তখন ক্লাস ফোরে পড়ি,
স্কুল থেকে ফিরে দেখি, বাসায় বিরাট আয়োজন!
মামণিকে বললাম,”কি ব্যাপার, ঘটনা কি?”
মামণি বললো,“বাসায় আসবে মেহমান,জলদি কর গোছগাছ
খবরদার, সামনে পরলে করবি না লাজ”।
সেদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল, রাতের ঘুম চোখে মানে না;
কই, মেহমান তো এলো না?
পরদিন সকাল,
মা, কই তোমার মেহমান?
“যা উঠানে যা,দেখলেই সালাম দিবি
খবরদার করবি না লাজ!”
আমার মৌন সম্মতি।
জানি, লাজে পড়লেও হবে না খুব ক্ষতি!
“ওমা এ কে? এই বুড়ি কেমন মেহমান!!”
মুখ দিয়ে ফসকে যাচ্ছিলো…
তখনই পেলাম পরিচিত হাতের পরশ.
আমার মামা।
মামা বললেন,”কিরে কেমন আছিস খোকা? রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলি কেন?
দিয়েছি তোর মাকে আচ্ছা করে বকা।
ঐ বুড়িকে চিনিস?”
নাহ, বলে দাও না মামা।
আমার অনাগ্রহী আবেদন। মামা বললেন,
“তুই ছিলি খুব ছোট, ফিডার সাইজ।
শান্ত, চুপচাপ এখন যেমন থাকিস। শুনাসনি আমাদের কোন আগমনী ধ্বনি।
বল্লে খোকা এখনো লজ্জায় লাল হবি………..
তোর লেংটির খোজে আমি চষেছিলুম ১০বাজার!
পেয়েছিলুম শেষে মুখ্যদেব দর্জির বাড়ি।
শীতলক্ষ্যার তীরে সেই লাল মাটির নীড়ে
খেতি একটু একটু করে তুই ছোট্ট ড্রপার দিয়ে।
সে তুই আজ কত্ত বড়!দোয়া করি
হবি আকাশের সমান। কিন্তু জানিস খোকা
কার অবদান?”
কি উত্তর দিয়েছিলাম আমি?
সময় পেলে মনে মনে আওরাই সে বুলি।
আমার বুড়ি!চাদের বুড়ি।
বুড়ি বললো আমায় ডাকি,
“নাতি চিনছো আমারে?আছে ইয়াদ?
আমি শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে থাকি।
মামা বললেন,”সন্দেহ নাই কোন।
তোমার নাতির স্মরণ আছে ব্যাবাক
লজ্জায় করে না চোখাচোখি। “
বুড়ি বললেন, “কিরে নাতি লাগবে নাকি লাল টুকটুক বউ!
আমার হাতে জোগাড় মেলা বেশি। “
আমি বললাম,”ওরে বুড়ি চুপকর।
বউ আসলে নিবিনে, আচল হতে চাবির তোড়া খুলি।
তখন বুঝবি মজা, লাগবে কপালে শনি। “
বুড়ি বললেন্, “নাতি আমার মুখ খুলিছে; চাইবোনা খুব বেশি।
মিয়া বাড়ির বাজার হতে সবুজ রঙের চুড়ি
২টা লাল ফিতা, আর একখান টাঙ্গাইল্লা শাড়ি;
চট জলদি হিসাব নিকাশ,আনবি তড়িৎ কিনি। আমি হইব তোর বউয়ের সতীন।
সকাল সন্ধ্যা ঘুম ভাঙ্গিয়ে
গাইবো রিনরিন রিনঝিন।
“
“তবে রে বুড়ি কানে ধর! নয়তো
আজি ছাড়বি এই বাড়ি। “
মামা বললেন,”কর কি মা!ক্ষেপিছে তোমার নাতি।
অনেক হইছে;চল মামা, তোরে কান্ধে নিয়া ঘুরি। “
হঠাৎ একদিন মামা চলে গেলেন; মন আমার খারাপ ভারি
আমি আশ্চর্য চিন্তা করি।
আমার সাথেই বুড়ি ঘুমায়; নিরবে নিরবে তার অশ্রু কেন যায় ঝরি?
উত্তর না মিলে!আমিও নিরবেই যাই চেপে।
পাইনা উত্তর থুজে মামণি বা তার চোখে।
দিনে দিনে বুড়ির সাথে মিল আমার এত বেশি।
সুযোগ পেলেই বাড়ির লোকেরা করে কানাঘুষাঘুষি।
আমারে বুড়ি কড়ি ভেজে দিত
মাছ লংকার ঝোল,হুহা হুহা চোখের জল আর
গড়িয়ে পড়তো লোল।
একলা আমি একলা সময়,
আমার ছোট্ট জগৎ ছাড়ি,
একদিন এক ঘুমের বেলা,
বুড়ি নিরবে গেল চলি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।