পরাঞ্জয়ী...
দুঃসময়ের সব থেকে ভাল দিক হল সময় টা থাকে খালি সময়ের "মন্দ" টা কেটে যায়। লীনাও ভাবতে থাকে। জীবনের কাছে দাবী আর কিছুই নেই। শুধু এখন নিজের কাছে জীবনের যে টুকু দাবী তাই পূরনেই নিজেকে ব্যস্ত করতে থাকে লীনা। তৌফিক ভায়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল আসিফের মাধ্যমে।
তিনিই এখন লীনা বড় ভায়ের মত করে তাকে সাহস যুগিয়ে চলেছেন। তার জীবনের গল্প শুনেই লীনা বুঝেছে জীবনের জটিলতাই মানুষকে সহজ হতে সাহায্য করে। সৃষ্টিকর্তাযা কিছু কেড়ে নেয় তার দ্বিগুন বুঝি ফেরৎ দেয়। লীনার সামনে একটার পর একটা সুযোগ আসতে শুরু করেছে। মানুষের জন্য কিছু করবার আজন্ম বাসনা তার পূরন হওয়ার পথে।
মনে মনে বলে ওঠে লীনা " আসিফ, তোমার দেয়া সবটুকু আঘাত আমি আমার জীবনের পাথেয় করলাম। তুমি সুখি হও এই কামনাই করি। আজ থেকে আমি আর একটি মুহূর্তের জন্যও নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাইনা। ভাবনার বস্তুতে এখন আমার জগৎ টাকে ভরিয়ে তুলবো আমি। আমার জন্মের যে ঋন জগতের কাছে তাকে শোধ দেবার সময় এসেছে।
যার কিছু নেই, কেউ নেই পুরো জগৎ সংসারটাই তার আপন হয়ে যায়। পুরো একটি বিশ্বের মালিক আমি এখন একলাই! আর কি চাই বল"! লীনার মুখে হাসি ফোটে।
সে হাসিতে উচ্ছলতা নেই, আসে এক নির্মম বিষন্নতা! সে হাসি কান্নার চেয়েও নির্মম! লীনা দীর্ঘশ্বাস নেয়না আর। নিজেকে গড়তে থাকে নুতন করে। বাঁচতে হবে, নিজের জন্য, বাবার জন্য, সর্বপোরি মানুষের জন্য! চোখের জলটা শুকিয়েছে অনেক আগেই।
শুধু শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে দুরে। কোথায় যে কি দেখে সে সেই ভাল জানে। আসিফের শূন্যতাকে পূর্ণতার রূপ দিতে সে যেন পণ করেছে। তাই নিজেকে ভেঙ্গে আবার গড়তে চাইছে। এত ধৈর্য যে কোথায় পেল লীনা কে জানে!
অসীম শূন্যতায় ঠায় নেয়া মানুষগুলো কখন কিভাবে যে শূন্যতাকেই আপন করতে শিখে যায় কেউ জানতে পারেনা।
চলতে থাকে সময়। আজ লীনার বিবাহ বার্ষিকী। আসিফ নেই। দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে মধুচন্দ্রিমায় যাবার কথা ছিল ওদের। আজকের পর থেকে হয়ত কোন চন্দ্রিমাতেই মধু থাকবেনা লীনার! সকালের দিকে অঝোরে কিছুক্ষন কাঁদে লীনা।
তারপর ঝেড়ে ফেলে মন থেকে। ভালবাসার সবচেয়ে করুন মুহুর্তটিকে মর্মে মর্মে অনুভব করেছে সে। যে সম্পর্কের বাঁধন টা অনেক আগেই কেটে যাবে বলে নির্ধারন করা ছিল তাকে আর কোন্ অপশক্তির সাধ্য আছে টিকিয়ে রাখে! পরাজয় যদি এর নাম হয়, তবে লীনা আজ পরাজিতা। নিজের অসম্ভব দূর্দমনীয় ভালবাসা বোঝাতে অসমর্থ মানুষের জয়ের স্বপ্ন দেখার অনুমতি নেই! হঠাৎ সেল ফোন টা বেজে ওঠে লীনার! ইশারাতের ফোন.....................................
: কেমন আছিস?
: ভাল রে, আজ আমার ম্যারেইজ ডে, উইশ করলিনা?
: আমি সকালে একবার ফোন দিতে চেয়েছিলাম, পরে আর দেয়া হয়নি। ভাইয়া ফোন করেছিল?
হাসলো লীনা।
সে সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই এই সহজ কথাটা ইশরাতকে কি করে যে বোঝাবে তাই ভাবছিল লীনা।
: কি রে কথা বলছিস না যে?
: কি বলবো? ফোন করেনি।
:ফোন করেনি?!! ইশরাতের কন্ঠে বিস্ময়। হাসলো লীনা।
: হাসছিস যে? পারল কি করে সে? এই মানুষের জন্য কাঁদিস তুই?
কি করে বোঝাবে লীনা, ভালবাসা কোন ব্যবসা তো নয়, লাভ না হলেই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে! হয়ত একদিন সব ভুলে যাবে লীনা।
তবুও মাঝে মাঝে চোখ পড়বে সেরে ওঠা ক্ষতের স্পষ্ট দাগটির দিকে! হয়ত ধ্বক করে উঠবে বুকের ভেতর। সাত সকালে ঘুম ভেঙ্গে খুঁজবে একটা আড়ষ্ঠ ঘুমন্ত শরীর!! তবুও জীবন থেমে থাকেনা। চলে আপন গতিতে! যাবার সময় থমকে দিয়ে যেতে চায় লীনাদেরকে। লীনারা থামেনা। আহসান সাহেবের মত বাবা, ইশরাতের মত বন্ধুরা আর তৌফিকের মত বন্ধুপ্রতিম বড় ভাইরা বাঁচিয়ে রাখে তাদের।
লীনারা হারেনা কোনদিন। হেরে যায় আসিফরা!
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।