-------------------------------
বসন্তের কোন এক সুন্দর দিনে বনে একটি লাল গোলাপ ফুটল।
অনেক প্রকারের গাছ-বৃক্ষ, লতা-পাতা সেখানে জন্মেছে। যখন
গোলাপটি চার দিকে দেখল, কাছেই একটি সরলবৃক্ষ (পাইন) বলল,
"বাহ! কী সুন্দর গোলাপ ফুল! আমি যদি এর মতো আকর্ষণীয়
সুন্দর হতে পারতাম!"
অন্য একটি গাছ বললো, "প্রিয় পাইন গাছ! এতো দুঃখ করিও
না, আমরা চাইলেই সবকিছু হতে পারি না। "
গোলাপ ফুলটি তার মাথা ঘূরিয়ে মন্তব্য করলো, " মনে হচ্ছে
একমাত্র আমিই এই অরণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দর। "
একটি সূর্্যমূখি ফুল তার হলুদ মাথা উঠিয়ে গোলাপকে বললো,
"কেন তুমি একথা বলছো? তুমি ছাড়াও এই বনে অনেক অনেক
সুন্দর গাছ আছে।
তুমি শুধু তাদের মধ্যেই একটি। "
লালগোলাপ উত্তরে বললো, "আমি দেখছি, সবাই মুগ্ধদৃষ্টিতে শুধু
আমার দিকেই তাকাচ্ছে। " তার পর গোলাপ ফুলটি ফণীমনসা
গাছের দিকে তাকিয়ে বললো, "চেয়ে দেখ এই বিছরি গাছটি, তার
সারা গায়ে কাটায় ভরে আছে। "
পাইন গাছ বললো, "লাল গোলাপ! এটা কেমন ধরনের কথা বলছ?
কে বললো তুমি এত সুন্দর! তোমার গায়েও তো কাঁটা আছে। "
অহংকারী লাল গোলাপটি ক্রুদ্ধচোখে পাইন গাছের দিকে তাকিয়ে
বললো, "আমার মনে হয় সুন্দর কাকে বলে এসবের কিছুই তুমি
বুঝ না।
তুমি তুলনা করতেই জান না আমার গায়ের কাটা আর
ফণীমনসার গায়ের কাটার সাথে। "
"এ কেমন অহংকারী গোলাপরে বাবা!" পাইন গাছটি ভাবলো।
গোলাপটি চেষ্টা করলো যে, ফণীমনসা গাছ থেকে একটু সরে সে
যেন অন্য দিকে ঘুরে থাকতে পারে। কিন্তু এটা তার পক্ষে সম্ভব
হলো না। দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে, গোলাপটি ফণীমনসার দিকে
তাকিয়ে তাকে অপমানকর কথা বলছে।
যেমনঃ "এই গাছটি কোন
কাজে আসে না! আমি তার প্রতিবেশী হওয়াতে খুব খারাপ অনুভব
করছি। "
এতে ফণীমনসা গাছের মন কখনও খারাপ কেরেনি এবং গোলাপকে
এই বলে উপদেশ দিলো যে, "আল্লাহ কোন প্রয়োজন ছাড়া কোন গাছ
বা জীবনের সৃষ্টি করেননি। "
বসন্তকালের শেষ, এবং আবহাওয়া খুব খারাপ হতে শুরু করল। বনে
জীবন ধারণ করা খুব কঠিন হতে শুরু করছে। যখন গাছ বৃক্ষ
এবং পশুপাখিদের পানির প্রয়োজন, তখন বৃষ্টি হচ্ছে না।
এতে সবারই
কষ্ট দিন দিন বাড়তে লাগলো। লালগোলাপটিও সুকিয়ে ঝুলে পড়তে
শুরু করছে। একদিন গোলাপ দেখলো যে, চড়ুই পাখি তার ঠোঁট ফণী-
মনসার গায়ে ডোবিয়ে কি যেন করলো তার পর খুশি মনে উড়ে চলে
গেলো। এটা কী করছে বুঝতে না পেরে লাল গোলাপ পাইন গাছকে
জিজ্ঞেস করলো যে, চড়ুই পাখি কী করতে ছিলো। পাইন গাছ তাকে
বললো যে, চড়ুই পাখি ফণীমনসা গাছ থেকে পানি পান করেছে।
"এটা কোন ব্যথা পায়নি যখন চড়ুইগুলো ফণীমনসার গায়ে গর্ত করছে?"
গোলাপ জিজ্ঞেস করলো।
"হ্যা, ব্যথা পেলেও ফণীমনসার মন খারাপ হয় কোন পাখি পিপাসায়
কষ্ট পেলে। " উত্তরে পাইন বলল।
গোলাপ বিস্ময়ে চোখ খু্লে বললো, "ফণীমনসা গাছে কী পানি আছে?"
"হ্যা, তুমিও তা থেকে পানি পান করতে পার। তুমি ফণীমনসা গাছের
কাছে সাহায্য চাইলে তা থেকে চড়ুই তোমার কাছে পানি নিয়ে আসতে
পারে।
"
লাল গোলাপ তার অতীতের খারাপ ব্যবহার ও কথায় লজ্জায় পড়ে গেলো,
কীভাবে সে এখন ফণীমনসা গাছের কাছে পানির কথা বলবে? অবশেষে
সে ফণীমনসার কাছে পানির জন্য সাহায্য প্রার্থনা জানালো। ফণীমনসা সদয়
হয়ে পানি দিতে রাজি হলো। চড়ুই তার ঠোঁট পানিতে পূর্ণ করে গোলাপের
মূলে পানি পৌঁছে দিলো। এভাবে তা থেকে গোলাপ একটি সুশিক্ষা অর্জন
করলো এবং কারো চেহারা দেখে অন্ধভাবে বিচার করা থেকে বিরত থাকলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।