“কী হল কতক্ষণ ধরে কলিং বেল চাপছি কোন খবর নেই?”
ভয়ার্ত ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে নাফিজা তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। কিছু বলছে না।
“ঘুমাচ্ছিলে নাকি?”
“ন ... না না। ” বলার সময় মুখে বেজে যায় নাফিজার।
“তাহলে চেহারা এমন আলুথালু কেন? আর না ঘুমালে নাইট গাউন চাপিয়েছ কেন? সর সর।
দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছো ঘরে ঢুকতে দেবে না?”
“হুম। আসো। তোমার না আজ এগারোটার পর আসার কথা? এতো আগে চলে আসলে?” অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে থেমে থেমে কথা গুলো বলে নাফিজা।
“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করলো। তাই আগে চলে এসেছি।
শোন আমি বাথরুমে ঢুকছি। তুমি পারলে আমার জন্য এক কাপ চা কর। ”
উত্তর শোনার অপেক্ষা না করে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায় আরিফ। অথচ ও পোশাকটা ও চেঞ্জ করে নি। ফরমাল পোশাক সহ বাথরুমে ঢুকে যাওয়ার মতো মানুষ আরিফ না।
পেছন থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে নাফিজা। আরিফের বাথরুমে ঢুকে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সে। এর পর এক দৌড়ে ছুটে যায় নিজের বেড রুমে।
বাথরুমে ঢুকে অহেতুক সময় নষ্ট করতে থাকে আরিফ। কিছুক্ষণ মাথায় পানি ঢালে।
এরপর হাত মুখ ধোয়। আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক ক্ষণ নিজের চেহারা টা দেখে। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে সরাসরি বেড রুমে প্রবেশ করে আরিফ। সেখানে ওর জন্য চা নিয়ে অপেক্ষা করছে নাফিজা। চায়ের রঙ ভালো হয়েছে।
খেতে ভালো হবে বোঝা যায়। প্রথম চুমুকটা দিতে দিতে আরিফ পুরো বেড রুমটা একনজরে দেখে নেয় আরিফ। পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে নাফিজা।
“নাফিজা তোমার সাথে আমার কথা আছে। ”
“বল।
”
“আমি তোমাকে একটা গল্প বলতে চাই। শুনবে?”
“হুম। শুনবো। ”
“মোটামুটি বড় সর গল্প কিন্তু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ”
“আমি শুনবো।
তুমি বল। ”
“নেপোলিয়নের নাম তো শুনেছ। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ফরাসি সেনাপতি। ”
“হুম।
শুনেছি। ”
“আমি এখন তোমাকে নেপোলিয়নের গল্প বলবো। আচ্ছা একটা কথা বল দেখি, তুমি আমাকে তো একবার ও জিজ্ঞেস করলে না আমি দুপুরে খেয়ে এসেছি কিনা?”
“হুম। আমি জিজ্ঞেস করবো ভেবেছি। কিন্ত তুমি আমাকে সে সুযোগ দিলে কই? তুমি কী এখন খাবে? খাবার দিবো টেবিলে?”
“না।
ঠিক আছে আমি খেয়ে এসেছি। তুমি গল্প টা শুনো”
নেপোলিয়ন ফরাসি সেনা বাহিনীতে জেনারেল হয় অতি অল্প বয়সে। তার কাঁধে তখন অনেক চাপ। তার অধীনস্থ অফিসার যারা ছিল দেখা গেলো প্রায় সবাই তার থেকে বয়সে অনেক বড়। এ বিষয়টা নেপোলিয়নকে অনেক বিব্রত করতো।
কি করা কি করা যায়। এমন সময় নেপোলিয়ন একটা উদ্ভট বুদ্ধি বের করলো। কেমন জানো? নেপোলিয়ন চিন্তা করলো বিয়ে করবে। ভালো কথা। তবে সে বিয়ে করবে তার থেকে বয়সে বড় এমন কাউকে।
তাও শুধু বড় হলে হবে না ধনী ও হতে হবে। এতে তার অধীনস্থরা আর যাই হোক তাকে ছোকরা ভাবতে পারবে না।
বলতো নাফিজা নেপোলিয়নের আগে ইতিহাসে বেশী বয়সী নারী আর কে বিয়ে করে ছিলেন?
কে?
আরে একটু মাথা খাটাও।
মনে পড়ছে না তুমি বল।
আমাদের নবী করিম সঃ।
কাকে বিয়ে করেছেন জানতো? খাদিজা (রাঃ) কে। খাদিজা খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ। আমাদের নবী যখন খাদিজা কে বিয়ে করেন তার বয়স ছিল পঁচিশ আর খাদিজার ছিল চল্লিশ। যাই হোক নেপোলিয়নের ঘটনায় ফিরে আসি।
নেপোলিয়ন ছিল তুখোড় সেনাপতি।
তার সমরজ্ঞান ছিল অসাধারণ। সে ততদিনে টাউলনের যুদ্ধ শেষ করে প্যারিস রক্ষা করে ফেলেছে। চতুর্দিকে দিকে অনেক নাম ডাক তখন নেপোলিয়নের। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাল পল বারাস নামক একজন রাজনৈতিক নেতা। বারাস তার বাসায় নেপোলিয়নের উদ্দেশ্যে একটা পার্টি আয়োজন করে।
জাঁকালো পার্টি। শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত পার্টিতে। মদ, নারী কোন কিছুর অভাব নেই। যে যেভাবে পারছে উপভোগ করছে। কিন্তু নেপোলিয়নের তেমন একটা মন নেই পার্টিতে।
নেপোলিয়ন ভাবছে তার পরিকল্পনা নিয়ে। বিয়ে করবে কিন্তু তার মতো সেনাপতির এখনো পাত্রী জুটল না কপালে। ব্যাপারটা কেমন না। এই নিয়ে যখন উদাস মনে ভরা গ্লাসে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে নেপোলিয়ন তার চোখ আটকে যায় এক অচেনা রমণীর উপর। রুপ লাবণ্যে ঝলমল করছে।
যেমন গায়ের রঙ তেমনি চেহারা। নেপোলিয়নের বুকটা চিন চিন করে উঠে। হবে হয়তো কারো ঘরণী। হঠাৎ করে সে ব্যস্ত পড়ে পানীয়র গ্লাস নিয়ে। একের পর এক চুমুক দিয়ে যায় গ্লাসে।
এভাবে সময় কত পাড় হয়েছে নেপোলিয়নের খেয়াল নেই। হঠাৎ করে নেপোলিয়ন অনুভব করে কেউ একজন তার কাঁধে পেছন থেকে হাত রেখেছে। কোমল রমণীয় হাত। নেপোলিয়ন পেছন ঘুরে দেখে। এবার মোটামুটি বিস্মিত হওয়ার পালা।
সেই রমণী যার দিকে অপলক চেয়ে ছিল নেপোলিয়ন।
"আমি কি কিছুক্ষণ আপনার সঙ্গ পেতে পারি, হে মহামতি নেপোলিয়ন। " নারী কণ্ঠে আগ্রহ ভরা অনুরোধ।
নেপোলিয়ন কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর করে, "জী, অবশ্যই। আমি সম্মানিত বোধ করবো।
"
এভাবে দুজনের আলাপচারিতা চলতে থাকে। নেপোলিয়ন জানতে পারে কাঙ্ক্ষিত নারীটির নাম রোজ। আর নেপোলিয়ন সম্পর্কে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। সাড়া ফ্রান্সবাসী একনামে চেনে তাকে। রোজের আন্তরিকতা, রূপ সৌন্দর্য, ছলা কলায় নেপোলিয়ন মজে যায়।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এই মেয়েকে তার চাই চাই। যে কোন মূল্যে রোজকে তার বিয়ে করতে হবে।
মাঝ থেকে সমস্যায় পরে যায় বেচারি রোজ। কারণ রোজ যা করেছে সব তার প্রভুর নির্দেশে। পল বারাসের পরিকল্পনা মতো সব হয়েছে।
বারাস চেয়েছে যাতে রোজের সাথে নেপোলিয়নের বিয়ে হয়। নেপোলিয়ন ও উঠে পড়ে লেগেছে রোজকে বিয়ে করার জন্য। কারণ নেপোলিয়ন জানতে পেরেছে রোজ তার থেকে বয়সে বড় এবং ধনবতী। একদম যেমনটা সে ভেবেছে।
অবশেষে বারাসের সহযোগিতায় রোজের সাথে নেপোলিয়নের বিয়েটা হয়ে ও যায়।
বিয়ের পর পরই নেপোলিয়ন রোজের নাম বদলে ফেলে। নতুন নাম রাখে জোসেফাইন দ্য ব্যুহ্যারানাইস। সংক্ষেপে জোসেফাইন। ও বলা হয় নি জোসেফাইন কিন্তু ডিভোর্সি ছিল। তার আগের ঘরে ছিল দুসন্তান।
ইউগিন আর হরটেন্স। যাই হোক। বিয়ের পর বেশ কিছুদিন মধুরভাবে কেটে যায় নেপোলিয়ন জোসেফাইনের। এরপর নেপোলিয়ন চলে যায় যুদ্ধে, ইটালিতে। যাওয়ার সময় নেপোলিয়ন অনুভব করে ইতোমধ্যে সে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে জোসেফাইনকে।
এই আরিফ শুনো আমি এখনো গোসল করি নি। গোসল করে আসি কেমন। তারপর তোমার গল্পও শুনবো। কি বল।
ওকে।
যাও গোসল করে এস। অনেক সময় লাগবে নাকি?
না তেমন না যাবো আর আসবো। গোসল সেরে মনোযোগ দিয়ে তোমার গল্পও শুনবো।
ওকে। যাওয়ার আগে তোমাকে একটা মজার কথা বলি শোন, জানো নাকি, নেপোলিয়ন যে ঘোড়ার চুল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতো।
কি যে বল না তুমি। ঘোড়ার চুল দিয়ে আবার দাঁত ব্রাশ করে কীভাবে?
না আমি কিন্তু সত্যি বলছি।
হুম। বুঝলাম। আমি গেলাম।
কিছু লাগবে নাকি তোমার?
চা হলে ভালো হতো। না থাক। তুমি গোসল সেরে এসো। তারপর একসাথে চা খাবো।
কিছুক্ষণ পর দুকাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকল নাফিজা।
আরিফ ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। এই একটা ব্যাপার কিছুতেই আরিফ ধরতে পারে না। গোসলের আগে একরকম পরে একরকম- কেন এরকম হয়? কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পরেছে নাফিজা সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। অপূর্ব লাগছে দেখতে। অতিস্নিগ্ধ একটা ভাব ও চলে এসেছে চেহারায়।
কই যেন ছিলাম আমরা? ঘোড়ার চুল দিয়ে দাঁত ব্রাশ ওখানে না। বলে নাফিজা।
আরে না। ওটাতো তোমাকে মজা করে বলেছি।
তার মানে তথ্যটা ঠিক না।
ঠিক হবে না কেন? অবশ্যই ঠিক। তবে গল্পের সাথে এর আপাতত কোন সম্পর্ক নেই। আমরা ছিলাম নেপোলিয়ন যে যুদ্ধে চলে যায় ইটালিতে ওখানে।
হে হে মনে পড়েছে। তুমি শুরু কর।
ওকে
তো নেপোলিয়ন ইটালিতে যুদ্ধে চলে যায়। শুরু হয় জোসেফাইনের খেলা।
কেমন? প্রশ্ন করে নাফিজা।
বলছি।
কিছু বেপারতো নেপোলিয়ন জানতেই পারে নি।
জোসেফাইনের সাথে তার বিয়ের পেছনে যে কলকাঠি নেড়েছে বারাস। তারপর জোসেফাইন সম্পর্কেও তেমন একটা খোঁজ খবর করে নি সে। ঐ যে প্রথম দিন পার্টিতে দেখেছে এরপর শুধু পাগলের মতো ভালোই বেসে গেছে। তারপর তো বিয়েই করলো। এইটা মনে হয় তোমাকে বলিনি, যখন তাদের বিয়ে হয় নেপোলিয়নের বয়স ছিল ছাব্বিশ আর জোসেফাইনের ছিল ছত্রিশ।
যাই হোক। প্রকৃতপক্ষে জোসেফাইনের ডিভোর্স হওয়ার পর সে ছিল বারাসের রক্ষিতা টাইপের। বারাস তাকে মুক্তি দিয়ে নেপোলিয়নের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। বিয়েতে মোটেও রাজি ছিল না জোসেফাইন। শুধু বারাসের চাপে পড়ে রাজি হয়।
এক পুরুষের হয়ে থাকবে এমনটা জোসেফাইনের চরিত্রে ছিল না। নির্দিষ্ট একজনের ঘরণী হয়ে থাকার চেয়ে আমোদ ফুর্তি, বহুগামিতা এগুলোই বরং জোসেফাইন বেশী উপভোগ করতো। নেপোলিয়ন চলে যাওয়ার পর জোসেফাইন সে সুযোগটা পেয়ে যায়। একেক সময় একেক পুরুষের সাথে আন্তরিক সময় কাটাতে থাকে সে। তবে এর মধ্যে একটা কাজ ঠিকই করতো প্রতিদিন নেপোলিয়নের চিঠির উত্তর লিখত।
ঐদিকে নেপোলিয়ন বসে বসে জোসেফাইনের চিঠি পড়ে আর অপেক্ষার প্রহর গুনে। এভাবে একসময় নেপোলিয়ন হাঁপিয়ে উঠে। একপলক জোসেফাইনকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে সে। জোসেফাইনকে চিঠি লেখে যেন চিঠি পাওয়া মাত্র ইটালি চলে আসে সে। কিন্তু জোসেফাইন তাকে নিরাশ করে।
প্রতিউত্তরে জোসেফাইন জানায়, সে প্রেগন্যান্ট। এতো দীর্ঘ ভ্রমণ তার জন্য সম্ভব নয়। এতে তাদের অনাগত সন্তানের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এ কথা শুনে নেপোলিয়ন একটু ঠাণ্ডা হয়। কয়েকদিন যাওয়ার পর আবার উথালা হয়ে উঠে নেপোলিয়ন।
বার বার অনুরোধ করতে থাকে জোসেফাইনকে। এবার জোসেফাইন বারাসের সহায়তা চায়। তাকে বলে যেন নেপোলিয়নকে একটু বুঝিয়ে বলে ও এখন যেতে পারবে না। এর মধ্যে নেপোলিয়নের এক অফিসার প্যারিসে এসেছিল বিশেষ কাজে। প্যারিসের আকাশে বাতাসে তখন একটাই আলোচনার বিষয়- জোসেফাইন কীভাবে দিনকে দিন বোকা বানাচ্ছে নেপোলিয়নকে।
এগুলো শুনে মনে খুব কষ্ট পায় ঐ অফিসার বেচারা। সে নেপোলিয়নকে সব জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মজার ব্যাপার হল, ঐ অফিসারকে নেপোলিয়ন দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিল কাজ সেরে আসার সময় যেন জোসেফাইনকে ও সাথে করে নিয়ে আসে। এবার বারাস ও সাহায্য করে নেপোলিয়নকে। কারণ বারাস চিন্তিত ছিল নেপোলিয়নকে চটালে তার সমস্যা হবে।
তাই জোসেফাইনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠায় নেপোলিয়নের কাছে।
জোসেফাইন ইটালি পৌছলে তাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে নেপোলিয়ন। তবে একটা হিসেব নেপোলিয়ন মেলাতে পারে না। যদি জোসেফাইন প্রেগন্যান্ট হয়েই থাকে তাহলে এতদিনে তো তা দেখে বোঝার কথা। কিন্তু জোসেফাইনকে দেখে তো বোঝা যায় না।
ব্যাপার কি। একবার ভাবে জিজ্ঞেস করবে আবার ভাবে দরকার কি। এমন দোটানায় পড়ে মাঝে ফট করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে নেপোলিয়ন। প্রশ্ন শুনেই মুখের ভঙ্গি বদলে ফেলে জোসেফাইন। শত পুরুষ চড়িয়ে খাওয়া জোসেফাইন সুনিপুন অভিনেত্রীর মতো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এরপর মিথ্যে একটা কাহিনী বানিয়ে বলে নেপোলিয়নকে। কীভাবে দুর্ঘটনার কারণে সে বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারে নি। এবরশন করাতে হয় তার। সরল মনে সব বিশ্বাস ও করে নেপোলিয়ন। সে জোসেফাইনকে বুকে জড়িয়ে ধরে সন্তান হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এভাবে নেপোলিয়ন ইটালিতে যুদ্ধ শেষ করে জোসেফাইনকে নিয়ে ফিরে আসে। যতদিন তারা একসাথে ছিল জোসেফাইন তাকে তার মিথ্যে ভালোবাসায় ডুবিয়ে রাখে। ফলে নেপোলিয়ন ও কিছু বুঝতে পারে না। কিন্তু তার বাহিনীতে তখন জোসেফাইনকে নিয়ে রসালো গুঞ্জন।
কিছুদিন একসাথে কাটানোর পর জোসেফাইনকে রেখে মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় নেপোলিয়ন।
নেপোলিয়ন চলে যাওয়ার পর জোসেফাইন ফিরে যায় তার পুরনো পথে। মেতে উঠে পূর্ব উন্মাদনায়। পোশাকের মতো বদলাতে থাকে পুরুষ। কিন্তু সত্য আর কতদিন গোপন রাখা যায়। মিশরে একদিন এক অফিসারের কাছ থেকে নেপোলিয়ন সব কিছু জানতে পারে জোসেফাইন সম্পর্কে।
যাকে এতো ভালবেসেছিল সে এভাবে তার সাথে প্রতারণা করলো। অসম্ভব রকমের কষ্ট পায় নেপোলিয়ন, সিদ্ধান্ত নেয় ডিভোর্সের। তাদের ডিভোর্স হয়েও যায়। কিন্তু শোনা যায়, এরপরেও নেপোলিয়ন জোসেফাইনকে ভালোবাসত কিন্তু জোসেফাইনের প্রতি তার যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল তা আর কখনো ফিরে আসে নি।
"আমার গল্প শেষ।
বল কেমন লাগলো?" এতক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে একমনে গল্প বলে গেছে আরিফ। তাই লক্ষ্য করে নি এদিকে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে নাফিজা।
চোখ খুলে ও তো অবাক। "কি হল কাঁদছ কেন তুমি? সরি। সরি।
আমার এমন গল্প বলা ঠিক হয় নি। মাফ করে দাও আমায়। আর জীবনে ও এরকম গল্প বলবো না। তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ না। "
এবার হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে নাফিজা।
"তুমি সব কিছু জানতে। অথচ আমাকে একবারও বুঝতে দাও নি। আজকে যে রুপম বাসায় ছিল তাও তুমি জানতে? এজন্যই তুমি তাড়াহুড়ো করে বাথরুমে ঢুকেছ। যাতে ও বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। তাই না?"
"হুম।
" মাথা নিচু করে উত্তর করে আরিফ।
"তাহলে আমাকে কিছু বল নি কেন?"
"কি বলবো। দোষ তো আমার। আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। অথচ টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে দিন দিন তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছি।
ঠিক মতো সময়টুকু দিতে পারি নি তোমাকে। সুযোগটা নিয়েছে রুপম। "
"আরিফ এতো বড় অন্যায়ের পর ও তুমি দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছ। "
"নিচ্ছি। "
"আরিফ তুমি এতো ভালো কেন?"
"ভালো আমরা সবাই।
তুমি ও ভালো। শোন এগুলো নিয়ে আলোচনা থাকুক। এক কাজ কর ড্রয়িং রুমে দেখো একটা ব্যাগ আছে নিয়ে এসো। আমার হঠাৎ চলে আসাতে তুমি এতোটাই ভয় পেয়েছিলে যে আমার হাতে যে একটা ব্যাগ ছিল লক্ষ্য ও কর নি। ব্যাগটা নিয়ে আসো।
তারপর কথা বলছি। "
নাফিজা উঠে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে আসে।
"এবার তুমি চোখ বন্ধ কর। " নাফিজা কথা মতো চোখ বন্ধ করে।
ব্যাগ থেকে আরিফ কদম ফুলের একটা তোরা বের করে তুলে দেয় নাফিজার হাতে।
"এবার চোখ খুলো। দেখত কি তোমার হাতে। "
চোখ খুলে নাফিজা দেখে তার হাতে কদম ফুলের একটা তোরা। ওর বিশ্বাস হতে চায় না। কদম ফুলের তোরাটা নিয়ে ছোট শিশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ও আরিফের কোলে।
"মনে পড়ে নাফিজা যেদিন তোমাকে আমি প্রথম বলেছিলাম ভালবাসি সেদিনও তোমাকে একটা কদম ফুল দিয়েছিলাম। সেই টিএসসি তে। আজ ও কান পেতে শোন আমি তোমাকে ভালোবাসি। "
নাফিজাও কান্না ভেজা কণ্ঠে আরিফের কানে কানে বলে, "আরিফ আমি ও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। আমাকে তুমি মাফ করে দিয়ো।
" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।