সব কিছুতেই স্বচ্ছতা চাই। লম্বা একটা দম নিলাম। বেন্সন টা ধরিয়ে লিখতে বসলাম অনেকদিন পর। স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই জীবনটা শুরু হলো। রাজনীতি করে, আড্ডা দিয়ে, অন্যান্যদের দেখে টুকটাক প্রেম করার ধান্ধা নিয়ে ভালোয় কাটছিলো।
কেমনে কেমনে যেনো একটা মাইয়া প্রেম করতে রাজীও হইয়া গেলো। একটা বছর কোনরকমে টিকছিলো। তারপর টাটা বায় বায়। আবার আগের মত চলাফেরা। স্বাধীনতার কেমন যেনো একটা স্বাদ ও পাইছিলাম।
হঠাত মুঠোফোনের সৌজন্যে একজনের সাথে পরিচয়। তখন অবশ্য মুঠোফোন প্রেমের জয়জয়াকার। এই হাওয়াটা আমার গায়েও তখন ভালোভাবেই লাগছিলো। ফলাফল, ফাইজলামী থেকে জটিল সম্পর্ক হয়ে গেলো যে কখন টের ই পাইলাম না। আক্ষরিক অর্থেই জটিল একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরলাম নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
ভালোই চলতেছিলো। হলিক্রস পড়ুয়া। ময়মনসিং হ থেকে ঢাকায় যাত্রা চলতো নিয়মিত। ইসস কি যে দিনগুলো চলছিলো। একেবারে আন্তঃনগর সুবর্না ট্রেন।
অনার্স শেষ করার সাথে সাথেই সরকার পরিবর্তন। বঙ্গদেশের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মাইর খাওয়ার আগেই ক্যাম্পাস ত্যাগ। কিন্তু সম্পর্কটা তো আর রাজনীতি না তাই ঐটা ঠিকি চলছিলো। পুর্বজনমে খুব ভালো কাজ করেছিলাম এই কারনেই কিনা বেশ ভালো বেতনের একটা চাকরিও পেয়ে গেলাম মামা খালুর সাহায্য ছারাই। পোস্টিং সুদূর বরিশাল।
আমার চৌদ্দগোষ্ঠীরও কেউ যায়নায় ওই এলাকায়। বুকে বিপুল পরিমান সাহস সঞ্চয় করে চলে আসলাম বরিশাল সাথে অনেকের অনেক রকম উপদেশ। ও আচ্ছা, হলিক্রস পড়ুয়ার সাথে সম্পর্কটাও তখন দুর্দান্ত। সমস্যা হয়ে গেলো, বরিশাল এসে হয়ে গেলাম পুরো একা। রাজনীতি করার কারনে ছিলাম প্রচন্ড আড্ডাবাজ।
সারাটা দিনি সাথে অনেকে থাকতো। তাই কোনভাবেই নিজেকে মানাতে পারছিলাম না। একমাত্র সংগী ছিলো ঐ মুঠোফোন টা। সারাটা দিন কানের সাথে ঐটা লেগে থাকতো। মানুষজন হয়তো ভাবতো মুঠোফোন আবিষ্কারের সুবিধাটা শুধু আমিই নিচ্ছি।
যে যাই ভাবুক তাতে আমার কি। আমি সবার চিন্তা ভাবনা কে বুড়া আঙ্গুল দেখাইলাম (অবশ্যই মনে মনে)। কিন্তু জগতের নিয়মে ওই মাইয়া টাও আমারে বৃদ্ধাংগুলি দেখাইলো। মাইয়াটার দোষ নাই,আমার কারনেই আমারে আংগুল দেখাইছে। প্রথমে ভাবলাম, যাক আবার স্বাধীনতার স্বাদ পাইতে যাচ্ছি।
কিন্তু তাহা এবার আর হইলোনা। অনেকটা গরমকালের ওয়াজ শীতকালের মতো হইয়া গেলো। আমার বোঝা উচিত ছিলো, এখন আমি ক্যাম্পাসে না। সাথে বন্ধু বান্ধবও নাই। ফলে যা হইবার তাই হইলো।
কিছুদিনের মাঝেই বিমর্ষ হইয়া গেলাম। এদিক সেদিক দৌড়া দৌড়িও করিলাম। একটা দুইটা মেয়ে আমাকে কিঞ্চিত আশাও দেখাইলো। কিন্তু কেনো যেনো ঐ হলিক্রস পড়ুয়া টারে ভুলতে পারছিলাম না। এইদিকে আবার দেখি রাত বিরাতে উনার মুঠোফোন ব্যস্ত।
আরো উতলা হইয়া গেলাম। ছয় সাত মাস এক রাত্রিও ঠিকমত ঘুমাতে পারছিলাম্না। সারাদিন অফিস। রাত নির্ঘুম। যারা এমন ঠেলা খান নাই তারা আমার অবস্থা বুঝবেননা।
হঠাত আমার পাশের বাসার সিটিসেলের এক কাস্টমার ম্যানেজার আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলেন। তখন মনে হয়লো, আসলেও উনারা সত্যিকার অর্থেই কেয়ার করে। তাহাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ রইলোনা। উনিই আমাকে রাতে ঘুমানোর একটা সাজেশন দিয়া দিলেন। একদিন মাথা মোড়ানো একটা নেভী সিগারেট আমাকে ধরাইয়া দিলেন।
ভার্সিটি তে এই মাথা মোড়ানো সিগারেট সম্বন্ধে শুনিয়াছিলাম কিন্তু স্বাদ নেয়ার ভাগ্য হয়েছিলোনা। তা ওই কাস্টমার কেয়ারের বড় ভাই আমাকে ঐ সিগারেটের স্বাদ নিতে বললেন। একেবারে নিজে ধরিয়ে আমাকে দিলেন। যদিও আমি সিটিসেল ব্যবহার করতাম না তারপরো উনার কেয়ার দেখে আমি আপ্লুত হইয়া পরেছিলাম। ওই রাতে জটিল একটা ঘুম হওয়ার পর আমি চিন্তা করিলাম কালই একটা সিটিসেল কিনিবো, কৃতজ্ঞতা স্বরুপ।
যদিও কিনি নাই তারপরো আমার প্রতি উনার কেয়ারের অন্ত ছিলোনা। দিন দিন আমার ঘুম ভালো হতে লাগলো। আস্তে আস্তে উনার সাহায্য ছেরে আমি নিজেকে নিজেই সাহায্য করিতে লাগ্লাম। ততদিনে মাথা ভাঙ্গা সিগারেট বানানোও শিখে ফেললাম। আস্তে আস্তে ওই সিগারেট টাই আমার সবচেয়ে আপন হয়ে উঠলো।
হলিক্রস পড়ুয়া কে মোটামুটি মনে আনার চেষ্টা করতাম্না। এবং সফলও হয়ে উঠলাম। হলিক্রসের কথা মনে হলেই একটা মাথা ভাঙ্গা সিগারেট। ব্যস সমস্যার সমাধান। কিন্তু এটাতেও মন ভরছিলোনা।
বছর খানেক পর আরেক ভাই আমাকে ইন্ডিয়ান একটা কাশীর ওষুধ খেতে দিলো। ঐটা খেয়ে আমি উনার চরম ভক্ত হয়ে যাই। যার ফলস্বরুপ দিনের পর দিন ৭০০টাকা দিয়ে ঐ কাশীর ঔষুধ খেতে থাকি এবং উনাকেও খাওয়াতে থাকি। সাথে আরো যা পাই তাই সমানে খেতে থাকি আর বুদ হয়ে থাকি। আমার চিন্তা ভাবন আরো গাঢ় হতে থাকে।
মনে হতে থাকে আমি এতোদিন কি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতাম। ছিঃ। ঔষধটার প্রতি আমার ভক্তি দিন কে দিন বেড়েই চললো। ওহ, ঔষুধটার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে আমি বিসিএস প্রিলী তে কি করে যেনো টিকে যাই। লিখিত তেও টিকি।
এরপরেই আমার জীবনে ঔষধের আবির্ভাব। ভাইভার জন্য পড়তে পারছিনা। সারাদিন শুধু ঐ ঔষুধে বুদ থাকতাম। ভাইভা দিলাম। ওমা রেজাল্টের পর দেখলাম আমি পাশ করেছি এবং ক্যাডার ও পেয়েছি।
তারপর সমানে খাইতে থাকলাম কাশীর ঔষুধ। আহা কিযে তাহার স্বাদ। হেড অফিস থেকে চিঠি এলো আমাকে কিছুদিনের জন্য মহেশপুর যেতে হবে। একেবারে সীমান্তবর্তী উপজেলা। আমার খুশী দেখে কে.।
.। । । ঐখানে নাকি অতি অল্প দামে একেবারে খাটি কাশীর ঔষুধ পাওয়া যায়। আর ঐখানের আমার কলিগও সারাদিন ওইটার উপরেই থাকে।
আমিও ওইখানে যেয়ে উনার সাথে যোগ দেই। আমার আর চিন্তা কিসের, কয়দিন পর ইনশাল্লাহ সরকারী চাকুরী তে জয়েন করবো। কিন্তু বরিশালে ভেজাল ঔষুধ এর কারনে অথবা হাফ করে খাওয়ার কারনেই হোক, আমি খেয়াল করলাম আমার কলিগের চিন্তা ভাবনা সব পাগ্লাটে। কিন্তু সে ভাবছে তার চিন্তা ভাবনা সব ঠিক। উনার সাথে আর যারা ছিলো সবারি একি অবস্থা।
মাথার তার পুরা ছিড়া। হথাত একরাতে আমার মনে হলো, আচ্ছা আমিও তো নিজে নিজে অনেক চিন্তা ভাবনা করি। আমার কাছে এগুলো সবি ঠিক মনে হয়। যদিও অনেকের কাছে মনে হতো আমার চিন্তা ভাবনা ঠিক নরমাল না। আমার মনে হলো আমার তারও কি ছিড়ছে নাকি? দুইদিন অনেক কষ্ট করে ঔষুধ টা না খেয়ে থাকলাম।
মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হওয়া স্বত্তেও খাইনি। আস্তে আস্তে মনে হলো মাথার তার তো আমারো ছিরছে। উহু, জীবনটাকে তো এইভাবে নষ্ট হতে দেয়া যায়না। তারওপর আমার কলিগের অবস্থা দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। উহু আমি কোনভাবেই তারছিড়া হতে রাজী না।
এক সকালে আমি আমার কলিগকে না জানিয়ে আমার নিজ স্টেশনে চলে আসি। কিন্তু আমার শরীর বিদ্রোহ করে বসে প্রতিনিয়ত। শুধু মনের ইচ্ছার জোরে আমি স্বাভাবিক হয়ে আসি। এখন আমি মাথা ভাঙ্গা সিগারেটও খাইনা, কাশীর ঔষুধও খাইনা। প্রতিটা দিনি এখন আমার কাছে অনেক সুন্দর মনে হয়।
হলিক্রস পড়ুয়া মেয়েটা কেমন আছে জানিনা কিন্তু আমি এখন অনেক অনেক ভালো আছি। এবং বিশ্বাস করি বেচে থাকলে আমি একদিন অনেক বড় হবো। আমি জানি অনেকেই আমার এতো বড় লেখাটা পড়বেননা। আর কষ্ট করে যদি পড়েও ফেলেন আমার উপর চরম বিরক্ত হবেন। কারন আমি লিখেছি শুধু নিজেকে নিয়ে।
জনপ্রিয় ব্লগারদের মত দেশ ও দশের বাল ফালানোর জন্য কিছু লিখিনাই আর গালাগালিও করিনাই। তবুও যারা পরেছেন তাদেরকে একটি অনুরোধ করতে চাই, কখোনোই কোন কারনেই ড্রাগের পেছনে যাবেননা। আমার মত বোকা আপনারা কেউ না তা আমি জানি। কিন্তু কাউকে যদি দেখেন আমার মত বেক্কল কাজ করতে তাহলে প্লীজ ভালোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আর হা, সময় এবং সুযোগ পেলে আমার জন্য একটু দোয়া করতে ভুলবেন না যেনো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।