অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
শৈশবের অহেতুক আনন্দ আর বিভিন্ন ধরণের খেলা আবিস্কারে আনন্দটা এখন আর পাই না- শৈশবের কোনো খেলারই কোনো নির্ধারিত নিয়ম ছিলো না- এমন কি কোনো নামও ছিলো না- নামবিহীন খেলাগুলোর আনন্দ ছিলো অনেক।
এখনও ভাবছি এসব খেলার কোনো নাম কোথাও আছে কি না?
একটা পরিচিত খেলা ছিলো বড় বোতামের ফুটা দিয়ে সুতা ঢুকিয়ে সেটাকে দু আঙ্গুলে রেখে ঘুরানো- ঘুরানোর কায়দা হলো একবার টানতে হবে একবার টান কমাটে হবে-অনেক দিন পর বোম্বে সুইটসের কল্যানে এই খেলা খেললাম- তারা এজন্য একটা ব্যবস্থা করেছে- গরীবের ইয়ো ইয়ো না এটা- এটা একেবারে শিশুদের নিজস্ব আবিস্কার।
অন্য খেলাগুলো ভয়ংকর ছিলো- হাস্যকর কিছু কিছু খেলা ছিলো সেসব খেলা বাদ দিলে- টিনের পাতের একমাথায় সুতা বেধে জোড়ে জোড়ে ঘোরালে ঘুমমমমমমমমমমমমম আওয়াজ হতো- ভয়ংকর মাদকতাময় আওয়াজ- আমরা বাসার সামনের মাঠে দল বেধে টিনের পাতে সুতো বেঁধে ঘুরাতাম-
আমরা যারা ঘুড়ি উড়াতে পারতাম না তাদের প্রিয় খেলা ছিলো ঘুড়ির কাজগ কিংবা প্লাস্টিক ব্যাগের ছেঁড়া টুকরো ছোটো ইটের মাথায় রেখে উড়িয়ে দেওয়া- সেই ছিলো আমাদের আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ-
লাল লাঠি খেলাটা বোধ হয় অনেক পরিচিত- তবে অপরিচিত নামবিহীন খেলার একটা ছিলো কাঁচের চুড়ির টুকরা লুকিয়ে রাখা- দুই দলে ভাগ হয়ে খেলাটা খেলতাম আমরা- চুঁড়ির টুকরো নিয়ে নির্ধারিত ঘরের ভেতরে লুকিয়ে রাখতাম বিপক্ষ দলের কাজ ছিলো এইগুলো খুঁজে বের করা- যদি সফল হতো তাহলে সেগুলো তাদের আর ব্যর্থ হলে সমপরিমাণ চুঁড়ির টুকরা দন্ডি দিতে হতো-
আরও একটা খেলা খেলতাম কয়লার দাগ দিয়ে সেসব দাগ খুজে বের করার খেলা- খুব গম্ভীর মুখে খেলতাম েসব, আনন্দটা ছিলো প্রধান- কোনো নিয়ম নেই- নির্ধারিত নিয়মের ভেতরে ছিলো এসব খুঁজে বের করতে হবে- কোনো রকম ছলচাতুরি করা যাবে না-
কাঁচের চুড়িতে রাবার ব্যান্ড বেঁধে সেই খানে একটা বোতাম কিংবা কাঠি লাগিয়ে কাউকে উপহার দেওয়ার একটা রীতি ছিলো- কাগজে মোড়ানো এই জিনিষ খুলতে গেলে হঠাত চাপ সরে গেলে কাগজে খসখস শব্দ হতো এটাই আনন্দ
মানুষকে বোকা বানানোর, মানুষকে চমকে দেওয়ার নির্মল আনন্দ- কারো ঘাড়ে লাফিয়ে না পড়ে- অহেতুক চিৎকার না করে এসব আনন্দ আসলেই ভালো লাগতো
আমি অনেক রকম খেলায় দুধভাত ছিলাম- রান্না বাড়ী খেলা- কিংবা চিবুড়ি- বৌচি- কিংবা দারিয়াবান্ধা কিংবা কুমির তোর জলে নেমেছি খেলাটা বোধ হয় সার্বজনীন খেলা-
পুতুল খেলা কিংবা লুকোচুড়ির মতো খেলাও প্রচলিত- গোল্লাছুট আর অন্যান্য দলীয় খেলার বাইরে আসলে শিক্ষামূলক একটা খেলা খুব বেশী প্রচলিত ছিলো শৈশবে-
শিক্ষকতার খেলা- আমি কিংবা আমাদের মতো অবেধেরা সার্বক্ষনিক ছাত্র ছিলো এ খেলায়- একেক জনকে স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতো- এরপর বিভিন্ন রকম কাজ নিয়ে আসতো সে দিনের শিক্ষক- অংক- ছবি আঁকা- বিভিন্ন সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন- এসবের উত্তর আর দক্ষতার জন্য বিভিন্ন নম্বর দেওয়া হতো- দ দিয়ে দোয়েল আঁকা- হ দিয়ে হাঁস আঁকার মতো নানা রকম বিষয়াসয় ছিলো সেখানে-
আরও একটা খেলা যার নাম আমি জানি না- হাতে ৫টা পাথরের টুকরো নিয়ে খেলতে হতো- এর সাথে একটা ছড়াও ছিলো- সে ছড়া খুঁজছি এখন- সেদিন শাহবাগের পাশে দেখি দুজন খেলছে এই খেলা- ভালো লাগলো দেখে তবে আমার অদক্ষতা এতই যে আগ্রহী হয়ে খেলতে সাহস পেলাম না।
এই খেলার প্রসঙ্গেই মনে হচ্ছে আমরা ছেলেরা অনেক পরে অনেক কিছু বুঝতে পারি কিংবা বুঝবার অবস্থায় আসি- মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ফেলে আগেই পরিপক্ক হয়ে উঠে- অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মানসিক পরিপক্কতা বেড়ে যায় সময়ের আগেই- তবে আশ্চর্য হলো ছেলেরা পরিপক্ক হতে সময় নিলেও তাদের মানসিক পরিপক্কতার ঢালটা উর্ধমুখী- মেয়েরা পরিপক্ক হয়ে উঠার পর একটা পর্যায়ে গিয়ে আর পরিপক্ক হতে পারে না- কোনো এক অজ্ঞাত কারণে- হয়তো সামাজিক পুরুষতান্ত্রিকতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহনে একটা ইতস্তত ভাব থাকে তাদের-
একদিন হুট করে একটা পুতল খেলার আসরে প্রবেশ করলাম- তখন পুতুল বানানো হচ্ছিলো- আমাদের পুতুল বানানোর রীতি ছিলো সহজ- দর্জির দোকান থেকে ছাট কাপড় নিয়ে এসে পাকানো- অন্য একটা ছোটো কাপড় গোল করে হাত বানানো- এর পর একটাকে আরেকটার ভেতরে ঢুকিয়ে সুতো দিয়ে বেধে দেওয়া- মাথায় চোখ নাক মুখ স্থাপন- এর পর অন্য একটা কাপড় দিয়ে শাড়ী বানানো বা লুঙ্গি জামা বানানো- এসব করেই আমরা আনন্দিত ছিলোম-
কখনই মনে হয় নি কোনো খামতি আছে- সেদিন দেখলাম পুতুল বানানো নিয়ে বিস্তর তর্ক-
তারা পুতুলের স্তন স্থাপনে আগ্রহী- কিভাবে স্তন বানানো হলে ভালো হয় এই নিয়ে আলোচনা-
কারণটা খুবই স্বাভাবিক- যদি পুতুলের বিয়ে দেওয়ার পর ছেলে মেয়ে হয় তাহলে বাচ্চা দুধ খাবে কিভাবে?
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।