জামাকাপড়ের পরিধির সাথে সভ্যতার অগ্রগতির সমানুপাতিক সম্পর্ক দেখিয়ে ওড়না পেইজগুলা প্রায়ই কিছু পোস্ট দিয়ে থাকে যার মূল বক্তব্য হচ্ছে আদিম যুগে মানুষ ল্যাংটা ছিল... এখন মানুষ সভ্য হইছে তাই কাপড় পড়তেছে!! মূল উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে হিজাবের প্রতি অনুপ্রাণিত করা...এদের ভক্ত সমর্থকেরও কোন অভাব নাই... দেখা যায় সবাইকে (বিশেষ করে মেয়েদের জামা কাপড় পড়িয়ে সভ্য বানাতে নব্য জিহাদীদের জোশের কোন অভাব নেই!!!) সভ্যতার সাথে পোশাকের পরিধির বিবর্তনের গতিটা কি এতোটাই সরল? আদিম নরবানর হয়ত ল্যাংটাই থাকত... মস্তিস্কের বিকাশের সাথে সাথে একটা সময় মানুষ দেখতে পায়, তার প্রকৃতির বিরূপ আচরন ও শীত রোদের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরকার জামাকাপড়... এরপর গাছের ছালবাকল পাতা দিয়ে সে শুরু করল নিজেকে আচ্ছাদিত করা... লজ্জা নিবারন বলে কোন উদ্দেশ্য কি আদৌ ছিল? ... এর পর প্রাচীন যুগ থেকে আস্তে আস্তে জামা কাপড়ের পরিধি বাড়ল...ছাল বাকল থেকে জামা কাপড়ও বিবর্তিত হয়ে অনেক আধুনিক হল...তাইলে লজ্জা নিবারনের ব্যপারটা কিভাবে আসল? দেখা গেল মানব সমাজের সবাই একটা সময় বুঝে গেল যারা জামাকাপড় দিয়ে নিজেদের মুড়িয়ে রাখে তাদের সেই বিরূপ পরিবেশে সারভাইভ করার সম্ভবনা বেশি। এভাবে জামাকাপড়ের ভলিউম বাড়তে থাকলে... একটা সময় জামা কাপড় হয়ে গেল আভিজাত্যের প্রতিক... হয়ত আদিম যুগে যারা নেতৃস্থানীয় ছিলেন তারা ভালো ছালবাকল ব্যবহার করতেন... যা হয়ে গেল অন্যান্যদের ঈর্ষা ও আকাঙ্খার বস্তু! আর জামাকাপড় ছাড়া কেউ থাকলে তাঁকে ধরা হত সে চরমভাবে সুবিধাবঞ্চিত... অর্থাৎ সে সামাজিকভাবে ছোট...এভাবেই হয়ত বিবর্তনের ধারায় তৈরি হয়েছে পোশাক ও লজ্জার কনসেপ্ট! ইতিহাসের পরিক্রমায় আমরা দেখতে পাই মধ্যযুগে সব জায়গায় জামা কাপড়ের পরিধি সবচেয়ে বেশি ছিল... লোকজন বর্ম, ছালার বস্তা এসব পড়ে পড়ে ঘুরত! এবং এই যুগটাই মানব সভ্যতার সবচেয়ে বর্বর যুগ ছিল এটার ব্যপারে কারও কোন দ্বিমত থাকার কথা না...সেই যুগে জামাকাপড়ের পাশাপাশি মানুষের বাক স্বাধীনতা ও অনেক বিষয়ে অনেক বাজে হস্তক্ষেপ করা হত... এরপর আধুনিক যুগে আমরা বুঝতে পারলাম যে এসব বাহুল্যের আর কোন দরকার নাই... আমাদের এখন আর বনে বাদাড়ে থাকা লাগে না... আমাদের স্থাপত্যের অনেক উন্নতি হয়েছে... শীত গ্রীষ্ম দুর্যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি এখন আর আমাদের স্পর্শ করতেই পারে না!!! এখন আমরা মধ্যযুগের বেদুইনদের মত সারাদিন যুদ্ধ করি না... কে কোন নারী/কয়টা নারী হস্তগত করবে এটা নিয়ে আমরা যুদ্ধেও যাই না... তাই নিজের নারীর দিকে যাতে পরপুরুষের চোখ পড়ে যুদ্ধ শুরু না হয় তাই তাদের ছালার বস্তায় ভরে রাখার দরকার হয় না(সাধারনত!!) এই যুগে আমাদের যতটুকু দরকার আমরা ততটুকু জামা কাপড়ই পড়ি... তবে কিছু লোকজনের মাথা থেকে এখনও মধ্যযুগীয় ছালার বস্তা কনসেপ্ট যাচ্ছে না!! আমার মনে হয় "সভ্যতার সাথে রেখে ঢেকে চলার সম্পর্ক আছে" কথাটা ভাব সম্প্রসারন করতে গেলে আমাদের একটু বিস্তারিতভাবেই করা উচিত!!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।