আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
কেয়ামতের নিদর্শন সমূহের ধারাবাহিক আলোচনায় আজকে শুরু করছি ৫৬ নং থেকে। আব্বা-আম্মার হজ্জ্ব গমন উপলক্ষে গত দু'দিন লেখালেখি করতে পারিনি বলে দুঃখিত। আপনার আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন যেন তারা সুস্থ শরীরের হজ্জ্ব পালন করে দেশে ফিরতে পারেন।
৫৬) বাক-জাদুতে সম্পদ উপার্জন এবং চাপাবাজি প্রতিযোগিতাঃ
শরীয়ত সম্মত পন্থায় পয়সা উপার্জনে দোষের কিছু নাই। জজ, উকিল ও ব্যরিষ্টারগণ এ নিয়মেই বেতনভূক্ত চাকুরী করে থাকেন। কিন্তু ভ্রান্ত কথা, ব্যবসায় মিথ্যা শপথ, আর অধিক চাপাবাজিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ-কে ইসলাম সম্পূর্ণ নিন্দা করে।
উমর বিন সাঈদ বিন আস রা. একদা পিতা বরাবর খুবই পান্ডিত্য ও সাহিত্য-পূর্ণ ভাষায় একটি আবেদন পেশ করলেন। আবেদন পাঠ শেষ হলে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন- তোমার কথা কি শেষ হয়েছে? ছেলে বলল- জ্বি হ্যাঁ....! পিতা বললেন- ওহে বৎস! ভেবো না যে, তোমাকে আমি অবহেলা করছি অথবা তোমার আবেদন পূরণে আমি অসম্মত।
তবে শুনে রাখ- নবী করীম (সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি- "অচিরেই এমন জাতির আবির্ভাব হবে, যারা গরু-গাভীর মত মুখ ব্যবহার করে উপার্জন করবে। " (মুসনাদে আহমদ)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কোয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শনি হচ্ছেঃ
১) অসৎ ব্যক্তিদের মর্যাদা দান
২) সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদেরকে অসম্মান
৩) অশ্লীল সংলাপ ব্যাপক আকার ধারণ
৪) (দ্বীন ছাড়া) সকল কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন
৫) সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক অনাচার প্রকাশ। "ব্যাপক অনাচার" কি? জিজ্ঞেসা করা হলে নবীজী বললেন- আল্লাহর কালাম ছেড়ে যা কিছুই লেখা হবে, সবাই অন্যায়। " (তাবারানী)
৫৭) কোরআন অবহেলা এবং অনর্থক গ্রন্থের ছড়াছড়িঃ
কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, মানুষ প্রচুর পরিমাণে বই-পুস্তক পড়বে। বিভিন্ন বিষয়ের বই দিয়ে ঘরোয়া লাইব্রেরী সাজিয়ে তুলবে।
কোরআনের জ্ঞান অবহেলা করে পার্থিব জ্ঞান অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
উপরোক্ত হাদিসেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়--"সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক অনাচার প্রকাশ পাবে............। "
৫৮) কোরআনের পাঠক বেড়ে যাবে, জ্ঞানী (ফক্বীহ)দের সংখ্যা কমে যাবেঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "অচিরেই এমন এক জামানা আসবে, যখন কোরআনের পাঠক বেড়ে যাবে, দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞানসম্পন্ন লোক কমে যাবে, ওহীর জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে এবং সংঘাত বেড়ে যাবে। সংঘাত কি? জিজ্ঞেসা করা হলে নবীজী বললেন- "পারস্পারিক হত্যাযজ্ঞ-"। অতঃপর এমন এক জামানা আসবে, যখন কোরআন পাঠ করা হবে, কিন্তু কোরআনের আয়াত তাদের কণ্ঠাস্থি অতিক্রম করবে না (অর্থাৎ কোরআনের বিধান বাস্তবায়িত হবে না) অতৎপর এমন এক জামানা আসবে, যখন কাফের, মুনাফেক, মুশরেক ব্যক্তি ইসলাম নিয়ে মুমিনের সাথে তর্কযুদ্ধ করবে।
" (মুস্তাদরাকে হাকিম)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে জ্ঞানকে আল্লাহ আকস্মিক উঠিয়ে নেবেন না; বরং উলামাদেরকে উঠিয়ে নেবেন। অবশেষে যখন বিজ্ঞ আলেম বলে কেউ থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খদের শরণাপন্ন হয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে। আলেম নামধারী মূর্খরা ভুল ফতোয়া দিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদের-ও পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে। " (বুখারী-মুসলিম)
বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ধর্মীয় পরিস্থিতি যাচাই করলে দেখবেন যে, একদল যুবসম্প্রদায় সুমধুর কণ্ঠে কোরআন পাঠে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। রকমারি ডিজাইনে, নানান সুরে, বাহারি ভঙ্গিতে কোরআনের আওয়াজ ভেসে আসছে।
অপরদিকে কোরআনের সঠিক শিক্ষা ও ইসলামী বিধি-বিধান নিয়ে গবেষষণা করার মত লোক নেই। যারা কোরআন পাঠ সুমধুর করতে গিয়ে এত সময় ব্যয় করছে, তাদের কাউকে যদি আপনি পবিত্রতা সংত্রান্ত একটি মাসালা জিজ্ঝেসা করেন বা ছহু সেজদা কখন - কি কারনে দেওয়া লাগে- জিজ্ঝেসা করেন, সঠিক উত্তরটি পাবেন না।
চলবে...........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।