আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমহীন প্রেমের গল্প

জীবিত মানুষ হতে চাই। টিএসসির বাইরে ফুটপাতের পাশে বসার জায়গাটায় চার তরুণ বসে গল্প করছে। এখন অবশ্য গল্প চলছে না,তার বদলে চরম তর্ক হচ্ছে এদের তিনজনের মধ্যে। তর্কের বিষয় ফুটবল। এখানে আশ্চর্যজনকভাবে তিনজনই তিনটি ভিন্ন দলের সমর্থক।

ব্রাজিল,জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা এই মূহুর্তে কে কত ভালো দল,কার অতীত ভালো,কে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক তা নিয়েই মূলত তর্ক চলছে। যেহেতু কেউই নিজেদের পক্ষে সমর্থন করার জন্য কাউকে পাচ্ছে না,তাই ব্যাপারটাতে এখন সাম্যাবস্থা বিরাজ করছে। আর ওদিকে রাশেদ চুপ করে তাদের তর্ক শুনছে। সে ফুটবল খুব একটা পছন্দ করেনা। তবে গত বিশ্বকাপে কয়েকটি খেলা দেখেছিল এবং এর মধ্যে ঘানার খেলা তার মন কেড়েছিল।

কোয়ার্টারে দূর্ভাগ্যজনকভাবে পেনাল্টি শুট-আউটে বাদ পড়ায় তার সামান্য খারাপ লেগেছিল। ব্যাস,ফুটবল নিয়ে তার আবেগ এইটুকুই। আর যেহেতু ঘানা ফুটবল দলের অতীত কিংবা বর্তমানের কোন অর্জন নেই তাই সেই হিসেবে এই তর্কের মধ্যে সে আগেই 'ডিসকোয়ালিফাইড'। এমন সময় একটা সাত-আট বছরের মেয়ে এসে তার কাছ থেকে ফুলের মালা কেনার জন্য অনুনয় করতে লাগল। এইটুকু মেয়ে অথচ জীবিকার জন্য এই বয়সেই তাকে পথে পথে ফুল ফেরি করে ফিরতে হয়।

এ ধরণের ব্যাপারগুলি রাশেদের নিকট খুব অমানবিক মনে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কিইবা করার আছে? -ভাইয়া একটা বেলী ফুলের মালা নেন না। খুব সুন্দর ঘেরাণ। -এটা তো মেয়েদের পড়ার মালা। এটা নিয়ে আমি কি করব?রাশেদ বলল।

-ক্যান,আপনার উনারে দিবেন!মুচকি হেসে মেয়েটা বলল। রাশেদ হাসল। হাসিমুখে বলল,-আমার তো 'উনি' বলে কেউ নেই রে!কাকে দিব?আচ্ছা যা,এত করে যখন বলছিস তখন না হয় কিনলামই একটা। কত করে মালা? -পাচ টেকা পিস। মেয়েটা উত্তর দিল।

-আচ্ছা একটা মালা দে। বলে দশ টাকার একটা নোট বের করল। বলল,-নে পুরোটাই নিয়ে নে। পাঁচ টাকা তোর মালার আর বাকিটা বখশিশ। খুশি তো? মেয়েটা ঘাড় কাত করে হাসিমুখে সম্মতি জানাল।

হাত থেকে টাকাটা নিয়ে আবার অন্যদিকে দৌড় দিল। রাশেদ ভাবছে এই কটা ফুল বিক্রি হয়ে গেলে সে কি করবে। বাড়ি ফিরে মার অথবা বাবার কাছে ফিরে যাবে নাকি আবার আরো মালা নিয়ে আসবে?সম্পূর্ণ অর্থহীন ভাবনা। তবে মেয়েটার নামটা জেনে নেওয়া দরকার ছিল,ভাবছে সে। বন্ধুদের তর্ক শেষ হয়েছে।

তারা এখন হলিউডের মুভি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। এটা অবশ্য রাশেদেরও প্রিয় বিষয়। সেও তাদের আলোচনায় যোগ দিল। জ্যামের কারণে আজ বোধ হয় ক্লাসের দেরী হয়ে যাবে। তাই শাহবাগে বাস থেকে নেমেই একটা রিকশা নিয়ে নিল রাশেদ।

কার্জন হলের গেটের সামনে নামার পর দেখা গেল তার কাছে ভাংতি নেই। একশ টাকার একটা নোট আছে মানিব্যাগে। আর একটা পাঁচ টাকার কয়েন আছে। বাস ভাড়া দেয়ার পর চেন্জ হিসেবে এটাই আছে। রিকশাওয়ালার কাছেও ভাংতি নেই।

অবশ্য সকালবেলায় ভাংতি পাওয়াটা একটু কঠিনই। গেটের কাছে তাদের ক্লাসের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর নাম হৃদি। মেয়েটা হয়ত কারো জন্য অপেক্ষা করছে। একসাথে নিয়ে ক্লাসে ঢুকবে।

রাশেদ একটু ইতস্তত করছে ওর কাছে ভাংতি টাকা চাইতে। এর আগে তাদের কথা হয়েছে মাত্র একদিন। তাও সামান্য চেনাজানার চেয়ে বেশি কিছু না। তবে আপাতত পরিস্থিতি যা তাতে অন্য কারো কাছে চাইবার চেয়ে ওর কাছে চাওয়াই ভালো। হৃদির সামনে গিয়ে কিছুটা সংকোচের সাথে জিজ্ঞেস করল, -আচ্ছা,তোমার কাছে দশটা টাকা ভাংতি হবে?আমার কাছে একশ টাকার নোট।

রিকশাওয়ালার কাছেও ভাংতি নাই। আছে? হৃদি হাসিমুখে বলল,হ্যাঁ আছে বোধ হয়। দাঁড়াও দেখছি। বলে নিজের হাতব্যাগ খুলে দশ টাকার একটা নতুন নোট বের করে দিল। হৃদির হাত থেকে টাকাটা নিল রাশেদ।

রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আবার হৃদির কাছে ফিরে এলো। রাশেদ ভেবে পাচ্ছে না টাকা ফেরত দেয়ার কথাটা হৃদিকে বলা ঠিক হবে কিনা। দশ টাকা এমন কোন টাকা তো না এখনকার দিনে। ফেরত দেবার কথা বললে হয়ত অপমানিত বোধ করতে পারে। আবার ঋণ শোধের বিষয়টাও মাথা থেকে সরাতে পারছে না।

হৃদির দিকে তাকিয়ে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল-থ্যাংকস। -আরে ধন্যবাদ দেয়ার মত কিছু নেই। এটা এমন কোন বিষয় না। আর আমরা তো বন্ধুই। সহজ ভঙিতে হেসে উত্তর দিল হৃদি।

এই কথায় খানিকটা স্বস্তি পেল রাশেদ। মেয়েটার স্বাভাবিক ভঙিতে কথা বলা দেখে সংকোচ অনেকটা কেটে গেছে ওর। ও বলল-হুম। তো ক্লাসে যাবে না?কারো জন্য অপেক্ষা করছ নাকি? -হ্যাঁ,রুনা আসছে। ওকে সাথে নিয়ে ঢুকব।

রুনাকে তো চিন? -উমম,নাম তো জানিনা তবে দেখলে হয়ত চিনব। -আচ্ছা। ছোট্ট করে উত্তর দিল হৃদি। আর কি নিয়ে কথা বলা যায় রাশেদ ভাবছে। কিন্তু বুঝে ওঠতে পারছে না।

আবার মেয়েটাকে একা রেখে চলে যাওয়াটাও কেমন যেন ঠেকছে নিজের কাছে। তাই একরকম পালিয়ে যাওয়ার মত করে–“আচ্ছা আমি তাহলে ক্লাসে যাই”,বলে চলে গেল। মাস তিনেক পরের কথা। টিএসসির সেই বসার জায়গাটায় বসে আছে রাশেদ আর হৃদি। বিকেলবেলায় রোদের আলো খানিকটা নিস্তেজ আর গাছের ছায়াগুলোও দৈর্ঘ্য প্রস্থে সামান্য বেড়েছে।

হৃদির হাতে একটি কবিতার বই। বইতে কবির নাম লেখা নেই। বইটি রাশেদ হৃদিকে উপহার দিয়েছে। কারণ আজ হৃদির জন্মদিন। সে রাশেদকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল বইটি কার লেখা।

রাশেদ উত্তর দেয়নি। উদাস ভঙিতে ব্যাস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল রাশেদ। হৃদির কিছুটা সন্দেহ হল কবিতাগুলি রাশেদ লিখেছে কিনা। তবে বুঝা গেল যে সে লিখলেও এটা স্বীকার করবে না। আচ্ছা রাশেদ কি ওকে পছন্দ করে?মুখ ফুটে অবশ্য বলেনি কিছু।

কিন্তু এখন কেমন যেন মনে হচ্ছে সন্দেহটা অমূলক নয়। হৃদি আবার জিজ্ঞেস করল,-এটা কার লেখা বই তা তো বললে না রাশেদ। রাশেদ ফিরে তাকাল। সহজ গলায় বলল,-জেনে কি লাভ?কবিতা মূখ্য,কবি তো নয়। তাইনা?বলে একটু হাসল।

-তোমার নয় তো?বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাশেদের দিকে তাকাল হৃদি। -আরে নাহ। আমাকে কোনদিন কবিতা লিখতে দেখেছ?বা শুনেছ এরকম কিছু? তা অবশ্য শুনা যায়নি কোনদিন। তবুর হৃদির খটকাটা গেল না। রাশেদের সাথে তার সম্পর্কটা ঠিক প্রেমের সম্পর্ক নয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই কাউকে এ বিষয়ে জানায় নি কিছু। তাদের মধ্যেকার এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের শুরুটা এক বর্ষার দিনে। এমনিতে তো চেনাজানা ছিলই। তবে তা সাধারণত হাই-হ্যালোর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। ইউনিভার্সিটির গ্রীষ্মের ছুটি শেষে প্রথম দিনেই রাশেদ এক আঁটি কদম ফুল নিয়ে হাজির হল হৃদির সামনে।

হৃদি হঠাত ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করে বসবে। কিন্তু না। একগাল হেসে রাশেদ জানাল যে একদিন হৃদির কাছ থেকে তার দশটি টাকা ধার নিতে হয়েছিল। এই সামান্য টাকা তো আর ফেরত দেয়া যায় না।

আবার ঋণী হয়ে থাকাটাও বোঝার মত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আসার সময় রাস্তার পাশে কদম ফুল দেখে থেমে দাম জানতে চেয়ে দেখে যে একগোছা ফুলের দাম দশ টাকা। গোছায় মোট ফুল সাতটি। তখন ভাবনা মাথায় এল যে টাকা যেহেতু শোধ করা যাচ্ছে না,তার বদলে প্রিয় ফুল কদম উপহার দেয়া যাক। সেদিন ঋণ শোধ হল আবার সেইসূত্রে দুজনের মধ্যে আরো সহজ একটা সম্পর্ক তৈরি হল।

তখন ফোন নম্বর আদান প্রদান হল এবং ফোনে কথা বলা শুরু হল। -মালা নিবেন?একটা ছোট্ট মেয়ের ডাকে ধ্যান ভাঙে হৃদির। রাশেদ দেখল ঐ আগের মেয়েটিই। সে হৃদিকে জিজ্ঞেস করল মালা নিবে কিনা। হৃদি আপত্তি করল না।

রাশেদ দুটো মালা কিনল। একটি বেলিফুলের আরেকটি বকুলের। দুটোর মিলিত গন্ধ নাকে এসে লাগলে কেমন যেন নেশার মত লাগে। মেয়েটি চলে গেলে হৃদি হঠাত রাশেদকে প্রশ্ন করে বসে,-আচ্ছা তুমি কি আমাকে পছন্দ কর? হৃদি ভেবেছিল রাশেদ চমকে যাবে এই প্রশ্ন শুনে। তেমন চমকালো বলে মনে হল না।

স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিল,-হ্যাঁ করি। তুমি তো অপছন্দ করার মত মেয়ে নও। হৃদি ইতস্তত গলায় বলল,-মানে আমি ঠিক কি বুঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পারছ তো? -তার মানে তোমাকে ভালোবাসি কিনা তাই জানতে চাইছ তো? হৃদি কিছু বলল না। কেবল মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। -ভয় নেই।

যদি ভালোবেসে ফেলিও,তবু তোমাকে তা জানতে দেব না। বলে একটু হাসল রাশেদ। হৃদি যদি রাশেদের চোখের দিকে ভালো করে তাকাতো তাহলে সেখানে বিষণ্ণতার একটা গভীর ছাপ দেখতে পেত। সে বলল-এটা কিরকম উত্তর দিলে?ঠিক বুঝতে পারলাম না! -আসলে বুঝার কথাও না। ঠিক আছে খোলাসা করেই বলি।

আজকে অবশ্য কিছু বিশেষ কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি। রাশেদ লক্ষ্য করল এই কথাটা বলার পর হৃদি সরু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে অবশ্য কিছু বলেনি। রাশেদ আবার বলল,-শোন তাহলে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাশেদ বলতে শুরু করল,-কলেজের সময় থেকেই ,আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম।

মেয়েটিও আমাকে ভালোবাসত। কিন্তু সে কলেজে ওঠার পরে তার বাবা-মা তাকে এক প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। তখন আমি মাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার তখন করার কিছুই ছিল না। বিয়ের আগে শেষ যেবার সে আমার সাথে দেখা করেছিল,খুব কেঁদেছিল সেদিন।

আমি ওকে সান্তবনাটুকুও দিতে পারি নি। এখনো ওর ভেজা চোখ দুটি কল্পনায় ভেসে ওঠে। খুব কষ্ট লাগত ঐ সময়। পড়ালেখা সব গোল্লায় গেল। কোথাও ভর্তি হতে পারি নি।

সেই কারণে বাড়িতেও খুব স্বতঃস্ফুর্ত থাকতে পারতাম না। কয়েক মাস পরে আমি ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠি। আবার পড়ালেখায় মনোনিবেশ করি। তারপর এখানে ভর্তি হই। ভর্তি হবার পর তোমার সাথেও কয়েকবার দেখা ও কথা হয়।

কিন্তু যেদিন তোমাকে কদমগুচ্ছ উপহার দিলাম ঐ মূহুর্তে তুমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলে। চোখের দৃষ্টিতে একটা অসহায় ভাব ফুটে ওঠেছিল। সেই দৃষ্টি দেখে চমকে উঠেছিলাম। আমার মনে পড়ে গেল ওর সেদিনের সেই কান্নাভেজা অসহায় দৃষ্টি। কোথাও যেন একবিন্দুও পার্থক্য নেই।

তোমার মুখের দিকে তাকালাম,সেই মুখাবয়ব যেন আবার নিজের কাছে ওর মুখাবয়ব হিসেবে ধরা দিল। বহুদিনের চাপা দেয়া অনুভূতি হঠাত মনের মধ্যে কড়া নাড়তে শুরু করল। সেদিন থেকে তোমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতে লাগলাম। তাতে তোমারও তেমন আপত্তি ছিল না। তুমি থাকতে তোমার মত করেই।

আর আমি যেন ওকে ভেবে প্রতিদিন তোমার সাথে আরো একটু একটু করে জড়িয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু যে সময়টা তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতাম সেইসময়ে ভয়ংকর কষ্ট হত। কতটা যন্ত্রণায় থেকেছি এতটা দিন তা একমাত্র আমিই জানি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চিন্তা করতে লাগলাম। গত কয়েকটাদিন অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম।

শেষ পর্যন্ত দুটো সমাধান মাথায় আসল। প্রথম সমাধানটা সমাধানযোগ্য নয়। শুনতে চাও সেটা কি? হৃদি এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিল রাশেদের কথা। খারাপ লাগছিল ওর জন্য। কিন্তু রাশেদ ঠিক কি বলতে চাইছে তা বুঝতে পারছে না বলে খানিকটা চিন্তিত সে।

তাই রাশেদ যখন বলল শুনতে চায় কিনা সে তত্ক্ষণাত তাতে সায় দিল। -প্রথমে ভেবেছিলাম আমি হয়ত তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু পরক্ষণেই সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম। হ্যাঁ,এটা সত্যিযে আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। কিন্তু এই আকর্ষণ ব্যাক্তি তোমার প্রতি নয়।

অন্য কাউকে ভেবে। তাই ভালোবাসার কথা বলে তোমার সাথে ভণ্ডামি করার কোন ইচ্ছে আমার হয় নি। এতে হয়ত তুমি সাড়া দিতে,কিংবা নাও দিতে পারতে। দিলে হয়ত আমি তোমার পাশে থাকার সুযোগ পেতাম,সান্ত্বনা পাবার একটা জায়গা হত। কিন্তু নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যেতাম তখন।

আমি সেটা চাইনি। -আর দ্বিতীয় সমাধানটা কি?ঠাণ্ডা গলায় হৃদি জিজ্ঞেস করল। রাশেদ একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করল। তারপর বলল, -তুমি আমাকে ভুল বোঝ না। আমার উপর কোন রাগ পুষে রেখো না প্লিজ।

আমি চাই আজকের পর থেকে আমরা পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাব। আমি জানি তোমার দৈনন্দিন জীবনে এটা তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ সমস্যাটা তোমার না। -তাতে কি তুমি ভালো থাকতে পারবে? -আমি হয়ত খুব একটা ভালো থাকব না। কিন্তু এখনকার চেয়ে ভালো থাকবআশা রাখি।

আর তোমার উপেক্ষা আমার মধ্যে যে অভিমানের সৃষ্টি করবে সেই শক্তিতেই আমি তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারব। -তুমি যদি এভাবে ভালো থাকতে পারো তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তুমি ভালো থাকো। আমি উঠছি। বলে উঠে দাঁড়ালো হৃদি।

রাশেদ স্পষ্টতই বুঝতে পেরেছে হৃদি এতে প্রচণ্ড আহত হয়েছে। কিন্তু সে তাকে আটকাতেচেষ্টা করল না। শুধু এটুকুই বলল যে,-এই বইয়ের কবিতাগুলি আমারই লেখা। ওর জন্য যা কিছু লিখেছিলাম সবই এই বইতে আছে। এগুলো তোমার কাছেই থাকুক প্লিজ।

হৃদি শুধু ছোট্ট করে বলল-আচ্ছা। হৃদি চলে গেল। রাশেদ মাথা নিচু করে বসে রইল একই জায়গায়। না,সে কাঁদছে না। পুরুষ মানুষের পক্ষে কাঁদা খুব কঠিন কাজ।

পরিশিষ্টঃ সেদিনের পর থেকে হৃদি এবং রাশেদের মধ্যে কোন কথা হয়নি আর। পাশ করে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যাবার পরে আর দেখাও হয়নি। তবে প্রতিবছর নিজের জন্মদিনের দিন বিকেলবেলায় টিএসসিতে বসে একা একাকিছু সময় কাটায় হৃদি। ততক্ষণই যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ এসে তার কাছে বকুল এবং বেলি ফুলের মালা বিক্রি করে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.