সাধারণেই আমি অসাধারণ রোজার মাস। আমি কেন জানি, ঈদ এর চেয়ে রোজার মাসটাকে বেশি পছন্দ করি। এখনকার রোজাগুলো হয় গরমের সময়, দিন বড়।
ছোটবেলার রোজাগুলো হত শীতকালে। তখন আমি স্কুলে পড়ি।
শীতকালটা হত ডিসেম্বর মাসে। স্কুল এর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই রোজা শুরু হয়ে যেত। ফাইনাল পরীক্ষার পর থাকতাম পুরো ফ্রি। কোন পড়ালেখা নেই, সারাদিন শুধু খেলা, মজা করা। কনকনে শীতে ভোররাতে উঠে সেহরি তে গরম ভাত খেতাম।
রোযা রাখতে ভালোই লাগতো, নামাযীও ছিলাম, এলাকার বন্ধুরা দল বেঁধে মসজিদ এ যেতাম। পিচ্চি মানুষ স্বভাবতই নামাযের মধ্যে শয়তানি করতাম। সবচেয়ে মজা লাগতো ইফতারির সময় আর তারাবির সময়। যেহেতু ছোট ছিলাম তাই রাতে কখনোই বাসা হতে বের হতে দিতো না। তারাবির উছিলায় রাতে বের হতাম, ১০ রাকাত নামায পড়ে শয়তানি করতে বেরিয়ে যেতাম মসজিদ হতে।
মাঝে মাঝে আব্বু আম্মুর সাথে যেতাম গ্রামের বাড়ি, আমরা ঈদ করি ঢাকায়, কিন্তু রোজার মিলাদ দেই গ্রামে। তো গ্রামে গেলে আরো অনেক মজা হত। গ্রামে গেলে আমার তেমন রোজা রাখা হোত না। আর গ্রামের কাজিনদের সাথে ভোর বেলায় শিশির মাড়িয়ে চলে যেতাম এক গ্রাম হতে আরেক গ্রামে, গ্রাম্য হাট এ। অনেক মজা হত।
সবচে ভালো লাগতো সে সময় কোন পড়াশুনার চিন্তা ছিলো না। কাজিনরা রোদ পোহানোর জন্য নারকেল গাছের পাতা দিয়ে খেলাঘর বানাতো, সেই খেলাঘরে রোদ পোহাতাম, আর পুতুল খেলতাম। আবার আমার জেঠার ছিলো মূলা, কপির খেত। রাতে পাহারা না দিলে চোর সবজি চুরি করে নিয়ে যেতো। পাহারা দেয়ার জন্য ছোট্ট করে ছাউনি মতন ঘর বানানো হয়েছিলো।
খেতের পাড়ে ছিলো বিশাল এক খাল। ওয়াব্দার খাল নামে চিনে সবাই ওটাকে। তো চাচাতো ভাইদের সাথে ওই ছাউনি ঘরে থাকার মত Adventure আর কোন কিছুই ছিল না। রাতে বের হয়ে দেখতাম পুরো খালটা কুয়াশায় ঢেকে আছে। চরম অনুভূতি হত।
তারপর কাজিনরা মিলে পাহারা ঠিক মত না দিয়ে পিকনিক করতাম। কি যে রোমাঞ্চকর, উত্তেজনা আর মজার পিকনিক ছিলো তা বলে বুঝাতে পারবো না। যেদিন ঢাকায় ব্যাক করতাম, অনেক খারাপ লাগতো। কাজিনরা অনেক ধরনের খেলনা গিফট করত। সেই সব এর মধ্যে গুলতিটা আমার খুব পছন্দের ছিলো।
এভাবে রোজা কেটে যেত, ঈদ শপিং এর মজা, ঈদ এর সেলামি অনেক কিছু নিয়েই আমার ছেলে বেলার রোযা আর ঈদ কাটতো।
হায়রে আর এখনকার রোযা হয় ঘাম ঝরানো গরমে। লোডশেডিং, গরম, পড়াশুনা, সব মিলিয়ে জগাখিচুড়ি অবস্থা। সবচেয়ে আজবের ব্যপার হল, আগে ঈদ নিয়ে কত উত্তেজিত থাকতাম, আর এখন ঈদ হল ঘুম দিবস। খুব মিস করি ছোটবেলাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।