অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, সময়মতো সার-বীজ-কীটনাশক ও সেচ সুবিধা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে মনে করেন কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তবে দামের ব্যাপারে সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাম্পার ফলনের প্রকৃত লাভ ঘরে উঠবে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় সরকারিভাবে এক লাখ ৬৩ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এ থেকে নয় লাখ ৭০ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামসহ কয়েকটি হাওর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা এখন ধানকাটার পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান বাড়িতে আনা, মাড়াই ও বিক্রির কাজে। কিষাণীরাও ব্যস্ত বছরের একমাত্র ফসলটি ঘরে তুলতে।
কারো যেন দম ফেলবার ফুরসত নেই। হাওরের চারিদিক যেন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
ইটনা উপজেলার শিমুলবাক গ্রামের স্থানীয় কৃষক সাদেক মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি মৌসুমে মণপ্রতি ধান চাষে খরচ পড়েছে সাতশ’ টাকার মতো।
কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি ছয়শ টাকার কাছাকাছি।
তবে এই ধান কয়েকদিন ধরে রাখা গেলে হয়তো দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু হাওরাঞ্চলে সেই ধরনের কৃষককের সংখ্যা একেবারেই কম।
কৃষক সাদেক বলেন, ধার-দেনা করে তারা চাষ করেন। পাওনাদার ধান কাটার আগেই বাড়ি এসে বসে থাকে।
ফলে ক্ষেত থেকে ধান কাটার পরই তা বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না অধিকাংশ কৃষকের।
পুরো মৌসুমে শ্রম দিয়েও ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক মোতালেব মিয়া।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ধানের ন্যায্য দাম না পেলে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। ”
নতুন ধান উঠতে শুরু করার পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় এখন মুখর হাওর এলাকায় ধান কেনা-বেচার প্রধান হাট চামড়া বন্দর।
সেখানের আড়তদাররাও ধানের বাজার মূল্য কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
চামড়া বন্দরের আড়তদার এম এ হক বলেন, চাউলের বাজার নিন্মমুখী। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। ফলে অভাবী কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, “ধানের বর্তমান বাজারমূল্য, কাঁচা ধানের ক্ষেত্রে ছয়শ’ টাকার নিচে, শুকানো হলে দাম ছয়শ’ টাকার কিছু বেশি হয়। ”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নির্মল কুমার সাহা বলেন, ধান ক্রয়ে সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্য ৭২০ টাকা কার্যকর করা সম্ভব হলে কৃষকরা অনেকটাই লাভবান হবেন।
কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বেশি ধান কেনার ব্যাপারে সরকারি তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।