আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুইক রেন্টাল

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। বেসরকারি ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার দেখাচ্ছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে৷ অথচ চুক্তি অনুযায়ী, তারা ভর্তুকি দামে জ্বালানি তেল পায় বিপিসি থেকে৷ বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল নির্ভর ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মোট ১৫টি৷ চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রেলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি তাদের ভর্তুকি দামে তেল সরবরাহ করে৷ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২১৭ থেকে ২১৮ মি. লি. জ্বালানি তেল লাগার কথা৷ কিন্তু বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছে, যারা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬০ মি. লি. তেল খরচ দেখাচ্ছে৷ তা গ্রহণযোগ্য নয় পিডিবি'র কাছে৷ তাই ঐ ১৩টি কোম্পানিকে ১৩০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু হয়ে গেছে কুইক রেন্টাল। কুইক রেন্টাল বিষয়টিকে নিয়ে বিতর্কও চলছে। একটি সহজ হিসাব দিলে বোধ হয় সাধারণ পাঠকদের বিষয়টি বুঝতে সুবিধে হবে।

২০০৯ সালে বর্তমান মহাজোট সরকার যখন দায়িত্বে আসে তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৩১ মেগাওয়াট এবং এই প্ল্যান্টগুলো প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত ৩২০০ থেকে ৩৩০০ মেগাওয়াট। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ আমাদের চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল। বর্তমান সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেন। কিন্তু যে সমস্যাটি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিল তা হল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সংকট। ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল জ্বালানি ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস।

পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগই নেননি। যার ফলে বর্তমান সরকারকে জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সাময়িক সমাধান হিসেবে ফার্নেস অয়েল এবং ডিজেলের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে আমাদের দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যে করুণ অবস্থায় ছিল এবং প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি চিন্তায় নিলে শুধুমাত্র দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হত মহা বোকামি। কাজেই সরকার স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কুইক রেন্টাল এবং রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো হাতে নেয়ার ফলে আজকে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫২০০ থেকে ৫৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ হচ্ছে। অর্থাৎ গড় হিসাবে ২৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে তিন সাড়ে তিন বছরে এই উন্নয়ন বিস্ময়কর। আজকে গড়ে ৫২০০ থেকে ৫৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরেও বাংলাদেশের যে অবস্থা সেক্ষেত্রে কুইক রেন্টাল এবং রেন্টাল প্রকল্পগুলো না হলে আমরা যদি এখনো ৩২০০ থেকে ৩৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে থেকে যেতাম তাহলে আমাদের কী অবস্থা হত সেই প্রশ্ন কি আমরা কেউ করেছি। ঢাকা শহরে আজকে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা লোডশেডিং হত। কলকারখানার চাকা বন্ধ হয়ে বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ত। এটি সত্যি কথা যে অতিরিক্ত ২৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে এর সিংহভাগই (১৮২৭ মেগাওয়াট) তেলের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়েছে।

তাতে আমাদের খরচ বেশি পড়েছে কিন্তু আমাদের আর কী উপায় ছিল? আমাদের তো যথেষ্ট গ্যাস ছিল না বা এখনো নেই। গ্যাস নেই বলে আমরা যদি তেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে না যেতাম তাহলে আমাদের অর্থনীতিকে আরো অনেক বড় খেসারত দিতে হত।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.