স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা শুরুতেই জানিয়ে দিচ্ছি সিনেমা পিপলস এর ব্যানারে ৫টি শর্ট ফিল্ম এর কাজ শুরু হয়েছে। আপনি আগ্রহী থাকলে এই পোস্ট টি দেখতে পারেন।
একটা সিনেমা কেনো সিনেমা হয়ে দাঁড়ায়? কেমন করে দাঁড়ায়? আমরা আসলে সিনেমা থেকে কি আশা করি? সিনেমার ভাষা (ব্যকরন বাদ দিন) কেমন হওয়া উচিত?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরী। ক্যামেরার এপারচার-অ্যাঙ্গেল-ফোকাস কিংবা অন্যান্য টেকনিক্যাল ব্যাপার দূরে সরিয়ে রেখে আসুন কল্পনায় বানিয়ে ফেলি একটা সিনেমা।
সাধারনত সিনেমায় এক বা একাধিক প্রোটাগনিস্ট থাকে।
প্রোটাগনিস্ট হলো লীড ক্যারেক্টার। তবে আমরা একজন লীড ক্যারেক্টার কে বেশী এপ্রিশিয়েট করে থাকি। হয়তো 'ইশ, আমি একাই যদি সব করতে পারতাম' এই ধারনা আমাদের সবার মাঝে কম বেশী থাকায় এমনটি হয়। তো এই লীড ক্যারেক্টারকে ঘিরেই হয় আমাদের গল্প।
প্রোটাগনিস্ট এর পরচিয় পেয়ে যাই আমরা শুরুতেই।
তার মন মানুষিকতা, অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাওয়ার পর আমরা মুল ঘটনার দেখা পাই। মুল ঘটনা কি? একটি সমস্যা। একটি মুল সমস্যাকে ঘিরে আবর্তিত পুরো গল্প/সিনেমা। এখন এই মুল সমস্যা কি হতে পারে? ধরুন টার্মিনাল সিনেমায় টম হ্যাঙ্কস এর মুল সমস্যা ছিলো সে এয়ার্পোর্ট লাউঞ্জে আটকে পড়ে আছে; তার কান্ট্রিতে গৃহযুদ্ধ লাগার কারনে তার পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে দেশেও ফিরতে পারছেনা আবার নিউ ইয়র্ক সিটিতেও পা রাখতে পারছেনা।
এখন প্রোটাগনিস্ট কে ফাইট করতে হবে এই মুল সমস্যা কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায়।
সিনেমার শেষ নিয়ে আগেই আলোচনা করে ফেলি। ৩ ভাবে শেষটা দেখানো যায়; সমস্যা কাটিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে পা দেয়া অথবা সমস্যা অর্ধেক কাটিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া কিংবা সমস্যার মাঝে রেখেই সিনেমা শেষ করে দেয়া। সেটা পরিচালকের চিন্তা ভাবনার উপর নির্ভর করবে।
এখন এই মুল সমস্যাই কি সব? উহু, এই সমস্যা সমাধানের যে প্রসেস টা দেখানো হবে পুরো ফিল্ম জুড়ে, তাতে অনেক ছোট ছোট সমস্যা থাকবে। এই ছোট ছোট সমস্যাগুলো ও ফেস করতে হবে প্রোটাগনিস্ট কে।
মনে রাখা উচিত, প্রোটাগনিস্ট কে যাবতীয় ঝামেলা/সমস্যার ফেস করাতে হবে। প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত করতে হবে তাকে। ধরুন, সে ডাঙ্গা থেকে কিছু দূরে নদীতে ভাসমান জাহাজে উঠবে। প্রথমেই, তার কাছে কোন নৌকা নেই, কোন ভেলা নেই। ভেলা যে বানাবে সেরকম কোন কাঠ বা কিছু আশে পাশে নেই।
এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা, ওদিকে জামা কাপড় পড়ে সাতরালে ভার হয়ে যাবে তাই প্রায় খালি গায়ে সাতার দিতে হবে। সাতরিয়ে জাহাজ পর্যন্ত গিয়ে দেখলো জাহাজে বেশ পাহারা। সোজা উঠার রাস্তা নেই। ঘুরে পেছন দিকে গিয়ে দেখলো নোঙ্গরের শিকল বেয়ে উঠা যাচ্ছেনা। অনেক কষ্ট করে উঠতে গিয়ে একবার পড়ে গেলো নিচে।
সবাই দৌড়ে এলো শব্দ শুনে। নায়ক পানির নীচে ডুব দিলো। এক ডুবে নায়ক অন্যপাশ দিয়ে উঠে হাপাতে লাগলো। অন্যপাশে দেখা গেলো জাহাজে উঠার কিছু নেই। তখন নায়ক এই পাশে শব্দ করে আবার ডুব দিলো।
আগের পাশ দিয়ে উঠে দেখল সবাই অন্যপাশে, তখন উঠলো। এবং উঠে ধরা খাইলো। তাকে নিয়ে বেধে রাখা হলো। সেখান থেকে ছুটে পালাতে গিয়ে নায়ক বেদম মাইর খাইলো। কিন্তু শেষ্মেষ নায়ক মাইর বেশী দিয়ে জাহাজের আরো ভেতরে গিয়ে মুল ভিলেইনের রুমে গিয়ে দেখলো কেউ নেই।
ভিলেইন এখন কক্সবাজার।
এই যে সমস্যা আর সমস্যা - এর থেকে সমাধান গুলো যত সহজ হবে, সিনেমা তত পানসে হবে। নায়ক বা প্রোটাগনিস্ট কে শক্ত শক্ত পরীক্ষায় ফেলতে হবে। সে পরীক্ষায় পাস করে করে এগিয়ে যাবে। সিনেমার মাঝে আবার নায়িকার সাথে কিছু রোমান্টিক মুহুর্ত।
নায়িকার সাথে ঝগড়া। নায়িকাকে বুঝাতে গিয়ে দেখলো যে নায়িকা ফিরে এলে মা কে হারাবে। মা কে রক্ষায় নায়িকা কে ছেড়ে দেয়া, আবার একি সাথে ভিলেইন এর মাইর সহ অন্যান্য ঝামেলা নায়ক কে পরীক্ষার পর পরীক্ষায় ফালানো।
একজন নায়ক কে নায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাকে মার খাওয়াতে হবে।
নাম তার সুপারম্যান, কোন কিছুতেই তার মরন হয়না। কিন্তু তার ও একটা দূর্বলতা আছে। সেই দূর্বল জায়গায় আঘাত করে ভিলেইন তাকেও কাবু করে ফেলে, কষ্ট দেয়। এগুলা কেনো? সিনেমায় আপনি নায়ক কে যদি সত্যিকারের সুপারম্যান বানিয়ে দেন যে তার কিছুই হয়না অথচ বাদ বাকী সব মারা যায়, তাইলে কিছুটা পানসে হয় বৈকী। সো, নায়ক কে গুলি খাওয়ান।
রক্ত ঝরুক তার গা থেকে, পা থেকে। চোখ ভচকিয়ে দিন। পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিন। কমার্শিয়াল সিনেমায় আপনি দর্শকদের তৃপ্ত করবেন না, তা কি হয়!
নায়কের অন্তত একটি বা দুটি গুন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেনো তার সেই গুনে অন্যজন আকৃষ্ট হয়। নায়ক এর এগেইন্সটে যেমন ভিলেইন থাকবে, তেমনি নায়কের পক্ষে কিছু ভালো লোকজন ও থাকবে যারা নায়ক কে জীবনের মুল্য দিয়ে হলেও সাহায্য করবে।
অ্যাকশন সিনেমা হলে নায়কের খুব কাছের কাউকে মেরে ফেলুন। তবে মেরে ফেলার আগে কাছের মানুষটার সাথে, তা সে বন্ধু হোক বা অন্য কেউ, অন্তরঙ্গতা প্রতিষ্ঠিত করুন। মনে রাখা উচিত, পাশের বাড়ির করিম সাহেব মারা গেলে আমরা খুব কষ্ট পাইনা। কিন্তু আমাদের জিগরী দোস্ত মারা গেলে আমরা খুব কষ্ট পাই।
*শুধু গল্প নিয়া কথা বললাম।
**এটা শুধুমাত্র একটা ফর্মুলা। ডিরেক্টর রা সময়ে সময়ে এই ফর্মুলা ভেঙ্গেছে, নতুন কিছু ঢুকিয়েছেন। আপনি ও করতে পারেন।
*** কোন কিছু ভাঙ্গার আগে সেটাকে জানুন। শুরুতেই নতুন কিছু করতে যাওয়া বোকামী ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।