আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ আসসালামু আলাইকুম। আজ আপনাদের কাছে পেশ করছি কেয়ামতের নিদর্শন পর্ব-২ এর ধারাবাহিক আলোচনা। আশা করি আপনাদের পড়ে ভাল লাগবে।
অনেকেই হয়তো নিজেকে খুব আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট এবং সুশিল সামজের মুক্ত ও যুক্তি সংগত চিন্তা ভাবনাকে প্রাধান্য দেন। যদিও তাদের কোন দলিল নাই দেখানোর মতো। নিজের মতবাদকেই প্রাধান্যদানকারী ভাইদের অনুরোধ করব তারা যেন পরকালকে বিশ্বাস করেন এবং প্রস্তুত থাকেন মৃত্যুর জন্য। আমাদের মানতে হবে যে কোন শক্তিধর আজ পর্যন্ত মৃত্যুকে পরাজিত করতে পারে নাই।
যাই হোক, আলোচনায় ফিরে আসি।
কাল কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণের মধ্যে যে সকল ঘটনা ঘটে গেছে এবং এখন ঘটতেছে তারই ধারাবাহিকতায় আপনারা পাবে কমপক্ষে ১৪০ টিরও অধিক বর্ণনা। আল্লাহ পাক তৌফিক দিলে সবগুলো আপনাদের সামনে পেশ করব ইনশাআল্লাহ।
২১) সুউচ্চ বাড়িঘর নির্মাণে নগ্নপদ নগ্নদেহ আরব্য রাখালদের প্রতিযোগিতাঃ
নবী করীম (সাঃ) থেকে বর্ণিত কেয়ামতের ঘটিত নিদর্শনাবলীর অন্যতম হচ্ছে নগ্নপদ নগ্নদেহ রাখাল (আরব) দের বাড়িঘর সুউচ্চ করণ প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে উঁচু করে বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারে... কের কার চেয়ে বেশী ডিজাইন/স্টাইল করে বাংলো বানাতে পারে...। অথচ এইতো কিছুদিন পূর্বেই তারা ছিল মেষপালের রাখাল।
গায়ে ছিল না বস্ত্র, পায়ে ছিল না জুতো।
উমর রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে- ইসলাম, ঈমান ও ইহসান সংক্রান্ত আলোচনার পর নবী করীম (সাঃ) কেয়ামতের নিদর্শন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- "দাসীদের গর্ভ থেকে মনিবের জন্ম হবে এবং নগ্নপদ নগ্নদেহ রাখালদের - সুউচ্চ বাড়িঘর নির্মাণে প্রতিযোগিতায় মত্ত দেখবে। " (মুসলিম)
অপর হাদিসে- "দুঃখ কষ্টে জর্জরিত অভাবী লোকদেরকে নেতৃত্বের পদে দেখতে পেলে সেটাই হবে কেয়ামতের নিদর্শন। দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত, অভাবী, নগ্নপদ ও নগ্নদেহ রাখাল বলতে আপনি কাদের বুঝাচ্ছেন? প্রশ্নের উত্তরে নবীজী বলেন- আরব জাতি। " (মুসনাদে আহমদ)
সম্প্রতি ১৬০ তলা বিশিষ্ট বিশ্বের সর্ববৃহৎ - "বুরজ আল খলীফা" টাওয়ারটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই-তে অবস্থিত।
এদিকে সৌদি সরকার বিশ্বের সর্ববৃহৎ ৩০০ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে ইতিমধ্যেই নির্মাণ কার শুরু করে দিয়েছে।
২২) ব্যক্তি বিশেষে সালাম প্রদানঃ
মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব-বোধ বড়ায়ের লক্ষ্যে আল্লাহ পাক সালামের বিধান চালু করেছেন।
নবী করীম (সাঃ) বলেন- "পরিপূর্ণ মুমিন না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পরের প্রতি পূর্ণ ভলবাসা ও সম্প্রীতি পোষণ না করা পর্যন্ত তোমরা মুমিন ও হতে পারবে না। কিভাবে পারস্পরিক সম্পীতি বৃদ্ধি পাবে সেই রহস্য কি তোমাদের বলব? 'বেশি বেশি সালাম দাও! আগে-ভাগে সালাম দাও!' (মুসলিম)
ব্যক্তি বিশেষে সালাম প্রদান কিংবা শুধূ পরিচিত বুঝে সালাম প্রদান- কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
অথচ ইসলামী বিধান হচ্ছে, পরিচিত অপরিচিত সকলকেই সালাম দিতে হবে।
আবূ জাদ বলেন- ইবনে মাসঊদ রা. এর সাক্ষাৎ-কলে এক ব্যক্তি বলল- আস সালামু আলাইকুম হে আব্দুল্লাহ ! সালাম শুনে ইবনে মাসউদ রা. বলে উঠলেন- "নবীজী সত্য-ই বলেছেন। আমি নবীজীকে বলতে শুনেছি- "কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- মানুষ মসজিদে গমন করবে, কিন্তু (তাহিয়্যাতুল মসজিদের) দুই রাকাত নামায আদায় করবে না এবং পরিচিত ছাড়া কাউকে সালাম দিবে না। " (সহীহ বিন খুযাইমা)
বুখারী-মুসলিমের বর্ণনায়- এক ব্যক্তি নবীজীকে - "ইসলামের কোন কাজটি সবচে ভালো-" জিজ্ঞেসা করলে নবীজী বলতে লাগলেন- "অসহায়কে খাদ্যদান এবং পরিচিত অপরিছিত সকলকে সালাম প্রদান। "
২৩-২৪-২৫) ব্যাপক বাণিজ্যি, স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসায় স্ত্রীর অংশগ্রহণ, সারা বাজারে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর প্রভাবঃ
নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ব্যক্তি বিশেষ সালাম দেয়া হবে, বাণিজ্য ব্যাপক হয়ে যাবে এমনকি ব্যবসায় স্ত্রী-স্বামীকে সহযোগিতা করবে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে, মিথ্যা স্বাক্ষ্য- মহামারীর আকার ধারণ করবে, সত্য স্বাক্ষ্য গুম করা হবে এবং (মৌখিক দাওয়াতের তুলনায়) লেখালেখি বেশী হতে থাকবে।
" (মুসনাদে আহমদ)
অমর বিন তাগলিব রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন- "কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্যতম হচ্ছে, ধন সম্পদের ব্যাপক মূর্খতা- একজন অপরজনের কাছে ক্রয় বিক্রয় কালে বলবে- অমুকের সাথে বুঝাপড়া না করে লেনদেন করব না। সারা গ্রাম তালাশ করেও লেখতে পানে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। " (সুনানে নাসায়ী)
২৬) ব্যাপক মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদানঃ
মামলা মোকদ্দমায় বা বিচার সালিশে স্বাক্ষ্যদান কালে মিথ্যা কথা বলা মহা অপরাধ। কবিরা গুনাহের অন্যতম।
নবী করীম (সাঃ) বলেন-" সবচে বড় কবিরা গুনাহ কি- তোমাদের বলব? (এভাবে তিনবার বললেন) সাহাবায়ে কেরাম বললেন- বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! বললেন- আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, (এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন, এবার হেলান দিয়ে বসে বলতে লাগলেন-) এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
" (বুখারী-মুসলিম)
অপর হাদিসে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান এবং মিথ্যা শপথ করে মানুষের অধিকার হরণ থেকে কঠোর সতর্ক করা হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) বলেন- "মিথ্যা শপফ করে যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের মাল হরণ করল- গোস্বান্বিত অবস্থায় সে আল্লাহ সাথে সাক্ষাত করবে। " অতঃপর নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন- "যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। " (সূরা আলে ইমরান-৭৭) (বুখারী)
আবূ উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "মিথ্যা শপথ করে যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের সম্পদ হরণ করল, তার উপর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামকে আবশ্যক করে দেবেন, জান্নাত থেকে বঞ্চিত করবেন।
" এক ব্যক্তি বলল- সামান্য হলেও? বললেন- কাঁটা গাছের মূল্যহীন সামান্য ঢাল হরণ করলেও...!!"
২৭) সত্য সাক্ষ্য গোপনঃ
আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি মুসলমানকে জালেম বা মজলুমকে সাহায্য করার আদেশ করেছেন। জালেমকে জুলুম থেকে বারণ করতে হবে আর মজলুমকে জালেমের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অপরদিকে সত্য সাক্ষ্য গোপনকে হারাম করেছেন।
"তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে।
" (সূরা বাকারা-২৮৩)
২৮) সুশিক্ষার অভাব, ব্যাপক মূর্খতা প্রসারণঃ
মূখতা থেকে নবী করীম (সাঃ) মানুষকে বারণ করতেন- "নিশ্চয় আল্লাহ পাক অপছন্দ করেন- প্রত্যেক রুক্ষ স্বভাবী, রাক্ষস, বাজারে হৈ হুল্লোড়ে অভ্যস্ত, দিনের বেলায় গাধা আর রাতে (আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে) মৃতের মত শয়নোম্মাদ এবং পার্থিব জ্ঞানী কিন্তু আখেরাত বিষয়ে গন্ডমূর্খ। " (সহীহ ইবনে হিব্বান)
সমাজে (আখেরাতের বিষয়ে) মূর্খতা ছেয়ে যাওয়াকে কেয়ামতের নিদর্শন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) বলেন- "নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বমুহুর্তে (ইসলামী) জ্ঞান উঠে যাবে এবং সর্বত্র মূর্খতা ছেয়ে যাবে। " (মুসনাদে আহমদ)
অন্যত্র বলেন- "এমন এক কাল আসবে, যখন মানুষ জানবে না- নামায কি! রোযা কি! সাদাকা কি!" (তাবারনী)
অধিকাংশ মুসলিম দেশে আজকাল মুসলমানদে জ্ঞানের পরিধি পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন- সবাই সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানী। কিভাবে কম্পিউার চালাতে হয়, মোবাইলের বাটন চাপতে হয়, কিভাবে গাড়ী চালাতে হয়- সবাই জানে।
কিন্তু যদি জিজ্ঞেসা করেন নামাযে সহু-সেজদা কখন, কি কারণে দেয়া লাগে- জিজ্ঞেসা করলে মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।
এছাড়া মুসলমানদের ৯৫% মানুষই আজ বিবাহ-তালাক ও ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিধি-বিধান সম্পর্কে অবগত নয়। অথচ সামাজিক জীবনে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অর্থনৈতিক বিষয়ে অধিক সম্পৃক্ততা, অনর্থক বিষয়ের সীমাতিরিক্ত ব্যবহার, জ্ঞানের মজলিসে তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতি এবং কোরআন-হাদিস থেকে তাদের বিমুখ থাকাটাই এর প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি।
২৯-৩০-৩১) ব্যয়কুন্ঠতা ও কার্পণ্যতা বৃদ্ধি, ব্যাপক-হারে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকরণ, প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহারঃ
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "কার্পণ্যতা বেড়ে যাওয়া কেয়ামতের আলামত।
" (তাবারানী)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "সবকিছু কঠোর হয়ে যাবে, মানুষের মধ্যে কার্পন্যতা বৃদ্ধি পাবে। " (ইবনে মাজা)
অন্যত্র নবী করীম (সাঃ) বলেন- "সময় দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাবে, মানুষের আমল কমে যাবে, অন্তরে কার্পন্যতা সৃষ্টি হবে এবং অধিক হারে সংঘাত ঘটতে থাকবে। " (বুখারী-মুসলিম)
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "ঐ সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও কার্পণ্যতা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বস্তকে ঘাতক এবং ঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করা হবে, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ঘটবে। মূর্খদের জনপ্রিয়তা ও মাতব্বরি বেড়ে যাবে। " (মুস্তাদরাকে হাকিম)
৩২) অশ্লীলতা- বেহায়াপনা বৃদ্ধিঃ
অশ্লীলতা বলতে মহিলারা শর্ট ড্রেস পরে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করবে।
কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল গালিগালাজ বেড়ে যাবে।
নবী করীম (সাঃ) একে কেয়ামতের নিদর্শন বলে চিহ্নিত করেছেন-"ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত..! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনা বেড়ে যাবে..!"
৩৩) বিশ্বস্তকে ঘাতক আর ঘাতককে বিশ্বস্ত জ্ঞানঃ
নবী করীম (সাঃ) বলেন- "ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত.! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না বিশ্বস্তকে ঘাতক আর ঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করা হবে.....!"
৩৪) সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ও মূর্খদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিঃ
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "ঐ সত্তার শপথ- যার হতে আমার প্রাণ নিহিত.! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও কার্পণ্যতা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বস্তকে ঘাতক এবং ঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করা হবে, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ঘটবে মূর্খদের জনপ্রিয়তা ও মাতব্বরি বেড়ে যাবে। "
৩৫) সম্পদ উপার্জনে হালাল-হারামের তোয়াক্কা বিলুপ্তিঃ
আল্লাহর ভয় যখন অন্তর থেকে লোপ পায়, কাজ-কর্মেও তখন ধর্মীয় অনুভূতি হ্রাস পায়। ধর্মীয় অনুভূতি হ্রাস পাওয়ার ফলে শুরুতে সন্দেহে....এর পর হারামে লিপ্ত হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ধন সম্পদ উপার্জনে আর হালাল হারামের বাছ-বিচার থকে না।
মুসলিম সমাজ আজ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।
আবূহুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন, - "এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ সম্পদ উপার্জনে হালাল-হারামের তোয়াক্কা করবে না। " (বুখারী)
এ কারনেই আজ হালাল-হারামের বাধন ছিড়ে গেছে। মানুষ অবৈধ চাকুরী এবং হারাম ব্যবসায় লিপ্ত হয়ে গেছে। সিগারেট ব্যবস্, মদ, হেরইন, গাঞ্জা, মহিলাদের শর্ট ড্রেস বিক্রি, সুদি কারবারি, কু-কর্মীদের জন্য বিলাসবহুল হোটেল নির্মান।
এগুলো-ই আজকাল অভিজাত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অথচ আল্লাহ পাক বলেছেন- "তোমরা উত্তম বস্তু ভক্ষণ কর। "
নবী করীম (সঃ) বলেছেন- "যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকল, সে তার দ্বীন ও ঈমানকে বাঁচিয়ে নিল। পক্ষান্তরে যে সন্দেযুক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হল, সে হারামে লিপ্ত হয়ে গেল। " (বুখারী-মুসলিম)
৩৬) যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ জ্ঞানঃ
"আল্লাহ জনপদ-বাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্মীয় স্বজনের, ইয়াতীমের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্য, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জিভূত না হয়।
" (সূরা হাশর-৭)
কোয়ামতের পূর্বমুহুর্তে মানুষ আল্লাহর উপরোক্ত বিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মানবরচিত বন্টন নীতি প্রয়োগ করবে। ফলে সম্পদ শুধু নেতৃস্থানীয় বিত্তবানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। গবিদের হাতে পৌঁছাবে না। হাদিসে এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৩৭) আমানতকে খরচের বস্তু জ্ঞানঃ
আমানতের মালকে আল্লাহ পাক বিনা হস্তক্ষেপ মূল মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়ার আদেশ করেছেন- "নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকের নিকট পৌঁছে দাও।
" (সূরা নিসা-৫৮)
কেয়ামতের পূর্বমুহুর্তে আমানত রক্ষিত থাকবে না। কারো কাছে আমানত রাখা হলে সে তা খরচ করে ফেলবে। ফেরৎ চাইলে সামনা সামনি অস্বীকার করে দেবে। ফেরৎ দিতে অনীহা করবে।
৩৮) যাকাত প্রদানকে জরিমানা জ্ঞানঃ
দরকার তো ছিল-বছর ঘুরে আসার সাথে সাথেই মানুষ স্বর্ণ ও সম্পদের যাকাত আদায়ে উঠে পড়ে লেগে যাবে।
কারণ, যাকাত-সম্পদকে পবিত্র করে দেয়, যাকাত প্রদানে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়।
শেষ জামানায় ব্যয়কুণ্ঠতা বেড়ে যাওয়ার বিত্তবানরা যাকাত আদায়কে এক প্রকার চাঁদা ও জরিমানা মনে করবে। মনের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে সে যাকাত আদায় করবে। সৎ নিয়তের অভাবে আল্লাহ এরকম ব্যক্তির যাকাত কখন-ই গ্রহণ করবেন না।
৩৯) আল্লাহর জ্ঞান ছেড়ে পার্থিব জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশঃ
মুসলমান হিসেবে একজন ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা অতঃপর দ্বীন শিক্ষাদানে আত্মনিয়োগ করা।
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন- "যারা মানুষকে কল্যাণ শিক্ষা দেয়, তাদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন, আসমানের ফেরেশতাকুল, গর্তের পিপীলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে। " (তিরমিযী)
শেষ জামানায় ইসলামী শিক্ষা অবহেলার পাত্রে পরিণত হবে। সকলেই যুগোপযোগী আধুনিক জ্ঞানার্জনে ব্যস্ত থাকবে। যে কয়জন কুরআন-হাদিসের জ্ঞান চর্চা করবে, তারাও আবার দুনিয়ার আশায়, টাকা কামানোর আশায়; বরং সমাজে সুনাম-সূখ্যাতি পাওয়ার আশায় করবে।
৪০) মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্টকরণঃ
কেয়ামতের অন্যতম মৌলিক নিদর্শন হচ্ছে, মানুষ তার জন্মদাতা পিতা-মাতাকে ছেড়ে স্ত্রীর কথায় উঠা-বসা করবে।
স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে মায়ের অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে যাবে। প্রতিটি মুসলিম পরিবার এ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত।
অধিকাংশ সময় মা তার ছোট্ট কুঠিরে পড়ে থাকবে অথচ ছেলে বিলাস বহুল ভবনে স্ত্রীর সাথে মহা সুখে দিনাতিপাত করবে। আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অহরহ। বন ভক্ষক আবু তাহেরের কথাই ধরুন, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থেকেও বাবা মা মানুষের বাড়ি চেয়ে চিন্তে ভাত খেত।
বর্তমান কালের হলমার্কের এমডিও বাড়িতে বিশাল অট্টালিকা অথচা পিতার প্রবেশ নিষিদ্ধ! ভাবতে অবাক লাগে আমরা আজ কোথায় বাস করছি।
চলবে........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।