দক্ষিণ ভারত থেকে আসাম যাত্রাপথে গত শনিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বিশেষ ট্রেনে যাওয়ার সময়ে মুসলমান যাত্রীদের খুঁজে খুঁজে মারা হয়। ওই হামলার শিকার হন ১৪ মুসলমান যাত্রী। পুলিশ বা রেল কর্তৃপ আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কিছু না জানালেও আহত এক ব্যক্তির পরিবার বিবিসি বাংলাকে সেই ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন।
ব্যাঙ্গালোরে বেসরকারি নিরাপত্তারীর কাজ করতেন হাইলকান্দির বাসিন্দা ২২ বছরের শাহজাহান আহমেদ চৌধুরী।
তার বড় ভাই জিলান আহমেদ চৌধুরী টেলিফোনে শাহজাহানের কাছ থেকে ঘটনার যে বিবরণ জানতে পেরেছেন, সেটাই তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়ে বলেছেন, ‘ব্যাঙ্গালোর থেকে একই ট্রেনে আসছিল যারাÑ তারা খুঁজে খুঁজে মুসলমানদের বের করে।
’
নিজের গ্রাম হাইলাকান্দি থেকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এই সাাৎকারে জিলান আহমেদ চৌধুরী বলেন, ট্রেনে হামলাকারীরা প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেখতে চায় তারপর বগির সব দরজা বন্ধ করে মুসলমান যাত্রীদের মারধর শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা সব কেড়ে নেয়া হয়। যারা মারছিল, তারা সংখ্যায় প্রায় ৪০-৪৫ জন ছিল আর সবাই আসামের লোক। রড দিয়ে মারা হয়, চাকু দিয়েও আঘাত করা হয়।
তিনি আরো জানিয়েছেন যে লাশগুলো গ্রামে পৌঁছেছে, সেগুলোর মুখে-মাথাতেও একই রকমের কাটা দাগ রয়েছেÑ যেটা আমার ভাই জানিয়েছে।
তার ভাইয়ের বরাত দিয়ে জিলান আহমেদ চৌধুরী বলেন, দুই-আড়াই ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালানোর পরে এক এক করে ওই যাত্রীদের চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়
‘এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পুলিশ আসেনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর এক ডাক্তারের মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে খবর দিয়েছে ভাই। ’
আসামের দাঙ্গার পরে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বসবাসকারী অসমীয়াদের ওপরে হামলা হতে পারে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাঙ্গালোর থেকে আসামগামী একটি বিশেষ ট্রেন থেকে আসামের হাইলাকান্দি অঞ্চলের চারজন মুসলমানকে মেরে ফেলে হয় গত শনিবার রাতে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা জলপাইগুড়ির বেলাকোবা ও ফালাকাটা এলাকায় ওই চারজন ছাড়াও অন্তত ১০ জনকে গুরুতর আঘাত করার পরে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়
সোমবার আরেকজন অসমিয়া ব্যক্তির লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে উত্তরবঙ্গেরই আরেকটি রেললাইনের ধারে।
ভরত শইকিয়া নামে ওই ব্যক্তিও বিশেষ ট্রেনে করে ব্যাঙ্গালোর থেকে আসাম পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে রেল কর্তৃপ নিশ্চিত করেছে।
তবে কিভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে এখনো কর্তৃপ নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।
শনিবারের ঘটনায় আহতদের পাঁচজনকে গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য তিনজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে হাইলাকান্দির পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট ব্রজেনজিৎ সিংহ জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ওই তিনজনকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
ও দিকে, ব্যাঙ্গালোর থেকে একই ট্রেনে আসছিলেন, এ রকম এক যুবক এখনো নিখোঁজ বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
অন্য সহযাত্রীরা বলতে পারছেন না ট্রেনে মারধর শুরু হওয়ার পরে জাকির হুসেন নামে ওই যুবকের কী হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে আহত ও নিহতদের তালিকায় ওই যুবকের নাম নেইÑ তারাও খোঁজ চালাচ্ছেন।
এ দিকে ব্যাঙ্গালোর থেকে বিশেষ ট্রেনে পালিয়ে আসার সময় আসামের হাইলাকান্দির যে বাসিন্দাদের মেরে ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছিল, তাঁদের নামাজে জানাজার পরে দাফন করা হয়েছে।
সকাল ৮টায় লাশগুলো গৌহাটি থেকে হাইলাকান্দি পৌঁছায় আর বেলা ১টার মধ্যে দাফন শেষ হয়ে যায়। সূত্র : বিবিসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।