নো ওয়ান ক্যান মেক মি ফিল ইনফেরিওর উইদআউট মাই কনসেন্ট! মেজাজটাই খিঁচড়ে গেছে খবরটা শুনে। বুয়েটের র্যাগ ব্যাচের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। র্যাগের কনসার্টে নির্মিত ফেন্সের ভিতরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সবসময়ই জুনিয়রদের সাথে হাল্কা বাক-বিতন্ডা হয়ে থাকে, অবশ্য র্যাগ ব্যাচের নেতৃত্বস্থানীয় ছেলেদের ঝাড়ির চোটে সেগুলো খুব সহজেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এবারই প্রথম শুনলাম যে, এ ধরনের বাক-বিতন্ডার জের ধরে জুনিয়র ছেলেরা (০৮ ব্যাচ) সিনিয়রদেরকে (০৬ ব্যাচ) বেধড়ক পিটালো।
জুনিয়র ছেলেদের পরিচয় হচ্ছে তারা ছাত্রলীগ কর্মী।
আমার আশ্চর্য্য লাগছে এই ভেবে যে, ০৬ ব্যাচের ছাত্রলীগের ছেলেরা কোথায় ছিল এসময়? ওরা কেন জুনিয়র কর্মীদেরকে নিবৃত্ত করতে পারলো না? বুয়েটে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ছেলেরা একটা নীতি মেনে চলেঃ আগে ব্যাচ, পরে দল/লীগ! আর সেটা যদি র্যাগ ব্যাচ হয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই; কেননা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার এই শেষ সময়ে পারস্পরিক বন্ধুত্ববোধ সবচাইতে গাঢ় থাকে। তাই অতীতে যখনই এধরনের ঘটনা ঘটেছে অর্থাৎ যখনই পলিটিক্যাল জুনিয়র ছেলেরা র্যাগ ব্যাচের সাথে কোন ঝামেলা বাঁধিয়েছে, দেখা গেছে সেইসব জুনিয়রদের শায়েস্তা করতে একই পলিটিক্যাল গ্রুপের র্যাগ ব্যাচের ছেলেরাই থেকেছে একদম সম্মুখে; কারন সেই একই ধর্ম - আগে ব্যাচ, পরে দল/লীগ। কিন্তু সাম্প্রতিক এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে বর্তমানে অনেক কিছুই আসলে বদলে গেছে।
তবে স্বস্তির খবর এই যে, কোন হানাহানির মধ্যে না গিয়ে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা একজোট হয়ে মারপিট করা ওই ছেলেদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছে; প্রো-ভিসিসহ অনেক শিক্ষকও অবরুদ্ধ ছিলেন। নিঃসন্দেহে র্যাগ ব্যাচের সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরাই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে - তাদেরই প্রানপ্রিয় বন্ধু যে মার খেয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন!
তবে শাস্তির দাবিটাই মূখ্য নয়, আমি মনে করি মূল দাবিটা হওয়া উচিত বুয়েট থেকে ছাত্র রাজনীতির অবসান! অন্যান্য ব্যাচেরও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই আন্দোলনে।
নতুবা যে কালচার শুরু হয়েছে, তাতে তাদের র্যাগের সময়ও যে অনুরুপ বা তার চাইতেও ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? এক্ষেত্রে সনি হত্যার সময়কার পরিস্থিতি বিবেচনা করা যেতে পারে। সনির ব্যাচমেট এবং সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে দোষীদের শাস্তি হয়েছিল, এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ – এই মর্মে প্রেস নোট জারী করতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন ভিসি। এই ঘোষনার পর থেকে বুয়েট অনেকদিন ধরেই শান্ত ছিল, কিন্তু আবার যখন ছাত্র রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তখন থেকেই পুনরায় শুরু হয় চাঁদাবাজি, মারপিট, সিনিয়রদের অসম্মান করা ইত্যাদি সব বিশ্রী কর্মকান্ড। আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই এইসব অনাকাংখিত ঘটনা থেকে পরিত্রান পাওয়া বেশ সহজতর হবে।
ঘটনা যেটা ঘটেছে সেটা নিঃসন্দেহে অপ্রীতিকর, তবে প্রশাসনকে চাপে রেখে দাবী আদায়ের এটাই কিন্তু একটা ভাল সুযোগ।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও আছে যে, তাদেরই ছত্রছায়ায় পলিটিকসের সাথে জড়িত ছাত্ররা ক্রমশঃ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সুতরাং ভিসি-প্রোভিসির মিষ্টি কথায় ভুললে চলবে না, দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করি। আমি অবশ্যই আশাবাদী - র্যাগ ব্যাচ এবং অন্যান্য সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা যদি একজোট থাকে, বুয়েটকে কীটমুক্ত করার এই আন্দোলন সফল না হওয়ার কোন কারন দেখছি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।