-কত এটা ?
-৭০
-এতো অনেক দাম ! ৪০ টাকা রাখেন
-নিলে একদাম ৫০ টাকা, এর কমে সম্ভব না
-আচ্ছা দেন
-আরে ! ৫০ টাকার জন্য ১০০০ টাকার নোট ? ভাংতি নাই, ছোট নোট দেন
-আমার কাছেও ভাংতি নাই । ভাংতি না দিলে নিতে পারবো না আপনার জিনিস
-না নিলে না নেন
সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম । প্রচণ্ড ঢেউ, পানি পাথরে আঁচড়ে পড়ে তীরের লোকজনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে এবং অনেকে সানন্দেই ভিজছে, দেখতে ভালই লাগে । সাগর থাকবে সাগরের মত, উত্তাল, বাঁধনহারা । নদীর মত ঢেউহীন, মিনমিনে স্বভাবের সাগর আমার পছন্দ না ।
বীচের ধারেই সারি সারি দোকান, লোকজন গিজগিজ করছে সেখানে । আচ্ছা, এরা কি সাগর দেখতে আসে না কেনাকাটা করতে আসে ? আশ্চর্য ব্যাপার !!
মেয়েটির কথোপকথন শুনে পুরুষোচিত(!) আগ্রহ জাগলো মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য । দোকানের দিকে এগিয়ে গেলাম ।
-কি সমস্যা ?
-আরে দেখেন, ৫০ টাকার জিনিসের জন্য ১০০০ টাকার নোট দিছে, আমি কি ভাংতির ব্যাংক নিয়া বসছি ?
-আরে ভাই, ওনার কাছে ভাংতি থাকলেতো উনি আর এটা দিতেন না !
.
.
.
-আচ্ছা, যদি কিছু মনে না করেন, টাকাটা আমি দিয়ে দেই ?
-আরে না না, আপনি কেন দিবেন? এইযে ভাই রাখেন, আমি এটা নিব না
-আমিতো ধার দিচ্ছি, সম্প্রদান কারকে নাতো । আপনি ভাংতি করে আমাকে দিয়ে দিবেন
-আ......আচ্ছা ঠিক আছে
দোকানির পাওনা পরিশোধ করে মেয়েটির দিকে ফিরলাম ।
মাঝারি গড়নের শরীর, ধবধবে ফর্সা, পরনে অফ হোয়াইট কালারের ফতুয়ার সাথে সাদা ঘাগরা, ছোট টানা টানা চোখ, ঘন কালো চুল কোমর অবধি নেমে এসেছে । এত রেশমি মোলায়েম চুল আমি জীবনে বোধহয় দেখিনি, আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি ।
- আপনি বুঝি এখানেই থাকেন ?
মেয়েটির প্রশ্নে আমার সম্বিত ফিরে এলো । কি বেহায়ার মত তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম !
-না, তবে কাছাকাছিই থাকি
সাগরের পানি বেড়ে এখন ঢেউ গুলোর আরো বেসামাল অবস্থা । ঢেউয়ের পানি দোকানে এসে ঢুকছে ।
আমরা সরে এলাম ।
পাশাপাশি হাঁটছি, দুজনেই নীরব । আমার স্বভাবত নীরবতা আমাকে পেয়ে বসেছে, কথা খুঁজে পাচ্ছি না, মেয়েটিই নীরবতা ভাঙলো ।
-আচ্ছা এখানে আর কোন জায়গা আছে দেখার মত ?
-প্রথম এলেন এখানে ?
-হুম
-আছে, পাশেই একটা প্রজাপতি পার্ক (Butterfly Garden) আছে, আর তার পাশেই মোহনা
-আপনি কি ব্যস্ত ?
-কেন ?
-আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন ওখানে ?
এত সুন্দরী একটা মেয়ে এত আগ্রহ নিয়ে আমাকে একটা অনুরোধ করলো আর আমি তা প্রত্যাখ্যান করবো, এত বড় মহাপুরুষ এখনো হইনি !
-হ্যাঁ অবশ্যই, চলুন
মেয়েটার ভেস্পায় চড়ে আমরা রওনা দিলাম । মৃদু-মন্দ বাতাস বইছে, সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু , চরম রোমান্টিক আবহাওয়া !! আর সাথে একটা সুন্দরী মেয়ে যার রেশমি চুল গুলো মাঝে মাঝে উড়ে এসে আমার মুখে এসে পড়ছে ।
এযে মেঘ না চাইতেই তুফান !!
ব্যস্ত রাস্তা, রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দোকান, যার বেশির ভাগ সিডি ডিভিডি তে ঠাসা, খদ্দেরও প্রচুর । বোঝাই যাচ্ছে, এখানকার দোকানিদের পোয়াবারো অবস্থা ।
বাজার পেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর হটাত মেয়েটি হটাত চিতকার করে উঠলো । আরে, আবার কি হল ? আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, মেয়েটা কি চিr পটাং হয়ে গেল নাকি ?
বাঁচলাম, মেয়েটা এখনো সিটেই আছে !! উত্তেজনার কারণ জিগ্যেস করতেই মেয়েটা হাত দিয়ে ইশারা করলো । একটা বাগান, খোলা মাঠের একপাশে ।
এত বড় নয়, তবে মালিক যে এটাকে তার মনের মাধুরী মিশিয়ে বানিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহই নেই । অন্তত ১৫-২০ রকমের ফুল, সারে সারে সাজানো, রঙের খেলা দেখছি যেন । আমি নিজেই তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ।
-একটা ফুল এনে দিতে পারবেন ?
মেয়েটার কথায় তন্ময়তা ভাংলো । মেয়ে বলে কি ? কার না কার সাধের বাগান ? ধরা খেলে প্রানপ্রিয় প্রানটা ধোলাই খেয়ে হারাতে হবে !! কিন্তু একটা মেয়ের কথা এত সহজে কি ফেলা যায় ? নিজেকে বীর প্রমান করার জন্য বললাম
-কেন নয় ?
এগিয়ে গেলাম, আশেপাশে কেউ নেই তো ? হুম, উত্তম সময় ।
বাগানে গিয়ে এত ফুলের ভিড়ে কোনটা নেব ভাবছি, এমন সময় হটাৎ......
-কে?, কে বাগানে ?
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত্রি হয় !! হাতে পোষা কুকুর নিয়ে জাঁদরেল চেহারার একটা লোক তেডে আসছে । এ আবার কোত্থেকে উদয় হল ? তার মতিগতি দেখে তো মনে হচ্ছে না, অনুরোধে কাজ হবে । দোটানায় পড়ে গেলাম । মেয়েটির ইচ্ছা পূরণ করবো ? সেই ক্ষেত্রে হয়তো মেয়েটাকে সহই লোকটা অপমান করবে ? নাকি ভালোয় ভালোয় কেটে পড়বো ? সেই ক্ষেত্রে মেয়েটি হয়তো মন খারাপ করবে
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘুম ভেঙ্গে গেল
পুনশ্চঃ অনেকে বলে, স্বপ্ন সাদাকালো । কিন্তু আমার দেখা এই স্বপ্নটি যে রঙিন, সেই ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।