আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধ্যান, আতশ কাঁচ, হাতি ও পিঁয়াজ

আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী! বলল, তারা তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না! এরচে সস্তাভাবে পোস্টটার নামকরণ করা গেল না। ধ্যান হল আমাদের মত অধ্যানীদের জন্য অন্ধের হ্স্তীদর্শন। ধ্যানটা যে বিশাল কিছু, ছোটখাট একটা চলতি ফিরতি হাতি- এটুকু আমরা কোনক্রমে মেনে নিয়েছি। এবং হাতি নিজের ভিতর ধারণ করার বিষয় নয়, তাও ধরে নিয়েছি।

ধ্যান আমাদের কাছে থাম, দুধ, বককাচি, সাপ, নৌকার তলা। ধ্যানের চটুল পরিচিতিতে স্বাগতম। আতশ কাঁচ। ধ্যান হল আতশ কাঁচ। একই সূর্যের আলো পড়ছে।

একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় (ফোকাল পয়েন্ট) কাঁচটাকে যদি আমরা ধরতে পারি, তো কাগজে, শুকনো পাতায় আগুন ধরে যাবে। ছড়াবে বিপুল তাপ। যা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না। এ-ও আমার দ্বারা সম্ভব! এবং সম্ভব শুধু দুটা গ্রামার অনুসরণ করে! এবং এখনি! শুধু কাচে আসা পুরো আলোটাকে একবিন্দুতে প্রতিসরিত করতে হবে। আলোটাকে ছড়িয়ে পড়তে দেয়া যাবে না।

উচ্চতর ধ্যানে সত্য পিঁয়াজের মত। ধ্যানের বাইরে সত্যকে আমরা কংক্রিটরূপে জানি। এই হল সত্য, ইন্ট্যাক্ট, ফ্যাক্টরিমেড, সলিড অ্যান্ড ইটারনাল। আমাদের দু-একজন বাদে বাকি সবাই কিন্তু নিজের নিজের ভাবনায় অলরেডি সত্যকে হজম করে বসে আছি। এর বেশি জানতেও চাই না, অথবা ধরে নিয়েছি, ক্ষমতা নেই।

সত্য মানে হল, ঈশ্বর মিশ্বর কিস্যু নেই, বগল বাজাও, ভদকা খাও, পারলে পুরো পৃথিবীতে ব্যারেলের খোচায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কর। ধর্ম হল আফিমস্য আফিম। আর আমরা জেনেশুনে কাউকে আফিম খেতে দিতে পারিনে। সুতরাং কোন ব্যাটা ধর্ম ছুঁলে গঙ্গায় নাইয়ে হোলি ওঅটর ছিটিয়ে দু ফোঁটা জমজম শিশিতে ভরে বুদ্ধমূর্তির সামনে বসিয়ে দেয়া হবে- এই বলে রাখলুম! সত্য মানে হল, আল্লাহ এক, তিনি আরশে আসীন, তাঁর পুত্রকন্যাপোষ্য কিছু নেই, তিনি কেয়ামতের ময়দানে চেহারা দেখিয়ে দিবেন। তো, পারলে দান-দয়া কর, সাথে সাথে কালিমা-নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাত।

ব্যস, তার দেখা পাচ্ছ, আর পাচ্ছ জান্নাত। সত্য মানে হল, ভগবান সদাসর্বত্রবিরাজমান নিদ্রাতন্দ্রাহীন অপ্রতীমেয়। তাঁতে লীন হও অথবা পুনরাগমন অপ্রতিরোধ্য। সত্য মানে, মোজেস কিঙডম অভ হ্যাভেন প্রতিষ্ঠা করবেন এই পৃথিবীতে। আর আমরাই এল্লাইয়ের বেছে নেয়া জাতি।

কিঙডম অভ গড প্রতিষ্ঠিত হবে এই দুনিয়াতেই- সো, নেক্সট ইয়ার ইন জেরুজালেম। দু হাজার বছর ধরে উচ্চারিত মন্ত্র, নেক্সট ইয়ার ইন জেরুজালেম। তারপর প্রতিষ্ঠিত হল সত্য। প্রতিষ্ঠিত হল কিঙডম অভ গড, কিঙডম অভ হ্যাভেন, এল নেক্সট ইয়ার- ইন জেরুজালেম। সত্য মানে, হেইল মেরি, মাদার অভ গড... ও জিজাস ক্রাইস্ট, সেভিওর অভ হউম্যানিটি... অ্যান্ড জিজাস লাভস ইউ।

সত্য মানে হল, কাছের বা দূরের, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য, স্থূল ও সূক্ষ্ণ, জ্ঞাত ও অজ্ঞাত, ভূ-জল-অন্তরীক্ষে যত প্রাণী আছে, ভুবনের সকল সত্ত্বা সুখী হোক! ভুবনে শোক আছে, শোকের কারণ আসক্তি, আসক্তির কারণ কুসংস্কার, কুসংস্কার দূর হবে সৎকাজ দ্বারা, আর ঠিকমত সৎকাজ করলে দেহাত্মার সব অস্থিরতার আগুন নিভে যাবে। নির্বাণ পরম সুখ, নির্বাণ পরম শান্তি। সত্য মানে হল, আঠারো মোকামের মাঝে জ্বলছে একটা রূপের বাতি, এ বড় আজব কুদরতি... আমি একদিনও না দেখিলাম তারে! তো, আমাদের যার যার কাছে সত্য পূর্ণ, একক ও অসাধারণ। ফলে, ওই কংক্রিট সলিড সত্যটুকু নিয়েই আমাদের যার যার বসত। আমাদের যার যার সত্য যে সত্যি সত্য হয়ে তার আড়ালে আরো কিছু থাকতে পারে, সেটা মিসগাইডেড না হয়েও বোঝার একমাত্র উপায় মেডিটেশন।

সত্য এক হয়েও তার অরূপ রূপান্তর যে হতে পারে, তা মেডিটেশনেই প্রকটিত। মেডিটেশনে মানুষ শুধু নিজের পৈতৃক সত্যটাকে অনুভব করে না, উপলব্ধি করে না, এই জগতের অন্যান্য মানুষের পৈতৃক সত্যটাকেও অনুভব করে এবং প্রকৃতার্থে বুঝতে পারে। শুধু তাই না, সত্যের আড়ালে যে আরো সত্য আছে, আর এই দুটা স্তরের মধ্যে কোনটাই যে পূর্ণ সত্য নয় বরঙ পুরো এই আড়ালের পর্দাখোলাটার পর যা বোঝা গেল তাই সত্যের যোগফল, এটাও বুঝতে পারে। কথাটা হালকা হবে এভাবে। আপনি সত্যকে পিঁয়াজ রূপে পেলেন।

তারপর, পিঁয়াজের খোসাগুলো প্রথমে ছাড়াচ্ছেন- এটা হল, নিজের ভিতরের জড়তাগুলো দূর করা। এখন দেখতে শুরু করলাম আমরা। একটা খোসা ছাড়ানো পিঁয়াজ। এ হল সত্য। এরপর এ থেকে একটা পরত তুলে নিলে সত্যের রূপ পাল্টে যায়, কিন্তু তা সত্যই থাকে।

এভাবে ধ্যানীই পারেন সত্যের সবগুলো রূপের ভিতর বিচরণ করতে করতে আস্তে আস্তে পিঁয়াজের সমস্ত লেয়ার সরিয়ে সরিয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ লেয়ারের ভিতরে শূণ্যতা দেখতে পেতে এবং তারপর পুরো পিয়াজটাকে অনুভব করা শেষ করে বলতে- আমি সত্যের যথাসম্ভব সব রূপ জানতে পেরেছি। এমনকি শেষ ধাপে গিয়ে জেনেছি অরূপ রূপও। তবে, এপথে ঝাঁঝ তো সামান্য আছেই!  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।