আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে বর্তমান আওয়ামী সরকার এই বাজেটে ৫৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট ঘোষনা করেছে, চমৎকার ব্যাপার আমাদের মাতৃভুমি আগামী বছরে উন্নয়নের পথে হাটাহাটি শুরু করবে। কিন্তু ঘটনা হলো, আমাদের অর্থমন্ত্রী জানালেন এর মধ্যে মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে আদায় হবে বাকী টাকাটা আসবে অশ্বডিম্ব খাত হতে। অশ্বডিম্বটা কি? অশ্বডিম্বটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপতে নির্দেশ দেয়া, ফলত: জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো কারনটা হলো বাজারে টাকা বেড়ে যাওয়া কিন্তু আমার আপনার পকেটে তো আগের মতোই টাকা আছে, বেশী টাকা মানে হল টাকার দাম কমে যাওয়া।
অশ্বডিম্বটা হলো দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ঋণ নেয়া, কিন্তু সরকার কিভাবে টাকাটা ফেরত দিবে তার তো কোন পরিকল্পনা নেই, তাই বিগত বছরগুলোর মত সরকার আবারও সার্বভৌমত্ব বন্দক রেখে ঋণ নেবে; একে বলে সার্বভৌম ঋণ চুক্তি, আমাদের দেশে বিশেষ বিপদে টাকার প্রয়োজনে লোকজন জমি বন্দক রেখে ঋণ নেয়না, ব্যাপারটা একদম তাই। ইউরোপের দেশ গ্রীসে একদম একই ঘটনা ঘটেছে।
অশ্বডিম্ব হলো বিশ্বব্যাংক আর আই.এম.এফ এর কাছ থেকে ঋণ নেয়া এবং তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী তেলের দাম বাড়ানো; আর কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ক্রমাগত ভর্তুকি কমানো।
অশ্বডিম্ব থেকে আয় করা অর্থের কোন হিসাব নাই, বিশেষত যেবার উন্নয়ন বাজেট বড় হয় আমরা আশান্বিত না হয়ে বরং ভীত হয়ে উঠি। উন্নয়ন বাজেট বড় মানে সমানুপাতিকভাবে লুটপাটও বড়।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুত উৎপাদন এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিগন আজকের বাংলাদেশে "আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ গোষ্ঠীর" অন্তর্গত হয়েছেন, অশ্বডিম্ব খাত হতে প্রাপ্ত অর্থ প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা কুইক রেন্টাল বাবদ ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। অবিশ্বাস্য অংক।
অথচ দেশে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ৪৭ টি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে যাতে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা খরচ করলে ইন্জিনিয়ারিং ভাষায় বলতে গেলে BMRE করলে সম্পুর্ন উৎপাদনে যেতে পারত।
কিন্তু আমরা জানি যে অশ্বডিম্ব খাত হতে ভর্তুকি প্রদানই অধিক লাভজনক। যার ভাগ পায় বিদেশী কোম্পানী আর দেশী নেতা, চ্যালা চামুন্ডাগন। আহা,
পুকুর চুরির ভাগ ছোট হলেও তো বেশ বড়।
পদ্মা সেতু তৈরীর আনুমানিক ব্যায় ধরা হয়েছে ২২ থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা( যা এই কুইক রেন্টালের টাকা দিয়েই করা যেত), এবার নাকি জনগনের আরেকটু সহায়তা দিতে হবে, ভাল কথা।
তাহলে বাজেটের ৫২ হাজার কোটি টাকা আর ২২ হাজার কোটি টাকা মোট ৭৪ হাজার কোটি টাকা অশ্বডিম্ব খাতে গেল। এই টাকার যোগান দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক যে ফাকা হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নাই, ক্ষুদ্র আর মাঝারি উদ্যোক্তা গনকে বলি, ঋণ নেয়ার থাকলে নিয়ে নেন আর কদিন বাদেই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে আর ঋণ নেয়ার মতো টাকা থাকবে না।
শেয়ার বাজারে যে হাজার কোটি টাকা লোপাট হল তার বড় অংশ চলে গেছে ডেভেলপারস কোম্পানির হাতে, কেউ কেউ নতুন ডেভেলপার কোম্পানী খুলে বসছেন, হাউজিং ব্যাবসাই তো এদেশে রমরমা।
এদেশে একটা ফ্লাটের দাম হয় দুই কোটি টাকা ,জানেন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন শহরের চেয়ে ঢাকায় গুলশান বনানী তে জমির দাম বেশী!!
বিশিষ্ট লুটেরা গন অশ্বডিম্ব খাত থেকে লুট করা টাকা কোথায় খরচ করবেন?ঠিক , আরাম আয়েশে।
প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী এদেশে গত দশ বছরে বাসা ভাড়া বেড়েছে ৩৫০ পারসেন্ট, বিশেষ করে ছোট বাসার ভাড়া বেড়েছে আরও বেশি কারন ওগুলোর চাহিদা বেশী; কারন অশ্বডিম্ব খাত থেকে আয় করা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়িত হচ্ছে আরাম আয়েশে, আবাসনে নতুন মডেলের গাড়ি ক্রয়ে।
জমির দাম তো বাড়বেই আর ভাড়া, তাও বাড়বে।
কিন্তু কি করি বলেনতো আপনার আমার তো আয় বাড়ছে না।
আসেন একটা কাজ করি আমরা সাধারন জনগন মানুষ থেকে অশ্ব হয়ে যাই, আর ডিম্ব পাড়ার চেষ্টা করি। এর ফলে আমাদেরকে জিনিসপত্রের দাম বেশী, ভাড়া বেশী বলে সারাদিন প্যাচ প্যাচ করতে হয়না, আর সরকারকে মহারাজকেও আর এখানে ওখানে অশ্বডিম্বের জন্য হাত পাততে হয়না!!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।