আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

.....স্বপ্নীল (পর্ব - ২)

জীবন বদলায়, রূপকথা বদলায় না...... .....স্বপ্নীল (পর্ব - ১) অন্ধকার ঘরে চুপচাপ বসে আছে রিমি। রুমের অন্য মেয়েরা আপাতত নেই। থাকলেই এই মুহুর্তে হাজার প্রশ্নের জবাব দিতে হত। বাইরে থেকে আসার পর অনেকক্ষন কেঁদেছে ও। চোখ-মুখ ফুলে আছে।

ফোনটা বেজে উঠতেই আবীর মনে করে রিমি দৌড়ে এসে ফোনটা ধরে। মোবাইলটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে স্বপ্নীলের নামটা ভেসে ওঠে। নামটা দেখে আর ফোন ধরতে ইচ্ছে হয়না ওর। কিন্তু ছেলেটার কথার মধ্যে এমন কিছু আছে যে ইচ্ছে না থাকলেও ও এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই ধরবেনা ধরবেনা করেও শেষ পর্যন্ত ফোনটা রিসিভ করে ও।

- হ্যালো। - কেমন আছেন? - ভালো। আপনি? - নট ব্যাড। - হুমম। - মন খারাপ, না? - কি করে বুঝলেন? - ভয়েস শুনে।

মনে হচ্ছে অনেক কান্না-কাটিও হয়েছে। (কি বলবে ভেবে পায়না রিমি) - কি হলো? বলবেননা কি হয়েছে? - এক ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। - ফ্রেন্ড!!! তাতেই এতো কান্না-কাটি?? তা কে সেই ফ্রেন্ড জানতে পারি? - আপনি তো আমার সম্পর্কে সব কিছুই জানেন। এটা জানেন না? - সব জানি কিনা জানি না। তবে অনেক কিছুই জানি।

তাছাড়া মনের কথাগুলো তো যার তার পক্ষে জানা সম্ভব না। তাই না? - হুমম। ঠিক বলেছেন। মনের কথা যাকে-তাকে বলা ঠিক না। তাহলে আপনাকে কেন বলবো? - আর কিছু না হোক এট লিস্ট বন্ধু হিসেবে তো বলতে পারেন।

গত একমাসে আমি কি বন্ধু হওয়ার এতোটুকু যোগ্যতা অর্জন করিনি? (রিমি ভাবে স্বপ্নীলের সাথে কি সত্যিই ওর মনের না বলা কথাগুলো শেয়ার করা যায়। তাহলে তো হয়তো ওর কষ্টগুলোর ওজন কিছুটা হলেও কমবে। ) - মাথাটা আজ ভীষন ধরেছে। আজ থাক, কাল না হয় বলবো। - ওক্কে।

টেক কেয়ার। বাই। - বাই। সকালে ক্লাস আছে তাই ফোনটা রেখে শুয়ে পড়ে রিমি। --------------------------------------------------------------------------------- ক্লাস শেষ করে বের হতেই দেখে আবীর দাঁড়িয়ে আছে।

রিমিকে দেখে এগিয়ে যায় ও। - রাগ কমেছে? - রাগ ভাঙ্গানোর জন্য কিছু করেছো তুমি? - বাহরে এতো সাধের সকালের ঘুমটা ফালায় রেখে দাঁড়িয়ে আছি কতক্ষন ধরে…তাও বলছিস কিছু করিনি?? - তুই না একটা যা-তা। (রাগতে গিয়েও হেসে ফেলে রিমি) - ফ্রি আছিস আজকে? - কেন? - আম্মু বলছিল যাইতে। কি জানি কথা আছে। টপ সিক্রেট।

- তাই? আজ তো পারবো নারে। ল্যাব আছে। আন্টিকে বলিস কাল যাবো। - ওক্কে। এক্ষুনি যাবি ল্যাবে? - হুমম।

যাই। - ওককে। বাই। --------------------------------------------------------------------------------- ল্যাব, টিউশনি সব শেষ করে হলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় রিমির। সারাদিনের সব ক্লান্তি যেন জেঁকে ধরে ওকে।

কাল শুক্রবার এ কথাটা মনে আসতেই মনটা ভালো হয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ায় ও। প্রায় অনেকদিন পরই ও ক্যান্টিনে যায়। বিভিন্ন কারনে গত কয়দিন বলতে গেলে ও রুম থেকে বেরই হয়নি। ক্যান্টিন থেকে কিছু খাবার কিনে নিয়ে রুমে ফিরে আসে রিমি।

তখনি স্বপ্নীলের ফোন আসে। - হ্যালো। - কি খবর? মন ভালো আজকে? - হুমম। আপনার? - আমি ভালোই আছি। - আজ এতো তাড়াতাড়ি ফোন করলেন যে? - হুমম...তর সইছিল না আর।

আজ কিছু বলার কথা ছিল আমাকে। এই প্রথম আপনি নিজে থেকে আমাকে কিছু বলতে চেয়েছেন। ভুলে গেছেন? - নাহ ভুলিনি। সকালে ক্লাস শেষে বের হয়েই দেখি আবীর কাল যে ফ্রেন্ডের উপর রাগ করেছিলাম দাঁড়িয়ে আছে। এমনিতেই ওর উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি না।

তার উপর যদি দেখি সে তার অনেক সাধের ঘুম ফেলে রেখে আমাকে স্যরি বলার জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে কি রাগ করে থাকা যায় বলুন? - অনেক ভালো ফ্রেন্ড, না? - হুমম। আবীর আর আমি কলেজ লাইফ থেকেই ফ্রেন্ড। লেখাপড়ায় ভালো, স্মার্ট এই ছেলেটার প্রতি কলেজের বেশিরভাগ মেয়েই ক্রাশড ছিল। শুধু ওর সম্পর্কে ইনফো পাওয়ার জন্য মেয়েরা আমার কাছে এসে বসে থাকতো। আমিও মজা করতাম।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ও একদিন আমাকেই প্রপোজ করে বসলো। সত্যি বলতে ওর সম্পর্কে আমি কখনোই ঐভাবে ভাবিনি, আর সেটাই ওকে বুঝিয়ে বললাম। বুঝতে পেরেছিলাম ও সেদিন অনেক হার্ট হয়েছিল, কিন্তু আমার এগেইন্সটে কোন কম্পলেইনই করেনি। - তারপর? - তারপর এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হল। ও ডি.এম.সি.তে টিকলো আর আমি ডি.উ.তে।

একই ক্যাম্পাস হওয়া সত্ত্বেও তেমন দেখা হত না। কিন্তু দূরে যাওয়ার কারনে বন্ধুত্বটা আরো বেড়ে গেল। - হুমম। - ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর বাবা রিটায়ার্ড করে গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। আমি হলে গিয়ে উঠলাম।

আবীরই হয়ে উঠলো আমার অলিখিত গার্ডিয়ান। প্রতিটাক্ষেত্রে ওর উপর নির্ভর করতে করতে একসময় বুঝতে পারলাম আমি নিজেই ওর প্রতি উইক হয়ে পড়েছি। - আবীরকে বলেছেন সে কথা? - অনেক ভেবে-চিন্তে যখন সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে জানাবো, ঠিক তখনই ও এসে সুচির কথা বললো। - কিন্তু ও তো আপনাকে... - বাহরে, আমিই তো ওকে রিফিউজ করেছিলাম। ও কি সারাজীবন অপেক্ষা করবে নাকি আমার জন্য? - তবুও বলে দেখতে পারতেন।

- নাহ। তাতে করে ও কষ্ট পেতো। জেনেশুনে একবার কষ্ট দিয়েছি, বারবার যে দিতে পারি না। যাইহোক, একথাগুলো আমি কখনো কাউকে বলিনি। আজ আপনাকে বললাম।

কেন বললাম তাও জানি না। তবে বলতে পেরে অনেক হাল্কা লাগছে। - দ্যাটস মাই প্লিজার। - আচ্ছা, এখন রাখি। বাই।

- ভালো থাকবেন। বাই। .....স্বপ্নীল (শেষ পর্ব ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।