কলম চালাই ,এইগুলো লেখার পর্যায়ে পরে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে :) ব্লগের বয়স বছরের উপরে দেখালেও নিয়মিত লিখছি ১৭ আগস্ট ২০১২ থেকে :) সাদিয়ার নতুন ভাড়া বাড়ি । দুই কামরা । শোবার ঘর আর একটা বসার ঘর । বড়ই চাপাচাপি অবস্থা । উনার নাম আনিস ।
নাম নিতে নেই । মুরুব্বীরা তো তাই বলেন । থাকেন ইতালিতে । ছুটিতে এসেছিলেন দেশে । সাদিয়ার মামার সাথে হয়ত যোগাযোগ ছিল কোন ভাবে ।
এক সপ্তাহের মাঝে বিয়ে । বাপ – মা মরা মেয়ে সাদিয়া । মামার কাছে বড় । মামার অবাধ্য হওয়া যায় না । হবেই বা কেন ? হওয়ার মত তেমন কোন কারণও ছিল না ।
ছেলে নাকি মস্ত জেনারেল ষ্টোরের ম্যানেজার । পরে অবশ্য আনিস সত্যটা বলেছিল – ম্যানেজার নয় সে । দোকান ঝার পুছের কাজ করে । মন খারাপ হয়েছিলো সাদিয়ার । পরে অবশ্য সে অভিমান ভেঙেছিল ।
যা পেয়েছে তাই নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে । আপাদত এর চেয়ে ভালো কিছুর ব্যাবস্থা করা কঠিন । যাবার আগে বলে গিয়েছিল আনিস – পরেরবার এসে বড় বাসা নিবে ।
-মিনা ? দরজা খোল ।
কাঁচা বাজার করে ফিরেছে সাদিয়া ।
সন্ধেবেলা । ভ্যাপসা গরম ।
-কেডা আফনে ?
এই মিনা মেয়েটা বহুত বজ্জাত । বছর আট – দশ হবে ! আনিস ওর কোন এক আত্মীয়ের বাসা থেকে এনে দিয়ে গেছে । মেয়েটা জানে কিন্তু কে ! তারপরও –
-আমি,দরজা খোল মিনা ।
-আমি কেডা ?
প্রচণ্ড বিরক্তি লাগছে সাদিয়ার । বলল – তুই চিনিস না আমাকে ?
-নাম কওন লাগবো !
সাদিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল – সাদিয়া ।
ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে খুলে গেলো কাঠের দরজাটি । অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে মিনা । জানালার পর্দা খোলা ।
হালকা আলো আসছে । ঘরের ঠিক মাঝখানে দুই পা এক করে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । নড়ছে না ।
-বাতি জালিস না কেন ?
-এমতেই । আন্ধার ভালা লাগে ।
-বজ্জাতি না ? যা , বাতি জ্বালা ।
নড়ছে না মেয়েটা । আজব তো ! নিজেই বাতি জ্বালাতে গেল সাদিয়া । জ্বালিয়েছে আর অমনি ঠাস করে জ্বলে উঠে নিভে গেল । অন্ধকার আরও ঘনিয়ে এল ঘরে ।
যাহ্ ! বাতিটা জ্বলে গেলো !
বসার ঘরে মোমবাতি আছে । খুঁজছে সাদিয়া । কোথায় যে রাখল ? বাতিটা কাল ছাড়া আর ঠিক করা সম্ভব না ।
-মিনা?মোম কই জানিস ?
-না ।
এই মেয়েকে কিছু জানতে চেয়ে লাভ নেই ।
তার চেয়ে কলাগাছকে জিজ্ঞেস করা ভালো । মোম পাওয়া গেছে । জ্বালিয়ে বসল সাদিয়া ।
-মিনা ? এইদিকে আয় ।
-জী , আফা !
-তুই এমন কেন ? দরজায় জানিস যে আমি , জানিস না ?
- কণ্ঠডা আপনার আপনার লাগে ।
- কণ্ঠটা আমি , মানুষটাও আমি ।
- তাও সিউর হই ।
- সিউর না , সিওর । কি সিওর হস তুই ?
-যে আফনেই আইছেন ।
-আর কে আসবে তাহলে ?
-অন্যকিছু ।
-মানে কি ? আর কেউ আসে নাকি বাসায় ? কি কথা বলিস না কেন ?
- না । অন্যকিছু । মানুষ না ।
- তোর মাথা খারাপ ।
-না , আফা ।
হাঁচা কতা । আমাগো গেরামে আইছিল । খালি ডাকে । যে যায় হে আর ফেরে না ।
-সে জন্যই তুই এতো কিছু জানতে চাস ? হাহাহাহাহাহাহাহাহা...
মাথা ঝাঁকায় মেয়েটা ।
সাদিয়ার মুখে প্রশ্রয়ের হাসি । ভীত ভীত মায়াবতী চেহারা মেয়েটার । বলে – হয়েছে । নে , এইবার কাটাকুটি শুরু করি আয় । মোম খরচ করে তোর উনাদের গল্প শুনলে তো আর পেট ভরবে না ।
আয় , রান্নাঘরে যাই ।
মেয়েটাকে তেমন কিছু বলে না সাদিয়া । ওর মাঝে যেন মাঝে মাঝে নিজেকে দেখতে পায় । বড় মায়া লাগে ।
বাইরের রান্নাঘর থেকে রান্না করে ফিরেছে ওরা ।
সস্তা দরের বাসাগুলোতে সাধারনত সবার জন্য একটাই রান্নাঘর থাকে । ঘেমে গেছে । গোসল করল । মাটিতে পাটি বিছিয়ে খাবার নিয়ে বসেছে । মেঝের এক কোনে মোম গলিয়ে তার উপর বসিয়েছে মোমটি ।
মিনা চুপচাপ । মোমের আলো কাঁপছে বাতাসে । কাঁপছে তার সাথে দেয়ালে পড়া ওদের ছায়াগুলোও । ওরা নড়ছে না । কিন্তু ছায়া নড়ছে ।
কিছুটা শিউরে উঠলো সাদিয়া । নিজেকে ধমকালো ।
-আফা কি ভয় পান ?
চমকে উঠলো সাদিয়া – নাহ ! ভয় পাবো কেন ?
-আফা একটা কতা কই ?
-বল ।
-বাসাডা ভালা লাগে না আমার ।
-ছোট বাসা , ভালো তো না লাগারই কথা ।
-না । ক্যামন জানি গোমড়া বাসা । বায়ু – বাতাস চলে না !
আর পাশের বাড়ির ঐ বেটিও ক্যামন ভুতের মত গোঙায় !
-এরই নাম শহর রে মিনা । কি করব বল !
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট ওরা । বাইরে গুরু গুরু মেঘ ডাকছে ।
বৃষ্টি নামবে । ভালই হয় । স্বস্তি পাওয়া যেত । নিরবতার মাঝে দরজায় যেন ঠাস ঠাস করে বিকট শব্দে কিছু একটা পড়ল । পর পর দু’বার ।
চমকে উঠলো দু’জনেই ।
-কে?
কাপা গলায় জানতে চায় সাদিয়া ।
-আমি ।
বাড়িওয়ালী বুড়ির গলা । মিনা সাদিয়াকে বলে – নাম কইতে কন আফা !
-রাখ তোর ফাজলামি ।
ধমক লাগায় সাদিয়া ।
দরজার এপাশে দাড়িয়ে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল ও । সাথে ঘন ঘন শিসের শব্দ । দরজা খুলল । বাড়িওয়ালী বুড়ি দাড়িয়ে আছে , লাঠিতে ভর দিয়ে ।
হাঁপানির রোগী সে । হঠাৎই বাতাসের ঝাপটায় উলটে পড়ে নিভে গেলো মোমবাতি । সাদিয়া ওর হাতে যেন সরু সরু কতগুলো আঙুলের স্পর্শ পেল । বরফ শীতল । জাপটে ধরেছে ।
ধক্ করে সাদিয়ার চোখে লাগল আলর ধাক্কা । বুড়ির হাতে একটা টর্চ লাইট । সাদিয়ার হাত জাপটে ধরে দাড়িয়ে আছে মিনা । বুড়ি বলল – কি রে ছেরি ? ভয় পাইছোস নাকি ?
সাদিয়াকে বলল – কি গো মা বাতি জ্বলে না ?
-কেটে গেছে দাদিমা । কালকে নতুনটা কিনে আনতে হবে ।
-খাওনের সময় আইসা পরছি দেখতাছি !
-না । না । সমস্যা নেই । আসেন ।
মোমবাতি জ্বালানো হল আবার ।
বুড়ি বসল একটা বেতের চেয়ারে । এই বুড়িটা কেমন যেন একটু অদ্ভুত । মিনা একে দেখলেই ভয়ে সিটকে থাকে । বুড়ির স্বামী মরেছেন বছর বিশেক আগেই । দুটো ছেলে ছিল ।
তারাও অকালে গেছে । বউরা নাতিনাতনি নিয়ে চলে গেছে । বুড়ি নাকি অপয়া । যতোসব কুসংস্কার !
বুড়ির গা থেকে উৎকট গন্ধ আসছে । ভক্ ভক্ করে ।
উফ্ ! কথা বলছে আর তার মুখ থেকে যেন পচা গন্ধ বের হচ্ছে । সাদিয়া তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল । রুচি চলে গেছে । হাত ধুয়ে এসে আবার পাটিতে বসল । নিরাপদ দূরত্বে ! মিনা বসে আছে সাদিয়ার পিছনে ।
যেন বুড়ির কাছে থেকে দুরে থাকতে চায় । কি বিদঘুটে গল্প শুরু করেছে বুড়ি ! বিশ্রী সব গল্প । পুরুষ মানুষের গন্ধ নাকি তার ভালো লাগে ! ইয়াক ! ইদানীং নাকি সে অন্য ঘরে পুরুষমানুষ আসলে তার গন্ধ পায় ! সাদিয়ার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে । বুড়ি শ্বাস টানছে আর ঘরঘর করে কথা বলছে । মোমের আলোয় তাঁকে অপার্থিব লাগছে ।
মাথায় আঁকড়ে থাকা কয়েকটা কোঁকড়া চুল , কুঁচকানো চামড়া , হাড় ওঠা মুখ-চোয়াল আর বিশ্রী কালো দাঁতগুলো । আশেপাশে কোথাও প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হয় । বুক কাপিয়ে গুড়গুড় শব্দে মেঘ ডাকে । তার মাঝে হঠাৎই শুরু হল অদ্ভুত এক শব্দ
বুড়ি নাকমুখ দিয়ে শ্বাস টানছে । লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ।
যেন সব বাতাস নিয়ে নিতে চায় । ঘাবড়ে গেল সাদিয়া । পিছিয়ে দাড়িয়ে পড়ল । সাড়া শরীরের রোম খাড়া হয়ে গেছে । সাদিয়া দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আর ওর হাত জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে মিনা । প্রচণ্ড শক্তিতে , যেন ভেঙে ফেলতে চায় । এতো শক্তি এল কোথা থেকে এতটুকুন শরীরে ?
একটা বড় হেঁচকি দিয়ে থেমে গেলো বুড়ি । মোমের আলোয় তার ছায়া আর কাঁপছে না । বাতাস নিঃশব্দ ।
থেমে গেছে । বুড়ি এখনও চোখ মেলে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । ঘোলা চোখ । দ্যুতিহীন । শনির দৃষ্টি ।
মিনার চিৎকার শুনে দৌড়ে এল অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা । সাদিয়া নড়ছে না । তার পা যেন অচল হয়ে গেছে । কোন জোর পাচ্ছে না । অনুভূতি নেই ।
মারা গেছে বুড়ি । হাঁপানির রোগী ছিল নাকি ! বাইরে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি । অনেক ধকল গেছে । পুরো বাড়িতে কেমন মরা মরা গন্ধ । আতংকে সে রাতে ঘুম হয়নি সাদিয়ার ।
এরকম একটা ঘটনা তার বাসাতেই কেন হল ! ভেবে পায় না সে ।
গো গো শব্দ শুনে ধড়ফড় করে জেগে উঠলো সাদিয়া । বুকে যেন হাতুড়ি মারছে । ঘেমে গেছে । ভরদুপুর ।
পাশের বাড়ির মহিলা গোঙাচ্ছে । আগে তো ঘুমাতেই পারত না । এখন অনেকটা সয়ে গেছে । মহিলার এ এক অদ্ভুত রোগ । ক্ষণে ক্ষণে গোঙায় ।
প্রথমে প্রথমে ভয় পেলেও , এখন বিরক্তি লাগে । মহিলার স্বামী আরে এক ছয়-সাত বছরের ছেলে মারা গেছে নাকি গতবছর । গাড়ি চাপায় । বেঁচে গেছে শুধু মহিলা নিজে । কিন্তু খোয়াতে হয়েছে এক পা ।
তার দেখভাল করে তার আত্মীয়স্বজনরা । বেলায় বেলায় এসে খাবার দিয়ে যাওয়া আর দিনে একবার সাফ সুতর করে দাওয়া আর কি । তারাও উদ্দেশ্য ছাড়া জ এটুকুও করে তা না । মহিলার নিজের নামে বাড়িটা । চারতলা বাড়ি ।
সাত ফ্যামিলি ভাড়াটিয়া । ভালই ভাড়া পায় । আরও বড় কথা মিহিলা মরলে বাড়ির ভাগ তার আত্মীয়রাই পাবে । এইটাই মূল কারণ । মহিলার সাথে থাকে না কেউ ।
সপ্তাহান্তে ডাক্তার আসে । ওষুধ পত্তর দিয়ে যায় । পক্ষাঘাতগ্রস্থ মহিলা নাকি প্রথমে প্রথমে ব্যাথায় এমন গোঙাত । কিন্তু এখন আর ব্যাথা নেই । তবুও গোঙায় ।
সাদিয়া ভাবে – অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে মনে হয় ।
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ । নাহলে ছিঁচকা চোর আবার লাঠি দিয়ে জামা কাপড় টেনে টেনে চুরি করে । গুমোট হয়ে আছে ঘর । হঠাৎ আবছা আলোতে দেখে , একটা শীর্ণকায় ছায়া ।
দাড়িয়ে আছে বন্ধ জানালাটার সামনে । তার ঠিক ওপারে , ওপাশের বিল্ডিঙের ঐ মহিলার ঘর । একহাত দূরত্ব ।
-মিনা?
নড়ল না ছায়াটি । জানালার থেকে হাত দুয়েক দূরে দাড়িয়ে আছে ও ।
-মিনা ? কথা বলিস না কেন ?
গলা চড়ালো সাদিয়া । তবুও নড়ল না অবয়টি ।
-মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে কিন্তু ! কি করিস ওখানে তুই ?
গজরাতে গজরাতে বিছানা ছাড়ল । মিনাকে ধরে হেঁচকা টানে একটা ঝাঁকুনি দিল । নড়ে উঠলো মেয়েটা ।
যেন এতক্ষণ দম বন্ধ করে ছিল ।
-কিরে?ডাকলাম যে শুনিস নি ? বয়রা হয়ে গেছিস নাকি ?
মেয়েটা কথা বলে না । বোবা চাহনি তার চোখে । সাদিয়ার হাত ছাড়িয়ে নিল ।
-আমি আর আফনের লগে থাকতাম না আফা ।
এই বাসা ভালা না । কইলে তো হুনেন না ।
বলেই পাশের ঘরে চলে গেলো । সাদিয়া হতবাক । আলুথালু অবস্থা তার , ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র , এলোমেলো চুল কপালে এসে পড়েছে ।
আঙুল দিয়ে চুল গুলো সোজা করার বার্থ চেষ্টা করল সে । গোঙানি থেমে গেলো পাশের বাড়িতে । কি দেখছিল মিনা ? কৌতূহল জাগে মনে । কিছুটা দ্বিধাও । ভয় ? নাহ ! অস্বস্তি বলবে সাদিয়া ।
কাঠের জানালায় একচিলতে ফোকর । তাতে চোখ রাখল – ওমনি ! তড়াক করে লাফিয়ে দুই পা পিছিয়ে এল সাদিয়া । ভয়ঙ্কর এক চোখ । লম্বাটে চোখের মনি । চারিদিকে সাদা ।
ঠিক ঐ ফোকরের ওইপাশে । যেন ওর দিকে তাকিয়ে ছিল । দেখার চেষ্টা করছিল যেন । হাপাচ্ছে ও ।
-মিঞাও !!
জানালা খুলল সাদিয়া ।
যে কোন কারনেই হোক – মিঞাও শব্দটায় তার সাহস ফিরেছে । জানালার কার্নিশ থেকে লাফ দিল একটা হুলো বিড়াল । ধূসর গায়ের রঙ । সাদিয়ার মুখে হাসি । কি হাস্যকর ! ভয় পেয়েছে সে – তাও আবার একটা বিড়াল দেখে ! কি লজ্জাকর ব্যাপার !
আগে কখনই এসময় জানালা খোলে নি সাদিয়া ।
সাধারনত বিকেলে খোলে । আর ঐ মহিলা তখনই একটানা গোঙায় । সন্ধায় আবারর চুপ । জানালা খুললেই গোঙানর মাঝখানে ‘’কে?কে?’’ বলে উঠত মহিলা । সাদিয়া মৃদু অপ্রস্তুত গলায় বলত ‘’আমি খালাম্মা ।
‘’
আজকে অবশ্য ‘’কে? কে? ‘’ বলে উঠলো না । মনে হয় ঘুমাচ্ছে নাহয় হাপিয়ে গেছে । গোঙাচ্ছে না এখন আর । জানালার ওপাশে অন্ধকার একটা ঘর । ঘরের চার কোনে যেন আরও বেশী অন্ধকার ।
ঘুরে দাড়াতে যাবে সাদিয়া ,হঠাৎই চোখে পড়ল তার , মহিলার সামনে কে যেন দাড়িয়ে আছে । ধুলো – ময়লা গায়ের রঙ , শীর্ণকায় । কিশোর বয়সী । ঐ বাসায় তো এই বয়সী কেউ আছে বলে জানতো না ! মহিলা যেন শুয়ে শুয়ে কথা বলছে তার সাথে । এই গরমেও মহিলার গায়ে লেপ ! লজ্জা পেল সাদিয়া ।
অবাকও হল । মহিলার সামনে যে দাড়িয়ে আছে তার গায়ে কিচ্ছু নেই ।
হঠাৎই যেন ওদের কথাবার্তা থেমে গেল । অসুস্থ মহিলার একটা হাতের তর্জনী উঁচু হয়ে আছে – সাদিয়ার দিকে । শিউরে উঠলো ও ।
তাকাল ঐ কিশোরের দিকে । সে যেন মাথা ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে ওর দিকে । কিন্তু শরীর ঘুরছে না । সাদিয়ার শরীর কাঁপছে । কারণ ছেলেটি ঘোরে নি , শুধু তার মাথাটা ঘুরে তাকিয়ে আছে এখন সাদিয়ার দিকে ।
চোখের জায়গায় গোল গোল কালো দুটি গর্ত । আধিয়ার । উপরে নিচে চোয়াল দুটি লম্বা হা করে আছে । যেন আর্তনাদ করছে । শব্দহীন ।
চেহারায় অমানবীয় যন্ত্রণার ছাপ !
মূর্ছা গেল সাদিয়া ।
-----------------------------------------------------------------------------
সেদিন বিকেলেই মিনা চলে গেল । ।
-----------------------------------------------------------------------------
আনিসের মনটা ফুরফুরে আজ । প্রায় সাড়ে চার মাস পরে আজ বউটার মুখ দেখবে ।
গত সপ্তাহেই কিছু টাকা পাঠিয়েছিল । তা দিয়ে সাদিয়া একটা কম্পিউটার কিনেছে । সাথে ওয়েব ক্যামও ! দেখে দেখে কথা বলা যাবে ! দুনিয়া কত এগিয়ে গেছে । ভাবে সে ।
আনিস-দেখতে পাইতেছো ?
-হ্যাঁ ।
হ্যাঁ । পাচ্ছি ।
-ভালো আছো ?
-হুম ! হাহাহাহাহাহাহা
-হাসো কেন ?
-এই কথা তো একটু আগেও ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাই ।
-হাহাহা । তোমার ছবি দেও ।
-কেন ?
-কেন মানে কি ? ছবি দিবা না ?
-হুম।
-দেও তাহলে !
ছবি দিল সাদিয়া । পুরানো আমলের একটা খাটের উপরে বসে আছে সাদিয়া । প্রান জুড়িয়ে এল আনিসের । শুকিয়ে গেছে নাকি ও কিছুটা ? আহারে ! সস্তায় কাঠের খাটটা কিনেছিল আনিস ।
মশারী টানানোর জন্য স্ট্যান্ড আছে খাটটায় । এমন খাট আজকাল দেখা যায় না আর ।
আনিসের চোখ আটকে গেল দুই স্ট্যান্ডের মাঝখানের টানা কাঠে । কে যেন ঝুলছে ওখান থেকে ! মিনা ? নাহ , মিনা তো চলে গেছে না ! ধুলোময়লা গায়ের রঙ – শীর্ণকায় দেহ ! গায়ে কিছু নেই !লজ্জা পেল আনিস ।
-কে ওঁটা ? আর এরকম কেন ?
জবাব দেয় না সাদিয়া ।
-ঝুলছে কেন ? কি হল ? কথা বল না কেন ?
সাদিয়ার ঠোঁটের কোনে হাসি । অচেনা । আনিসের বুক কেপে ওঠে । হঠাৎই ঝুলন্ত দেহটির মাথাটি ঘুরতে থাকে , আনিসের দিকে । শরীর ঘুরল না , শুধু মাথাটি ।
পিঠের দিকে ঘুরে আছে । চোখের জায়গায় কালো দুটি গর্ত । নিকষ । উপরে নিচে চোয়াল দুটি হা হয়ে আছে । জিহ্বাহীন গর্ত ।
যেন বিশাল চিৎকার দিচ্ছে । ভয়ঙ্কর আর্তনাদ । শব্দহীন । অমানবীয় যন্ত্রণার ছাপ সে মুখে । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।