আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘বুয়েটে একটা ট্র্যাডিশন আছে’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সংকট কাটেনি। অথচ সমাধানের উদ্যোগ থেমে আছে। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না। তাহলে বুয়েট পরিস্থিতি কি আরো জটিলতর হয়ে উঠছে। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, সমাধানের উদ্যোগ নিলেও গণপদত্যাগের মত কর্মসূচি দিয়ে পুরো উদ্যোগকে জটিল করে ফেলা হয়েছে।

অন্য দিকে শিক্ষকরা বলছেন, মাসের পর মাস সবার কাছে তারা সংকট নিরসনের জন্যে ধর্ণা দিয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বুয়েট আর দু চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত নয়। আর নয় বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের বাইরে বুয়েটকে রেখেছিলেন। এখন কি কেউ তাহলে ‘মোর ক্যাথলিক দেন পোপ’ হয়ে উঠছেন? সরকারের শীর্ষ মহল কি ভাবছেন সেটাই বড় নয়। বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

তারা ১১ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বুয়েটে বসে কেউ যদি সরকার সমর্থক হতে চান তাহলে তারও যোগ্যতা প্রয়োজন। অযোগ্য হলে তা সরকারের দায় বাড়ায়। শিক্ষকদের আন্দোলনে যদি হুমকি দেয়া হয় প্রয়োজনে বাইরে থেকে শিক্ষক আনা হবে তাহলে প্রশ্ন ওঠে মান্যবর, বাংলাদেশে বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠান আর কয়টি আছে? আসলে ‘বুয়েটের একটা ট্র্যাডিশন আছে। ’ এ মন্তব্য করলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক, ডিপার্টমেন্ট অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম।

তিনি বলেন, এটা ভুলে গেলে বুয়েটের সমস্যা সংকট হয়ে ওঠে। বুয়েটের সমস্যা মোটেও সাম্প্রতিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে রিয়েল টাইম নিউজ ডটকম-এর সাথে সাক্ষাতকারে সাবেক এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মনে করেন, যে কোনো মূল্যে বুয়েটে গড়ে ওঠা নৈতিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে না পারলে বুয়েট আর বুয়েট থাকবে না। প্রশ্ন: বুয়েট একদিনে গড়ে ওঠেনি, খুব সহজে আরেকটি বুয়েট গড়ে তোলা কঠিন। তো বুয়েটে দীর্ঘদিন অচলাবস্থা চললেও কারো কোনো টনক নড়ছে না কেনো? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: অস্থিরতার শুরু দুই বছর আগে থেকে।

নতুন ভিসি যখন আসলেন, উনি কিছু কার্যকলাপ করলেন, যার ফলে বুয়েটের সর্বস্তরের শিক্ষকদের মনে আশঙ্কা ও অনাস্থা সৃষ্টি হল। যারপর থেকে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, শিক্ষক সমিতি, সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাকে বলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ভিসির ক্ষমতা অনেক, অনেক কিছুই উনি করতে পারেন। এই কমিটি গঠন থেকে শুরু করে হেড অব ডিপার্টমেন্ট বা ডিরেক্টর নিয়োগ বা যে কোনো কিছুই করতে ভিসির হাতে সর্ব্বোত্তম ক্ষমতা। এখানে কোনো নিয়ম কানুন লিখিত কিছু নেই।

যেহেতু বুয়েটে ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অধ্যাদেশে চলছে, ১৯৭৩ সালে যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অধ্যাদেশ করা হয় কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে এর বাইরে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু হয়ত ভেবেছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দলাদলি যে ঘটনাগুলো ঘটবে তার বাইরে টেকনিক্যাল বলে এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রাখা প্রয়োজন। বুয়েট আসলে চলে ‘ট্র্যাডিশন, কনভেনশন এবং ট্রাস্ট অর্থাৎ সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে যিনি থাকেন তাকে ট্রাস্ট করে চলা। কিন্তু নানা রকমের কর্মকাণ্ডে এগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে একটা ক্ষোভ দানা বাঁধছিল।

বহুবার, বহুভাবে বহু উদ্যাগ নেয়া হয়েছে, আইইবি বা কয়েকবার শিক্ষক সমিতি থেকে ভিসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। নানাভাবে তাকে ট্র্যাডিশনের বাইরে কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এরপর যখন সব ধরণের আলোচনা যখন ব্যর্থ হল, দেখা গেল কোনো রকম পরিবর্তন হচ্ছে না। এবং সিরিয়াস কিছু অনিয়ম ধরা পড়ল। তখন শিক্ষরা ভাবতে বাধ্য হলেন, ভিসি ও প্রো-ভিসিকে রেখে বুয়েটের সমাধান আর হবে না।

কিছু অনিয়ম বুয়েটের যে আস্থার শক্তি যেমন মেধা ভিত্তিক নিয়োগ, পরীক্ষা থেকে শুরু করে রেজিষ্ট্রেশন অর্থাৎ এসব বিষয়ে ন্যায়ের পথে চলা ও ভর্তি পরীক্ষা এসবের মধ্যে অন্তত দুটো জায়গায় বড় ধরনের ফাটলের চিহ্ন আমরা দেখতে পাই। এসব পর্যায়ে আরো সিরিয়াস ধরণের ত্রুটি ধরা পড়ে এবং তা পরিবর্তন বা শুধরানোর কথা বলা হলেও কোনো পাত্তা না পাওয়ায় দাবিটা গিয়ে দাঁড়ায় ভিসি ও প্রোভিসিকে না সরালে পঞ্চাশ বছরের বুয়েটের ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে, বুয়েট আর বুয়েট থাকবে না। আমাদেরকে অনেক সময় শুনতে হয় ভিসি বা প্রোভিসি এমন কি করেছেন, এর চাইতে তিন চারগুণ বেশি পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হচ্ছে, ওসব তুলনা দিয়ে বুয়েটে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে, বা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে অধ:পতন হয়েছে তার উদাহরণ দিয়ে যদি বলা হয় বুয়েটেও অধ:পতন হবে তাহলে কিছু করার নেই। আমাদের আইডেন্টিটি হচ্ছে বুয়েটের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা। বুয়েটে সবাই পারফেক্ট বা ধোয়া তুলসী পাতা তা বলছি না।

তবে এবারের পতন একেবারে দ্রুত ও দৃশ্যমান ছিল। সেটাতে সবাই আশঙ্কিত হয়ে পড়ায় আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন সিংহভাগ শিক্ষকের এই ভিসি ও প্রোভিসির ওপর আস্থা নেই। এই অনাস্থা একদিনে নয় দীর্ঘদিনে তৈরি হয়েছে। বুয়েটের গ্রাউন্ড লেভেলে যে ফিলিংস সেটা বাইরে থেকে বোঝা একটু মুস্কিল।

অনেকের কাছে অনেক অপরাধ একেবারে নগণ্য বলে মনে হবে। কিন্তু যারা বুয়েটের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত তাদের কাছে এসব একেবারে ভীষণ রকম আশঙ্কাজনক। ভিসি ও প্রোভিসিকে রেখে বুয়েটের সমস্যার সমাধান হবে না। এছাড়া নানা রকমের বক্তব্য, নানা কথোপকথন, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দিয়ে বুয়েট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জঘন্য ভাষায় এমননি ছাত্রদের দিয়ে থ্রেট করানো হয়েছে, এসব কিছুই এটা হার্ড এন্ড পোলারাইজেশন হয়ে গেছে যে, আলোচনা করেই যেটা অনেক আগেই সমাধান সম্ভব ছিল, সেখান থেকে অনেক দূরে পরিস্থিতি চলে এসেছে এখন। এখন এটা খুব কঠিন, সংকটের সমাধান করা।

প্রশ্ন: সব সরকারই চায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের সমর্থক থাক, কিন্তু তাতেতো শুধু সমর্থক হলে চলেনা, যোগ্যতাও লাগে, আর তা না থাকলে আখেরে সরকারের জন্যে তা দায় হয়ে পড়ে না? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: রাজনৈতিক পদায়নে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রত্যেকটা জায়গায় কিছু ঐতিহ্যের ব্যাপার রয়েছে। আমাদের যেমন সিনিয়রিটি একটা বিরাট ঐতিহ্য। আমাদের হেড ডিনরা রোটেশনে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে হয়। যে কোনো জায়গায় নমিনেশনের ব্যাপারেও তাই।

যেমন অনেক বিশ্ববিদ্যালে প্রোভিসি কিন্তু তুলনামূলকভাবে অনেক ইয়াং পিপলকে দেয়া হয়েছে। সেখানে কিন্তু সিনিয়রিটি অনেক আগেই চলে গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। বুয়েটে এখন পর্যন্ত যত ভাইস চ্যান্সেলর এমন কি যিনি এখন আছেন তাকে যখন নিয়োগ দেয়া হয় আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। উনি এ্যাকাডেমিক্যালি যোগ্য, প্রশাসনিকভাবে উনি চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, অবিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন।

যেটা আগে বুয়েটে কোনো ভিসি করেননি। সব সময় সব ক্ষেত্রেই সব সরকারই এমন একজন ভিসি নিয়োগ করেন যার সাথে সরকার কমফোরটেবল। তাদের দলীয় লোক হতে হবে কোনো কথা নেই। কিন্তু একই ঘরাণার, একই ধ্যান ধারণার, একটা কনফিডেন্স থাকে সেরকম লোককেই কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সময় কিন্তু এটা দেখা হয়।

তাতে আমাদের আপত্তি থাকে না কেননা এ্যাজ লং এ্যাজ সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত করে দেয়া। বর্তমান ভিসির একাডেমিক ক্যারিয়ার ভাল। আইইবির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিছুটা টেকনিক্যাল। বুয়েটে কিন্তু খুব কম শিক্ষকই আছেন ওপেনলি রাজনীতিক।

আমাদের অধ্যাদেশেও সে সুযোগ খুব একটা নেই। কিন্তু বর্তমান ভিসি দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তারপরও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না, সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদ হয়নি। যদিও প্রোভিসি নিয়োগের সময় প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল সমগ্র বুয়েটে। কারণ ৫৮ জন শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে সিনিয়রিটির ট্র্যাডিশন ভেঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বুয়েটকে এক করে দেখা হয়েছে।

সরকার যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা উচিত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাডিশনগুলো কি, নিয়ম কানুন কি, কিভাবে চলে ইত্যাদি। যেমন বুয়েট শিক্ষক সমিতিতে কোনো সময় রাজনৈতিক নির্বাচন হয়নি। শিক্ষক সমিতির প্রেসিডেন্ট খুঁজে পাওয়া মুস্কিল হয়। বহু বহু নজির আছে যেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

শিক্ষকরা যখন ভোট দেয় রাজনৈতিক পছন্দ থাকতেই পারে কিন্তু তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। কার্যকলাপে, আচার আচরণে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বুয়েটের খুব কম শিক্ষকেরই থাকতে পারে। প্রশ্ন: বুয়েটের শিক্ষকরা গণপদত্যাগ করলে বাইরে থেকে শিক্ষক আনার কথা বলেছেন ভিসি। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দেখি কিভাবে বুয়েট চালানো যায়, তো পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: বাইরে থেকে শিক্ষক আনার কথা বলেছেন ভিসি। প্রথমে ২৫ জন হেড ডিনের পদত্যাগের সময় এ ধরণের কথা বলা হয়।

এটা খুব লজ্জাজনক ও দু:খজনক। ভিসি এখানে আইনের কথা বলছেন, যে সঠিক হয়নি পদত্যাগটা। এটাতো প্রতীকি, গণপদত্যাগ শিক্ষকদের প্রতিবাদে অনাস্থার ভাষা। এটা সত্যিকারভাবে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। কখনো করা হয়নি।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে মৌখিকভাবে গণপদত্যাগ করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বহু গণপদত্যাগের নজির রয়েছে। গণপদত্যাগে এত আশঙ্কিত বা থ্রেট ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা কিন্তু এর আগে ক্লাস বর্জনের মত অপছন্দের কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আহবানে শিক্ষক সমিতির সদস্যরা তার সাথে দেখা করেছেন।

সেখানে তাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। যান আপনারা ক্লাস শুরু করেন। সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ওনাদের সমাধানের চিন্তা ছিল কোনো রকমে পদত্যাগের চিন্তা বাদ দিয়ে সমাধান করা। সেখানেও পৌঁছাতেও তারা ভুল করেছেন।

গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পর আমরা সব শিক্ষক কাজে যোগদান করে ক্লাস নিতে শুরু করেছি। ৯ জুন শিক্ষক সমিতির পরবর্তী মিটিংএ সরকারকে আরো সময় দিয়ে ৩০ জুনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়। এছাড়া বহুভাবে বিভিন্ন স্থানে সরকারকে জানানো হয়েছে, প্লিজ কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন। সেই সময় শিক্ষক সমিতি একটা ‘কম্প্রোমাইজ সলিউশন অনঅফিশিয়ালি’ তৈরি করেছিল। সেটাও সরকারের উচ্চ মহলে অনেকে জানে।

কিন্তু কোনো রকমের কোনো এ্যাকশন নেয়া হয়নি। তারপরে শিক্ষকরা দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি করলেন এক সপ্তাহ। অর্থাৎ মে থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় দিয়ে বলে কয়ে কোনো কাজ হয়নি। টেম্পো অব দি পকেট একদিনে তৈরি হয়নি। শিক্ষক সমিতির সাথে কোন রকম কোন কমিউনিকেশন করা হয়নি।

সরকারের তরফ থেকে কেউ বলেনি যে ঠিক আছে ধীরে চলুন বা এখনি ক্লাস বর্জনে যাবেন না। কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। আলটিমেটলি শিক্ষকরা অস্থির হয়েছে। দূর্ভাগ্যবশ:ত বাংলাদেশের কালচারে এমন দাঁড়িয়ে গেছে ভদ্রলোকের মত কিছু বললে কেউ শোনে না। ভাবটা এমন যে চলছে, দেখা যাক কত দূর যায় আরকি।

এটা সবার জন্যে দু:খজনক। প্রশ্ন: বুয়েট এতদিন প্রোভিসি ছাড়া চললেও এখন কেন তা প্রয়োজন হচ্ছে? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার বুয়েটে প্রোভিসি পদটি তৈরি করে। প্রোভিসির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় যখন বড় হয়ে যায় তখন ভিসির পক্ষে সব প্রশাসনিক কাজ চালানো মুস্কিল হয়ে পড়ে। যে কারণে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনের পরিবর্তে দুজন প্রোভিসি করা হয়েছে। প্রোভিসি এ্যাডমিন ও প্রোভিসি এ্যাকাডেমিক।

এর মধ্যে কিছুটা আবার দলাদলি, রাজনীতির ব্যাপার আছে, হয়ত পদ বাড়িয়ে ব্যাকআপ করা। দেশের বাইরেও বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট আছে আবার ভাইস প্রেসিডেন্ট আছে। তবে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজারের ওপরে। বুয়েটে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার। আর মাস্টার্স ধরলে ৮/১০ হাজার হবে।

মূলত ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ব্যবস্থাপনাই বুয়েটের প্রশাসন। আমাদের এক প্রাক্তন ভিসি বলেছেন, উনিতো সকালে ক্লাসও নিতেন। মোটামুটি ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লাস শেষ করে পত্রিকা পড়ার সময় পেতেন, যেটি শিক্ষক হিসেবে উনি পাননি। এটাই হচ্ছে বুয়েটের পরিবেশ। ছোট একটা বিশ্ববিদ্যালয়, এত কম সংখ্যক ছাত্র।

এখানে প্রোভিসির একেবারে প্রয়োজন নেই। ২০০৪ সালে প্রোভিসির পদ সৃষ্টি হলেও এর প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২০০৯ সালে। বর্তমান সরকারের আমলে। প্রশ্ন: আপনাদের আন্দোলনে বিরোধীদল বা মৌলবাদীদের কোনো ইন্ধন আছে কিনা? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: গণপদত্যাগের যে স্বাক্ষর হয়েছে তাতে ৪১৭ জন এ্যাকটিভ শিক্ষকের মধ্যে সেদিন শনিবার পর্যন্ত ৩৫৬ জন স্বাক্ষর করেছেন। ৪৭০ জনের শিক্ষকের মধ্যে দশজনের মত ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কাজে ছিলেন।

তারাও স্বাক্ষর করবেন। তবে স্বাক্ষরের সর্বশেষ প্রকৃত সংখ্যা জানিনা, তবে এটা ৩৬০ হবে। এরপর কি রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির কোনো যৌক্তিকতা থাকে। বলা হচ্ছে বুয়েটের শিক্ষকরা ৫০ ভাগ ৫০ ভাগে বিভক্ত। এটা প্রপাগাণ্ডা।

গণপদত্যাগের একটা উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবাইকে দেখানো, যেমন আমাদের হেড ডিন, টোটাল একাডেমির ডিরেক্টর আছে ২৫ জন। এই ২৫ জনের মধ্যে সবাই কি জামায়াত, বিএনপি বা বিরোধীদলের লোক। এটা একটা মিথ্যা প্রচারণা। আন্দোলনকে অন্যখাতে ডাইভার্ট করার অপচেষ্টা মাত্র। শিক্ষকদের মধ্যে যারা দাবি করছেন, তারা যৌক্তিক দাবি করছেন।

কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো রাগ অভিমান করার কোনো সুযোগ আমি দেখিনা। প্রশাসনে যারা থাকবেন তারা কিন্তু নৈর্বেক্তিকভাবে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এখানে রাগ অভিমান করা তাদের শোভা পায় না। সরকারের সাথে বুয়েটের কোনো যুদ্ধ নেই। আমরা ভিসি ও প্রোভিসি অপসারণের ব্যাপারটাতে পরে গিয়েছি।

তাদের আহবান করেছি পদত্যাগ করেন। যখন ওনারা পদত্যাগ করছেন না। ওনারা বলছেন ২৫ জন হেড ডিনের পদত্যাগ প্রতীকী অর্থাৎ একটা আইনী মারপ্যাঁচের কথা বলছেন, তখন আমরা অপসারণের কথা বলছি। প্রশ্ন: সংকট সমাধানের শেষ উপায় কি? অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম: যেহেতু সরকার তাদের পদায়ন দিয়েছেন, ভিসি চলে গেলে প্রোভিসি এই কারণ দেখিয়েই পদত্যাগ করতে পারেন। ভিসি অন্য জায়গায় নিয়োগ পেলে প্রোভিসি বলতেই পারেন এখানে নতুন নেতৃত্ব আসা উচিত।

সুতরাং নতুন নেতৃত্বের পথকে সুগম করার জন্যে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি ফিরে যেতে পারেন তার ডিপার্টমেন্টে বা অন্য কোথাও তাকে নিয়োগ দেয়া যায়। অসুবিধা কোথায়। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.