মেডিক্যাল এর ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো আসে মন্ত্রণালয় থেকে, আমলাদের হাত ধরে। আর তারা এই নিয়মগুলো বানানোর সময়ই তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের সুবিধা নিশ্চিত করে নেয়। আর্থিক দূর্নীতির সুযোগটাই আমরা বেশী দেখি, হইচইও করি বেশী, অথচ যাদের হাত ধরে এই আইন-কানুন তৈরি হয়, তারা নিজেরা এই ক্ষমতার কতটা অপব্যবহার করতে পারে, চিন্তা করি না। প্রভাবশালী শীর্ষ আমলাদের সন্তানেরা আর আত্নীয়েরা তো গোপণীয়তার দোহাই দিয়েই শুধু জিপিএ ৫ থাকলেই মেডিক্যাল এ ভর্তি হবে, তাও আবার ঢাকা মেডিক্যালই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে মণ্ত্রণালয়ের বড় বসদের লালফোনের সুপারিশ (কথাটা হুকুম পড়বেন) তামিল না করে।
আমাকে বা আমার বাবাকে আবার পাঠকেরা নিন্দাবাদ করবেন না প্লিজ। আমি আমাদের নিজেদের পরিবারের দুটো অনৈতিক ঘটনা জানাব। আমার বাবা ২০০২/০৩ সালে ইন্টার পরীক্ষার ম্যাথ এর হেড-এক্সামিনার ছিলেন। এখন উনি রিটায়ার্ড আর পেনশনও আংশিক পেয়ে গেছেন, বাকীটা পাবার আর আশাও নেই, কাজেই নির্ভয়েই বলি। তখন নাম্বার সিস্টেম।
ঐ বছর শিক্ষা সচিবের মেয়ে পরীক্ষার্থী। তো রেজাল্ট হবার দিন পনের আগে ঢাকা বোর্ড এর চেয়ারম্যান নিজে বাবার মোবাইলে যোগাযোগ করে পরেরদিনই (যেটা ছিল এক সরকারী ছুটির দিন) তার অফিসে যেতে বললেন জরুরীভাবে। আমরা তো সবাই অবাক, তিনি বাবার ব্যক্তিগত নাম্বার পেলেনই বা কিভাবে, আর তিনি নিজেই ফোন দিলেন কেন? যা হোক, পরেরদিন বাবা যখন সারাদিন বোর্ড অফিসে কাটিয়ে সন্ধায় বাসায় আসলেন, ঘটনা শুনে আমরা তাজ্জব। ঘটনা হচ্ছে, শিক্ষা সচিবের মেয়ের অংক খাতা রি-এক্সামিন হয়েছে, যদিও নিয়ম হচ্ছে রেজাল্ট প্রকাশ হবার পর কেউ যদি নাম্বার কম পেয়েছে মনে করে, তবে লিখিতভাবে আবেদন করলে খাতা রি-এক্সামিন হয়। যাই হোক, সেখানে মূল পরীক্ষক ও বাবা ছাড়াও আরও নতুন একজন পরীক্ষকও ডাক পেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
খাতায় নাম্বার ছিল ফেলের কাছাকাছি। সেটা সেদিন বাড়িয়ে ৯৯ করা হয়েছিল। উনাদের সেটা না করেও উপায় ছিল না, বোর্ডের চেয়ারম্যান যেখানে নিজেই তটস্থ, সেখানে অন্যরা কোন ছাড়! সেদিন ঐ সময়েই অন্যরুমে তিনি অন্য বিষয়ের হেড-এক্সামিনারকেও (পূর্ব পরিচিত) দেখেছিলেন, আর সেই বন্ধের দিনে অফিসে আরও অনেক অপরিচিত মানুষের ভীড় দেখেছিলেন, যেটা ছিল বেশ অস্বাভাবিক। এক জনের জন্যই হয়ত অন্য কোন বিষয়েও একইভাবে নাম্বার বাড়ানো হয়ে থাকবে, সেটা অবশ্য আমাদের অনুমান। সেই বছরই মেডিক্যাল এর ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বিপ্লব হয়ে গেল, ফর্ম কেনার নূন্যতম নাম্বার আগের বছরের ১৪০০ থেকে কমে হয়ে গেল ১২০০, যেটা পরের বছরই আবার ১৪০০ হলো।
বুঝে নিলাম, কোন আমলার প্রয়োজনে সেটা ঘটল। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ভর্তি পরীক্ষা না হওয়াটা কাদের জন্য সৌভাগ্য, সহজেই অনুমেয়।
"শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে বাধ্য করবেন। "
আমি বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে সুস্পষ্ট দ্বিমত পোষন করছি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরিবেশ ও মান এক নয়।
আমার ২য় ঘটনা বলি। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় আমার রুমে সাকুল্যে ৩০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ৬ জন ইনভিজিলেটর ছিল, এবং প্রতিটি ছাত্রের মাঝে ছিল বিরাট ফাঁকা এলাকা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিলাম বিরাট হলরুমে (টিচার্স ট্রেনিং কলেজ) এ। কম করে হলেও ২০০ জন ছাত্র, আর ইনভিজিলেটর মাত্র ৩ জন। সিট প্ল্যানিংও এমন সহজ-সরল যে, আমাদের প্ল্যানমতই আমাদের কয়েক বন্ধুর সিট একসাথে পড়ল।
ওরা অংক আর ফিজিক্স পুরোটাই আমার উত্তরগুলো নিয়ে দিল, এমনকি যারা ভিন্ন সেট পেয়েছিল, তারাও প্রশ্ন মিলিয়ে মিলিয়ে উত্তরগুলো জেনে নিল। মুলতঃ আমি সেখানে গিয়েছিলামই বন্ধুদের জন্যই। আর সিটগুলো এত ঘন ঘন যে বুয়েটের পরীক্ষায় ২ জনের মাঝে যে ফাঁক ছিল, তাতে অনায়াসে এখানকার ৫ জনকে বসানো যেত। অথচ, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম জেনেছিলাম বাথরুমে গেলেও সংগে একজন গার্ড থাকে, আর একজন টাইমকিপার লক্ষ্য রাখে নির্ধারিত সময় অতিক্রম হ্য় কিনা, হলে খাতা সিজ করা হয়। সে জন্যই তো মফস্বল শহর থেকে গিয়েও বু্য়েটে ঢুকতে পারলাম।
আর আমি নিশ্চিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আরও কিছু গ্রামের থেকে আসা মেধাবী ছেলে হয়ত চান্স পেত, যদি আমার স্মার্ট (তুলনামূলক, ঢাকার পুলাপান আরও কি কৌশল করে কে জানে?) বন্ধুদের মত অনেকে এইরকম দুনম্বরি করে ভর্তির সুযোগ না পেত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।