(অন্ধকার কখনো অন্ধকারকে দূর করতে পারে না। অন্ধকারকে দূর করতে পারে শুধুমাত্র আলো। ঠিক তেমনি ঘৃনা কখনো ঘৃনাকে দূর করতে পারে না,শুধুমাত্র ভালবাসাই পারে ঘৃনাকে দূর করতে। কাউকে ঘৃ্না করা অনেকটা 'ইদুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের পুরো বাড়িটিই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মত' একটা কাজ। এখানে যাকে ঘৃনা করা হয় তার চেয়ে ঘৃণাকারীরই বেশি ক্ষতি হয়,ঘৃণাকারীই বেশি কষ্ট পায়।
তাই আসুন, আজ থেকে ঘৃণাকে ঘৃণা নয়,ভালবাসা দিয়ে জয় করি। )
গুল্লু একটা মিথ্যাবাদী ছেলে। ভয়াবহ মিথ্যাবাদী। গুল্লু এতো সুন্দর করে মিথ্যা বলি- কেউ তার মিথ্যা ধরতে পারে না । হিমিও তার মিথ্যা ধরতে পারে না ।
তবে গুল্লুর মিথ্যা গুলো সাদা মিথ্যা । যে মিথ্যায় কারো কোনো ক্ষতি হয় না বরং আনন্দ পাওয়া যায় । গুল্লুর বয়স ছাব্বিশ সাতাশ । মাথা ভরতি । গায়ের রঙ আগে ফরসা ছিল এখন কালো হয়ে গেছে ।
গুল্লুর ধারনা তার মানসিক ঝামেলা গুলো কেটে গেলেই গায়ের রঙ আবার ফিরে আসবে । গুল্লুর বাবা একজন ব্যাবসায়ী । তাকে সবাই খান সাহেব বলে ডাকেন । সে তার ছেলেকে কোনো দিন বকা ঝকা করেন না । শুধু বলেন ভবিষৎ নিয়ে কিছু ভাবছো ? শুধু ক্যামেরা নিয়ে ঘুরলেই হবে ? সবাই গুল্লুর ছবির খুব প্রশংসা করে ।
কিন্তু খান সাহেব কোনো দিন গুল্লুর ছবি দেখতে চান নি ।
সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা । গুল্লু হিমিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে । গুল্লু কলিংবেল চাপল। হিমি দরজা খুলল এবং বলল আমি জানতাম আজ তুমি আসবে ।
গুল্লু বলল আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্নের কথা বলতে এসেছি। হিমি বললো স্যার আরাম করে বসে বলুন কী স্বপ্নে দেখেছেন। গুল্লু বলা শুরু করলো- আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি ( বেঙ্গল গ্যালিরর সামনে দিয়ে )। হঠাৎ দেখি মানুষের জটলা। একটা মেয়ে রিকশা থেকে পড়ে গেছে এবং মেয়েটা চারপাশে তাকিয়ে কি যেন খুজছে ।
কেউ মেয়েটাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে নাই । সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে এবং খুব মজা পাচ্ছে । আমি সামনে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরে টেনে তুলি এবং তার চাবিটি খুঁজে দেই। মেয়েটি আমাকে ধন্যবাদ জানায় । হিমি বলল সুন্দর স্বপ্ন ।
গুল্লু বাসায় ফিরল রাত ন'টায়। বসার ঘরে ঢুকে দেখে খান সাহেব মুখ শক্ত করে বসে আছেন । তিনি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন আড্ডা শেষ হলো ? গুল্লু তার কথার জাবাব না দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেট শেষ করে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লো । ঘুম ভাঙ্গল হিমির ফোন পেয়ে ।
গুল্লু ঘুম ঘুম গলায় বলল কেমন আছো ? হিমি বলল- তোমাদের ওখানে কী বৃষ্টি হচ্ছে ?গুল্লু বলল জানি না তো। হিমি বলল- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে । গুল্লু হিমির কথার জাবাব না দিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল । হিমি তারপরও একা একাই কথা বলে যাচ্ছে । হিমি একটা গান করল তারপর ফোন রেখে দিল ।
পরের দিন অনেক গুলো ঘটনা ঘটে। গুল্লুর ছোট চাচাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে । প্রতিটা খবরের কাগজে তার ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির সাথে ২০০ ইয়াবা ও একটা পিস্তল। গুল্লুর মা হাসপাতালে ভরতি।
তার ডায়বেটিস অনেক বেড়ে গেছে। গুল্লুর বাবা ব্যাবসার কাজে গিয়েছেন চিটাগং। হিমি বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়া বাধিয়েছে । আজ বিকেলে পাত্রপক্ষ হিমিকে দেখতে আসবে । গুল্লুর খুব প্রিয় একটা বন্ধু আলী আজ বিকেলে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে ।
যখন কিছু ঘটে খুব দ্রুত ঘটে । গুল্লু বসে আছে তার প্রিয় একটা চায়ের দোকানে। সে পরপর দু'কাপ চা খেয়েছে । এখন সে চায়ের দোকানের সবাইকে যাদু দেখাচ্ছে । যাদুটা হচ্ছে- গুল্লুর হাতে একটা পাঁচ টাকার কয়েন।
হাত বন্ধ করে-আবার খুলতেই কয়েনটা নাই হয়ে যাচ্ছে । উৎসুক জনতা গুল্লুর যাদুটা দেখে এক আকাশ আনন্দ পাচ্ছে ।
গুল্লু জেলখানায় তার ছোট চাচাকে দেখতে যায় । গুল্লু বলল- চাচা আপনাকে মেরেছে নাকি। নাক চোখ মুখ সব ফুলে আছে যে ? ছোট চাচা বললেন- গুল্লু আমার অফিসের ড্রয়ারে আমার চেক বই আছে।
চেক বই-এ সাইন করা আছে পাঁচ লাখ টাকা তুলে আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা কর। ছোট চাচা গুল্লুর হাত ধরে বললেন- গুল্লু আমি তোর চাচা তুই বল আমি কি কোনো খারাপ কাজ করতে পারি ?গুল্লু স্পষ্ট গলায় বলল- নো নেভার । ছোট চাচা বললেন- আবু বকর নামের একটা লোক আমাকে ফাসিয়েছে । গুল্লু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে ছোট চাচার হাতে দিলো । ছোট চাচা সিগারেট ধরিয়ে বললেন- গুল্লু তুই কি জানিস আমি তোকে কত পছন্দ করি ?গুল্লু বলল- ছোট চাচা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ।
আমি তিন দিনের মধ্যে আপনাকে বের করবো । গুল্লুর কথা শুনে ছোট চাচার চোখে পানি চলে আসছে- সে তার আদরের ভাতিজাকে চোখের পানি দেখাতে চান বলে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন ।
দুপুরবেলা গুল্লু গেল হাসপাতালে তার মাকে দেখতে । গুল্লুর মা গুল্লুকে দেখে চমকে উঠলেন । বললেন- কিরে তোর চোখ মুখ এরকম মলিন কেন ? কি হয়েছে ?গুল্লু বলল- মা, তুমি কেমন আছো? মা, বললেন- বাথরুমে যা হাত মুখ ধুয়ে আয় ।
দুইজন এক সাথে খাবো হাসপাতালের খাবার । এই হাসপাতালের খাবার অনেক ভালো । গুল্লু আর তার মা দুজনে খুব আরাম করে খেতে বসল । ভাত খেয়ে গুল্লু তার মায়ের পাশে গুটিশুটি মেরে বাচ্চাদের মতন ঘুমিয়ে পড়ল । ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখল- সে একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে বন্দী।
আর ঘর ভরতি হাজার হাজার সাপ । সাপ গুলো গুল্লুর দিয়ে আসছে । গুল্লু ঘুমের মধ্যেই কেপে উঠছে । গুল্লুর মা তার ছেলের মাথায় দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিলেন । খান সাহেবের ফোন পেয়ে গুল্লুর ঘুম ভাঙ্গে ।
খান সাহেব বললেন- কি খবর ? সব ঠিক আছে তো ? গুল্লু বলল- বাবা, কোনো সমস্যা নেই । সব ঠিক আছে । খান সাহেব গুড বলে ফোন রেখে দিলেন ।
গুল্লু সন্ধ্যার আগে আগে গেলো আবু বকর এর অফিসে । বকর গুল্লুকে দেখে বললেন- চাচার জন্য সুপারিশ করতে এসেছো ?এবার তোমার ছোট চাচাকে কেউ বাচাতে পারবে না সাত বছরের জেল থেকে ।
গুল্লু বলল- মিঃ বকর আগামী দু'দিনের মধ্যে চাচাকে বের করবো। তারপর আপনাকে একটা শিক্ষা দিবো । গুল্লুর চাচাকে হাজত থেকে বের করার সব ব্যবস্থা করেছেন হিমির বাবা । হিমির বাবা একজন নাম করা উকিল । তাকে সব বলা মাত্র বলল- তিনি বললেন, কোনো ভয় নেই আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে তোমার চাচা বের হবে ।
হবেই । গুল্লু জানে এই লোক আজাইরা কথা বলার মানুষ নন । হিমি তার বাবার কাছ থেকে দু'টো জিনিস পেয়েছে- Observation এবং Tricks.
রাত বারো টায় পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর গুল্লু হিমির বাসায় গেলো । হিমিকে আজ অন্যদিনের চেয়ে বেশী সুন্দর লাগছে । অথচ সে খুব বেশী সাজেনি ।
শুধু চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে । হিমি বলল এনেছো ? গুল্লু পকেট থেকে বেলী ফুলের মালা বের করে হিমির হাতে দিলো । হিমি ফুল গুলো গালে ছোঁয়াল । তারপর বলল- তুমি কি জানো আজ তোমাকে রাজকুমারের মতন লাগছে । হিমির চোখ ভিজে উঠলো।
সে খুব চেষ্টা করছে বেলী ফুলে যেন চোখের পানি না লাগে । গুল্লু বলল- ইচ্ছে হয়- অনন্তকাল ধরে তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার হৃদয়ের স্পন্ধন অনুভব করি। পলকহীন ভাবে তোমার দিকে চেয়ে থাকি। আশে পাশের সব কিছু ভুলে আজ তোমার ভেতর ডুবে থাকি। হিমি চোখ মুছতে মুছতে বলল- ভালোবাসার অর্থ এই নয় যে তুমি দুর্বল ।
তুমি এতটাই শক্ত যে তুমি কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা রাখ এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।