ঘোরাঘুরির স্বভাব আমার সেই ছোটবেলা থেকে । এখনও সুযোগ পেলেই ঘুরে আসি বাংলার পথে প্রান্তরে । সেইন্ট মারটিন থেকে সুন্দরবন , সিলেট থেকে নিঝুম দ্বীপ , গজারিবন থেকে কেউক্রাদং ঘুরে আসার সুযোগ হলেও ঢাকারই অদুরে সোনারগাঁ কখনও যাওয়া হয়নি । এবারে পরিক্ষার পর ৪ দিন ছুটি পাওয়ায় ঐতিহাসিক সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁ ঘুরে আসার সুযোগটি হাতছাড়া করলাম না । সাথে ছিল আমারই পিঠেপিঠি চাচাতো ভাইটি , যার সাথে ঘুরাঘুরি আমি বরাবরই উপভোগ করি ।
পুরো সোনারগাঁ এলাকাটি বেশ বড় । প্রথমে বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে আমরা গেলাম গোয়ালদি মসজিদটি দেখতে । ছোট কিন্তু অসাধারন কারুকার্য খচিত ইটের মসজিদটি ১৫০০ শতক এ নির্মিত । ৫ টাকার কাগজের নোটে অঙ্কিত এই মসজিদটি দেখলে মনটা এমনিতেই ভাল হয়ে যায় । গোয়ালদি মসজিদ থেকে মাত্র ৫০ মিটার দুরেই আরেকটি বড় মসজিদ আছে যেটি মুঘল আমলে তৈরি ।
এরপর আমরা গেলাম ঐতিহাসিক পানাম নগরী । গোয়ালদির অদুরেই এই হারিয়ে যাওয়া নগরীটি অবস্থিত । এখানে আসলে আমাদের মনে হল আমরা যেন কোন এক মন্ত্রবল এ ফিরে গেছি ১৮০০ শতকে । সিরামিক এর চোখ ধাঁধানো কারুকাজ নিয়ে সারি বেধে দাড়িয়ে আসে অট্টালিকা গুলো । শান বাঁধানো পুকুর , মন্দির , উঠান সবই আছে , নেই শুধু মানুষ ।
এ যেন এক ভুতুড়ে নগরী , ভর দুপুরে পানাম এর রাস্তায় একা একা হাটতেও কেমন গা ছম ছম করে, শান বাধানো ঘাটে পা ডুবিয়ে বসে থাকা সত্যি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা । যাদের ফটোগ্রাফির শখ আছে , পানাম তাদের জন্য একটা পারফেক্ট লোকেশন ।
আমাদের সব শেষ গন্তব্য ছিল সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর । সর্দার বাড়ি নামে পরিচিত এক প্রাচীন জমিদার প্রাসাদ এ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৭৫ সালে এই জাদুঘরটি গড়ে তোলেন । বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে তলা এই জাদুঘর এলাকায় আছে কারুপল্লী , লেক , কাফেটোরিয়া , সরকারী অফিস ভবন ।
লেকে নৌকা চালানোর আর কারুপ্ললীতে বিভিন্ন হস্তশিল্প কেনার সুযোগ রয়েছে । সব থেকে বেশি চোখ এ পড়ল লেকটির পাড়ে চিপায় চাপায় অসংখ্য কপোত কপোতীর সমাহার । অল্প খরচ এ এমন নিরাপদ ডেটিং প্লেস আর হয় না ।
জাদুঘরটি অনেক সমৃদ্ধ । ছোটদেরকে দেশের লোকজ শিল্প সংস্কৃতি শেখানোর জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আসলেই নেই ।
দেশিও ও উপজাতিয় সমাজ এর অনেকটাই উঠে এসেছে প্রতিটি প্রদর্শনী কক্ষে ।
বেলা গড়িয়ে বিকেল শেষের পথে যখন, আমরা ফেরার পথ ধরলাম । বাস স্ট্যান্ডে বাস এ ওঠার আগে সরের চা সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে দিল ।
বিশাল বিস্তৃত এই সোনারগাঁ একদিন এ ভালভাবে দেখা সম্ভব নয় । এমন অনেক স্থাপনা আছে যেগুলো পর্যটকরা জানেই না ।
আর অসাধারন প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে এমন স্বপ্নালু করে তুলবে যে আপনি মনের কল্পনায় ভেসে যাবেন সেই প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম এ । আপনার বাজেট এ যদি সময় আর অর্থ ২টিই কম থাকে তবে সোনারগাঁ ভ্রমণটি সব থেকে পারফেক্ট বলে আমি মনে করি । তবে আর দেরি কেন ? না দেখলে আজি বেরিয়ে পড়ুন সোনারগাঁ এর পথে ।
কিভাবে যাবেন --- ঢাকার গুলিস্থান এ স্টেডিয়াম এর সামনে থেকে সোনারগাঁ এর বাস ছাড়ে । দোয়েল লিমিটেড ছাড়ে ১৫ মিঃ পর পর ।
বাসটি অত্যন্ত আরামদায়ক ,ভাড়া ৩৫ টাকা ।
বাস থেকে নামতে হবে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা । বাস থেকে নেমে রিকশা অথবা অটো নিয়ে যেতে হবে গোয়ালদি , ভাড়া ৪০ টাকা । ওখান থেকে আবার রিকশা অথবা অটো নিয়ে পানাম নগরী , ভাড়া ৩০ টাকা । তবে সব থেকে ভাল ছায়া ঘেরা মেঠো পথ দিয়ে হেটে পানাম যাওয়া , ১৫-২০ মিঃ লাগবে ,তবে অসাধারন প্রাকৃতিক দৃশয আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।
পানাম ঘুরে আবার হেটেই যেতে পারবেন জাদুঘর এ । সেক্ষেত্রে ২ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে হবে । প্রবেশ মূল্য ১৫ টাকা । জাদুঘর থেকে বাস স্ট্যান্ড ১০ টাকা ভাড়া ।
খাওয়া - দাওয়াঃ টুরিস্ট স্পট হিসাবে খাওয়া দাওয়া খুব একটা সুবিধার নয় ।
জাদুঘর এর সামনের দোকানগুলোতে দাম বেশি আর মানও ভাল নয়, বাস স্ট্যান্ড এও তাই । তবে একটু উৎসাহী হলে গ্রামের ভিতর খুজে দেখা যেতে পারে । তবে পানাম মোড় এর গরম সিঙ্গারা আর বাস স্ট্যান্ড এর সর চা সত্যি অসাধারন লেগেছে ।
থাকবেন যেখানেঃ রাতে থাকতে চাইলে সরকারী ডাকবাংলোয় অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।