আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব

বন্ধু শব্দটা সত্যিই কেমন যেন আপন মনে হয়। মনে হয় খুব কাছের কেউ, যার পাশাপাশি পথ চলে কাটিয়ে দেয়া যায় বছরের পর বছর। বন্ধু ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কেউ পার হয়নি—একথা সবাই জানে। কাছের হোক বা দূরের হোক, বন্ধু বন্ধুই। চাকরি ক্ষেত্রেও বন্ধুত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

চোখ কান খোলা রেখে সতর্কতার সাথে বন্ধু নির্বাচন করলে সেই বন্ধুটি হয়ে উঠতে পারে আপনার আস্থা ও নির্ভরশীলতার প্রতীক। চাকরিতে সমমনা বন্ধু ক্যারিয়ারে আপনার মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বন্ধুত্ব খুবই প্রয়োজন। পড়াশোনা শেষ হয়েছে সেই কবে। বহু প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিয়েও চাকরি হচ্ছে না। তাই বলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

কারণ স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রচুর বন্ধু-বান্ধবী ছিল আপনার। আর পাড়া বা মহল্লার বন্ধুরা তো আছেই। তাদের খোঁজ নিতে দোষ কী! তারা অনেকেই হয়ত বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আছেন। দীর্ঘদিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দ্বিধা করার কোনো কারণ নেই। এটা কর্পোরেট যুগ।

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এখন আর শুধু সিভি দেখে না। ইন্টারভিউয়ের চেয়ে যোগাযোগটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মামা-চাচার যোগাযোগ না। এটি জব নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, যেখানে সুপারিশের জন্য কাছের বন্ধুটিই যথেষ্ট। কোম্পানিগুলো এখন একজন দক্ষ কর্মচারীর মাধ্যমে আরেকজনকে নেয়।

অতএব ঘনিষ্ট বন্ধুটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। বর্তমান সময়ে চাকরি খোঁজার আগে বন্ধু খোঁজা প্রয়োজন। তাহলেই পথটা সহজ হয়ে যায়। অনেক সময় বন্ধু হয়তো সরাসরি কিছু করতে পারে না । অন্যকাউকে অনুরোধ করে।

তাতে কী, কাজটা তো হলো। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপে পাওয়া গেছে মজার তথ্য। চাকরি খুঁজছেন, এমন ৩৫১ জনের উপর চালানো হয়েছিল জরিপটা। তাতে দেখা গেছে শতকরা ৬০ ভাগই চাকরি পেয়েছেন তাদের বন্ধু, সাবেক সহপাঠী বা সহকর্মীর মাধ্যমে, ১৭ ভাগ এজেন্সির মাধ্যমে, আর মাত্র ১৫ ভাগ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে, ইন্টারভিউ দিয়ে। মানসিকতাটাই আসল, অন্তত স্বাধীন ব্যবসার ক্ষেত্রে।

বুটিকের দোকান, ফাস্টফুড, বায়িং হাউস, ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে এক্সিবিশন পর্যন্ত আজকাল বন্ধুরা মিলে করছে। অতএব আপনাকেও প্রচেষ্টা চালাতে হবে অন্তত ভালোভাবে জীবন-যাপনের জন্যে ভাল কিছু তো করতে হবে। বন্ধু যখন কলিগ বন্ধুটি যদি আপনার কলিগ হয়, তাহলে সে নানাভাবে উপকারে আসতে পারে। অনেক এক্সিকিউটিভের মতে, কাজের জায়গাটি হতে হবে পরিবারের মতো, বন্ধুত্বপূর্ণ। এতে কাজের গতি বাড়ে, আনন্দ আসে, কাজ বেশি হয়।

উত্পাদন ও টিমওয়ার্কে এর বিরাট প্রভাব পড়ে। সব কিছু মিলিয়েই গড়ে ওঠে একটি কর্পোরেট ফ্যামিলি। তবে কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব খুব গভীর না হওয়াই ভাল। একটা না দেখা দূরত্ব মেনে চলতেই হবে। ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোকে কাজের জায়গায় টেনে না আনাই ভাল।

আপনার স্ত্রীও আপনার কলিগ হতে পারে। তবে কাজের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে দেয়া যাবে না। কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব আর ব্যক্তিজীবনে বন্ধুত্ব গুলিয়ে ফেলা যাবে না। বন্ধু: জুনিয়র না সিনিয়র জুনিয়র বন্ধুরা কখনো কখনো বিপদের কারণ হতে পারে। একটু অসাবধানতার দরুন আপনাকে পড়তে হতে পারে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

সিনিয়ররাও কিন্তু কম যান না। এই সব ম্যানেজ করতে হবে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী। অফিস কালচার এবং পলিটিক্স বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে কর্পোরেট জগত্ খুবই কন্টকাকীর্ণ। এখানে বন্ধুই পতনের মূল কারণ হতে পারে।

অতএব, কর্মক্ষেত্রে এমন বন্ধু চাই, যে সত্যিই বন্ধু। শিক্ষিত বন্ধু হয়তো সবার সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় না। তবু যতদূর সম্ভব সব বন্ধুর সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করুন। শুধু চাকরিজীবীই নয়, ব্যবসায়ী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, লেখক যেকোনো বন্ধুই উপকারে আসতে পারে। বন্ধু বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।

তাই তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াটা বোকামি। আপনার হয়ত মনে হতে পারে কেবল টাকার জন্যই আমরা কাজ করি, আর কোনো কারণ নেই। কথাটি হয়ত উড়িয়ে দেওয়ার মতোও না। টাকার জন্যইতো আমরা কাজের পিছনে সময় দিই। আমাদের প্রতিদিনের, এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টাই দেই।

তাই ওই অর্থ উপার্জনের অন্য অর্থও আছে। অনেকে কাজ করেন কারণ তিনি ভালো কিছু যে করছেন, তার স্বীকৃতি পান। এই জন্য তিনি কাজ করেন। কেউ স্রেফ আনন্দের জন্যও কাজ করে থাকেন। আবার কেউ নিজের আইডেন্টিটির জন্যে, কেউ পরের জন্য কাজ করেন।

কৃতিত্বের মোহেও অনেকে ভীষণ মন দিয়ে কাজ করে চলেন। এমন যদি হয়, অধস্তনের উপর আর কর্তৃত্ব থাকবে না, তাহলে অনেকেই কাজ করবেন না। কাজ করার কারণ তাই একেকজনকে একেকভাবে আলোকিত করেছে। নিচের তালিকা দেখুন এবং চিহ্নিত করুন, কোন কারণে আপনি কাজ করছেন: - শুধু শুধু বসে থাকতে ভালো লাগে না, তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যে কাজ করেন। - নিজের প্রতিভা, ক্ষমতা ও দক্ষতা প্রমাণের জন্যে কাজ করেন।

- বসে থাকলে যেহেতু এমনি এমনি আইডিয়া আসবে না, তাই নতুন কোনো আইডিয়া পাবেন বলে কাজ করেন। - নানা ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসা যায় বলে। - নিজের সৃষ্টিশীলতা প্রমাণের জন্য কাজ করেন। - কর্মক্ষেত্রে অনেক বন্ধু পাওয়া যায় বলে কাজ করেন। - কাজ করলে অনেকে চিনবে, জানবে, তাই কাজ করেন।

- অন্যদের উপর কর্তৃত্ব খাটানো যায় বলে কাজ করেন। - কেবল অর্থ উপার্জনের জন্যেই কাজ করেন। - কাজ করেন যাতে জীবনটা হয়ে ওঠে সুখী ও আনন্দময়। - শরীর যাতে কর্মক্ষম থাকে, সে জন্য কাজ করেন। - জীবনের উপভোগ্য উপাদানগুলো ভোগ করার জন্য।

- নতুন নতুন বিষয় শিখে নিজের দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করেন। - নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য কাজ করেন। - চারপাশ ঘিরে প্রিয় মানুষেরা থাকবে, এই প্রত্যাশায়। - সমাজ ও সম্প্রদায়ে সম্মান-প্রতিপত্তি নিয়ে বাস করার জন্য কাজ করেন। - জীবনে নিরাপত্তাবোধ থাকবে বলে কাজ করেন।

- নানারকম অর্জনের সুখ পাওয়ার ইচ্ছায় কাজ করেন। আপনি যে কারণেই চাকরি বা কোনো কাজ করেন না কেন, আপনি নিশ্চয় চান আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এ জন্য আপনি যে কাজই করছেন সেটির প্রতি প্রথমে নিজেই ইতিবাচক চোখে তাকান। আপনাকে চাকরিতে নেওয়া যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, তা নিয়োগদাতাদের বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ কিন্তু আপনার প্রতিদিনই। ১. নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসভাজন হোন - ঠিক সময়ে কাজে আসুন।

একান্তই যদি আসা সম্ভব না হয় আগেই তা ফোন করে জানিয়ে দিন। - যা বলবেন, তা অবশ্যই করুন। সময়মতো আপনার কাজটি সেরে ফেলুন। - গোছানো থাকুন। পরিচ্ছন্ন রাখুন আপনার কাজের জায়গাটুকু।

- কাজে আপনার সেরাটি বের করে আনুন। - নিজের কাজের গুণাগুণ যাচাই করুন। ২. তত্পর হোন - যে সংস্থায় কাজ করছেন বা করতে যাচ্ছেন, তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। আখেরে এটা আপনাকে ভালো ফল দেবে। তারপর ঠিক করুন কী অবদান আপনি সেখানে রাখবেন।

যখন আপনি আপনার করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন, ভেবে নিন, কীভাবে শুরু করবেন। - করণীয় যা কিছু, করে ফেলুন। এটা নিশ্চিত করুন, অন্য কারও উপর ভর করে আপনি চলছেন না। আপনি চলছেন নিজের পায়ে, আত্মবিশ্বাসে। - যা করছেন, পূর্ণ দায়-দায়িত্ব নিজের মনে করে করুন।

- কাজ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে তবে তা শিখে নিন। ৩. দলের অংশ হয়ে উঠুন - এ কাজগুলো আমার চাকরির শর্তে নেই, ওটা তো আমার দায়িত্ব না, এই কাজ তো আমার করার কাথা না—এ ধরনের কথা, অফিসের সংঘবদ্ধ পরিবেশে বেমানান। তাই এসব কথা মনে আনবেন না। - যদি কোনো প্রজেক্টে, সহকর্মীকে সহায়তা করতে বলা হয়, সুযোগটি নিয়ে নিন। এতে আপনি নতুন অনেক কিছুই জানতে পারবেন এবং অন্যদের কাছে আপনার ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

- তথ্য আদান-প্রদানে তত্পর হোন। সহকর্মী কিছু জানতে চাইলে, অফিস সিক্রেট না হলে তাকে ফিরিয়ে দেবেন না। - সহকর্মীদের সমর্থন করুন, প্রয়োজনে সাহস যোগান। ৪. নমনীয় হোন, মানিয়ে চলুন - সব কিছুই যে আপনি নিয়ন্ত্রণ করছেন না, এ বিষয়ে সচেতন থাকুন। - সমঝোতা করার মানসিকতা রাখুন।

- যেকোনো সময় কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন, প্রস্তুত থাকুন। - শেখা বন্ধ করবেন না। ৫. সাহায্য চান - প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিন। আপনার সীমাবদ্ধতা হলো ব্যক্তিগত শক্তি ও পরিপক্কতার লক্ষণ, এটি বুঝতে চেষ্টা করুন। - যদি কোনোকিছু জানা না থাকে, জেনে নিন।

আপনার শেখার ইচ্ছাটিকে বড় করে তুলুন। চাকরি পাওয়া বড় একটি অর্জন হলেও সেটাই শেষ কথা নয়। কাজের ক্ষেত্রটিতে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলা এবং সকলের নিকট জনপ্রিয় হয়ে ওঠাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপরের পরামর্শগুলো মেনে চলুন। সেক্ষেত্রে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চাকরিতেও দেখবেন প্রচুর বন্ধু পেয়ে যাবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.