জীবন বদলায়, রূপকথা বদলায় না...... .....স্বপ্নীল (পর্ব - ১)
.....স্বপ্নীল (পর্ব - ২)
মাস ছ’য়েক পরঃ
- Happy BirthDay!!!
- থ্যাঙ্কস।
- এবার বলুনতো ম্যাম, আপনার কি বার্থডে গিফট চাই? হু?
- যা চাইবো, তাই দিবে?
- চেষ্টা করবো। বলো?
- তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
- গিফট যদি পছন্দ না হয়???
- মানে? এখানে পছন্দ-অপছন্দের কথা আসছে কোথথেকে স্বপ্নীল? যার সাথে আমি এতোদিন ধরে কথা বলছি তাকে আমি দেখতে চাইতে পারি না? আর কতদিন নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখবে?
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। ডান।
তা কোথায় দেখা করবে?
- কাল সকাল দশটায়, কার্জনে।
- ওক্কে।
- আচ্ছা এখন রাখি। কল ওয়েটিং এ আছে। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।
বাই।
- বাই।
আবীরের কল ওয়েটিং দেখে রিসিভ করে রিমি।
- হ্যাল্লো।
- Happy BirthDay!!!
- থ্যাঙ্কু...
- কল ওয়েটিং এ ছিল।
স্বপ্নীলের সাথে কথা হচ্ছিল বুঝি?
- হুমম।
- ও। লাস্ট ফাইভ ইয়ারসে এইবার-ই ফার্স্ট আমার আগে তোকে কেউ উইশ করলো। না?
- এজন্য মন খারাপ হয়েছে নাকি আমার বন্ধুটার? এমন সিম্পল একটা ব্যাপার নিয়ে কেউ মন খারাপ করে? আমি করেছি কখনো?
- তুই চাইতিস-ই সুচি সবার আগে আমাকে উইশ করুক। তাই মন খারাপের প্রশ্ন উঠেনি।
- কেন? তুই চাস না?
- বাদ দে।
- ওক্কে। আচ্ছা কালকে সময় হবে তোর?
- হুমম। কেন? ট্রিট দিবি?
- দেবো। তবে তার আগে আরেকটা কাজ আছে।
স্বপ্নীল আসবে কাল। ওর সাথে দেখা করতে যাবো। এন্ড ইউ হ্যাভ টু গো উইদ মি। বুঝসিস?
- আমি কেন?
- আমি বলছি তাই। কালকে দশটার সময় আমার হলের সামনে চলে আসবি।
আমি ওয়েট করবো।
- ওক্কে।
---------------------------------------------------------------------------------
আবীরের কল পেয়ে রিমি হল থেকে বেরিয়ে আসে।
- কি হলো? এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছিস কেন?
- অনেক সুন্দর লাগছে আজ তোকে।
- অন্যদিন লাগেনা বুঝি???(দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় রিমির ঠোঁটে)
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে রিমি একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছে।
আবীর দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু রিমির কোন কথাই ওর কানে ঢুকছে না। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে ও রিমির দিকে। রিমিকে কেন জানি আজ অদ্ভুতরকম সুন্দর দেখাচ্ছে।
দোয়েল চত্ত্বর পর্যন্ত আসার পর আবীরের পা আর যেন চলতে চায় না। হঠাত করে কিছু একটা হারানোর ভয় ওর মনে-প্রানে জেঁকে বসে।
দাঁড়িয়ে যায় ও, দেখতে পায় রিমি এগিয়ে যাচ্ছে।
---------------------------------------------------------------------------------
রাস্তা পার হওয়ার সময় আবীরকে পাশে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় রিমি। আবীর আবার এক্সিডেন্ট করে বসলো নাতো? – এই ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতেই পেছন থেকে হঠাত করে একটা গাড়ি এসে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দেয় ওকে।
---------------------------------------------------------------------------------
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না আবীর। রিমির রক্তাক্ত শরীরটা দেখে ছুটে যায় ও।
সবাই মিলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায় রিমিকে। ছুটোছুটি করে রিমির প্রোপার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করে ও। এর মধ্যেই ক্যাম্পাসের সবার খবর হয়ে যায়। খবর পেয়ে রিমির বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুরা সবাই ছুটে আসে। প্রায় ঘন্টা দশেক পর জ্ঞান ফিরে আসে রিমির।
এতোক্ষণ যে হারানোর ভয়টা আবীরকে জাপটে ধরে ছিল, তা ওর মন থেকে একটু একটু করে যেন কেটে যায়।
---------------------------------------------------------------------------------
দিন ছ’য়েক পরঃ
চোখের নিচে কালির আস্তর পড়ে গেছে। গত ছয়দিনে কম ধকল যায়নি রিমি উপর দিয়ে। এখন প্রায় সুস্থই বলা চলে ওকে। আবীর বলেছে আজ-কালকের মধ্যেই ও্কে রিলিজ দিয়ে দিবে।
সকাল দশটা বাজে। একটু আগে ঘুম ভেঙ্গেছে রিমির। চোখ মেলে তাকাতেই দেখে পাশে আবীর বসে আছে।
- কখন এলি?
- এইতো মাত্র। কেমন লাগছে এখন?
- আগের চেয়ে ভালো।
- গুড।
- আবীর।
- হুমম।
- স্বপ্নীল কি এসেছিল? কিংবা কোন ফোন বা মেসেজ?
- না। আমি নিজেও অনেকবার ফোনে ট্রাই করেছি।
ফোন বন্ধ।
- ও। (চুপ করে যায় রিমি)
- রিমি। তোকে না বলে.....
(নীরব প্রশ্ন নিয়ে তাকায় রিমি)
- আমি তোর একটা চিঠি পড়েছি। আজ সকালেই এসেছে চিঠিটা।
স্বপ্নীলের।
রিমি চুপ করে থাকে। চিঠিটা ওর হাতে দেয় আবীর।
এখন নিশ্চয়ই অনেকটা ভালো আছো, না? অবশ্য আবীর যেভাবে টেইক কেয়ার করছে, তাতে সুস্থ না হয়ে উপায়ও নেই। সত্যিই তুমি অনেক লাকি রিমি।
ভাবছো এতোকিছু জানলাম কি করে? কারো কাছথেকে শুনে নয়, নিজের চোখে দেখেই বলছি। সেদিনের সেই একসিডেন্টের মুহুর্ত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিটা মুহুর্ত আবীরকে আমি নোটিস করেছি। এতো ভালো যে কেউ কাউকে বাসতে পারে ওকে না দেখলে সেটা কখনোই আমার জানা হতোনা। প্রতিটা মুহুর্তে ও যেভাবে তোমাকে আগলে রেখেছে, ওর জায়গায় আমি থাকলে সেটা পারতাম কিনা জানি না। ওর সামনে দাঁড়িয়ে তাই নিজের ভালোবাসার কথা বলার দুঃসাহস আর হয়ে ওঠেনি আমার।
তাছাড়া, তুমি স্বীকার কর বা না কর, আমি তো জানি যে তুমিও আবীরকে ভালোবাসো। তুমি খেয়াল করেছো কিনা জানি না, তবে আমি খেয়াল করেছি, এই পর্যন্ত তোমার সাথে আমার যত কথা হয়েছে তার বেশিরভাগই ছিল আবীরকে নিয়ে। যে কোন প্রসঙ্গেই কথা হোক না কেন, শেষটা হতো ঠিক আবীরকে নিয়ে। এমনকি আমার সাথে যেদিন দেখা করতে এসেছিলে সেদিনও তুমি আবীরকে সাথে নিয়ে এসেছিলে। তোমার প্রতিটা কথায়-কাজে আবীর জড়িয়ে আছে।
তাহলে শুধুমাত্র ইগোর কারনে কেন নিজেও কষ্ট পাচ্ছো, ওকেও কষ্ট দিচ্ছো? আবীর তোমাকে ভীষন ভালোবাসে। ওকে আর ফিরিয়ে দিয়ো না প্লিজ।
ভালো থেকো তোমরা। আমার জন্য ভেবো না। ধরে নিও, স্বপ্নীল স্বপ্ন হয়ে তোমার জীবনে এসেছিল, স্বপ্ন হয়েই না হয় চলে গেছে।
আবীর এসে ওর হাতটা ধরে।
- আমাকে জানতেও দিলি না? কেন, রিমি? এটলিস্ট বলতে তো পারতিস।
- বলিনি। ভয়ে। যদি হারিয়ে ফেলি।
- হারানো এতো সহজ? এতো কষ্ট করে যাকে পেলাম, তাকে ফেলে হারিয়ে যাবো? বললেই হলো?
- হারাবি না?
- মাথা খারাপ!!! আমাকে কি পাগলা কুত্তায় কামড়েছে?
- আবার ফাজলামি!!!
হয়তো এদৃশ্যও স্বপ্নীলের অগোচরে ছিল না......
পরিশেষে আমার অসম্ভব প্রিয় একটা গান ডেডিকেট করলাম রিমি, আবীর, স্বপ্নীল, আর স্বপ্নীলের প্রতিটা পর্বে যারা ওদের সাথে ছিল তাদের প্রতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।