আমাদের স্কুলটা ছিল কবরখানার পাশেই, খুব ছোট ছিলাম তখন। কেন জানি সবার পেছনের বেঞ্চেই জায়গা হতো আমার, কবরখানাটা সেখান থেকে খুব কাছে। এক অদ্ভুত রহস্যময়তা সাথে নিয়ে কাটছিল সময়। মনে পড়ে, শরতের শেষে শীত কিভাবে জাঁকিয়ে বসতো, অনুভব করতাম জানালা দিয়ে বয়ে যাওয়া অদ্ভুত শীতল বাতাস, মনে হতো মৃত কেউ আমার ঘাড়ের উপর তার নগ্ন নিঃশ্বাস ফেলছে।
কোন এক দিন শীতের বিকেলে, দিনের আলো ফুরিয়ে এলো তাড়াতাড়ি।
জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা লোক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর কেউ তাকে দেখেনি, আমি ছাড়া। লোকটার গায়ের রঙ কেমন ফ্যাকাসে, চোখ দুটো কুচকুচে কালো। মুখটা ঝুলে আছে, মনে হচ্ছিল খুব ক্ষুধার্ত লোকটা।
আমি ভয় পাই নি।
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও কথাটা সত্যি। জানতাম লোকটা মৃত, আমাদের উপর তার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। যদি আমি নিজে থেকে ভয় পাই তাহলে আলাদা কথা। জানালার কাঁচে হাত রাখল লোকটা, সেখানে কোন চিহ্ন না রেখেই চলে গেল।
বছর ঘুরাল, কিন্তু তাকে ভুললাম না আমি।
প্রেমে পড়লাম, বিয়ে করলাম। বাবা হলাম, নিজের বাবা-মা মারা গেলে তাদের কবর দিলাম। বয়স বাড়ল, জানালার ওপাশে দাঁড়ানো মানুষটা আমার আরো পরিচিত হয়ে উঠলো, মনে হলো সব কাঁচেই আমি তার ছায়া দেখতে পাই। তারপর, আমি ঘুমালাম, গভীর ঘুম, সেই ঘুম আর ভাঙল না।
কবরখানার পাশে একটা স্কুল।
এক শীতে, প্রায় ফুরিয়ে আসা দিনের আলোয়, হেঁটে একটা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, হাত রাখলাম কাঁচে।
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।