আমি খুব সাধারন একজন বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দটাও বুঝি ফ্যাকাসে হয়ে যায় । শৈশবের ঈদ আনন্দ আর এখন ,বিস্তর ফারাক । এখন অবশ্য ঈদে কোন আনন্দ হয়না ঈদের দিনটা প্রতিদিনের মতই একটা দিন ,এর বেশী কিছু নয় । ঈদের নামাজ পড়ে এসে সটান এক ঘুম দেই । যাকে বলে ঈদের ঘুম ।
অথবা চলে স্বৃতি হাতড়ানো । অনেক ঈদস্বৃতিই আমাকে আবেগ তাড়িত করে । বিশেষ করে শৈশবের । তেমনই একটি স্বৃতি আপনাদের সাথে আজ ভাগাভাগি করব । যেকোন ঈদেই আমার দাদাবাড়ির আত্বিয়স্বজন চলে যেতাম দাদাবাড়িতে ।
আড়িয়াল খাঁ নদীর কোল ঘেঁষে ছবির মত গ্রাম । এখন অবশ্য নদী ভাঙনে আগের মত নেই । গ্রামের দুপাশ দিয়েই কলকল করে বয়ে চলেছে এই সর্বগ্রাসী নদী । মূল নদীটা মিশেছে বরিশালের কির্তনখোলার সাথে । শাখা নদী গেছে মাদারিপুরের দিকে ।
সেবার ঈদে জামাকাপড় বেশী পাওয়ায় আনন্দটা একটু বেশীই ছিল । ঈদের দিনের অপেক্ষায় যেন তর সয়ছিল না । আমি আবার ছোটবেলা থেকেই লাজুক টাইপের । আর বড় ভাইয়া ,দুষ্টের শিরোমনি । এই কারো গাছের ফল পেরে খেয়েছে ,কারো মুরগি মেরে ফেলেছে এমন অভিযোগ প্রতিদিনই আসতো ।
বংশের বড় ছেলে হওয়ায় আহ্লাদটাও বেশী ছিল । আমি নাছোড়বান্দা । সারাক্ষন তার পিছে লেগে থাকতাম । ভাইয়াকে ছাড়া ঈদ কল্পনাও করা যায়না । প্রায়ই গ্রামের ছেলেদের সাথে নদীতে গোসল করতে যেত ।
কে শোনে নিষেধবানী । গোসল করতে গেলে চলত প্রতিযোগিতা । কে কতদুর সাতরে দুরে যেতে পারে । একবার সবাই তীরে চলে এসেছে কিন্তু ভাইয়ার দেখা নেই । খরস্রোতা নদীতে কোথায় নিয়ে ফেলেছে কে জানে ।
অনেক খুজেও পাওয়া গেলোনা । বাড়িতে খবর গেলে এক হুলুস্হুল পড়ে গেল । সবার সেকি কান্না । আম্মু তো বার বার র্মুছা যাচ্ছে । বাড়িতে সবাই শোকে পাথর ।
হঠাত্ রাত দশটার দিকে বাড়ির বাইরে চিতকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো । ভাইয়াকে পাওয়া গেছে ভাইয়াকে পাওয়া গেছে । কয়েকজন জেলে ভাইয়াকে ধরে নিয়ে এসেছে । ভাইয়া তো নির্বিকার । মনেহয় কিছু হয়নি ।
হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিজেই সাবলিল ভাবে বর্ননা করে দিচ্ছে । ভাইয়া সাতরে অনেক দূর চলে গিয়েছিল । কিন্তু স্রোতের তোরে তাকে ভাষিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। স্রোতের সাথে পেরে উঠছিলনা । অনেকক্ষন সাতরানোর কারনে দূর্বল হয়ে গিয়েছিল ।
অনেক ভয় পেয়ে গেলো ভাইয়া । জীবনের আশা বুঝি শেষ । কিন্তু উপড়ে তো একজন আল্লাহ আছেন । তিনি না চাইলে আর কে মারবে । যেতে যেতে সামনে পেয়ে গেলেন একটা বয়া ।
নদীতে ভেসে থাকে বিশাল বলের মত দেখতে । লন্চের দিক নির্নয়ের জন্য রাখা হয় । ভাইয়া বয়াটাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে খাকলেন । রাত আটটার দিকে ভাইয়ার চিতকার শুনে জেলেরা তাকে উদ্ধার করে । আম্মু ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কিযে কান্না ।
ভাইয়াকে ফিরে পাওয়ায় ঈদটা যে কি আনন্দে কেটেছে । রোজার ঈদ এলেই এই ঘটনাটা খুব মনে পড়ে । ভাইয়ার পিছু পিছু অবশ্য এখন আর থাকা হয়না । থাকবো কি করে ,ভাইয়ে যে থাকে সুদূর আমেরিকা । আপনজনের মায়া ছেড়ে ।
তাই আমিও ঈদের দিন পড়ে পড়ে ঘুমাই । ঘুমের ঈদ নাকি ঈদেয় ঘুম । হবে হয়তো কোন একটা । সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা । ঈদ মোবারক ।
সবার ঈদ সুন্দর কাটুক । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।