রা. এর মধ্যে বিচার ব্যবস্থা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের পর আলী রা. এর অনুসরণ থেকে তারা বের হয়ে যায়।
সাধারণ মুসলমানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কূফা অঞ্চলের- হারূরা নামক স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করে।
তাদের মতবাদ হচ্ছেঃ
১) কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফের। যেমন, যিনাকারী, মদ্য পানকারী। এরকম কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।
সম্যক পথভ্রষ্টতা; বরং একজন মুসলমান যদি কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়, তবে তাকে কাফের বলা হবে না।
বরং সে তো সাধারণ এক গুনাহগার। তার উপর তওবা করা এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসা আবশ্যক।
২) তারা হযরত আলী এবং মুয়াবিয়া রা. সহ যে সকল সাহাবায়ে কেরাম বিচারব্যবস্থা পৃথকীকরণ বিষয়ে একমত হয়েছেন, তাদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ)
৩) গুনাহে লিপ্ত মুসলিম শাসনকর্তা অপসাণে বিদ্রোহ করাকে তারা জায়েয মনে করে। (তবে যদি কোরআন-হাদিসের পরিষ্কার দলিলের মাধ্যমে শাসনকর্তার মুরতাদ হওয়া প্রমাণিত হয়, তবে তার পতন ঘটানো সকলের উপর ফরয)
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "শেষ জামানায় একদল নির্বোদ তরুণ জাতির আবির্ভাব হবে।
কোরআন পড়বে, কিন্তু কোরআনের তাৎপর্য তাদের কণ্ঠাস্থি অতিক্রম করবে না। উৎকৃষ্ট কথা তারা বর্ণনা করবে। তীর যেমন ধনু থেকে মুহূর্তে বের হয়ে যায়, তারাও দ্বীনে ইসলাম থেকে মুহূর্তের মধ্যে বের হয়ে যাবে। " (বুখারী-মুসলিম)
১১) মিথ্যা নবুওয়ত দাবীকারী দাজ্জালদের আত্মপ্রকাশঃ
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন- "আল্লাহর শপথ! প্রায় ত্রিশ জনের মত মিথ্যুকের আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। এদের সর্বশেষ হল কানা দাজ্জাল।
" (মুসনাদে আহমদ)
ছাওবা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন,- " কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার উম্মতের একদল লোক মুশরেকদের সাথে গিয়ে মিলিত হবে। আরেক দল মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে যাবে। প্রায় ত্রিশজনের মত মিথ্যুকের আবির্ভাব গটবে, সবাই নিজেকে নবী বলে মনে করবে, অথচ আমি-ই হলাম সর্বশেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেন না। " (তিরমিযী-আবূ দাউদ)
অধিকাংশ-ই অতীতে আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছেঃ
১) নবী করীম (সাঃ) এর জীবদ্দশাতেই ইয়েমেনে- আসওয়াদ আনসী-নামে প্রথম মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটে।
ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে সে নবী বলে দাবী করতে থাকে। নবীজীল জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েও কুফুরীতে ফিরে যাওয়ার ঘটনা তার মাধ্যমেই প্রথম শুরু হয়। অবশেষে তার স্ত্রী (একজন খাঁটি মুসলিম) এর সহয়তায় ইয়েমেন বাসী তাকে হত্যা করতে সামর্থ হয়। অবশ্য এই স্ত্রীকে তিনি জোর পূর্বক বিবাহ করেছিলেন।
২) তুলাইহা বিন খুওয়াইলিদ আছদী।
প্রথমে সে নবী দাবী করে। মুসলমান গণ তার বিরূদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধ করেন। অবশেষে তওবা করে একনিষ্ঠ-ভাবে ইসলামের দিকে ফিরে আসে এবং মুসলিম বাহিনীতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন জিহাদেও অংশ গ্রহণ করেন। জিহাদের রাস্তায় আল্লাহর পক্ষ হতে সে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। অবশেষে নেহাওয়ান্দ প্রদেশে এক যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
৩) মুছাইলিমা কাযযাব। রাত্রিকালে তার কাছে ওহী আসে বলে সে দাবী করত। খালেদ বিন ওলীদ, ইকরামা বিন আবি জাহল ও শরাহবিল বিন হাসানা রা. সাহাবা-ত্রয়ীর নেতেৃত্বে আবূ বকর রা. তার বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। চল্লিশ হাজার সৈন্যবাহিনী দিয়ে সে মুসলমানদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
ওয়াহশী বিন হারব রা. কর্তৃক মুছাইলিমাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
৪) ছাজ্জাহ বিনতে হারেস। মহিলা মিথূক। ইসলামের পূর্ব যুগে সে আরব্য খ্রিষ্টানদের অন্তর্ভূক্ত ছিল। মুছাইলিমা খুশি হয়ে তাকে বিবাহ করে নেয়।
তিনি নিহত হওয়ার পর স্বদেশে ফিরে এসে সে খাঁটি ইসলামে দীক্ষিত হয়।
৫) তাবেঈনের যুগে আত্মপ্রকাশ কারী মিথ্যুকদের মধ্যে মুখতার বিন আবু উবাইদ সাকাফী অন্যতম। প্রথমে নিজেকে সে কট্টর পন্থী শিয়া দাবী করলে শিয়াদের একটি বড় দল তার সাথে গিয়ে মিলিত হয়। ওহীর বাহক হয়ে জিবরীল আ. তার কাছে আসেন বলে সে দাবী করত। অবশেষে তাকে হত্যা করা হয়।
৬) হারেস বিন সাঈদ কাযযাব। দামেস্কে প্রথমে সে নিজেকে খোদা-প্রেমিক বলে দাবী করে। কিছুদিন পর নবী..। তখনকার শাসনকর্তা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কাছে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললে কতিপয় আলেম ডেকে তাকে বুঝিয়ে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে ইসলাম ও তওবা করতে অস্বীকার করলে বাদশা তাকে হত্যার আদেশ দেন।
৭) সম্প্রতি অর্ধ-শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নামে এমন-ই এক মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটে। সে নিজেকে নবী মনে করত। চিটু-চিটু এবং টিচু-টিচু নামক দু-জন ফেরেস্তা আসমান থেকে তার কাছে ওহী নিয়ে আসে বলে সে দাবী করত। দুনিয়াতে তার বয়স আশি বৎসর হবে- আল্লাহ আগেই তাকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন বলে সে দাবী করত। অল্প দিনের মধ্যেই সে অনেক অনুসারী কাছে টানতে সামর্থ্য হয়েছিল।
সমসাময়িক উলামায়ে কেরামের সাহসী তৎপরতায় তার ফেতনাটি বেশিদুর এগুতে পারেনি। তবে হিন্দুস্তানে এখনো তার অনুসারীরা তৎপর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছানাউল্লাহ আমুতসূরী রহ. আতাউল্লাহ বুখারী রহ. প্রমুখ উলামায়ে কেরাম তার বিরুদ্ধে খড়গহস্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য- এই মিথ্যুকের কু-পরিণাম দুনিয়াতেই আল্লাহ পাক দেখিয়ে দেন। পায়খানার ডাস্টবিনে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
অনেক উলামায়ে কেরাম কাদিয়ানী ফেতনাকে ইহুদী ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করেন। কারন, কাদিয়ানীদের কমান্ডিং হেড-অফিস হচ্ছে- ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে।
ছানাউল্লাহ অমুতসূরী রহ. ১৯০৮ ইং সনে কাদিয়ানীকে চ্যালেঞ্জ করেন যে, দুজনের মধ্যে যে- মিথ্যুক, তার মৃত্যু আগে হবে। মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মিথ্যুকের ধ্বংস কামনা করে আল্লাহর কাছে তিনি অনেক দোয়া করনে। এক বৎসরের মধ্যেই কাদিয়ানীর উপর বদদোয়ার প্রতিক্রিয়া শুরু হতে থাকে।
অন্তিম অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তার শ্বশুর বলেন- "ব্যাধি মারাত্মক আকার ধারণ করলে একরাতে সে চিল্লাতে থাকে। জ্বালাময়ী যন্ত্রণা হচ্ছিল- অবস্থা দেখে তা-ই বুঝতে পারলাম। আমাকে দেখে সে বলতে থাকে যে, আমি কলেরা-য় আক্রান্ত হয়ে গেছি। এরপর মরণ অবধি সে আর কোন বাক্য উচ্চারণ করতে পারেনি।
ত্রিশজন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই একের পর এক মিথ্যা নবী দাবীকারী মিথ্যুক প্রকাশ হতে থাকবে।
এ তালিকায় সবশেষে আছে কানা দাজ্জালের নাম। ঈসা বিন মারিয়াম আ. কর্তৃক কানা দাজ্জালকে হত্যা করা পর্যন্ত এ ধারাবাহিকতা শেষ হবে না।
১২) শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছলতার জয়-জয়কারঃ
নাবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আরবের ভূমি সবুজ-শ্যামল পরিবেশ ও নদীনালায় পূর্ণ হয়ে উঠে। মক্কা নগরী থেকে সুদূর ইরাক পর্যন্ত মানুষ নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। পথ হারানো ছাড়া কোন ভয় থাকবে না।
কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে সংঘাত বেড়ে যাবে। সংঘাত কি হে আল্লাহর রাসূল? প্রশ্নের উত্তরে নবীজী বলেন- অধিক হত্যাযজ্ঞ। " (মুসনাদে আহমদ)
অচিরেই ধন সম্পদের আধিক্য ঘটবে, জুলুম-অত্যাচারের সমাপ্তি ঘটবে, বিশ্বময় শান্তির জয়গান বেজে উঠবে। এ সবই ইমাম মাহদী এবং হযরত ঈসা আ.- এর জামানায়। (আল্লাহই ভাল জানেন)
১৩) হেজায ভূমি থেকে বিশাল অগ্নিকুন্ড প্রকাশঃ
নবী করীম (সাঃ) থেকে বর্ণিত কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্যতম হচ্ছে হেজায ভূমি থেকে বিশাল অগ্নিকুন্ড প্রকাশ।
উলামায়ে কেরাম এবং ঐতিহাসিকদের ঐক্যমত্যে ঘটনাটি ৬৫৪ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "কোয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না হেজায ভূমি থেকে বিশাল অগ্নিকুন্ড প্রকাশ হবে, যার আলোতে সুদূর বসরা-য় (ইরাকের) উষ্ট্রীর স্কন্ধ আলোকিত হয়ে উঠবে। " (বুখারী)
তিনমাস পর্যন্ত আগুনটি অবিরাম জ্বলছিল। মদিনার মহিলারা আগুনের আলোতে নৈশ গল্পের আসর জমাত।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আবূ শামা বলেন- "৬৫৪ হিজরী সনের ৩ জুমাদাল উখরা বুধবার দিবাগত রাতে মদিনার দিক থেকে এক বিশাল অগ্নিকুন্ড ভড়কে উঠে।
তিনদিন পর্যন্ত মদিনায় খানিক পর পর ভূমিকম্প অনুভূত হতে থাকে। এর পরক্ষণে হাররা প্রান্তরে বনূ কুরায়যার সন্নিকটে আরো একটি বিশাল অগ্নির সূতপাত ঘটে, যার আলোতে রাত্রিকালেও মদিনার সমস্ত অলি গলিও আলোকিত থাকত। দেখে মনে হচ্ছিল যেন আগুনের এক বিশাল শহর মদিনার দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। " (তাযকিরা)
এটি ছিল ভস্মিত মুলাইছা পর্বত। সর্বশেষে ৬৫৪ হিঃ (১২৫৬ ইং) সনে প্রচন্ড ভূ-কম্পন ও ভয়াবহ বিস্ফোরণসহ সেখানে আগুন ভড়কে উঠেছিল।
ঐতিহাসিকদের বর্ণনামতে সেই আগুন প্রায় দু'মাস পর্যন্ত প্রজ্জ্বলিত ছিল। দ্রবীভূত নির্যাস দক্ষিণে প্রায় ২৩ কিঃ মিঃ দুরত্ব পর্যন্ত পৌঁছেছিল, বর্তমান মদীনা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত অগ্নি-সীমা বিস্তৃত ছিল। মদীনার দিকে ১২ কিঃমিঃ পর্যন্ত এগিয়ে উত্তরে মোড় নিয়েছিল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯১৬ মিটার উপরে আগুনর উচ্চতা পৌঁছেছিল।
১৪) তুর্কীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধঃ
বিধর্মীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের অত্যধিক যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
তন্মধ্যে তুর্কীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধটি হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে। সাহাবীদের যুগে-ই বনি উমাইয়ার শাসনামলে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। তুর্কী সম্পদায় পরাজিত হলে মুসলমানগণ তাদের থেকে প্রচুর যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ অর্জন করে।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমরা তুর্কীদের সাথে যুদ্ধ করবে। (তাদের নিদর্শন হল-) ছোট ছোট চোখ, রক্তিম (লাল) চেহারা, চ্যাপটা নাক, স্থূল বর্ম সদৃশ (গোলাকার) চেহারা।
কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমরা পশমের জুতা পরিধানে অভ্যস্ত জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। "
এর মাধ্যমে- (আল্লাহই ভাল জানেন) তাতারি (মোগল) সম্পদায় উদ্ধেশ্য। ১২৫৮ ইং সনে পুরো ইসলামী বিশ্বে আগ্রাসন চালিয়ে মুসলমানদের রক্তে সাগর নদীগুলো রক্তিম করে তুলে। কিন্তু পরিশেষে সদলবলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
১৫) চাবুকে আঘাতকারী অত্যাচারী ব্যক্তিদের আত্মপ্রকাশঃ
কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, অত্যাচারী শাসকদের সহয়তাকারী ব্যক্তিদের আত্মপ্রকাশ।
ষাড়ের লেজ সদৃশ এক প্রকার চাবুক দিয়ে তারা মানুষকে প্রহর করবে। চাবুক পশম থেকেও হয়, বৃক্ষের ঢাল থেকেও চাবুক হয়, বৈদ্যুতিক চাবুকও পাওয়া যায় এবং সবার-এর প্রসারণ-যোগ্য চাবুকও প্রচলিত আছে।
আবূ উমামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "শেষ জামানায় এমন কিছু লোকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে, যাদের সাথে ষাঁড়ের লেজ সদৃশ এক প্রকার চাবুক থাকবে। আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে তারা সকাল-সন্ধ্যা যাপন করবে। " (মুসনাদে আহমদ)
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "আমার উম্মতের দুই প্রকার লোককে এখনো আমি দেখিনি- ১) যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে।
তা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে......" (মুসলিম)
১৬) অধিক-হারে সংঘাত (হত্যাযজ্ঞ)ঃ
আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! ততক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ার সমাপ্তি ঘটবে না, যতক্ষণ না একজন অপরজনকে হত্যা করবে। হত্যাকারী জানবে না- কি উদ্দেশ্যে হত্যা করছে। আর নিহত ব্যক্তি বুঝবে না- কি দোষে তাকে হ্ত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেসা করা হলো- এটা কিভাবে সম্ভব হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী বললেন- সংঘাত কালে এমনটিই ঘটবে। হত্যাকারী এবং নিহত উভয়েই জাহান্নামী হয়ে যাবে।
" (মুসলিম)
শুধুমাত্র ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঘটিত বৃহত্তম যুদ্ধগুলোতে নিহতের পরিসংখ্যান লক্ষ করুনঃ
১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধঃ নিহত- এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ
২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ নিহত- পাঁচ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ
৩) ভিয়েতনাম যুদ্ধঃ নিহত- ত্রিশ লক্ষ
৪) রাশিয়া-র গৃহ যুদ্ধঃ নিহত- এক কোটি
৫) স্পেনের গৃহ যুদ্ধঃ নিহত- এক কোটি বিশ লক্ষ
৬) ইরাক ইরান যুদ্ধঃ নিহত- দশ লক্ষ
৭) সাম্প্রতিক ইরাক যুদ্ধঃ নিহত- এ পর্যন্ত দশ লক্ষেরও উপরে
এ ছাড়াও বাংলাদেশ পাকিস্থান যুদ্ধ, কুয়েত-ইরাক, আফগানিস্থান- আমেরিকা ইত্যাদি যুদ্ধের পরিসংখ্যান চিন্তা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিগত একশত বৎসরেই সংঘাতের হার কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৭) আমানত অন্তর থেকে উঠে যাবেঃ
মানুষের মৌলিক চরিত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া-ই বিশ্বস্ততা ভঙ্গের মূল কারণ।
হুযায়ফা রা. বলেন- নবী করীর (সাঃ) বলেছেন- "মানুষের হৃদয়ের গহীনে সর্বপ্রথম বিশ্বস্ততার অবতরণ হয়েছিল। অতঃপর কোরআন নাযিল শুরু হলে মানুষ কোরআন এবং হাদিসকে ধীরে ধীরে শিখতে থাকে। " এরপর নবীজী বিশ্বস্ততা উঠে যাওয়ার কথা বলছিলেন- "মানুষ শয়নে যাবে, ঘুমের মধ্যেই হৃদয় থেকে বিশ্বস্ততা উঠিয়ে নেয়া হবে কিন্তু তার প্রভাব অন্তরে থেকে যাবে।
এরপর মানুষ শয়নে যাবে, আবারো অন্তর থেকে বিশ্বস্ততা উঠিয়ে নেয়া হবে, কিন্তু তার সূক্ষ্ম ছাপ অন্তরে থেকে যাবে। জ্বলন্ত টুকরা চামড়ায় পতিত হলে চামড়াটি ফুলে যায়, কিছুদিন পর তা শুকিয়ে গেলে চামড়ায় যেমন একপ্রকার ছাড় থেকে যায়, অথচ ভেতরে কিছুই নেই, এরপর শুকনা কিছু নিয়ে চামড়ায় লাগিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি....। এরপর মানুষেরা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করবে, কেউ কারো বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে পারবে না। এমনকি বিস্ময়-কন্ঠে মানুষ বলতে থাকবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে। কাউকে সম্বোধন করে বলা হবে যে, লোকটি কত জ্ঞাণী! কত ভদ্র! কত সুশীল!- অথচ তার অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান নেই।
"
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, "একদা নবী করীম (সাঃ) সাহাবীদেরককে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এক বেদুইন এসে- কেয়ামত কখন? জিজ্ঞেসা করল। নবীজী তার কথায় কান না দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবস্থা দেখে কেউ কেউ ধারণা করল- নবীজী হয়ত শুনেও উত্তর দিতে আগ্রহী না হওয়ায় কিছু বলছেন না। অন্যরা ধারণা করল, বেদুইনের কথাই নবীজী হয়ত শুনেননি।
আলোচনা শেষ করে প্রশ্নকারী কোথায়? জিজ্ঞেসা করলে বেদুইন বলল- এই তো আমি এখানে হুজুর! বললেন- 'যখন বিশ্বস্ততা বিনষ্ট হয়ে যায়, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করবে। বলল- বিশ্বস্ততা কিভাবে নষ্ট হবে? বললেন- 'যখন অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে নেতৃত্ব চলে যাবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর। " (বুখারী)
১৮) পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির পদাঙ্ক অনুসরণঃ
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার উম্মত পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির হুবহু অনুসরণ শুরু করবে। এমনকি তারা যদি এক হাত সামনে গিয়ে থাকে, আমার উম্মতও যাবে। এক গজ পেছনে গিয়ে থাকে, আমার উম্মতও তাই করবে।
'পারস্য ও রোম জাতির মতো?' জিজ্ঞেসা করা হলে নবীজী বললেন- তা না হলে আর কাদের মতো!?" (বুখারী)
১৯) দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্মঃ
কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর একটি হচ্ছে, দাসীর পেট থেকে মনিবের জন্ম গ্রহণ।
ফেরেশতা জিবরীল আ. যখন নবী করীম (সাঃ) কে কেয়ামতের নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করেছিলেন তখন-ও নবীজী- দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্মগ্রহণ- উত্তর দিয়েছিলেন। " (মুসলিম)
কেউ কেউ উদ্দেশ্য করেছেন যে, দাসীরা রাজকুমার জন্ম দেবে। রাজকুমার বড় হয়ে রাজা হলে মাতা তার প্রজার অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
অনেকেই বলেছেন যে, শেষ জামানায় ছেলেরা মায়ের সাথে দাস-দাসীর মত আচরণ করবে।
মা-কে ঘর থেকে বের করে দেবে। মায়ের খোঁজ খবর নেবে না। মায়ের কথা ভুলে যাবে। মায়ের অবাধ্য হয়ে যাবে। মাকে গালিগালাজ করবে--ইত্যাদি।
ফলে বহিরাগত কেউ দেখলে দাসীর সাথে মনিবের আচরণ ধারণা করবে।
২০) স্বল্প কাপড় পরিহিত নগ্ন মহিলাদের আত্মপ্রকাশঃ
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "দুই প্রকার জাহান্নামী সম্পদায় এখনো আমি দেখিনিঃ ১) ষাঁড়ের লেজ সদৃশ চাবুক দিয়ে মানুষকে প্রহারকারী অত্যাচারী সম্প্রদায়। ২) আবেদনময়ী বস্ত্র-বাহী নগ্ন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুজের মত উঁচু দেখাবে।
এসব নগ্নপ্রায় মহিলা কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দুরের কথা; জান্নাতের সুঘ্রাণও তাদের কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত...এত...দূর থেকেই অনুভব করা যায়। " (মুসলিম)
চলবে......................................... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।